alt

সারাদেশ

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের নান্দনিক তৈজসপত্র

দখল নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক তবুও স্বপ্ন দেখেন শিল্পীরা

লিটন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা) : সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিভিন্ন ধরণের মৃৎ শিল্পের সামগ্রি নিয়ে পসরা বসিয়ে বিক্রি করছেন শম্ভু পাল। ছবিটি সম্প্রতি মহেশপুর গ্রামের পালপাড়া থেকে তোলা -সংবাদ

কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের নান্দনিক তৈজসপত্র। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সংকটের মুখে এই শিল্প। মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র তৈরিতে এক সময় বাকেরগঞ্জের মহেশপুর গ্রামগুলো উপকূলীয় জনপদের মধ্যে বিখ্যাত ছিল। প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়া ও নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এই মাটির তৈরি নান্দনিক শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।

সরেজমিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেশপুর পালপাড়া এলাকা ঘুরে জানা যায়, এই গ্রামে ৫০ বছর পূর্বেও ৩ হাজার পরিবার মৃৎশিল্পের কাজে নিয়োজিত ছিল। নিয়োজিত শিল্পীদের মধ্যে অধিকাংশ পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণীভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলের সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমানে ৪ শতাধিক পরিবারের প্রায় দেড় হাজার লোক এ পেশার সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে।

বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। এর প্রধান কারণ এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক সামগ্রীর তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে না। এই কারণে পুরোনো এ পেশার সঙ্গে জড়িত অনেকে এ পেশা বদল করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।

যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখেন।

কোনো একদিন আবারো কদর বাড়বে নান্দনিক মাটির তৈরি এসব পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজো দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা। নারী, পুরুষ ও শিশুরাও কাজ করছে। মাটির তৈরি বিভিন্ন আকারের কলস, হাড়ি, বাসন, চায়ের কাপ ও প্লেট, বাটি, শরা, ফুলদানী, টপ, ব্যাংক ঘট, গামলা, চারি, টালী, বদনা, চারা, ইত্যাদি।

এছাড়াও বাড়িঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মাটি দিয়ে ফুলদানী, টপ, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, হরিণ, সাপ, বিভিন্ন ধরনের পাখি তৈরি করে থাকে।

মাটি দিয়ে তৈরির পর এক সপ্তাহ শুকানো হয়। এরপর পুড়িয়ে রং করা হয়। মৃৎশিল্পের নান্দনিকভাবে তৈরিকৃত এসব পণ্য বিভিন্ন হাটে, বাজার এবং মেলায় পসরা বসিয়ে বিক্রি করেন। মহেশপুর পালপাড়া গ্রামের শ্রীধাম চন্দ্র পাল বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয়। কিছু দিন আগে মৃৎ পণ্যগুলো নৌকায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় কম খরচে পাঠানো যেত। কিন্তু নৌপথে যোগাযোগ ভালো না থাকায় এখন আর পাঠানো যায় না।’

বেতাগী পৌর শহরে শনিবার ও বুধবারে সাপ্তাহিক হাটে বিভিন্ন ধরণের মৃৎ সামগ্রি নিয়ে বিক্রি করতে আসেন মহেশপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শম্ভু পাল। তার সঙ্গে কথা হলে বলেন, ‘আমাদের তৈরিকৃত মৃৎশিল্প ঢাকা জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন অফিসে শোভা পাচ্ছে।’

মহেশপুর গ্রাম থেকে বেতাগী পৌর শহরের বুধবার হাটে তৈজস্বপত্র বিক্রি করতে আসা জগন্নাথ পাল (৬৮) বলেন, সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সাহায্যর জন্য এগিয়ে আসে তাহলে মৃৎশিল্পকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, ‘মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের পৃষ্ঠোপোষকতা প্রয়োজন।’

ছবি

সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ে ছাই ৯৪ রিসোর্ট-কটেজ

ছবি

শরণখোলায় মাছের ঘের থেকে ৮ ফুট লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার

ছবি

সুবিধা বঞ্চিত মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব

পিতাকে খুন করায় ছেলে গ্রেপ্তার

প্রথমবার মা-বাবা হওয়া দম্পতিদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা জরুরি

ছবি

ধর্মপাশায় মাজারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

গাজীপুরে বারি পেঁয়াজ-৪ এর প্রজনন বীজ উৎপাদন

ছবি

হিজবুত তাওহীদ কর্মীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ, আহত ২০

বগুড়ায় করতোয়া নদী রক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

খামারিকে আটকে গোয়াল ঘরে আগুন

খোকসায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

ছবি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলের লাল টিলা

লোগো ও লাইন পদ্ধতিতে ধান চাষের আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

কয়েলের আগুনে পুড়ে মরলো ৩টি গরু, বাঁচাতে গিয়ে ঝলসে গেল মালিক

ছবি

দশমিনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৩ শতাধিক পান চাষী স্বাবলম্বী

