রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে প্রতি বছর তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় এবছর (চলতি বছর) ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বেশি ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে গম ফসলের জমিতে কৃষকরা ভুট্টা চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছে। এছাড়া আগাম সবজির জমিতে ভুট্টা চাষ করে অনায়াসে ২টি ফসল উৎপাদন করতে পারছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, রাজবাড়ীর জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন, উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, ছোটভাকলাসহ একটি পৌরসভা রয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলাটি পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে হওয়ার প্রতি বর্ষা মৗসুমে পানির সঙ্গে নদী থেকে জমিতে পলি মাটি পরায় কৃষিতে ভালো ফলনফলে। এছাড়া গোয়ালন্দে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকাখানা তেমন না থাকায় গোয়ালন্দের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজে নির্ভরশীল। গোয়ালন্দের বছরজুড়ে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে একটি বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মানুষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের একটিতে লাভবান হরেও আর দুইটিতে লোকসান হয় এভাবেই বেঁচে আছে কৃষক। কৃষকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসলের চাষ করে থাকলেও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে গোয়ালন্দ কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে এবং প্রতি বছর ভুট্টার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর (চলতি বছর) ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বেশি ভুট্টা চাষ করেছে কৃষক। এছাড়া বর্তমানে গম ফসলের জমিতে গম চাষ না করে ভুট্টা চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছে কৃষক। এছাড়া আগাম সবজির জমিতে ভুট্টা চাষ করে অনায়াসে ২টি ফসল উৎপাদন করতে পারছে বলে জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন, উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, ছোটভাকলা ও একটি পৌরসভা রয়েছে। উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ রয়েছে ১১,০৩৪ হেক্টর। বর্তমান কৃষি মৌসুমে উপজেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে, বেপারী পাড়া ১১০ হেক্টর, হোসেন মন্ডল পাড়া ৫০ হেক্টর, দক্ষিণ দৌলতদিয়া ৬০ হেক্টর, রাখাল গাছি ২৫ হেক্টর, কাউলজানি ১০ হেক্টর, তেনাপচা ২০ হেক্টর, ছোট ভাকলা ৩০ হেক্টর হাউলি কেউটিল ১৫ হেক্টর, নলডুবি ৩০ হেক্টর, বালিয়া ডাঙ্গা ৪২০ হেক্টর, মঙ্গলপুর ২০০ হেক্টর, হাবিল মন্ডল পাড়া ২২০ হেক্টর মোট ১,১৯৫ হেক্টর জমিতে ভ্ট্রুা হয়েছে। উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এবছর ৪৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।

সরজেমিন উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে ঘুরে ভুট্টাচাষিদের সঙ্গে কথা বললে বাহাদুরপুর এলাকার ভুট্টাচাষি, রাসেল আহম্মেদ (৪২) বলেন, আমি গত বছর ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম এতে আমি লাভবান হয়েছি। তাই এবছর আমি ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টাচাষি রাসেল আহম্মেদ আরও বলেন, ভুট্টা চাষে খরচ কম, ঝুঁকি নেই, লাভ বেশি, পরিশ্রম কম, সব মিলিয়ে ভুট্টা চাষে লাভবান হওয়া যায়। আমার প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষের জন্য খরচ হয়েছে প্রথমে চাষ ও লাঙ্গল খরচ ২ হাজার টাকা, বিজ লাগেছে, ২ কেজি ৫০০ গ্রাম, দাম ৯৫০ টাকা, বিজ রোপণের জন্য লেবার ১২০০ টাকা, পানি সেচ তিন বার, ৩৬০০ টাকা, পরিচর্যায় লেবার খরচ ১৫০০ টাকা, সার লেবার, ৩ হাজার টাকা, ওষুধ লেবার ১ হাজার টাকা। সর্বমোট ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়, যা অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ কম এবং লাভজনক। আমি গত বছর ৩ বিঘা জমিতে বেগুন ও ১০ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তাই এবার আমি সেই জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আবার একই জমিতে গম চাষ করেলে ফলন আসে বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ যদি ভালো হয়। আর ভুট্টার ফলন আসে বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ মণ আমি ভুট্টা চাষে লাভবান বলেন ভুট্টা চাষি রাসেল আহম্মেদ।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. ইমরান হোসেন বলেন, কৃষক গম ফসলের জমিতে ভুট্টার চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছে। কারণ ১ বিঘা জমিতে গম চাষে যে পরিমাণ খরচ হয় আর ভুট্টা চাষে তা হয় না। একই জমিতে গম চাষ করে ফলন আসে ১০-১২ মণ তাও যদি খুব ভালো হলে। আর সেই জমিতে ভুট্টা চাষ করলে গমের চেয়ে খরচ কম ভুট্টার ফলন পাওয়া যায় ৩০-৩৫ মণ যে কারণে কৃষক গমের জমিতে ভুট্টার চাষের দিকে ঝুকছে।

এছাড়া কৃষক আগাম সবজির জমিতে ভুট্টার চাষ করছে কারণ রবি মৌসুমে চাষিরা অনায়াসে ২টি ফসল উৎপাদন করতে পারছে বলেন। তিনি আরও বলেন, এ বছর (চলতি মৌসুম) গোয়ালন্দ উপজেলায় বর্তমানে ১১, ০৩৪ হেক্টর আবাদি রয়েছে মধ্যে ১, ১৯৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। যদি আবহাওয়া ও প্রকৃতি অনুকূলে থাকে তাহলে এবছর ভুট্টার বাম্পা ফলন পাওয়া যাবে ও ভুট্টা চাষে কৃষক লাভবান হবে বলে আশা করছি বলেন ওই কর্মকর্তা।