alt

সারাদেশ

কালের আবর্তে হারিকেন এখন বিলুপ্ত

লিটন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা) : শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী থেকে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এক নিদর্শন হারিকেন। অনেক গল্প, উপন্যাসে হারিকেনের উপমা ব্যবহার হয়েছে। অনেক বাড়িতে সন্ধ্যায় হারিকেন জ্বালানোর আগে পৌঁছাতে না পারলে অভিভাবকের পিটুনি খেতে হয়েছে, এমনও গল্প শোনা গেছে। হারিকেনের আলো জ্বলা মানে পড়াশোনার সময় হয়ে গেছে। সে সময় পড়াশোনাসহ সব ধরনের প্রয়োজনেই ঘরে ঘরে নৈসর্গিক টিম টিমে আলোয় আলোয় জ্বলত হারিকেন।   

বর্তমানে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যাপক প্রসারে গ্রাম বাংলার থেকে কমে গেছে হারিকেন জ্বালানোর প্রথা। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের মতো বিদ্যুতের প্রসার, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিভিন্ন ধরনের চার্জার বাতির ব্যবহারে হারিকেনের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। তাই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।

তবে জানা গেছে, বেতাগীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো কুপির পাশাপাশি হারিকেনের প্রচলন রয়েছে। তবে চার্জার বাতির অধিক ব্যবহারের কারণে সেটাও সংখ্যায় খুব কম। এক সময় হয়ত এটা হারিয়ে জাদুঘরে চলে যাবে। তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ত হারিকেন দেখতে জাদুঘরে যাবে। বইয়ের পাতায় খুঁজবে হারিকেনের ইতিহাস। 

উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের একাধিক বৃদ্ধ নর-নারী জানান, একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে হারিকেন দেখা যেত। তখন হারিকেন মেরামত করতে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিস্ত্রী বসত। উপজেলার প্রতিটি বাজারে ছিল হারিকেন মেরামতোর অস্থায়ী দোকান। তারা বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে ঘুরে হারিকেন মেরামতের কাজ করতেন। এছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়েও হারিকেন মেরামত করতেন। কিন্তু এখন আর হারিকেনের ব্যবহার তেমন একটা না থাকার ফলে হারিকেন মিস্ত্রীদেরও আর দেখা যায় না। ওই সময় হারিকেন মেরামত করেও অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করত।

উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের শিক্ষক সুশান্ত কুমার গাইন জানান, ‘রাতে পড়তে বসার আগে হারিকেন নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে টানাটানি চলতো। হারিকেন নিয়ে কত গল্প শুনেছি। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের চার্জার এলইডি বাল্ব অনেক কম দামে পাওয়া যায়। যার কারণে এখন আর হারিকেনের প্রয়োজন হয় না।’

বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পুলিন বিহারী ঢালী বলেন, ‘বাজারে মুদি মনোহরীর দোকান ছিল। তাই প্রতিদিন রাত ৯-১০টায় দোকান ঘর বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে হারিকেন নিয়ে আসা হতো। এভাবে একটানা ৫৫ বছর যাবত হারিকেন ব্যবহার করছি।’

হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিসা বাজারে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এক সময় হারিকেন নিয়ে ডাকপিয়নরা ছুটে চলতেন গ্রামের পর গ্রামে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই রাতের বেলায় হারিকেন নিয়ে বের হতেন।’

হারিকেনের আলো গৃহস্থালির পাশাপাশি ব্যবহার হতো বিভিন্ন গ্রাাম্য যানবাহনেও। খালে বা নদীতে নৌকার মাঝিরা রাতের বেলায় ব্যবহার করতেন হারিকেন। রাতে কোনো প্রয়োজনে গ্রামের কারো বাড়ি থেকে অন্য কারও বাড়ি যেতে হলে হারিকেন নিয়ে যেতেন। কিন্তু আধুনিকায়নে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বাতিতে বাজার ভরপুর। যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের আলোর অন্যতম উৎস ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।

