নওগাঁর বদলগাছীতে কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় একের পর এক ইটভাটা তৈরি করে অবৈধভাবে চলছে। প্রশাসনের ভূমিকা নীরব। এসব ইটভাটার নেই কোন অনুমোদন, নিবন্ধন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স। তারপরও অনুমোদন ছাড়াই চলছে এসব ইটভাটা। এসব ইটভাটার মালিকরা একটি ইটভাটা সমিতি করে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে এসব ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনের কাছে ওইসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য বারবার অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ হয় না। ইটভাটা পরিচালনা সমর্থক গোষ্ঠী সূত্রে জানা যায়, এলআর ফান্ডই তাদের অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার মূল শক্তি। এই ফান্ড থেকে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবসে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনকে মোটা অংকের চাঁদা প্রদান করা হয়। আবার উপজেলায় বিভিন্ন সময় যখন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঘর ও গুচ্ছ গ্রাম ঘর নির্মাণের সরকারি বরাদ্দ আছে তখন ইউএনওর কথা মতো কম দামে ইট সরবরাহ করে থাকে। তাই মাঝে-মাঝে অভিযান চলে শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য। তা না হলে বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাটা চলছে কিভাবে ? জানা যায়, এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে সর্বমোট ৩৪টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে একটি ইট ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকলেও আর অন্যগুলোর কোনো প্রকার ইটভাটার ছাড়পত্র নেই। এবং কোনোটির জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সও নেই। অর্থাৎ ৩৩টি ইটভাটায় এখন অবৈধভাবে ইট তৈরি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ২-৩ ফসলি উর্বর কৃষি জমির ওপর। রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এলজিইডি সড়ক। আবার বেশিরভাগ ইটভাটার পাশেই রয়েছে স্কুল ও ক্লিনিক। এই ইটভাটাগুলোর জন্য কৃষি জমির উপরিভাগের টপসয়েল জাতীয় মাটি কেটে ইটভাটায় আনা হচ্ছে। কিছু কিছু ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য পাহাড়ের সমান বিশাল বিশাল মাটির স্তুপ করে রেখেছে। ইতোমধ্যে দুই-চারটি ইটভাটা বাদে সব কয়টি ইটভাটায় আগুন দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। চলমান রয়েছে ইটভাটার কাজ। এই ইটভাটাগুলোর মাত্র ১শ থেকে ২শ গজ দূরত্বেই রয়েছে জনবসতি ও বাড়ি-ঘর। আবার কোথাও কোথাও রয়েছে স্কুল। এসব ইটভাটার কারণে জনবসতি এলাকার গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানে বসবাসকারী লোকজন। কয়েকটি ইটভাটা সংলগ্ন বাড়ির মালিকরা জানান, ইটভাটার কারণে তাদের ফলজ গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাঠের ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়টি তারা স্থানীয় প্রশাসনকে বহুবার জানালেও। কিন্ত তাতে তারা কোনো ফল পাননি। চকগোপীনাথপুরের মাঠে নির্মিত ফাইম ইটভাটার মালিক সানোয়ার হোসেন বলেন, আমি এখানে কিছু জমি লিজ ও ক্রয় করে এই ইটভাটাটি নির্মাণ করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স পেয়েছেন কিনা বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। কোন অনুমতি পাইনি। তাহলে কিভাবে কৃষি জমি ও জনবসতি এলাকায় আপনি ইটভাটা নির্মাণ করে ইট পোড়াছেন প্রশ্ন করলে তিনি এর কোন উত্তর দেননি। পাহাড়পুর ইউনিয়নের এমবিএফ ইটভাটার মালিক এনামুল হকের কাছে ইটভাটর লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বদলগাছীতে কারো কোনো কাগজপত্র নেই। তাহলে আপনারা কিভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের একটি ইটভাটা সমিতি রয়েছে সেই সমিতি সব ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে চাঁদা তোলে। এবং সেই টাকা দিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই আমারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন ইটভাটার মালিক বলেন, আমাদের উপজেলার প্রায় সব ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন অনুমোদন, কৃষি অফিসের প্রত্যয়ন, ছাড়পত্র, নিবন্ধন ও লাইসেন্স। আমরা উপজেলা প্রশাসনসহ সব সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করেই ইটভাটাগুলো চালাচ্ছি। বদলগাছী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের উপজেলায় ইটভাটার কারো কোন লাইসেন্স নেই। ইটভাটার মালিকরা বলছেন, ইটভাটা সমিতির সভাপতি ও আপনি বিভিন্ন দিবসে প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর প্রদান না করে এই প্রতিনিধিকে বলেন আমি আপনার সাথে পরে দেখা করব। বদলগাছী ইটভাটা সমিতির সভাপতি এনামুল কবির বলেন, আমরা কিভাবে ব্যবসা করব সেটা আমাদের বিষয়।