স্থাপনা তৈরির হিড়িক, সঙ্কুচিত হচ্ছে খালের গতিপথ
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের প্রবাহমান ‘গোয়ারফাঁড়ি শাখা খাল’ দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। খালটি দখলে নিয়ে বাঁধ দিয়ে বর্তমানে সেখানে স্থায়ীভাবে অবৈধ দোকানঘর নির্মাণের হিড়িক চলছে। ইতোপূর্বে খালটি জবরদখল মুক্ত করতে প্রশাসনিকভাবে বাধা নিষেধ করে ও একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দখল চেষ্টা বন্ধ করে দিলেও বর্তমানে নতুন করে দখলকা- শুরু করেছে অভিযুক্ত দখলবাজ চক্রটি।
এ অবস্থায় সংকোচিত হচ্ছে খালটির গতিপথ। এতে খালে স্বাভাবিক পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে আগামীতে স্থানীয় কৃষকেরা চাষের জমিতে সেচ সুবিধা নিয়ে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকরা।
এলাকাবাসী সুত্রে জানাগেছে, মিঠা পানির অভাবে বর্তমানে ওই এলাকায় ইরি-বোরো চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে কৃষকদের সেচ সুবিধা অনিশ্চিতের পাশাপাশি ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবশ্য খালটি দখলমুক্ত করতে স্থানীয়রা ২০১৩সালের ১জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারে একটি অভিযোগ জমা দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেসময় পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের তৎকালীণ সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন এবং কোন ধরনের স্থাপনা না নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।
এদিকে, স্থানীয় সচেতন লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে খাল দখলের বিষয়টি জানতে পেরে সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভূমিদস্যুরা তাদের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাদ্দাম হোসেন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনকে তোয়াক্কা না করে দুই বার ভেঙে দেওয়ার পরও পূণরায় মাটি ভরাট করে স্থানীয় মৃত মোহাম্মদ কালুর ছেলে নুরুল কাদের, মৃত আকবর আহমদের ছেলে শামসুল আলম, তমিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চক্র বর্তমানে খালের উপর ভবন নির্মাণের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
বদরখালী কৃষি ও উপনিবেশ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানান, খাল দখলের ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে অভিযুক্ত ব্যক্তি জোরপূর্বক দখলযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। একইসাথে দোকানঘরও নির্মাণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অভিযুক্তদেরকে সমিতির পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বদরখালী ২ নম্বর ব্লকের নয়াপাড়া, বর্ষা মৌসুমে অতি বর্ষণ ও বন্যার পানি ভাটির দিকে নেমে যাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে গোয়ারফাঁড়ি খালের দখলে নেওয়া পয়েন্টটি।
তাছাড়া উপকূলীয় এলাকায় নৌ-যোগাযোগের মাধ্যমও হচ্ছে এটি। কিন্তু সেটি রাতারাতি দখলে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাথেই পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, খুব সহসা এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র।’ এছাড়াও গোয়ারফাঁড়ি খালের ঘাটে লবণবাহী ও ধান বোঝাই ইঞ্জিল চালিত নৌকা ভিড়তেও বিড়ম্বনা পোহাতে হবে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লবণ চাষিরা।
এ ব্যাপারে বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরে হোসাইন আরিফ বলেন, ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক পরিবারের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম মিঠা পানির খালটি দখলে নেওয়ায় দু:চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তাছাড়া ভয়াবহ বন্যার সময়ও পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র পথ এই গোয়ারফাঁড়ি খাল। তাই জনস্বার্থ বিবেচনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
এদিকে বিষয়টির আলোকে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বদরখালী সমিতির বর্তমান পরিচালক আবদুল আজিজ এলাকাবাসির পক্ষে বাদি হয়ে গত ১৪জানুয়ারি পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, গোয়ারফাঁড়ি’ খালটির কিছু অংশ এর আগেও ভূমিদস্যুচক্র দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। পরে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করে। এ ঘটনায় সম্প্রতি আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে একজন একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এব্যাপারে তদন্ত করে শীঘ্রই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থাপনা তৈরির হিড়িক, সঙ্কুচিত হচ্ছে খালের গতিপথ
