alt

সারাদেশ

দেবহাটার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৫ নারী জীবন সংগ্রামের সফল কারিগর

প্রতিনিধি, দেবহাটা (সাতক্ষীরা) : শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সমাজ, পরিবারের নানা বাধা ডিঙ্গিয়ে জীবন সংগ্রামে সফল দেবহাটার পঞ্চনারী- তাহেরা খাতুন, হেলেনা পারভীন, উত্তরা দাশ, নাজমা খাতুন ও ফাহিমা খাতুন। এই সংগ্রামী কর্মঠ নারীদের খুঁজে বের করে সফলতার স্বীকৃতি দিয়েছে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। আসন্ন নারী দিবসে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এসব নারীদের পাঁচ ক্যাটাগরিতে সম্মানিত করতে যাচ্ছে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি।

কর্মবীর এই পাঁচ নারীর জীবনযুদ্ধের কথা তুলে ধরা হলো

তাহেরা খাতুন : বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন তাহেরা খাতুন। তিনি উপজেলার কোঁড়া এলাকার মৃত মমিনুর রহমানের স্ত্রী। তাহেরা জানান, তার বাবার বাড়ি উত্তর পারুলিয়া গ্রামে। এইচএসসি পাসের পরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে।

‘এর পরপরই আমাদের একটি পুত্র সন্তান হয়। সংসার খুব ভালোভাবেই চলছিল। হঠাৎ ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।’ তাহেরা আরো বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে একদিকে ছেলে, অন্যদিকে সংসারের দারিদ্রতা। এ যেন এক অমানিশা।

স্বামীহারা শোক ভুলে গিয়ে নতুন উদ্যমে স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট্ট মুদির দোকানে মালামাল তুলে ব্যবসা শুরু করি। সঙ্গে সঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি এবং নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করি। আয়ের পথ খুলে যাওয়ায় বর্তমানে আমার ছেলেকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি।’

হেলেনা পারভীন : ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট হেলেনা পারভীন। সে মাঘরী গ্রামের এনতাজ আলীর মেয়ে। তার বাড়িতে দুইটা বোন স্বামী পরিত্যক্তা। অভাবের পরিবারে ভাইবোনেরা প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পার হয়নি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি অগাধ আগ্রহ ছিল হেলেনার। কারণ অন্যান্য বোনদের ছোটবেলায় বিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং তাদের সংসারে সারাক্ষণ অশান্তি লেগেই থাকত। এসবের কারণে সে ছোটবেলা থেকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিল লেখাপড়া শিখে একটা চাকরি করবে এবং পরিবারের অভাব-অনটন দূর করবে। এভাবে অনেক কষ্ট করে এসএসসি পাস করে। কিন্তু বিধি বাম। এর পরপরই তার বাবা স্ট্রোক করেন।

এমতাবস্থায় তার পড়াশোনা প্রায় বন্ধের উপক্রম। তখনই সে এক প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকের সহায়তায় প্যারা শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পিতার চিকিৎসা ও পরিবারের আর্থিক উন্নয়নের জন্য টিউশনি শুরু করে। খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে খুলনা বি.এল কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে সে। জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে না পড়ে অবশেষে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম-পুলিশ হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে থেকে তার সুদিন ফিরতে শুরু করে।

উত্তরা দাশ : সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন উত্তরা দাশ। সে উপজেলার মাঝ-পারুলিয়া গ্রামের জগবন্ধু দাশের স্ত্রী। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার এলাকায় কয়েকটি বাল্যবিবাহ বন্ধ, শিশু শ্রম ও ইভটিজিং প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে সে।

সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিবিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে উত্তরা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সহযোগিতা পাওয়ার কাজ করে সে।

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানুষের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি, শিশুদের স্কুলগামী করার লক্ষ্যে অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা।

ব্র্যাক থেকে স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজ এলাকায় কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থসেবা /পরিচর্যা, প্রাকৃতিক/বিপর্যয়কালীন সময়ে করণীয়, মায়ের গর্ভকালীন পরিচর্যা, শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে