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয়- ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং ২০১৯ সালে এটি সংশোধন করা হয়। এই আইনে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত কেউ ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না। কিন্তু বাস্তবে কনো প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে তারা প্রকাশ্যে ইট প্রস্তুত অব্যাহত রেখেছেন। পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, বাজার, স্কুল, কলেজ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ধোঁয়াবিহীন ইট পোড়াতে হবে। কৃষি জমি থেকে কোন মাটি কেটে নেওয়া যাবে না ও এলজিডির রাস্তা ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে রাখা হয়েছে জেল ও জরিমানার বিধান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, এই উপজেলায় একটি ইটভাটাও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। ইটভাটার কারণে এক দিকে কমছে কৃষিজমি অন্যদিকে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের ও ফসলের। ইটভাটায় কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কাটা বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগের টপসয়েল মাটি কাটার কারণে জমির উর্বরাশক্তি কমে যায় এ কারণে সেই জমিতে তেমন কোন ফসল ভাল ফলন হয়না। ওই জমির টপসয়েল পুরুন হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ বছর। বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান ছনি বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। খোঁজখবর নিয়ে দেখে আমি এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, আমি আজকেও জেলা প্রশাসকের অফিসে আছি। কিন্তু আমাকে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হচ্ছে না। তাই অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। আপনি কি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযানের জন্য বলেছেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ইউএনও সাহেবের কাছে গেলে তিনি বলেন আপনি জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে যান। তারা যদি সহযোগিতা না করেন তাহলে আমরা অভিযান পরিচালনা করব কিভাবে। বছরে আমরা ঢাকা থেকে একবার ম্যাজিস্ট্রেট পাই তখন কিছু অভিযান পরিচালনা করি। নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তালিকা করে একটি রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট হাতে পেলেই এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এলাকার সচেতনমহল বলেন, ইটভাটার কালোধোঁয়ার কারণে আমাদের পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও কোনো প্রশাসনই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এতে করে মনে হচ্ছে নাম মাত্র আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু তার কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তাই আমারা আমাদের এলাকায় এসব অবৈধ ইটভাটার কোলোধোঁয়া, কৃষি জমি, পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
নওগাঁর বদলগাছীতে কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় একের পর এক ইটভাটা তৈরি করে অবৈধভাবে চলছে। প্রশাসনের ভূমিকা নীরব। এসব ইটভাটার নেই কোন অনুমোদন, নিবন্ধন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স। তারপরও অনুমোদন ছাড়াই চলছে এসব ইটভাটা। এসব ইটভাটার মালিকরা একটি ইটভাটা সমিতি করে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে এসব ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনের কাছে ওইসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য বারবার অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ হয় না। ইটভাটা পরিচালনা সমর্থক গোষ্ঠী সূত্রে জানা যায়, এলআর ফান্ডই তাদের অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার মূল শক্তি। এই ফান্ড থেকে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবসে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনকে মোটা অংকের চাঁদা প্রদান করা হয়। আবার উপজেলায় বিভিন্ন সময় যখন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঘর ও গুচ্ছ গ্রাম ঘর নির্মাণের সরকারি বরাদ্দ আছে তখন ইউএনওর কথা মতো কম দামে ইট সরবরাহ করে থাকে। তাই মাঝে-মাঝে অভিযান চলে শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য। তা না হলে বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাটা চলছে কিভাবে ? জানা যায়, এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে সর্বমোট ৩৪টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে একটি ইট ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকলেও আর অন্যগুলোর কোনো প্রকার ইটভাটার ছাড়পত্র নেই। এবং কোনোটির জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সও নেই। অর্থাৎ ৩৩টি ইটভাটায় এখন অবৈধভাবে ইট তৈরি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ২-৩ ফসলি উর্বর কৃষি জমির ওপর। রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এলজিইডি সড়ক। আবার বেশিরভাগ ইটভাটার পাশেই রয়েছে স্কুল ও ক্লিনিক। এই ইটভাটাগুলোর জন্য কৃষি জমির উপরিভাগের টপসয়েল জাতীয় মাটি কেটে ইটভাটায় আনা হচ্ছে। কিছু কিছু ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য পাহাড়ের সমান বিশাল বিশাল মাটির স্তুপ করে রেখেছে। ইতোমধ্যে দুই-চারটি ইটভাটা বাদে সব কয়টি ইটভাটায় আগুন দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। চলমান রয়েছে ইটভাটার কাজ। এই ইটভাটাগুলোর মাত্র ১শ থেকে ২শ গজ দূরত্বেই রয়েছে জনবসতি ও বাড়ি-ঘর। আবার কোথাও কোথাও রয়েছে স্কুল। এসব ইটভাটার কারণে