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের প্রবাহমান ‘গোয়ারফাঁড়ি শাখা খাল’ দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। খালটি দখলে নিয়ে বাঁধ দিয়ে বর্তমানে সেখানে স্থায়ীভাবে অবৈধ দোকানঘর নির্মাণের হিড়িক চলছে। ইতোপূর্বে খালটি জবরদখল মুক্ত করতে প্রশাসনিকভাবে বাধা নিষেধ করে ও একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দখল চেষ্টা বন্ধ করে দিলেও বর্তমানে নতুন করে দখলকা- শুরু করেছে অভিযুক্ত দখলবাজ চক্রটি।
এ অবস্থায় সংকোচিত হচ্ছে খালটির গতিপথ। এতে খালে স্বাভাবিক পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে আগামীতে স্থানীয় কৃষকেরা চাষের জমিতে সেচ সুবিধা নিয়ে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকরা।
এলাকাবাসী সুত্রে জানাগেছে, মিঠা পানির অভাবে বর্তমানে ওই এলাকায় ইরি-বোরো চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে কৃষকদের সেচ সুবিধা অনিশ্চিতের পাশাপাশি ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবশ্য খালটি দখলমুক্ত করতে স্থানীয়রা ২০১৩সালের ১জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারে একটি অভিযোগ জমা দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেসময় পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের তৎকালীণ সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন এবং কোন ধরনের স্থাপনা না নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।
এদিকে, স্থানীয় সচেতন লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে খাল দখলের বিষয়টি জানতে পেরে সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভূমিদস্যুরা তাদের নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাদ্দাম হোসেন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনকে তোয়াক্কা না করে দুই বার ভেঙে দেওয়ার পরও পূণরায় মাটি ভরাট করে স্থানীয় মৃত মোহাম্মদ কালুর ছেলে নুরুল কাদের, মৃত আকবর আহমদের ছেলে শামসুল আলম, তমিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চক্র বর্তমানে খালের উপর ভবন নির্মাণের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
বদরখালী কৃষি ও উপনিবেশ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানান, খাল দখলের ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে অভিযুক্ত ব্যক্তি জোরপূর্বক দখলযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। একইসাথে দোকানঘরও নির্মাণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অভিযুক্তদেরকে সমিতির পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বদরখালী ২ নম্বর ব্লকের নয়াপাড়া, বর্ষা মৌসুমে অতি বর্ষণ ও বন্যার পানি ভাটির দিকে নেমে যাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে গোয়ারফাঁড়ি খালের দখলে নেওয়া পয়েন্টটি।
তাছাড়া উপকূলীয় এলাকায় নৌ-যোগাযোগের মাধ্যমও হচ্ছে এটি। কিন্তু সেটি রাতারাতি দখলে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাথেই পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, খুব সহসা এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র।’ এছাড়াও গোয়ারফাঁড়ি খালের ঘাটে লবণবাহী ও ধান বোঝাই ইঞ্জিল চালিত নৌকা ভিড়তেও বিড়ম্বনা পোহাতে হবে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লবণ চাষিরা।
এ ব্যাপারে বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরে হোসাইন আরিফ বলেন, ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক পরিবারের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম মিঠা পানির খালটি দখলে নেওয়ায় দু:চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তাছাড়া ভয়াবহ বন্যার সময়ও পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র পথ এই গোয়ারফাঁড়ি খাল। তাই জনস্বার্থ বিবেচনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
এদিকে বিষয়টির আলোকে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বদরখালী সমিতির বর্তমান পরিচালক আবদুল আজিজ এলাকাবাসির পক্ষে বাদি হয়ে গত ১৪জানুয়ারি পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, গোয়ারফাঁড়ি’ খালটির কিছু অংশ এর আগেও ভূমিদস্যুচক্র দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। পরে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করে। এ ঘটনায় সম্প্রতি আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে একজন একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এব্যাপারে তদন্ত করে শীঘ্রই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।