চলেছেন তিনি।

নাজমা খাতুন : ছোটবেলা থেকেই প্রাইভেট পড়িয়ে এগিয়ে নিয়েছেন নিজের পড়ালেখা। অর্থনৈতিকভাবে পরিবারকে সহায়তা করার গল্পের শুরুটা সেখান থেকেই। নাজমা খাতুন দেবহাটার নারিকেলী গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী।

তিনি জানান, ‘দারিদ্রতার কারণে তার বাবা লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হিমশিম খেত। তাই আমি মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের টিউশনি করতেন। ২০০৯ সালে আমার বিয়ে হলো একটি দরিদ্র পরিবারের বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর স্বামীর টিউশনির টাকা ও নিজের সামান্য টাকায় আমার সংসার অভাব অনাটনে জর্জরিত ছিল।

এরপর ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) সমৃদ্ধি কর্মসূচিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে এবং তার স্বামীও স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি শুরু করেন। এরপর দুজনের টাকা থেকে বাড়িতে গরু-ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন শুরু করি। প্রতি বছর গরু ও ছাগল থেকে লাভের টাকা দিয়ে ৮ শতক জমি ক্রয় করে একটি আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে। বর্তমানে স্বামী, সন্তানদের নিয়ে তিনি সুখের দিন পার করছেন।”

ফাহিমা খাতুন: একজন সফল জননী। তিনি চকমোহাম্মাদালীপুর গ্রামের সিরাজুদ্দীনের স্ত্রী। ফাহিমা ছিলেন সমাজ সচেতন, শিক্ষানুরাগী এবং আত্মপ্রত্যয়ী। তিনি ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার প্রতি ছিলেন অদম্য অনুরাগী। ফাহিমার স্বামীর বাড়ি ছিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা গ্রামে। স্বামীর আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না বলে ফাহিমা ফিরেছিলেন বাবার ভিটায়। পৈতৃকসূত্রে পাওয়া জমিতে স্বামীসহ বসবাস করতেন। তার স্বামী প্রথমে ১৫০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেন। পরে দেবহাটা বি.বি.এম.পি ইন্সস্টিটিউশন এ ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। স্বামীর সামান্য বেতনের চাকরিতে কোন রকমে সংসার পরিচালনা করতেন। হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ জোগাতেন।

ছেলে-মেয়েরাও সংগ্রামী মায়ের মতোই ছিল মেধাবী ও পরিশ্রমী। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের সাথে পড়াশুনা সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ছেলে তানযিলুর রহমান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আর মেয়ে ডা. নাসরিন নাহার খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস ও পরে বি.সি.এস (স্বাস্থ্য) পাস করে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি ও অবস্ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত আছেন।

ছবি

অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভের আশায় ফুল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

ইয়াবা বিক্রির টাকা চাইতে গিয়ে খুন, গ্রেপ্তার ৩

ছবি

কালের আবর্তে হারিকেন এখন বিলুপ্ত

গলাচিপায় পাটখড়ির গুদামে আগুন, ৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

ছবি

চিরিরবন্দরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শিমুল গাছের ডালে ডালে লাল ফুল

নোয়াখালীতে এমপি একরামুল করিমসহ ৩ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

রাণীনগরের হাট-বাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ

ছবি

নন্দীগ্রামে জমে উঠেছে সরিষার হাট, বিকিকিনিতে খুশি কৃষক

স্বাস্থ্য প্রশাসকের অপসারণ দাবিতে উত্তাল কলাপাড়া

সাদুল্লাপুরে পুকুরে বিলীন গ্রামীণ রাস্তা

কটিয়াদীতে ফসলি জমি রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি

ছবি

গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া জ্বালানি খড়কুটোর গাদা ও খড়ি

ছবি

চট্টগ্রাম মহানগরে বছরে বর্জ্য উৎপাদন হয় ১৯ লাখ টন

নদীর পাড় কেটে খনিজ বালি-পাথর চুরি, কারাগারে ৬

যশোরে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে যুবকের মৃত্যু

নাজিরপুরে ভুয়া পুলিশ সেজে ছিনতাই, গ্রেপ্তার ১

ডেভিল হান্ট অভিযান বাগেরহাটে গ্রেপ্তার ২১

রাউজানে সন্ত্রাসীর গুলিতে ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ

ভোলায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

বদরগঞ্জে হাত বিচ্ছিন্ন নারীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

রাজিবপুরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন

সাভারে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

‘আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার না করলে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে’