নারী-শিশুসহ সবার নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন

ভৈরবে বসত ঘরে কবর তৈরি করে রেখেছেন সুফী সাধক সিদ্দিক শাহ সরেশ্বরী

পানির অভাবে জীবন-জীবিকার ঝুঁকিতে তিস্তাপাড়ের ২০ লাখ মানুষ

মুন্সীগঞ্জে কুকুরের কামড়ে আহত ৪০

লিবিয়ায় মাফিয়াদের দেয়া ইঞ্জেকশনে নাসিরনগরের যুবকের মৃত্যু

দুই জেলায় ২ মরদেহ উদ্ধার

বিয়ে বাড়িতে উচ্চশব্দে গান, প্রতিবেশীদের হামলায় নিহত ১

দুই জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধা ও স্কুলছাত্রের মৃত্যু

যৌতুক না দেয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা

পঞ্চম বিয়ে করায় স্বামী কুপিয়ে খুন, স্ত্রী গ্রেপ্তার

বজ্রপাতে কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু

বোয়ালখালীতে পোশাক কারখানায় আগুন

মেরামতের সময় এসি বিস্ফোরণ, ২ মিস্ত্রি নিহত

গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রশাসনের কড়া নির্দেশনা

ছবি

কালের আবর্তনে এখন বিলুপ্তির পথে হারিকেন

৩ পরিবারের ৪ গরু চুরি

প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি বিএনপি নেতাসহ ৩ ডাকাত গ্রেপ্তার

ছবি

চট্টগ্রাম মহানগরে বছরে বর্জ্য উৎপাদন হয় ১৯ লাখ টন

খোকসায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

৪ জেলার লক্ষাধিক কৃষক মহাসংকটে বোরো মৌসুমে পানি সরবরাহ নেই সেচ প্রকল্পে

ছবি

ভৈরবে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনভ্রমণ করছেন যাত্রীরা, মানছেন না আইন-কানুন

tab

সারাদেশ

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের নান্দনিক তৈজসপত্র

দখল নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক তবুও স্বপ্ন দেখেন শিল্পীরা

লিটন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা)

বিভিন্ন ধরণের মৃৎ শিল্পের সামগ্রি নিয়ে পসরা বসিয়ে বিক্রি করছেন শম্ভু পাল। ছবিটি সম্প্রতি মহেশপুর গ্রামের পালপাড়া থেকে তোলা -সংবাদ

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের নান্দনিক তৈজসপত্র। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সংকটের মুখে এই শিল্প। মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র তৈরিতে এক সময় বাকেরগঞ্জের মহেশপুর গ্রামগুলো উপকূলীয় জনপদের মধ্যে বিখ্যাত ছিল। প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়া ও নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এই মাটির তৈরি নান্দনিক শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।

সরেজমিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেশপুর পালপাড়া এলাকা ঘুরে জানা যায়, এই গ্রামে ৫০ বছর পূর্বেও ৩ হাজার পরিবার মৃৎশিল্পের কাজে নিয়োজিত ছিল। নিয়োজিত শিল্পীদের মধ্যে অধিকাংশ পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণীভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলের সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমানে ৪ শতাধিক পরিবারের প্রায় দেড় হাজার লোক এ পেশার সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে।

বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। এর প্রধান কারণ এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক সামগ্রীর তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে না। এই কারণে পুরোনো এ পেশার সঙ্গে জড়িত অনেকে এ পেশা বদল করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।

যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখেন।

কোনো একদিন আবারো কদর বাড়বে নান্দনিক মাটির তৈরি এসব পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজো দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা। নারী, পুরুষ ও শিশুরাও কাজ করছে। মাটির তৈরি বিভিন্ন আকারের কলস, হাড়ি, বাসন, চায়ের কাপ ও প্লেট, বাটি, শরা, ফুলদানী, টপ, ব্যাংক ঘট, গামলা, চারি, টালী, বদনা, চারা, ইত্যাদি।

এছাড়াও বাড়িঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মাটি দিয়ে ফুলদানী, টপ, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, হরিণ, সাপ, বিভিন্ন ধরনের পাখি তৈরি করে থাকে।

মাটি দিয়ে তৈরির পর এক সপ্তাহ শুকানো হয়। এরপর পুড়িয়ে রং করা হয়। মৃৎশিল্পের নান্দনিকভাবে তৈরিকৃত এসব পণ্য বিভিন্ন হাটে, বাজার এবং মেলায় পসরা বসিয়ে বিক্রি করেন। মহেশপুর পালপাড়া গ্রামের শ্রীধাম চন্দ্র পাল বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয়। কিছু দিন আগে মৃৎ পণ্যগুলো নৌকায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় কম খরচে পাঠানো যেত। কিন্তু নৌপথে যোগাযোগ ভালো না থাকায় এখন আর পাঠানো যায় না।’

বেতাগী পৌর শহরে শনিবার ও বুধবারে সাপ্তাহিক হাটে বিভিন্ন ধরণের মৃৎ সামগ্রি নিয়ে বিক্রি করতে আসেন মহেশপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শম্ভু পাল। তার সঙ্গে কথা হলে বলেন, ‘আমাদের তৈরিকৃত মৃৎশিল্প ঢাকা জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন অফিসে শোভা পাচ্ছে।’

মহেশপুর গ্রাম থেকে বেতাগী পৌর শহরের বুধবার হাটে তৈজস্বপত্র বিক্রি করতে আসা জগন্নাথ পাল (৬৮) বলেন, সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সাহায্যর জন্য এগিয়ে আসে তাহলে মৃৎশিল্পকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, ‘মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের পৃষ্ঠোপোষকতা প্রয়োজন।’

back to top