ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ব্যবসার জন্য নগদে ১৮ হাজার টাকা, একবান্ডিল ঢেউটিন সাথে ঘর তৈরির কিছু কাঠ পেয়েছিলেন রেল দুর্ঘটনায় দুই হাত ও এক পা হারানো প্রতিবন্ধী আবুল কালাম আজাদ। সরকারি টাকার সাথে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির আঙিনায় দোকান ঘর তৈরি কাজ শুরু করেছিলেন। অর্থাভাবে ঘরটি আর তৈরি করতে পারেনি। ব্যবসাও শুরু করতে পারেনি। তাই আবার ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমেছেন। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সবাই ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় ফিরে গেছেন।
ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি চালু হয় ২০১৬ -১৭ অর্থবছরে। আট বছরে সরকারের এ প্রকল্পে সুবিধা পেয়েছেন দুই শতাধিক ভিখারি। কিন্তু প্রতিদিনই গ্রামগঞ্জ ও হাট-বাজারের দল বেঁধে ভিক্ষা করতে দেখা যায় অসংখ্য ভিক্ষারিকে।
স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রায় ৫ বছর ভিক্ষা করছেন জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের মাসালিয়া গ্রামের আমেনা বেগম। এ বছর অসুস্থ স্বামীর জন্য শীতের একটা কম্বল পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কম্বলও তার ভাগ্যে জোটেনি। একই গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রেহানা খাতুন। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারীও ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় পরেনি। তার মতো বৃদ্ধা রেবা, বিলকিস, জয়নব, সারথি রানি ম-লও এ প্রকল্পের সহায়তা পায়নি।
উপজেলায় সমাজসেবা অফিসে ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে জড়িত বা উপকারভোগী ভিক্ষুকের সংখ্যা জানাতে পারেনি। তাদের কাছে গত দুই অর্থবছরের ৩২ জন সুবিধাভোগী ভিক্ষুকের তালিকা আছে। সমাজসেবার তালিকায় রেল দুর্ঘটনায় দুই হাত ও এক পা হারানো প্রতিবন্ধী আবুল কালাম আজাদকে ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সহায়তার টাকায় ব্যবসাতো দূরের কথা দোকান ঘরের মেঝে পর্যন্ত তৈরি করতে পারেননি। ঘর তুলতে গিয়ে ভিক্ষা করে জমানো সব টাকা তার শেষ হয়ে গেছে। দুই শিশু পুত্র আর স্ত্রীসহ ৪ জনের সংসার চালাতে আবার ভিক্ষায় বের হচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৬ জন ভিক্ষুককে প্রথমবার পুনর্বাসন প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবছরই নতুন বরাদ্দ এসেছে। প্রায় ২ শতাধিক ভিক্ষুককে প্রকল্প থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, উপজেলারা ভিক্ষুকের তালিকা তাদের কাছে আছে। তবে তালিকাটি বিগত সরকারের আমলে করা।
প্রতিবন্ধী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সকালেই তিনি ভিক্ষার ঝুলি হাতে উপজেলা সরের দিকে রওনা করেছেন। পাকা রাস্তার সাথে নিজের বসতঘরের উত্তরে বাড়ির জমিতেই আধাপাতা ১৫ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেছিলেন। সবেমাত্র ঘরের পোতা পর্যন্ত উঠেছে। অর্থাভাবে কয়েক মাস আগেই দোকান তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
প্রতিবন্ধী আজাদের স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, তার স্বামী ভিক্ষুক ছিল না। ভাগ্যের দোষে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। ছোট ছোট দুই ছেলে আর সংসারের তাগিদে মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক চেষ্টা তদবিরের পর গতবছর ব্যবসার জন্য সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে নগদ ১৮ হাজার টাকা, এক বান্ডিল ঢেউটিন সাথে ঘর তৈরির কিছু কাঠ পেয়ে ছিলেন। যা দিয়ে দোকার ঘরের পোতা পর্যন্তও হয়নি। সরকারি টাকার সঙ্গে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা লাগিয়ে ঘরটির পোতা পর্যন্ত করা সম্ভব হয়েছে। টাকা না থাকাই দোকান ঘর করা হয়নি। ব্যবসা করবেন কি দিয়ে ?
