alt

সারাদেশ

কালের আবর্তনে এখন বিলুপ্তির পথে হারিকেন

প্রতিনিধি, বেতাগী (বরগুনা) : সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী থেকে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এক নিদর্শন হারিকেন। অনেক গল্প, উপন্যাসে হারিকেনের উপমা ব্যবহার হয়েছে। অনেক বাড়িতে সন্ধ্যায় হারিকেন জ্বালানোর আগে পৌঁছাতে না পারলে অভিভাবকের পিটুনি খেতে হয়েছে, এমনও গল্প শোনা গেছে। হারিকেনের আলো জ্বলা মানে পড়াশোনার সময় হয়ে গেছে। সে সময় পড়াশোনাসহ সব ধরনের প্রয়োজনেই ঘরে ঘরে নৈসর্গিক টিমটিমে আলোয় আলোয় জ্বলত হারিকেন। বর্তমানে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যাপক প্রসারে গ্রাম বাংলার থেকে কমে গেছে হারিকেন জ্বালানোর প্রথা। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের মতো বিদ্যুতের প্রসার, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিভিন্ন ধরনের চার্জার বাতির ব্যবহারে হারিকেনের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। তাই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন। তবে জানা গেছে, বেতাগীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনও কুপির পাশাপাশি হারিকেনের প্রচলন রয়েছে। তবে চার্জার বাতির অধিক ব্যবহারের কারণে সেটাও সংখ্যায় খুব কম। এক সময় হয়তো এটা হারিয়ে জাদুঘরে চলে যাবে। তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো হারিকেন দেখতে জাদুঘরে যাবে। বইয়ের পাতায় খুঁজবে হারিকেনের ইতিহাস।

উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের একাধিক বৃদ্ধ নর-নারী জানান, একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে হারিকেন দেখা যেত। তখন হারিকেন মেরামত করতে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিস্ত্রী বসতো। উপজেলার প্রতিটি বাজারে ছিল হারিকেন মেরামতোর অস্থায়ী দোকান। তারা বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে ঘুরে হারিকেন মেরামতের কাজ করতেন। এছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়েও হারিকেন মেরামত করতেন। কিন্তু এখন আর হারিকেনের ব্যবহার তেমন একটা না থাকার ফলে হারিকেন মিস্ত্রীদেরও এখন আর দেখা যায় না। ওই সময় হারিকেন মেরামত করেও অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। হারিকেনের আলো গৃহস্থালির পাশাপাশি ব্যবহার হতো বিভিন্ন গ্রাাম্য যানবাহনেও। খালে বা নদীতে নৌকার মাঝিরা রাতের বেলায় ব্যবহার করতেন হারিকেন। রাতে কোনো প্রয়োজনে গ্রামের কারো বাড়ি থেকে অন্য কারো বাড়ি যেতে হলে হারিকেন নিয়ে যেতেন। কিন্তু আধুনিকায়নে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বাতিতে বাজার ভরপুর। যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের আলোর অন্যতম উৎস ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।

উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের শিক্ষক সুশান্ত কুমার গাইন জানান, একসময় প্রতিদিন রাতে পড়তে বসার আগে হারিকেন নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে টানাটানি চলতো। হারিকেন নিয়ে কত গল্প শুনেছি। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের চার্জার এলইডি বাল্ব অনেক কম দামে পাওয়া যায়। যার কারণে এখন আর হারিকেনের প্রয়োজন হয় না। বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পুলিন বিহারী ঢালী বলেন, একসময় বাজারে আমার একটা মুদি মনোহরীর দোকান ছিল। তাই প্রতিদিন রাত ৯-১০ টায় দোকান ঘর বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে হারিকেন নিয়ে আসা হতো। এভাবে একটানা ৫৫ বছর যাবত হারিকেন ব্যবহার করছি। হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিসা বাজারে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, একসময় হারিকেন নিয়ে ডাকপিয়নরা ছুটে চলতেন গ্রামের পর গ্রাম। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই রাতেরবেলা হারিকেন হাতে বাইরে নিয়ে বের হতেন। বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, যেসময় হারিকেনের প্রচলন ছিল সেই সময় গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার এবং দফাদারদেরকে এলাকা পাহাড়া দেয়ার জন্য থানা এবং উপজেলা পরিষদ থেকে হারিকেন দেয়া হতো। দক্ষিণ বেতাগী গ্রামের হারিকেন মেরামতকারী আবুল কালাম বলেন, একযুগ আগেও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আমি নিজহাতে অনেক হারিকেন মেরামত করেছি। ওই সময় এই কাজে ভালো উপার্জন হতো। কিন্তু এখন কারও কারও ঘরে হারিকেন থাকলেও সেগুলো কেউ আর ব্যবহার করেন না।