জনবসতি এলাকার গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানে বসবাসকারী লোকজন। কয়েকটি ইটভাটা সংলগ্ন বাড়ির মালিকরা জানান, ইটভাটার কারণে তাদের ফলজ গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাঠের ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়টি তারা স্থানীয় প্রশাসনকে বহুবার জানালেও। কিন্ত তাতে তারা কোনো ফল পাননি। চকগোপীনাথপুরের মাঠে নির্মিত ফাইম ইটভাটার মালিক সানোয়ার হোসেন বলেন, আমি এখানে কিছু জমি লিজ ও ক্রয় করে এই ইটভাটাটি নির্মাণ করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স পেয়েছেন কিনা বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। কোন অনুমতি পাইনি। তাহলে কিভাবে কৃষি জমি ও জনবসতি এলাকায় আপনি ইটভাটা নির্মাণ করে ইট পোড়াছেন প্রশ্ন করলে তিনি এর কোন উত্তর দেননি। পাহাড়পুর ইউনিয়নের এমবিএফ ইটভাটার মালিক এনামুল হকের কাছে ইটভাটর লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বদলগাছীতে কারো কোনো কাগজপত্র নেই। তাহলে আপনারা কিভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের একটি ইটভাটা সমিতি রয়েছে সেই সমিতি সব ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে চাঁদা তোলে। এবং সেই টাকা দিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই আমারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন ইটভাটার মালিক বলেন, আমাদের উপজেলার প্রায় সব ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন অনুমোদন, কৃষি অফিসের প্রত্যয়ন, ছাড়পত্র, নিবন্ধন ও লাইসেন্স। আমরা উপজেলা প্রশাসনসহ সব সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করেই ইটভাটাগুলো চালাচ্ছি। বদলগাছী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের উপজেলায় ইটভাটার কারো কোন লাইসেন্স নেই। ইটভাটার মালিকরা বলছেন, ইটভাটা সমিতির সভাপতি ও আপনি বিভিন্ন দিবসে প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর প্রদান না করে এই প্রতিনিধিকে বলেন আমি আপনার সাথে পরে দেখা করব। বদলগাছী ইটভাটা সমিতির সভাপতি এনামুল কবির বলেন, আমরা কিভাবে ব্যবসা করব সেটা আমাদের বিষয়।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয়- ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং ২০১৯ সালে এটি সংশোধন করা হয়। এই আইনে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত কেউ ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না। কিন্তু বাস্তবে কনো প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে তারা প্রকাশ্যে ইট প্রস্তুত অব্যাহত রেখেছেন। পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, বাজার, স্কুল, কলেজ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ধোঁয়াবিহীন ইট পোড়াতে হবে। কৃষি জমি থেকে কোন মাটি কেটে নেওয়া যাবে না ও এলজিডির রাস্তা ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে রাখা হয়েছে জেল ও জরিমানার বিধান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, এই উপজেলায় একটি ইটভাটাও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। ইটভাটার কারণে এক দিকে কমছে কৃষিজমি অন্যদিকে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের ও ফসলের। ইটভাটায় কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কাটা বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগের টপসয়েল মাটি কাটার কারণে জমির উর্বরাশক্তি কমে যায় এ কারণে সেই জমিতে তেমন কোন ফসল ভাল ফলন হয়না। ওই জমির টপসয়েল পুরুন হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ বছর। বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান ছনি বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। খোঁজখবর নিয়ে দেখে আমি এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, আমি আজকেও জেলা প্রশাসকের অফিসে আছি। কিন্তু আমাকে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হচ্ছে না। তাই অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। আপনি কি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযানের জন্য বলেছেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ইউএনও সাহেবের কাছে গেলে তিনি বলেন আপনি জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে যান। তারা যদি সহযোগিতা না করেন তাহলে আমরা অভিযান পরিচালনা করব কিভাবে। বছরে আমরা ঢাকা থেকে একবার ম্যাজিস্ট্রেট পাই তখন কিছু অভিযান পরিচালনা করি। নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তালিকা করে একটি রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট হাতে পেলেই এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এলাকার সচেতনমহল বলেন, ইটভাটার কালোধোঁয়ার কারণে আমাদের পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও কোনো প্রশাসনই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এতে করে মনে হচ্ছে নাম মাত্র আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু তার কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তাই আমারা আমাদের এলাকায় এসব অবৈধ ইটভাটার কোলোধোঁয়া, কৃষি জমি, পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।