উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : খেত থেকে টমেটো তুলছেন কৃষক -সংবাদ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে টমেটো চাষ করে কয়েক গুণ লাভ পাচ্ছেন টমেটো চাষিরা। ভালো ফলন ও দামে খুশি কৃষকরা। গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড টমেটো খেতে বেশ সুস্বাদু। বাজারেও রয়েছে এই টমেটোর ব্যাপক চাহিদা। স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদন করে চড়া দামে টমেটো বিক্রয় হওয়ার কারণে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার আশায় মাচা পদ্ধতিতে টমেটো চাষের দিকে ঝুঁকছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি উর্বর হওয়ায় টমেটো চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এলাকায়। সাধারণত গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড জাতের টমেটো গাছ লাগানোর ২-৩ মাসের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। চার পাঁচ মাস পর্যন্ত ক্ষেত (জমি) থেকে টমেটো সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যায়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় ১ হাজার ৯০ হেক্টর। তার মধ্যে টমেটো চাষও রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে টমেটো চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্স দেয়া অব্যাহত রয়েছে।
সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করেছেন। আবার ক্ষেত্র বিশেষে বারি জাতের টমেটো চাষ করতে দেখা গেছে জমিতে। প্রথম বছর টমেটো উৎপাদন করতে খরচ বেশি হলেও পরবর্তী থেকে খরচ কম হয় বলে জানান চাষিরা।
টমেটো চাষিরা জানান, ইউনাইটেড সিড জাতের টমেটো চাষ করতে, বীজতলা থেকে চারা তৈরি করতে হয়। জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে তৈরি করে জমিতে পলিথিন বিছিয়ে তা ছোট ছিদ্র করে চারা লাগাতে হয়। ফুল আসার পর পাটখড়ি, বাঁশের কঞ্চি, দড়ি ও তার দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। গাছ বড় হলে মাচার ওপর তুলে দিতে হয়। ফলগুলো মাচায় ঝুলে থাকে। ফলগুলো মাটিতে ঠেকে থাকলে দ্রুত পচে যায়।
মাচায় টমেটো চাষ করলে নষ্ট কম হয়। সঠিক পরিচর্যা ও পরিশ্রমের ফলে ফলন বেশি হয়। কয়েক গুণ লাভ পাওয়া যায়। উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের টাপুরকুটি গ্রামের হাফিজুর রহমান জানান, তিনি ৮ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছেন। টমেটো চাষ লাভজনক একটি ফসল। গ্রামের সবাই কম-বেশি চাষ করেছেন। প্রতিটি গাছে ৪০-৫০টি টমেটো ধরে। প্রতি কেজি টমেটো ১৮-২০ টাকা কেজি করে পাইকেরিতে বিক্রি করেছেন। ফলন আসা পর্যন্ত টমেটো চাষে মোট খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত টমেটো বাজারজাত করা হয়েছে ৫০ মণ। মণ প্রতি ৮শ টাকা দরে বিক্রি করে মোট আয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ক্ষেতে যে ফলন আছে তাতে আরও ৩০ থেকে ৪০ মণ টমেটোর আশা করছেন। ফলে আরও ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আয়ের আশা করছেন এ টমেটো চাষি। আগামীতে আরও বেশি করে টমেটো চাষাবাদ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের টমেটো চাষি রুহুল আমীন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এবারে ৩৩ শতক জমিতে প্রথম টমেটো চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তার আশা অনেক লাভবান হবেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার টমেটো চাষিদের মধ্যে এরশাদ, রমজান আলী, রাজু মিয়া ও মোকলেস মিয়াসহ আরও অনেকে বলেন, গত বছর টমেটো চাষে লাভ করতে পারিনি। বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেক গাছ মারা যাওয়ায় তেমন ফলন হয়নি আর বাজারদরও ভালো ছিল না সব মিলিয়ে লোকসান হয়েছিল। এ বছর আমরা বারি-৪, বারি-৫ ও টিপু সুলতান জাতের টমেটো বীজ বপন করায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় টমেটো বিক্রি করে অনেক লাভবান হতে পারছি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের টাপুরকুটি গ্রামে আমার ব্লকে অনেক কৃষক টমেটো সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করেছেন।
ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। এ সব সবজি চাষিদের মাঠে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন জানান, টমেটো খেতে বেশ সুস্বাদু। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসেই ব্যাপক ফলন পেয়ে থাকেন কৃষকরা।
কৃষকদের সফলতা ও আগ্রহ বাড়ায় আসামিতে বেশি বেশি বারি হাইব্রিড টমেটো চাষের জন্য চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : খেত থেকে টমেটো তুলছেন কৃষক -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