ফলে হারিকেন মেরামতের কাজও এখন আর তেমন একটা হয় না। যার কারণে জীবিকার টানে বর্তমানে ওই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছি আমি।

ছবি

সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ে ছাই ৯৪ রিসোর্ট-কটেজ

ছবি

শরণখোলায় মাছের ঘের থেকে ৮ ফুট লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার

ছবি

সুবিধা বঞ্চিত মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব

পিতাকে খুন করায় ছেলে গ্রেপ্তার

প্রথমবার মা-বাবা হওয়া দম্পতিদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা জরুরি

ছবি

ধর্মপাশায় মাজারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

গাজীপুরে বারি পেঁয়াজ-৪ এর প্রজনন বীজ উৎপাদন

ছবি

হিজবুত তাওহীদ কর্মীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ, আহত ২০

বগুড়ায় করতোয়া নদী রক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

খামারিকে আটকে গোয়াল ঘরে আগুন

খোকসায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

ছবি

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের নান্দনিক তৈজসপত্র

ছবি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলের লাল টিলা

লোগো ও লাইন পদ্ধতিতে ধান চাষের আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

কয়েলের আগুনে পুড়ে মরলো ৩টি গরু, বাঁচাতে গিয়ে ঝলসে গেল মালিক

ছবি

দশমিনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৩ শতাধিক পান চাষী স্বাবলম্বী

নারী-শিশুসহ সবার নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন

ভৈরবে বসত ঘরে কবর তৈরি করে রেখেছেন সুফী সাধক সিদ্দিক শাহ সরেশ্বরী

পানির অভাবে জীবন-জীবিকার ঝুঁকিতে তিস্তাপাড়ের ২০ লাখ মানুষ

মুন্সীগঞ্জে কুকুরের কামড়ে আহত ৪০

লিবিয়ায় মাফিয়াদের দেয়া ইঞ্জেকশনে নাসিরনগরের যুবকের মৃত্যু

দুই জেলায় ২ মরদেহ উদ্ধার

বিয়ে বাড়িতে উচ্চশব্দে গান, প্রতিবেশীদের হামলায় নিহত ১

দুই জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধা ও স্কুলছাত্রের মৃত্যু

যৌতুক না দেয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা

পঞ্চম বিয়ে করায় স্বামী কুপিয়ে খুন, স্ত্রী গ্রেপ্তার

বজ্রপাতে কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু

বোয়ালখালীতে পোশাক কারখানায় আগুন

মেরামতের সময় এসি বিস্ফোরণ, ২ মিস্ত্রি নিহত

গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রশাসনের কড়া নির্দেশনা

৩ পরিবারের ৪ গরু চুরি

প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি বিএনপি নেতাসহ ৩ ডাকাত গ্রেপ্তার

ছবি

চট্টগ্রাম মহানগরে বছরে বর্জ্য উৎপাদন হয় ১৯ লাখ টন

খোকসায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

৪ জেলার লক্ষাধিক কৃষক মহাসংকটে বোরো মৌসুমে পানি সরবরাহ নেই সেচ প্রকল্পে

ছবি

ভৈরবে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনভ্রমণ করছেন যাত্রীরা, মানছেন না আইন-কানুন

tab

সারাদেশ

কালের আবর্তনে এখন বিলুপ্তির পথে হারিকেন

প্রতিনিধি, বেতাগী (বরগুনা)

