রাজশাহীর বাঘায় অসময়ে পদ্মা নদী ভাঙনে ভিটেহারা হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করে হাজারও পরিবার। ভাঙনে ভিটেমাটি হারা হয়েছেন কয়েক বছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারে প্রায় ৬ হাজার মানুষ। ভাঙনে কয়েকটি ওয়ার্ডের তিন ভাগের দুইভাগ নদীতে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন সময় ভিটেমাটি হারা অধিকাংশ মানুষ আর কিনতে পারেনি বসতবাড়ির জায়গা। ১ হাজার পরিবার অন্য চরে চুক্তিভিত্তিতে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
চকরাজাপুর ইউনিয়নে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। এসব মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস কৃষিকাজ এবং নদীতে মাছ শিকার করা। নিম্ন আয়ের মানুষ চরে বসতভিটা ছাড়াও কারো কারো শত শত বিঘা কৃষিজমি ছিল। বিভিন্ন সময় নদীভাঙনে বসতভিটা ও কৃষিজমি বিলীনের ফলে তারা অন্য চরে এসে জমি কিনে বাড়ি করতে পারেনি। এসব মানুষের কেউ কেউ চরছাড়া হয়েছেন। তবে অনেকের স্থান হয়েছে ভাড়া জমিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নে ১৫টি চর রয়েছে। এই চরে জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। উপজেলায় ২৬ কিলোমিটার এলাকা পদ্মা নদী রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ কিলোমিটার চকরাজাপুর ইউনিয়নের মধ্যে। পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নে ৩টি চর নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ৩টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল স্থানান্তর করা হয়েছে অন্য চরে। চকরাজাপুর হাইস্কুল রক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে বালুর বস্তা।
এছাড়া ভাঙনে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চকরাজাপুর, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিদাসখালী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চকরাজাপুর। এছাড়া আংশিক টিকে আছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দাদপুর, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশি ফতেপুর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমাদিয়া, কালিদাশখালির কিছু অংশ। এছাড়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনগর, ১ নম্বর ওয়ার্ডের আতারপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমাদিয়া। এসব এলাকার বিদ্যুতের ১৫০টি পোল সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আবদুর রহমান শিকদার বলেন, ‘৬৬ বছরের জীবনে বেশ কয়েকবার পেশা বদল করে এখন জেলে হয়েছি। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। আগে চকরাজাপুর চরের বাসিন্দা থাকলেও এখন কালিদাসখালী চরের বাসিন্দা। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করি। স্বাধীনতার পরে বাড়ি ছিল চকরাজাপুর চরে। সেখানে দীর্ঘদিন বসবাস করি। এক এক করে ১২ বার পদ্মা নদীতে ভিটেমাটি বিলীন হয়েছে। ১২ বার জায়গা পরিবর্তন করে ঘর তুলেছি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে নদীভাঙনের পরে আর পদ্মার চরে জায়গা হয়নি।’ ৬০ বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।
৮ বছর ধরে অন্যের কাছে থেকে জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করছি। চকরাজাপুর চরে ১ বিঘা জমি ভাড়া নেয়া হয়েছে। সেখানে এক ভাই বসবাস করেন। দুই ভাই এক বিঘা জমি ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। আমার খুব কষ্ট লাগেরে বাবা এক সময় আমি ৬০ বিঘা জমির মালিক ছিলাম। এখন মাথা গুজার ঠাঁই নেই। তবে নদীতে বিলীন হওয়া ওই সব জমির কাগজপত্র এখনও কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু জমি নেই।’
আবদুর রহমান শিকদার আরও বলেন, ‘নিজের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি চোখের সামনে নদীতে বিলীন হতে দেখেছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখিছি। কিছু বলার ও করার ছিল না। যতটুকু করার ছিল, তাহলে ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া। তাই করেছি। বেশি কিছু করতে পারিনি। পায়ের নিচে ভেঙে নদীতে যায়। তখন সেখান থেকে দূরে যায়। আবার সেখানেও ভেঙে যায়। সেখান থেকে সরে যায়। এমন দৃশ্য খুব মনে পড়ে। কয়েক বছরের মধ্যে ৬০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। চোখের সামনে এগুলো দেখেছি, খুব কষ্ট হয়েছে। রাতারাতি সহায় সম্পদ বিলীন হয়েছে।’
শুধু তাই নয়, এই চরে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন, গৃহিনী উর্মি বেগম ও গৃহিণী সাইলা আক্তার শিল্পীর মতো প্রায় এক হাজারের বেশি পরিবার।
কালিদাসখালী চরের গৃহিণী উর্মি বেগম বলেন, তিন থেকে চার বছরের চুক্তিতে জমি ভাড়া নেয়া হয়। এই জমি মৌখিক চুক্তি হয়ে থাকে। কাগজ-কলমে খুব কম চুক্তি হয়। পুরো চরে বছরে এক হাজার টাকা কাঠা চুক্তিতে জমি ভাড়া পাওয়া যায়। আমি এভাবে জমি ভাড়া নিয়ে ঘর করে বসবাস করছি।
কালিদাসকালী চরের আবদুর রাজ্জাক বলেন, অনেকের জায়গা-জমি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জমি ভাড়া নিয়ে চরে বসবাস করছেন। বছর চুক্তিতে চরের মানুষ জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। আমি ১৫ কাঠা জমি অন্য মানুষকে ভাড়া দিয়েছি।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার দেওয়ান বলেন, অনেকেই ১০-১৫ বার ভাঙনে বাড়ি স্থানান্তর করেছেন। হয়েছেন। এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনসংখার হিসেবে প্রায় ৬ হাজার মানুষ নদীতে বিলীনের পর আর জমি কিনে বাড়ি করতে পারেনি। চুক্তিভিত্তিতে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
