জীবন-জীবিকার ঝুঁকিতে পড়েছে তিস্তাকেন্দ্রীক ২০ লাখ মানুষ। ক্রমাগত নাব্যসংকটে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভাটিকাপাসিয়া পর্যন্ত তিস্তার চর-গ্রামের জীবিকা নির্বাহী কঠিন হয়ে উঠেছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের একটি তথ্য অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষ নদী ও চরাঞ্চলের জীবনজীবিকা পুরোপুরিভাবে কৃষি, গবাদি পশুপ্রাণি ও মৎস্যনির্ভর। এছাড়াও ৩০ শতাংশ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাময়িক গমন করে আয় রোজগার। চরাঞ্চলের মানুষের অন্যতম সম্পদ তিস্তা নদীর পানি। কিন্তু কয়েক দশক ধরে তিস্তার পানি স্বাভাবিকভাবে পাচ্ছে না লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার জেলার ১২ উপজেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষ।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী নিপেন চন্দ্র জানান, তিস্তায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি, কিন্তু বেশিরভাগ সময় নদীতে মাছ না থাকায় মাছ ধরার সাথে নির্ভর করে আর সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। হরিপুর ইউনিয়নের আব্দুর রউফ সরকার জানান, চরের ব্যাপক কৃষি চাষাবাদ হচ্ছে, কিন্তু সার কীটনাশক ক্রয় বিক্রয়ে পরিবহন সমস্যা। নদীতে পানি থাকলে এই সমস্যা থাকতো না।
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গ্রামের তাহাজুল ইসলাম বলেন, নদীতে পানি না থাকায় চরের ভুট্টা হাটবাজারে আনা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জীবন বাঁচার দাবীতে আন্দোলনে নেমেছে তিস্তা নদী চর ও ও দুপাড়ের সর্বস্তরের মানুষ। এজন্য গাইবান্ধাসহ উত্তরের পাঁচ জেলায় চলমান লাগাতার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই অঞ্চলের মানুষ ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ দাবী নিয়ে নানা আন্দোলর করছে।
সুন্দরগঞ্জের শিক্ষার্থী লিপি আকতার বলেন, তিস্তা শুধু আমাদের নদী নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। আমরা যারা শিক্ষার্থী, তাদের ভবিষ্যৎও এই নদীর ওপর নির্ভরশীল।
ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, তিস্তার পানি না থাকলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষিপণ্য উৎপাদন কমে গেলে বাজারে সংকট দেখা দেয়, মানুষের আয় কমে যায়। আজ আমরা মশাল জ্বালিয়ে জানিয়ে দিলাম, এই নদী আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত, আমরা একে মরতে দেব না। হরিপুরের মৎস্যজীবী হরিনাথ জানান বাপদাদারা এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। আমরাও জড়িত, কিন্তু পানি নেই এজন্য নদীতে মাছ না থাকা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, তিস্তর সংকট উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি ও পরিবেশের সংকট। আজকের এই মশাল প্রজ্জ্বলন আমাদের ক্ষোভের প্রতীক। আমরা চাই, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক, নইলে এই আন্দোলন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়বে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ বলেন, তিস্তা রক্ষা করা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমাদের দাবী কোন দলীয় ব্যানারে এটি সর্বজনের ব্যানারে।।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক ক্ষতিগ্রস্ত মহাপরিকল্পনা বাস্ত—বায়ন ছাড়া উত্তরবঙ্গের মানুষ চুপ করে থাকবে না।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতির ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অংশ। আজ আমরা মশাল হাতে সরকারের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছি তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, নইলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
পানি বিশেষজ্ঞ ড, আইনুন নিশাত জানান,নায্য পানি পাওয়া মানুষের অধিকার। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ প্রদানের জন্য উজানের দেশএর জন্য দায়ী। এজন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পানির নায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো জানান, তিস্তা না বাঁচাতে পারলে জীবনজীবিকাও বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