খোকসা বাস স্ট্যান্ডে প্রতিবন্ধী আজাদের সঙ্গে দেখা করা হয়। তিনি জানান, সরকারি টিন আর টাকায় তার দোকান ঘর করাই হয়নি। ব্যবসার পুজির আগে তার দোকান ঘরটি ঠিক করা দরকার। ঘর তৈরি করতে তার আরো প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন। সাথে ব্যবসার পুজি দরকার। সবমিলিয়ে দুই-আড়াই লাখ টাকা হলে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। কিন্তু এখন তার বাড়ির লোকের দুই বেলার খাবার দিতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অন্যদের মতো সেও ভিক্ষা করছেন। সরকারি সাহার্য্যরে দুটো মুরগি বা হাঁস, একটা ছাগল অথবা গরুর বাছুর দিয়ে কেউ কিছুই করতে পারেনি। তাই তার মতো প্রায় সবাই ভিক্ষা করছেন।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ভিক্ষুক পুনবাস ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি উপকার ভোগীদের কল্যাণেই এসেছে। তবে কাক্সিক্ষত সফলতা আসতে সময় লাগবে। তিনি জানান, প্রকল্পটি অনেক আগে চালু হলেও তার কাছে গত দুই অর্থবছরের ৩২ জন উপকারভোগীর তালিকা আছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ব্যবসা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই আছেন বলে দাবিও করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন সুদিপ্ত রায় দ্বিপন বলেন, প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা ফাইল দেখে জানাতে হবে।
রোববার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ব্যবসার জন্য নগদে ১৮ হাজার টাকা, একবান্ডিল ঢেউটিন সাথে ঘর তৈরির কিছু কাঠ পেয়েছিলেন রেল দুর্ঘটনায় দুই হাত ও এক পা হারানো প্রতিবন্ধী আবুল কালাম আজাদ। সরকারি টাকার সাথে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির আঙিনায় দোকান ঘর তৈরি কাজ শুরু করেছিলেন। অর্থাভাবে ঘরটি আর তৈরি করতে পারেনি। ব্যবসাও শুরু করতে পারেনি। তাই আবার ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমেছেন। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সবাই ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় ফিরে গেছেন।
ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি চালু হয় ২০১৬ -১৭ অর্থবছরে। আট বছরে সরকারের এ প্রকল্পে সুবিধা পেয়েছেন দুই শতাধিক ভিখারি। কিন্তু প্রতিদিনই গ্রামগঞ্জ ও হাট-বাজারের দল বেঁধে ভিক্ষা করতে দেখা যায় অসংখ্য ভিক্ষারিকে।
স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রায় ৫ বছর ভিক্ষা করছেন জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের মাসালিয়া গ্রামের আমেনা বেগম। এ বছর অসুস্থ স্বামীর জন্য শীতের একটা কম্বল পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কম্বলও তার ভাগ্যে জোটেনি। একই গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রেহানা খাতুন। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারীও ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় পরেনি। তার মতো বৃদ্ধা রেবা, বিলকিস, জয়নব, সারথি রানি ম-লও এ প্রকল্পের সহায়তা পায়নি।
উপজেলায় সমাজসেবা অফিসে ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে জড়িত বা উপকারভোগী ভিক্ষুকের সংখ্যা জানাতে পারেনি। তাদের কাছে গত দুই অর্থবছরের ৩২ জন সুবিধাভোগী ভিক্ষুকের তালিকা আছে। সমাজসেবার তালিকায় রেল দুর্ঘটনায় দুই হাত ও এক পা হারানো প্রতিবন্ধী আবুল কালাম আজাদকে ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সহায়তার টাকায় ব্যবসাতো দূরের কথা দোকান ঘরের মেঝে পর্যন্ত তৈরি করতে পারেননি। ঘর তুলতে গিয়ে ভিক্ষা করে জমানো সব টাকা তার শেষ হয়ে গেছে। দুই শিশু পুত্র আর স্ত্রীসহ ৪ জনের সংসার চালাতে আবার ভিক্ষায় বের হচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৬ জন ভিক্ষুককে প্রথমবার পুনর্বাসন প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবছরই নতুন বরাদ্দ এসেছে। প্রায় ২ শতাধিক ভিক্ষুককে প্রকল্প থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, উপজেলারা ভিক্ষুকের তালিকা তাদের কাছে আছে। তবে তালিকাটি বিগত সরকারের আমলে করা।
প্রতিবন্ধী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সকালেই তিনি ভিক্ষার ঝুলি হাতে উপজেলা সরের দিকে রওনা করেছেন। পাকা রাস্তার সাথে নিজের বসতঘরের উত্তরে বাড়ির জমিতেই আধাপাতা ১৫ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেছিলেন। সবেমাত্র ঘরের পোতা পর্যন্ত উঠেছে। অর্থাভাবে কয়েক মাস আগেই দোকান তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
প্রতিবন্ধী আজাদের স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, তার স্বামী ভিক্ষুক ছিল না। ভাগ্যের দোষে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। ছোট ছোট দুই ছেলে আর সংসারের তাগিদে মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক চেষ্টা তদবিরের পর গতবছর ব্যবসার জন্য সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে নগদ ১৮ হাজার টাকা, এক বান্ডিল ঢেউটিন সাথে ঘর তৈরির কিছু কাঠ পেয়ে ছিলেন। যা দিয়ে দোকার ঘরের পোতা পর্যন্তও হয়নি। সরকারি টাকার সঙ্গে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা লাগিয়ে ঘরটির পোতা পর্যন্ত করা সম্ভব হয়েছে। টাকা না থাকাই দোকান ঘর করা হয়নি। ব্যবসা করবেন কি দিয়ে ?
খোকসা বাস স্ট্যান্ডে প্রতিবন্ধী আজাদের সঙ্গে দেখা করা হয়। তিনি জানান, সরকারি টিন আর টাকায় তার দোকান ঘর করাই হয়নি। ব্যবসার পুজির আগে তার দোকান ঘরটি ঠিক করা দরকার। ঘর তৈরি করতে তার আরো প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন। সাথে ব্যবসার পুজি দরকার। সবমিলিয়ে দুই-আড়াই লাখ টাকা হলে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। কিন্তু এখন তার বাড়ির লোকের দুই বেলার খাবার দিতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অন্যদের মতো সেও ভিক্ষা করছেন। সরকারি সাহার্য্যরে দুটো মুরগি বা হাঁস, একটা ছাগল অথবা গরুর বাছুর দিয়ে কেউ কিছুই করতে পারেনি। তাই তার মতো প্রায় সবাই ভিক্ষা করছেন।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ভিক্ষুক পুনবাস ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি উপকার ভোগীদের কল্যাণেই এসেছে। তবে কাক্সিক্ষত সফলতা আসতে সময় লাগবে। তিনি জানান, প্রকল্পটি অনেক আগে চালু হলেও তার কাছে গত দুই অর্থবছরের ৩২ জন উপকারভোগীর তালিকা আছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ব্যবসা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই আছেন বলে দাবিও করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন সুদিপ্ত রায় দ্বিপন বলেন, প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা ফাইল দেখে জানাতে হবে।