রাজশাহীর বাঘায় অসময়ে পদ্মা নদী ভাঙনে ভিটেহারা হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করে হাজারও পরিবার। ভাঙনে ভিটেমাটি হারা হয়েছেন কয়েক বছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারে প্রায় ৬ হাজার মানুষ। ভাঙনে কয়েকটি ওয়ার্ডের তিন ভাগের দুইভাগ নদীতে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন সময় ভিটেমাটি হারা অধিকাংশ মানুষ আর কিনতে পারেনি বসতবাড়ির জায়গা। ১ হাজার পরিবার অন্য চরে চুক্তিভিত্তিতে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
চকরাজাপুর ইউনিয়নে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। এসব মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস কৃষিকাজ এবং নদীতে মাছ শিকার করা। নিম্ন আয়ের মানুষ চরে বসতভিটা ছাড়াও কারো কারো শত শত বিঘা কৃষিজমি ছিল। বিভিন্ন সময় নদীভাঙনে বসতভিটা ও কৃষিজমি বিলীনের ফলে তারা অন্য চরে এসে জমি কিনে বাড়ি করতে পারেনি। এসব মানুষের কেউ কেউ চরছাড়া হয়েছেন। তবে অনেকের স্থান হয়েছে ভাড়া জমিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নে ১৫টি চর রয়েছে। এই চরে জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। উপজেলায় ২৬ কিলোমিটার এলাকা পদ্মা নদী রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ কিলোমিটার চকরাজাপুর ইউনিয়নের মধ্যে। পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নে ৩টি চর নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ৩টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল স্থানান্তর করা হয়েছে অন্য চরে। চকরাজাপুর হাইস্কুল রক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে বালুর বস্তা।
এছাড়া ভাঙনে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চকরাজাপুর, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিদাসখালী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চকরাজাপুর। এছাড়া আংশিক টিকে আছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দাদপুর, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশি ফতেপুর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমাদিয়া, কালিদাশখালির কিছু অংশ। এছাড়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনগর, ১ নম্বর ওয়ার্ডের আতারপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমাদিয়া। এসব এলাকার বিদ্যুতের ১৫০টি পোল সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আবদুর রহমান শিকদার বলেন, ‘৬৬ বছরের জীবনে বেশ কয়েকবার পেশা বদল করে এখন জেলে হয়েছি। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। আগে চকরাজাপুর চরের বাসিন্দা থাকলেও এখন কালিদাসখালী চরের বাসিন্দা। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করি। স্বাধীনতার পরে বাড়ি ছিল চকরাজাপুর চরে। সেখানে দীর্ঘদিন বসবাস করি। এক এক করে ১২ বার পদ্মা নদীতে ভিটেমাটি বিলীন হয়েছে। ১২ বার জায়গা পরিবর্তন করে ঘর তুলেছি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে নদীভাঙনের পরে আর পদ্মার চরে জায়গা হয়নি।’ ৬০ বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।
৮ বছর ধরে অন্যের কাছে থেকে জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করছি। চকরাজাপুর চরে ১ বিঘা জমি ভাড়া নেয়া হয়েছে। সেখানে এক ভাই বসবাস করেন। দুই ভাই এক বিঘা জমি ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। আমার খুব কষ্ট লাগেরে বাবা এক সময় আমি ৬০ বিঘা জমির মালিক ছিলাম। এখন মাথা গুজার ঠাঁই নেই। তবে নদীতে বিলীন হওয়া ওই সব জমির কাগজপত্র এখনও কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু জমি নেই।’
আবদুর রহমান শিকদার আরও বলেন, ‘নিজের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি চোখের সামনে নদীতে বিলীন হতে দেখেছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখিছি। কিছু বলার ও করার ছিল না। যতটুকু করার ছিল, তাহলে ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া। তাই করেছি। বেশি কিছু করতে পারিনি। পায়ের নিচে ভেঙে নদীতে যায়। তখন সেখান থেকে দূরে যায়। আবার সেখানেও ভেঙে যায়। সেখান থেকে সরে যায়। এমন দৃশ্য খুব মনে পড়ে। কয়েক বছরের মধ্যে ৬০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। চোখের সামনে এগুলো দেখেছি, খুব কষ্ট হয়েছে। রাতারাতি সহায় সম্পদ বিলীন হয়েছে।’
শুধু তাই নয়, এই চরে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন, গৃহিনী উর্মি বেগম ও গৃহিণী সাইলা আক্তার শিল্পীর মতো প্রায় এক হাজারের বেশি পরিবার।
কালিদাসখালী চরের গৃহিণী উর্মি বেগম বলেন, তিন থেকে চার বছরের চুক্তিতে জমি ভাড়া নেয়া হয়। এই জমি মৌখিক চুক্তি হয়ে থাকে। কাগজ-কলমে খুব কম চুক্তি হয়। পুরো চরে বছরে এক হাজার টাকা কাঠা চুক্তিতে জমি ভাড়া পাওয়া যায়। আমি এভাবে জমি ভাড়া নিয়ে ঘর করে বসবাস করছি।
কালিদাসকালী চরের আবদুর রাজ্জাক বলেন, অনেকের জায়গা-জমি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জমি ভাড়া নিয়ে চরে বসবাস করছেন। বছর চুক্তিতে চরের মানুষ জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। আমি ১৫ কাঠা জমি অন্য মানুষকে ভাড়া দিয়েছি।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার দেওয়ান বলেন, অনেকেই ১০-১৫ বার ভাঙনে বাড়ি স্থানান্তর করেছেন। হয়েছেন। এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনসংখার হিসেবে প্রায় ৬ হাজার মানুষ নদীতে বিলীনের পর আর জমি কিনে বাড়ি করতে পারেনি। চুক্তিভিত্তিতে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।