নাজিরপুর (পিরোজপুর) : ভাসমান বাজারে বিক্রির জন্য আনা সবজি -সংবাদ
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বেলুয়া নদীর বুকে অবস্থিত বৈঠাকাটার ভাসমান বাজারটি দেশের বৃহত্তম ভাসমান বাজার। দেড়শ বছরের পুরনো এই বাজারটিকে প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে এটি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বা ভারতের কেরালা রাজ্যের কোনো জলভাসা বাজার। তবে এটি বাংলাদেশেরই এক অনন্য ঐতিহ্য। ইতিহাস অনুযায়ী, পঞ্চাশের দশক থেকে এ বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়, যা সময়ের সাথে আরও বিস্তৃত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
পিরোজপুর জেলা শহর থেকে ৪৩ কিলোমিটার উত্তরে বেলুয়া নদীর মোহনায় অবস্থিত এ বাজারের নামকরণ হয়েছে নদী ও নৌকার বৈঠার সম্মিলনে ‘বৈঠাকাটা’ থেকে। নদীকেন্দ্রিক এই বাজার দেশের মানুষের অর্থনীতি ও জীবিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।
ভাসমান এ বাজার সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার বসে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় কৃষিপণ্যের কেনাবেচা, যা চলে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত। এ সময় বাজারে কোটি টাকার শাক-সবজি কেনাবেচা হয়। আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের কৃষকরা নৌকায় করে তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আসেন এখানে বিক্রির জন্য। বাজারে চা, পান, শাক-সবজি, ধান, চাল, মাছ, ফল, আখ, নারিকেলসহ সব ধরনের কৃষিপণ্য বিক্রি হয়। এখানে বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, মরিচ, আলু, মিষ্টি কুমড়া, শিম, লাউ, করলা, কচুসহ নানা সবজি পাওয়া যায়। ধান, চাল, মুড়ি ও নারিকেল বিক্রির জন্যও নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে যা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়।
উপজেলার মুগারঝোর গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামের প্রতিটি কৃষক পরিবার শীতকালীন সবজি চাষ করে। কৃষক তার উৎপাদিত সবজি বেলুয়া নদীর ভাসমান হাটে বিক্রি করেন। এ হাটে কৃষিপণ্যের নায্য মূল্য পাওয়ায় আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকরাও এখানে পণ্য বিক্রি করতে আসেন। এখান থেকে কৃষিপণ্য কিনে পাইকাররা রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা, উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন।
এখানকার পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বৈঠাকাঠা বাজার থেকে আমি সবজি কিনে ট্রলারে করে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। প্রতি হাটে সাত আট লাখ টাকার সবজি কেনাবেচা হয়।
বৈঠাকাটার স্থানীয় প্রবীণ ব্যবসায়ীরা জানান, এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র বাহন নৌকা হওয়ায় পঞ্চাশ দশকের শুরুতে মুগারঝোর গ্রামের সেকান্দার আলী সরদার, কেরামত আলী, দলিল উদ্দিন সরদার ও আবুল কাশেম তালুকদার বৈঠাকাটায় ভাসমান এই বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।
বৈঠাকাটার ভাসমান এ বাজারে যেতে হলে জেলার নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বেলুয়া নদীতে পৌঁছাতে হবে। এখানকার লঞ্চ ও নৌকা যোগে সহজেই বাজারে যাওয়া সম্ভব।
ভাসমান এ বাজারকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ‘বৈঠাকাটা’ নামে একটা নতুন উপজেলা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন। বৈঠাকাটা বাজার সন্নিহিত নাজিরপুর ও নেছারাবাদ এবং বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে ‘বৈঠাকাটা’ নামে নতুন এ উপজেলা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে পিরোজপুর জেলা ‘বি’ গ্রেড থেকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হবে, যার ফলে প্রশাসনিক সুবিধা ও উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি পাবে।
নাজিরপুর (পিরোজপুর) : ভাসমান বাজারে বিক্রির জন্য আনা সবজি -সংবাদ
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বেলুয়া নদীর বুকে অবস্থিত বৈঠাকাটার ভাসমান বাজারটি দেশের বৃহত্তম ভাসমান বাজার। দেড়শ বছরের পুরনো এই বাজারটিকে প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে এটি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বা ভারতের কেরালা রাজ্যের কোনো জলভাসা বাজার। তবে এটি বাংলাদেশেরই এক অনন্য ঐতিহ্য। ইতিহাস অনুযায়ী, পঞ্চাশের দশক থেকে এ বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়, যা সময়ের সাথে আরও বিস্তৃত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
পিরোজপুর জেলা শহর থেকে ৪৩ কিলোমিটার উত্তরে বেলুয়া নদীর মোহনায় অবস্থিত এ বাজারের নামকরণ হয়েছে নদী ও নৌকার বৈঠার সম্মিলনে ‘বৈঠাকাটা’ থেকে। নদীকেন্দ্রিক এই বাজার দেশের মানুষের অর্থনীতি ও জীবিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।
ভাসমান এ বাজার সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার বসে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় কৃষিপণ্যের কেনাবেচা, যা চলে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত। এ সময় বাজারে কোটি টাকার শাক-সবজি কেনাবেচা হয়। আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের কৃষকরা নৌকায় করে তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আসেন এখানে বিক্রির জন্য। বাজারে চা, পান, শাক-সবজি, ধান, চাল, মাছ, ফল, আখ, নারিকেলসহ সব ধরনের কৃষিপণ্য বিক্রি হয়। এখানে বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, মরিচ, আলু, মিষ্টি কুমড়া, শিম, লাউ, করলা, কচুসহ নানা সবজি পাওয়া যায়। ধান, চাল, মুড়ি ও নারিকেল বিক্রির জন্যও নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে যা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়।
উপজেলার মুগারঝোর গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামের প্রতিটি কৃষক পরিবার শীতকালীন সবজি চাষ করে। কৃষক তার উৎপাদিত সবজি বেলুয়া নদীর ভাসমান হাটে বিক্রি করেন। এ হাটে কৃষিপণ্যের নায্য মূল্য পাওয়ায় আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকরাও এখানে পণ্য বিক্রি করতে আসেন। এখান থেকে কৃষিপণ্য কিনে পাইকাররা রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা, উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন।
এখানকার পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বৈঠাকাঠা বাজার থেকে আমি সবজি কিনে ট্রলারে করে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। প্রতি হাটে সাত আট লাখ টাকার সবজি কেনাবেচা হয়।
বৈঠাকাটার স্থানীয় প্রবীণ ব্যবসায়ীরা জানান, এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র বাহন নৌকা হওয়ায় পঞ্চাশ দশকের শুরুতে মুগারঝোর গ্রামের সেকান্দার আলী সরদার, কেরামত আলী, দলিল উদ্দিন সরদার ও আবুল কাশেম তালুকদার বৈঠাকাটায় ভাসমান এই বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।
বৈঠাকাটার ভাসমান এ বাজারে যেতে হলে জেলার নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বেলুয়া নদীতে পৌঁছাতে হবে। এখানকার লঞ্চ ও নৌকা যোগে সহজেই বাজারে যাওয়া সম্ভব।
ভাসমান এ বাজারকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ‘বৈঠাকাটা’ নামে একটা নতুন উপজেলা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন। বৈঠাকাটা বাজার সন্নিহিত নাজিরপুর ও নেছারাবাদ এবং বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে ‘বৈঠাকাটা’ নামে নতুন এ উপজেলা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে পিরোজপুর জেলা ‘বি’ গ্রেড থেকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হবে, যার ফলে প্রশাসনিক সুবিধা ও উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি পাবে।