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী থেকে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এক নিদর্শন হারিকেন। অনেক গল্প, উপন্যাসে হারিকেনের উপমা ব্যবহার হয়েছে। অনেক বাড়িতে সন্ধ্যায় হারিকেন জ্বালানোর আগে পৌঁছাতে না পারলে অভিভাবকের পিটুনি খেতে হয়েছে, এমনও গল্প শোনা গেছে। হারিকেনের আলো জ্বলা মানে পড়াশোনার সময় হয়ে গেছে। সে সময় পড়াশোনাসহ সব ধরনের প্রয়োজনেই ঘরে ঘরে নৈসর্গিক টিমটিমে আলোয় আলোয় জ্বলত হারিকেন। বর্তমানে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যাপক প্রসারে গ্রাম বাংলার থেকে কমে গেছে হারিকেন জ্বালানোর প্রথা। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের মতো বিদ্যুতের প্রসার, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিভিন্ন ধরনের চার্জার বাতির ব্যবহারে হারিকেনের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। তাই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন। তবে জানা গেছে, বেতাগীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনও কুপির পাশাপাশি হারিকেনের প্রচলন রয়েছে। তবে চার্জার বাতির অধিক ব্যবহারের কারণে সেটাও সংখ্যায় খুব কম। এক সময় হয়তো এটা হারিয়ে জাদুঘরে চলে যাবে। তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো হারিকেন দেখতে জাদুঘরে যাবে। বইয়ের পাতায় খুঁজবে হারিকেনের ইতিহাস।

উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের একাধিক বৃদ্ধ নর-নারী জানান, একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে হারিকেন দেখা যেত। তখন হারিকেন মেরামত করতে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিস্ত্রী বসতো। উপজেলার প্রতিটি বাজারে ছিল হারিকেন মেরামতোর অস্থায়ী দোকান। তারা বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে ঘুরে হারিকেন মেরামতের কাজ করতেন। এছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়েও হারিকেন মেরামত করতেন। কিন্তু এখন আর হারিকেনের ব্যবহার তেমন একটা না থাকার ফলে হারিকেন মিস্ত্রীদেরও এখন আর দেখা যায় না। ওই সময় হারিকেন মেরামত করেও অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। হারিকেনের আলো গৃহস্থালির পাশাপাশি ব্যবহার হতো বিভিন্ন গ্রাাম্য যানবাহনেও। খালে বা নদীতে নৌকার মাঝিরা রাতের বেলায় ব্যবহার করতেন হারিকেন। রাতে কোনো প্রয়োজনে গ্রামের কারো বাড়ি থেকে অন্য কারো বাড়ি যেতে হলে হারিকেন নিয়ে যেতেন। কিন্তু আধুনিকায়নে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বাতিতে বাজার ভরপুর। যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের আলোর অন্যতম উৎস ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।

উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের শিক্ষক সুশান্ত কুমার গাইন জানান, একসময় প্রতিদিন রাতে পড়তে বসার আগে হারিকেন নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে টানাটানি চলতো। হারিকেন নিয়ে কত গল্প শুনেছি। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের চার্জার এলইডি বাল্ব অনেক কম দামে পাওয়া যায়। যার কারণে এখন আর হারিকেনের প্রয়োজন হয় না। বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পুলিন বিহারী ঢালী বলেন, একসময় বাজারে আমার একটা মুদি মনোহরীর দোকান ছিল। তাই প্রতিদিন রাত ৯-১০ টায় দোকান ঘর বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে হারিকেন নিয়ে আসা হতো। এভাবে একটানা ৫৫ বছর যাবত হারিকেন ব্যবহার করছি। হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিসা বাজারে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, একসময় হারিকেন নিয়ে ডাকপিয়নরা ছুটে চলতেন গ্রামের পর গ্রাম। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই রাতেরবেলা হারিকেন হাতে বাইরে নিয়ে বের হতেন। বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, যেসময় হারিকেনের প্রচলন ছিল সেই সময় গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার এবং দফাদারদেরকে এলাকা পাহাড়া দেয়ার জন্য থানা এবং উপজেলা পরিষদ থেকে হারিকেন দেয়া হতো। দক্ষিণ বেতাগী গ্রামের হারিকেন মেরামতকারী আবুল কালাম বলেন, একযুগ আগেও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আমি নিজহাতে অনেক হারিকেন মেরামত করেছি। ওই সময় এই কাজে ভালো উপার্জন হতো। কিন্তু এখন কারও কারও ঘরে হারিকেন থাকলেও সেগুলো কেউ আর ব্যবহার করেন না।

ফলে হারিকেন মেরামতের কাজও এখন আর তেমন একটা হয় না। যার কারণে জীবিকার টানে বর্তমানে ওই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছি আমি।

back to top