শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ): শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মালচিং পদ্ধতিতে বেগুন,শোষা ও কাঁচা মরিচ চাষ করা হচ্ছে। ছবি- বিমল কুন্ডু
শাহজাদপুরে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষিতে প্রতিনিয়ত যুুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। নতুন এসব প্রযুক্তির ছোয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষির চিত্র, বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। তেমনই একটি প্রযুক্তি হলো পলি মালচিং ব্যবহারে চাষাবাদ। লাভজনক এই পদ্ধতিতে উপজেলার কৃষকরা শীতকালীন সবজি স্কোয়াস, টমেটো, বেগুন, শসা, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। এর ফলে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ।
জানা গেছে, এই পদ্ধতিতে কৃষিজমি চাষ দিয়ে জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বেড আকারে তৈরি করা হয় এবং পলি মালচিং শিট দিয়ে বেড ঢেকে দেয়া হয়। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে মালচিং পেপার ফুটো করে সবজি চারা রোপণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে আগাছা, রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ অনেক কম হয়, এছাড়া মালচিং এর ফলে জমির আদ্রতা ১০% থেকে ২৫% সংরক্ষিত হয়। তাই এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়। উপজেলার পৌরসভাসহ রুপবাটি, নরিনা, গাড়াদহ, খুকনী, পোরজনা, গালা ও কৈজুরী ইউনিয়নে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে , শাহজাদপুর উপজেলায় প্রায় ২.৫ হেক্টর জমিতে পলি মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। যার মধ্যে ১৩৬ শতক জমিতে স্কোয়াশ, ১৩০ শতক জমিতে কাচা মরিচ, ১৫৭ শতক জমিতে শসা, ১২৫ শতক জমিতে বেগুন, ৫০ শতক জমিতে টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হচ্ছে।
উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের নাববিলা গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী জানান, তিনি ১৪ শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন। এতে তার উৎপাদন খরচ হয়েচে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তিনি উৎপাদিত টমেটো ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার প্রায় ৫৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। রুপবাটি ইউনিয়নের চর ধুনাইল গ্রামের কৃষক নান্নু প্রমাণিক ৩৩ শতক জমিতে, নজরুল ইসলাম ৪৫ শতক জমিতে, বড় ধুনাইল গ্রামের আব্দুস সালাম ৩৩ শতক জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন। তারা জানান, মালচিং পদ্ধতিতে স্কোয়াশ চাষ করে উৎপাদিত স্কোয়াস বিক্রি করে বিঘা প্রতি প্রায় ৮০ হাজার টাকা লাভ থাকে। অন্যদিকে নরিনা গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন জানান, তিনি মালচিং পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে উন্নত জাতের বেগুন চাষ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, বারি বেগুন-১২, গ্রীনবল, পার্পল কিং ও জয়পুরী জাতের বেগুন। এছাড়া রুপবাটি ইউনিয়নের সওদামারা গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া জানান, তিনি মালচিং পদ্ধতিতে ২৮ শতক জমিতে শশা চাষ করছেন। এদিকে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ খুব লাভজনক হওয়ায় মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ ক্রমশই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ জানান যে, মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ একটি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মাটিতে আদ্রতা ২৫% পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সুতরাং, সেচ খরচ কৃষক পর্যায়ে এক-চতুর্থাংশ কমে যায়। এছাড়া এই পদ্ধতিতে জমিতে আগাছা সৃষ্টি হয় না, ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কম হয়। অন্যদিকে ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেশির ভাগ এলাকায় কৃষক নিজ উদ্যোগে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। তবে যেসব জমি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে সেসব জমিতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, মালচিংসহ (বিশেষ এক ধরনের পলিথিন) বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করা কৃষকদের কারগরি সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ): শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মালচিং পদ্ধতিতে বেগুন,শোষা ও কাঁচা মরিচ চাষ করা হচ্ছে। ছবি- বিমল কুন্ডু
মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শাহজাদপুরে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষিতে প্রতিনিয়ত যুুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। নতুন এসব প্রযুক্তির ছোয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষির চিত্র, বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। তেমনই একটি প্রযুক্তি হলো পলি মালচিং ব্যবহারে চাষাবাদ। লাভজনক এই পদ্ধতিতে উপজেলার কৃষকরা শীতকালীন সবজি স্কোয়াস, টমেটো, বেগুন, শসা, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। এর ফলে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ।
জানা গেছে, এই পদ্ধতিতে কৃষিজমি চাষ দিয়ে জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বেড আকারে তৈরি করা হয় এবং পলি মালচিং শিট দিয়ে বেড ঢেকে দেয়া হয়। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে মালচিং পেপার ফুটো করে সবজি চারা রোপণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে আগাছা, রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ অনেক কম হয়, এছাড়া মালচিং এর ফলে জমির আদ্রতা ১০% থেকে ২৫% সংরক্ষিত হয়। তাই এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়। উপজেলার পৌরসভাসহ রুপবাটি, নরিনা, গাড়াদহ, খুকনী, পোরজনা, গালা ও কৈজুরী ইউনিয়নে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে , শাহজাদপুর উপজেলায় প্রায় ২.৫ হেক্টর জমিতে পলি মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। যার মধ্যে ১৩৬ শতক জমিতে স্কোয়াশ, ১৩০ শতক জমিতে কাচা মরিচ, ১৫৭ শতক জমিতে শসা, ১২৫ শতক জমিতে বেগুন, ৫০ শতক জমিতে টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হচ্ছে।
উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের নাববিলা গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী জানান, তিনি ১৪ শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন। এতে তার উৎপাদন খরচ হয়েচে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তিনি উৎপাদিত টমেটো ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার প্রায় ৫৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। রুপবাটি ইউনিয়নের চর ধুনাইল গ্রামের কৃষক নান্নু প্রমাণিক ৩৩ শতক জমিতে, নজরুল ইসলাম ৪৫ শতক জমিতে, বড় ধুনাইল গ্রামের আব্দুস সালাম ৩৩ শতক জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন। তারা জানান, মালচিং পদ্ধতিতে স্কোয়াশ চাষ করে উৎপাদিত স্কোয়াস বিক্রি করে বিঘা প্রতি প্রায় ৮০ হাজার টাকা লাভ থাকে। অন্যদিকে নরিনা গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন জানান, তিনি মালচিং পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে উন্নত জাতের বেগুন চাষ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, বারি বেগুন-১২, গ্রীনবল, পার্পল কিং ও জয়পুরী জাতের বেগুন। এছাড়া রুপবাটি ইউনিয়নের সওদামারা গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া জানান, তিনি মালচিং পদ্ধতিতে ২৮ শতক জমিতে শশা চাষ করছেন। এদিকে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ খুব লাভজনক হওয়ায় মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ ক্রমশই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ জানান যে, মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ একটি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মাটিতে আদ্রতা ২৫% পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সুতরাং, সেচ খরচ কৃষক পর্যায়ে এক-চতুর্থাংশ কমে যায়। এছাড়া এই পদ্ধতিতে জমিতে আগাছা সৃষ্টি হয় না, ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কম হয়। অন্যদিকে ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেশির ভাগ এলাকায় কৃষক নিজ উদ্যোগে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। তবে যেসব জমি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে সেসব জমিতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, মালচিংসহ (বিশেষ এক ধরনের পলিথিন) বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করা কৃষকদের কারগরি সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।