কুড়িগ্রামের উলিপুরে টমেটো চাষ করে কয়েক গুণ লাভ পাচ্ছেন টমেটো চাষিরা। ভালো ফলন ও দামে খুশি কৃষকরা। গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড টমেটো খেতে বেশ সুস্বাদু। বাজারেও রয়েছে এই টমেটোর ব্যাপক চাহিদা। স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদন করে চড়া দামে টমেটো বিক্রয় হওয়ার কারণে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার আশায় মাচা পদ্ধতিতে টমেটো চাষের দিকে ঝুঁকছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি উর্বর হওয়ায় টমেটো চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এলাকায়। সাধারণত গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড জাতের টমেটো গাছ লাগানোর ২-৩ মাসের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। চার পাঁচ মাস পর্যন্ত ক্ষেত (জমি) থেকে টমেটো সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যায়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় ১ হাজার ৯০ হেক্টর। তার মধ্যে টমেটো চাষও রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে টমেটো চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্স দেয়া অব্যাহত রয়েছে।
সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করেছেন। আবার ক্ষেত্র বিশেষে বারি জাতের টমেটো চাষ করতে দেখা গেছে জমিতে। প্রথম বছর টমেটো উৎপাদন করতে খরচ বেশি হলেও পরবর্তী থেকে খরচ কম হয় বলে জানান চাষিরা।
টমেটো চাষিরা জানান, ইউনাইটেড সিড জাতের টমেটো চাষ করতে, বীজতলা থেকে চারা তৈরি করতে হয়। জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে তৈরি করে জমিতে পলিথিন বিছিয়ে তা ছোট ছিদ্র করে চারা লাগাতে হয়। ফুল আসার পর পাটখড়ি, বাঁশের কঞ্চি, দড়ি ও তার দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। গাছ বড় হলে মাচার ওপর তুলে দিতে হয়। ফলগুলো মাচায় ঝুলে থাকে। ফলগুলো মাটিতে ঠেকে থাকলে দ্রুত পচে যায়।
মাচায় টমেটো চাষ করলে নষ্ট কম হয়। সঠিক পরিচর্যা ও পরিশ্রমের ফলে ফলন বেশি হয়। কয়েক গুণ লাভ পাওয়া যায়। উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের টাপুরকুটি গ্রামের হাফিজুর রহমান জানান, তিনি ৮ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছেন। টমেটো চাষ লাভজনক একটি ফসল। গ্রামের সবাই কম-বেশি চাষ করেছেন। প্রতিটি গাছে ৪০-৫০টি টমেটো ধরে। প্রতি কেজি টমেটো ১৮-২০ টাকা কেজি করে পাইকেরিতে বিক্রি করেছেন। ফলন আসা পর্যন্ত টমেটো চাষে মোট খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত টমেটো বাজারজাত করা হয়েছে ৫০ মণ। মণ প্রতি ৮শ টাকা দরে বিক্রি করে মোট আয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ক্ষেতে যে ফলন আছে তাতে আরও ৩০ থেকে ৪০ মণ টমেটোর আশা করছেন। ফলে আরও ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আয়ের আশা করছেন এ টমেটো চাষি। আগামীতে আরও বেশি করে টমেটো চাষাবাদ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের টমেটো চাষি রুহুল আমীন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এবারে ৩৩ শতক জমিতে প্রথম টমেটো চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তার আশা অনেক লাভবান হবেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার টমেটো চাষিদের মধ্যে এরশাদ, রমজান আলী, রাজু মিয়া ও মোকলেস মিয়াসহ আরও অনেকে বলেন, গত বছর টমেটো চাষে লাভ করতে পারিনি। বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেক গাছ মারা যাওয়ায় তেমন ফলন হয়নি আর বাজারদরও ভালো ছিল না সব মিলিয়ে লোকসান হয়েছিল। এ বছর আমরা বারি-৪, বারি-৫ ও টিপু সুলতান জাতের টমেটো বীজ বপন করায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় টমেটো বিক্রি করে অনেক লাভবান হতে পারছি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের টাপুরকুটি গ্রামে আমার ব্লকে অনেক কৃষক টমেটো সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করেছেন।
ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। এ সব সবজি চাষিদের মাঠে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন জানান, টমেটো খেতে বেশ সুস্বাদু। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসেই ব্যাপক ফলন পেয়ে থাকেন কৃষকরা।
কৃষকদের সফলতা ও আগ্রহ বাড়ায় আসামিতে বেশি বেশি বারি হাইব্রিড টমেটো চাষের জন্য চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।