মুন্সীগঞ্জে কোটি মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

উলিপুরে চাচাকে অপহরণের অভিযোগ ভাতিজার বিরুদ্ধে

জুয়ায় হেরে বিষপানে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা

ছবি

উল্লাপাড়ায় সৌরবিদ্যুতে চলছে অগভীর সেচ মেশিন

ছবি

শহরবাসীর দুর্ভোগের আরেক নাম সান্তাহার রেলগেট

ছবি

সীতাকুণ্ডে শিবচতুর্দশী মেলা শুরু মঙ্গলবার

ক্ষমতা নিতে নয় বরং দায়িত্ব পালন করতে এসেছি : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

দশমিনায় কৃষক প্রশিক্ষণ শেষে চারা বিতরণ

ভালুকায় অগ্নিকাণ্ডে ৮ ঘর ভস্মীভূত

ছবি

কুমিল্লায় রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হলো শহীদ মিনার

কলমাকান্দায় স্ত্রীর ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে যুবককে হত্যা

অস্ত্র ও ককটেলসহ ৫ ডাকাত গ্রেপ্তার

tab

সারাদেশ

দেবহাটার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৫ নারী জীবন সংগ্রামের সফল কারিগর

প্রতিনিধি, দেবহাটা (সাতক্ষীরা)

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সমাজ, পরিবারের নানা বাধা ডিঙ্গিয়ে জীবন সংগ্রামে সফল দেবহাটার পঞ্চনারী- তাহেরা খাতুন, হেলেনা পারভীন, উত্তরা দাশ, নাজমা খাতুন ও ফাহিমা খাতুন। এই সংগ্রামী কর্মঠ নারীদের খুঁজে বের করে সফলতার স্বীকৃতি দিয়েছে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। আসন্ন নারী দিবসে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এসব নারীদের পাঁচ ক্যাটাগরিতে সম্মানিত করতে যাচ্ছে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি।

কর্মবীর এই পাঁচ নারীর জীবনযুদ্ধের কথা তুলে ধরা হলো

তাহেরা খাতুন : বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন তাহেরা খাতুন। তিনি উপজেলার কোঁড়া এলাকার মৃত মমিনুর রহমানের স্ত্রী। তাহেরা জানান, তার বাবার বাড়ি উত্তর পারুলিয়া গ্রামে। এইচএসসি পাসের পরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে।

‘এর পরপরই আমাদের একটি পুত্র সন্তান হয়। সংসার খুব ভালোভাবেই চলছিল। হঠাৎ ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।’ তাহেরা আরো বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে একদিকে ছেলে, অন্যদিকে সংসারের দারিদ্রতা। এ যেন এক অমানিশা।

স্বামীহারা শোক ভুলে গিয়ে নতুন উদ্যমে স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট্ট মুদির দোকানে মালামাল তুলে ব্যবসা শুরু করি। সঙ্গে সঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি এবং নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করি। আয়ের পথ খুলে যাওয়ায় বর্তমানে আমার ছেলেকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি।’

হেলেনা পারভীন : ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট হেলেনা পারভীন। সে মাঘরী গ্রামের এনতাজ আলীর মেয়ে। তার বাড়িতে দুইটা বোন স্বামী পরিত্যক্তা। অভাবের পরিবারে ভাইবোনেরা প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পার হয়নি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি অগাধ আগ্রহ ছিল হেলেনার। কারণ অন্যান্য বোনদের ছোটবেলায় বিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং তাদের সংসারে সারাক্ষণ অশান্তি লেগেই থাকত। এসবের কারণে সে ছোটবেলা থেকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিল লেখাপড়া শিখে একটা চাকরি করবে এবং পরিবারের অভাব-অনটন দূর করবে। এভাবে অনেক কষ্ট করে এসএসসি পাস করে। কিন্তু বিধি বাম। এর পরপরই তার বাবা স্ট্রোক করেন।