উপজেলার দক্ষিণ বেতাগী গ্রামের হারিকেন মেরামতকারী আবুল কালাম  বলেন, ‘একযুগ আগেও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিজের হাতে অনেক হারিকেন মেরামত করেছি। ওই সময় এ কাজে ভালো উপার্জন হতো। কিন্তু এখন কারও ঘরে হারিকেন থাকলেও তা কেউ ব্যবহার করে না। এর ফলে মেরামতের কাজও তেমন হয় না। যার কারণে জীবিকার টানে এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছি।’ 

বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, যেসময় হারিকেনের প্রচলন ছিল সেই সময় গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার ও দফাদারদের পাহাড়ার জন্য থানা ও উপজেলা পরিষদ থেকে হারিকেন দেওয়া হতো।’

ছবি

দেবহাটার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৫ নারী জীবন সংগ্রামের সফল কারিগর

ছবি

অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভের আশায় ফুল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

ইয়াবা বিক্রির টাকা চাইতে গিয়ে খুন, গ্রেপ্তার ৩

গলাচিপায় পাটখড়ির গুদামে আগুন, ৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

ছবি

চিরিরবন্দরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শিমুল গাছের ডালে ডালে লাল ফুল

নোয়াখালীতে এমপি একরামুল করিমসহ ৩ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

রাণীনগরের হাট-বাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ

ছবি

নন্দীগ্রামে জমে উঠেছে সরিষার হাট, বিকিকিনিতে খুশি কৃষক

স্বাস্থ্য প্রশাসকের অপসারণ দাবিতে উত্তাল কলাপাড়া

সাদুল্লাপুরে পুকুরে বিলীন গ্রামীণ রাস্তা

কটিয়াদীতে ফসলি জমি রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি

ছবি

গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া জ্বালানি খড়কুটোর গাদা ও খড়ি

ছবি

চট্টগ্রাম মহানগরে বছরে বর্জ্য উৎপাদন হয় ১৯ লাখ টন

নদীর পাড় কেটে খনিজ বালি-পাথর চুরি, কারাগারে ৬

যশোরে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে যুবকের মৃত্যু

নাজিরপুরে ভুয়া পুলিশ সেজে ছিনতাই, গ্রেপ্তার ১

ডেভিল হান্ট অভিযান বাগেরহাটে গ্রেপ্তার ২১

রাউজানে সন্ত্রাসীর গুলিতে ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ

ভোলায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

বদরগঞ্জে হাত বিচ্ছিন্ন নারীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

রাজিবপুরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন

সাভারে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

‘আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার না করলে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে’

মুন্সীগঞ্জে কোটি মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

উলিপুরে চাচাকে অপহরণের অভিযোগ ভাতিজার বিরুদ্ধে

জুয়ায় হেরে বিষপানে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা

ছবি

উল্লাপাড়ায় সৌরবিদ্যুতে চলছে অগভীর সেচ মেশিন

ছবি

শহরবাসীর দুর্ভোগের আরেক নাম সান্তাহার রেলগেট

ছবি

সীতাকুণ্ডে শিবচতুর্দশী মেলা শুরু মঙ্গলবার

ক্ষমতা নিতে নয় বরং দায়িত্ব পালন করতে এসেছি : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

দশমিনায় কৃষক প্রশিক্ষণ শেষে চারা বিতরণ

ভালুকায় অগ্নিকাণ্ডে ৮ ঘর ভস্মীভূত

ছবি

কুমিল্লায় রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হলো শহীদ মিনার

কলমাকান্দায় স্ত্রীর ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে যুবককে হত্যা

অস্ত্র ও ককটেলসহ ৫ ডাকাত গ্রেপ্তার

tab

সারাদেশ

কালের আবর্তে হারিকেন এখন বিলুপ্ত

লিটন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা)

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী থেকে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এক নিদর্শন হারিকেন। অনেক গল্প, উপন্যাসে হারিকেনের উপমা ব্যবহার হয়েছে। অনেক বাড়িতে সন্ধ্যায় হারিকেন জ্বালানোর আগে পৌঁছাতে না পারলে অভিভাবকের পিটুনি খেতে হয়েছে, এমনও গল্প শোনা গেছে। হারিকেনের আলো জ্বলা মানে পড়াশোনার সময় হয়ে গেছে। সে সময় পড়াশোনাসহ সব ধরনের প্রয়োজনেই ঘরে ঘরে নৈসর্গিক টিম টিমে আলোয় আলোয় জ্বলত হারিকেন।   