জীবন-জীবিকার ঝুঁকিতে পড়েছে তিস্তাকেন্দ্রীক ২০ লাখ মানুষ। ক্রমাগত নাব্যসংকটে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভাটিকাপাসিয়া পর্যন্ত তিস্তার চর-গ্রামের জীবিকা নির্বাহী কঠিন হয়ে উঠেছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের একটি তথ্য অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষ নদী ও চরাঞ্চলের জীবনজীবিকা পুরোপুরিভাবে কৃষি, গবাদি পশুপ্রাণি ও মৎস্যনির্ভর। এছাড়াও ৩০ শতাংশ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাময়িক গমন করে আয় রোজগার। চরাঞ্চলের মানুষের অন্যতম সম্পদ তিস্তা নদীর পানি। কিন্তু কয়েক দশক ধরে তিস্তার পানি স্বাভাবিকভাবে পাচ্ছে না লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার জেলার ১২ উপজেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষ।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী নিপেন চন্দ্র জানান, তিস্তায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি, কিন্তু বেশিরভাগ সময় নদীতে মাছ না থাকায় মাছ ধরার সাথে নির্ভর করে আর সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। হরিপুর ইউনিয়নের আব্দুর রউফ সরকার জানান, চরের ব্যাপক কৃষি চাষাবাদ হচ্ছে, কিন্তু সার কীটনাশক ক্রয় বিক্রয়ে পরিবহন সমস্যা। নদীতে পানি থাকলে এই সমস্যা থাকতো না।
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গ্রামের তাহাজুল ইসলাম বলেন, নদীতে পানি না থাকায় চরের ভুট্টা হাটবাজারে আনা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জীবন বাঁচার দাবীতে আন্দোলনে নেমেছে তিস্তা নদী চর ও ও দুপাড়ের সর্বস্তরের মানুষ। এজন্য গাইবান্ধাসহ উত্তরের পাঁচ জেলায় চলমান লাগাতার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই অঞ্চলের মানুষ ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ দাবী নিয়ে নানা আন্দোলর করছে।
সুন্দরগঞ্জের শিক্ষার্থী লিপি আকতার বলেন, তিস্তা শুধু আমাদের নদী নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। আমরা যারা শিক্ষার্থী, তাদের ভবিষ্যৎও এই নদীর ওপর নির্ভরশীল।
ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, তিস্তার পানি না থাকলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষিপণ্য উৎপাদন কমে গেলে বাজারে সংকট দেখা দেয়, মানুষের আয় কমে যায়। আজ আমরা মশাল জ্বালিয়ে জানিয়ে দিলাম, এই নদী আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত, আমরা একে মরতে দেব না। হরিপুরের মৎস্যজীবী হরিনাথ জানান বাপদাদারা এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। আমরাও জড়িত, কিন্তু পানি নেই এজন্য নদীতে মাছ না থাকা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, তিস্তর সংকট উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি ও পরিবেশের সংকট। আজকের এই মশাল প্রজ্জ্বলন আমাদের ক্ষোভের প্রতীক। আমরা চাই, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক, নইলে এই আন্দোলন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়বে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ বলেন, তিস্তা রক্ষা করা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমাদের দাবী কোন দলীয় ব্যানারে এটি সর্বজনের ব্যানারে।।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক ক্ষতিগ্রস্ত মহাপরিকল্পনা বাস্ত—বায়ন ছাড়া উত্তরবঙ্গের মানুষ চুপ করে থাকবে না।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতির ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অংশ। আজ আমরা মশাল হাতে সরকারের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছি তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, নইলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
পানি বিশেষজ্ঞ ড, আইনুন নিশাত জানান,নায্য পানি পাওয়া মানুষের অধিকার। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ প্রদানের জন্য উজানের দেশএর জন্য দায়ী। এজন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পানির নায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো জানান, তিস্তা না বাঁচাতে পারলে জীবনজীবিকাও বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।