এমতাবস্থায় তার পড়াশোনা প্রায় বন্ধের উপক্রম। তখনই সে এক প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকের সহায়তায় প্যারা শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পিতার চিকিৎসা ও পরিবারের আর্থিক উন্নয়নের জন্য টিউশনি শুরু করে। খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে খুলনা বি.এল কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে সে। জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে না পড়ে অবশেষে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম-পুলিশ হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে থেকে তার সুদিন ফিরতে শুরু করে।

উত্তরা দাশ : সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন উত্তরা দাশ। সে উপজেলার মাঝ-পারুলিয়া গ্রামের জগবন্ধু দাশের স্ত্রী। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার এলাকায় কয়েকটি বাল্যবিবাহ বন্ধ, শিশু শ্রম ও ইভটিজিং প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে সে।

সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিবিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে উত্তরা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সহযোগিতা পাওয়ার কাজ করে সে।

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানুষের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি, শিশুদের স্কুলগামী করার লক্ষ্যে অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা।

ব্র্যাক থেকে স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজ এলাকায় কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থসেবা /পরিচর্যা, প্রাকৃতিক/বিপর্যয়কালীন সময়ে করণীয়, মায়ের গর্ভকালীন পরিচর্যা, শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে

চলেছেন তিনি।

নাজমা খাতুন : ছোটবেলা থেকেই প্রাইভেট পড়িয়ে এগিয়ে নিয়েছেন নিজের পড়ালেখা। অর্থনৈতিকভাবে পরিবারকে সহায়তা করার গল্পের শুরুটা সেখান থেকেই। নাজমা খাতুন দেবহাটার নারিকেলী গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী।

তিনি জানান, ‘দারিদ্রতার কারণে তার বাবা লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হিমশিম খেত। তাই আমি মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের টিউশনি করতেন। ২০০৯ সালে আমার বিয়ে হলো একটি দরিদ্র পরিবারের বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর স্বামীর টিউশনির টাকা ও নিজের সামান্য টাকায় আমার সংসার অভাব অনাটনে জর্জরিত ছিল।

এরপর ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) সমৃদ্ধি কর্মসূচিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে এবং তার স্বামীও স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি শুরু করেন। এরপর দুজনের টাকা থেকে বাড়িতে গরু-ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন শুরু করি। প্রতি বছর গরু ও ছাগল থেকে লাভের টাকা দিয়ে ৮ শতক জমি ক্রয় করে একটি আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে। বর্তমানে স্বামী, সন্তানদের নিয়ে তিনি সুখের দিন পার করছেন।”

ফাহিমা খাতুন: একজন সফল জননী। তিনি চকমোহাম্মাদালীপুর গ্রামের সিরাজুদ্দীনের স্ত্রী। ফাহিমা ছিলেন সমাজ সচেতন, শিক্ষানুরাগী এবং আত্মপ্রত্যয়ী। তিনি ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার প্রতি ছিলেন অদম্য অনুরাগী। ফাহিমার স্বামীর বাড়ি ছিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা গ্রামে। স্বামীর আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না বলে ফাহিমা ফিরেছিলেন বাবার ভিটায়। পৈতৃকসূত্রে পাওয়া জমিতে স্বামীসহ বসবাস করতেন। তার স্বামী প্রথমে ১৫০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেন। পরে দেবহাটা বি.বি.এম.পি ইন্সস্টিটিউশন এ ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। স্বামীর সামান্য বেতনের চাকরিতে কোন রকমে সংসার পরিচালনা করতেন। হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ জোগাতেন।

ছেলে-মেয়েরাও সংগ্রামী মায়ের মতোই ছিল মেধাবী ও পরিশ্রমী। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের সাথে পড়াশুনা সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ছেলে তানযিলুর রহমান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আর মেয়ে ডা. নাসরিন নাহার খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস ও পরে বি.সি.এস (স্বাস্থ্য) পাস করে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি ও অবস্ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত আছেন।

back to top