বর্তমানে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যাপক প্রসারে গ্রাম বাংলার থেকে কমে গেছে হারিকেন জ্বালানোর প্রথা। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের মতো বিদ্যুতের প্রসার, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিভিন্ন ধরনের চার্জার বাতির ব্যবহারে হারিকেনের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। তাই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।

তবে জানা গেছে, বেতাগীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো কুপির পাশাপাশি হারিকেনের প্রচলন রয়েছে। তবে চার্জার বাতির অধিক ব্যবহারের কারণে সেটাও সংখ্যায় খুব কম। এক সময় হয়ত এটা হারিয়ে জাদুঘরে চলে যাবে। তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ত হারিকেন দেখতে জাদুঘরে যাবে। বইয়ের পাতায় খুঁজবে হারিকেনের ইতিহাস। 

উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের একাধিক বৃদ্ধ নর-নারী জানান, একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে হারিকেন দেখা যেত। তখন হারিকেন মেরামত করতে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিস্ত্রী বসত। উপজেলার প্রতিটি বাজারে ছিল হারিকেন মেরামতোর অস্থায়ী দোকান। তারা বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে ঘুরে হারিকেন মেরামতের কাজ করতেন। এছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়েও হারিকেন মেরামত করতেন। কিন্তু এখন আর হারিকেনের ব্যবহার তেমন একটা না থাকার ফলে হারিকেন মিস্ত্রীদেরও আর দেখা যায় না। ওই সময় হারিকেন মেরামত করেও অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করত।

উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের শিক্ষক সুশান্ত কুমার গাইন জানান, ‘রাতে পড়তে বসার আগে হারিকেন নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে টানাটানি চলতো। হারিকেন নিয়ে কত গল্প শুনেছি। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের চার্জার এলইডি বাল্ব অনেক কম দামে পাওয়া যায়। যার কারণে এখন আর হারিকেনের প্রয়োজন হয় না।’

বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পুলিন বিহারী ঢালী বলেন, ‘বাজারে মুদি মনোহরীর দোকান ছিল। তাই প্রতিদিন রাত ৯-১০টায় দোকান ঘর বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে হারিকেন নিয়ে আসা হতো। এভাবে একটানা ৫৫ বছর যাবত হারিকেন ব্যবহার করছি।’

হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিসা বাজারে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এক সময় হারিকেন নিয়ে ডাকপিয়নরা ছুটে চলতেন গ্রামের পর গ্রামে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই রাতের বেলায় হারিকেন নিয়ে বের হতেন।’

হারিকেনের আলো গৃহস্থালির পাশাপাশি ব্যবহার হতো বিভিন্ন গ্রাাম্য যানবাহনেও। খালে বা নদীতে নৌকার মাঝিরা রাতের বেলায় ব্যবহার করতেন হারিকেন। রাতে কোনো প্রয়োজনে গ্রামের কারো বাড়ি থেকে অন্য কারও বাড়ি যেতে হলে হারিকেন নিয়ে যেতেন। কিন্তু আধুনিকায়নে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বাতিতে বাজার ভরপুর। যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের আলোর অন্যতম উৎস ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।

উপজেলার দক্ষিণ বেতাগী গ্রামের হারিকেন মেরামতকারী আবুল কালাম  বলেন, ‘একযুগ আগেও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিজের হাতে অনেক হারিকেন মেরামত করেছি। ওই সময় এ কাজে ভালো উপার্জন হতো। কিন্তু এখন কারও ঘরে হারিকেন থাকলেও তা কেউ ব্যবহার করে না। এর ফলে মেরামতের কাজও তেমন হয় না। যার কারণে জীবিকার টানে এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছি।’ 

বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, যেসময় হারিকেনের প্রচলন ছিল সেই সময় গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার ও দফাদারদের পাহাড়ার জন্য থানা ও উপজেলা পরিষদ থেকে হারিকেন দেওয়া হতো।’

back to top