alt

সারাদেশ

মোরেলগঞ্জে দৈন্যদশায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো

প্রতিনিধি, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : চা দোকানিকে প্রদান করা হচ্ছে ঢুলিগাতী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা -সংবাদ

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা অফিসের আওতাধীন ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো চরম দৈন্যদশার মধ্যে রয়েছে। নিরাপত্তাপ্রহরীরাই এখন ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর। সাধারণ রোগীরা কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তদারকি নেই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। সপ্তাহে একদিন খোলা হচ্ছে একাধিক কেন্দ্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ৪ লাখ মানুষের গ্রামীণ জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীদের সেবাদান কার্যক্রম লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের তত্ত্বাবধানে ১৬টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিনার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রেই রয়েছে জনবল সংকট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনিয়মিত কেন্দ্রে আগমন, জরাজীর্ণ ভবন এবং একাধিক কেন্দ্র খোলা হচ্ছে সপ্তাহে একদিন।

মাঠ পর্যায়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো তদারকির জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তার পরিদর্শনের কথা থাকলেও তিনি বিগত ১ বছরেরও অধিক সময় অনেক কেন্দ্র পরিদর্শনে যায়নি। এ রকম অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান তারেকের বিরুদ্ধে। সেবাদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলো থেকে গর্ভকালীন সেবা এনসি, প্রসব সেবা নরমাল ডেলিভারি, কিশোর কিশোরীদের বয়স সন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সেবা, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীদের সেবাদান। এ ছাড়াও এই পদ্ধতি গ্রহণকারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারিদের জটিলতার সময় সেবাদান কার্যক্রম। এই কেন্দ্রে থেকে নিয়মিত ২৩ প্রকারের ওষুধপত্র দেওয়া হয় রোগীদেরকে। বর্তমানে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম। ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। সরকারের বছরে এই প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা ব্যায় হলেও, কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হোগলাপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি খোলা থাকলেও গত ২ বছর ধরে সকল দায়িত্ব পালন করছেন একমাত্র নিরাপত্তাপ্রহরী মো. শাহাজালাল। রোগীরা এসে চিকিৎসা না পেয়ে যাচ্ছেন ফিরে। কেন্দ্র প্রধান উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও), এফডব্লিউভি এবং আয়াসহ সকল পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। গত ৮ মাস ধরে অতিরিক্ত দায়িত্বে একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) শারমিন আক্তার মিতু সপ্তাহে শুধুমাত্র একদিন বৃহস্পতিবার এসে রোগী দেখছেন। পার্শ্ববর্তী চিংড়াখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিরও বিগত ২ বছর ধরে চিত্র একই। সেখানে নিরাপত্তাপ্রহরী রিয়াজুল শেখই একমাত্র ভরসা।

এই কেন্দ্রটিতেও সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে দৈবজ্ঞহাটি কেন্দ্রের (এফডব্লিউভি) দিলশাদ জোবায়দা স্বর্ণা। তেলিগাতি ইউনিয়নের ঢুলিগাতী পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘ এক যুগ ধরে পরিত্যাক্ত জরাজীর্ণ ভবন থাকায় গত ২-৩ বছর ধরে ভারাটিয়া একটি চায়ের দোকানে সেখানে সপ্তাহের একদিন শনিবার সেবা দিচ্ছেন তেলিগাতির স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের একজন। এই কেন্দ্রটিতেও নিরাপত্তাপ্রহরী এম রহমানই ভরসা। বহরবুনিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘবছর পড়ে থাকায়, সেখানে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে অস্থায়ী ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে। তাও আবার সপ্তাহে ২-১ দিন। এদিকে, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কচুবুনিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) নাজমা খাতুন সপ্তাহে সোমবার এবং মঙ্গলবার এই দুদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি রয়েছেন অনুপস্থিত। অনুরূপ পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি গত আড়াই বছর ধরে সপ্তাহে একদিন কেন্দ্র খুলে সেবা দিয়ে থাকেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এফডব্লিউএ মুন্নি আক্তার।

হোগলাপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে সেবা নিতে আশা ফকিরহাট গ্রামের নাজমা বেগম, বড় হরিপুর গ্রামের রহিমা বেগম, গোবিন্দপুর গ্রামের বিলকিস আক্তার, সাফিয়া বেগম, শিশু রাব্বি শেখ এবং তানিয়া আক্তারসহ একাধিক রোগী ডাক্তার না পেয়ে দীর্ঘ সময় বসে থেকে ফিরে যাচ্ছেন।

এ সময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, ৩-৪ মাইল কষ্ট করে পায়ে হেটে এসে ডাক্তারই যদি না পাই, তাহলে তারা এটা খুলে রেখেছেন কেনো ? কর্মকর্তারা কী কিছু দেখছেন না? হোগলাপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের নিরাপত্তাপ্রহরী মো. শাহাজালাল বলেন, গত ২ বছর ধরে সকালে অফিস খুলি আর বন্ধ করি। আমি কিভাবে ওষুধ দেবো? আমিতো আর ডাক্তার নই। অফিস ঝাড়– দেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ আমার একারই করতে হয়। মিতু ম্যাডাম প্রতি সপ্তাহের শুধু বৃহস্পতিবার এসে রোগী দেখেন। হোগলাপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শারমীন আক্তার মিতু এবং চিংড়াখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা (এফডব্লিউভি) দিলশাদ জোবায়দাস্বর্ণা জানান, তারা দুজন বর্তমানে বনগ্রাম এবং দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নে মূল কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন হোগলাপাশা এবং চিংড়াখালীতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান তারেক বলেন, এই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জনবল সংকটের বিষয়টি ইতোপূর্বে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।

জেলার মোরেলগঞ্জ এবং শরণখোলা এই দুই উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার কারণে বর্তমানে একাধিক কাজ করতে হচ্ছে তাকে। তিনি নিয়মিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনে যাচ্ছেন না এমন অভিযোগ অস্বিকার করে ডা. হাসান তারেক বলেন, অভিযোগটি সঠিক নয়।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে কেউ কোন দায়িত্বে অবহেলা করলে, খোঁজখবর নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ছবি

ফতুল্লায় বিদেশি অস্ত্র ও গুলি সহ দুই ভাই গ্রেপ্তার

সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ ৮

ছবি

মজানের দ্বিতীয় দিনে উখিয়ায় বাজার মনিটরিং, অর্থদণ্ড

ছবি

অল্প টাকার জন্য মারামারি, প্রাণ গেল দলিল লেখকের

রাজারহাটে মাদকসহ দুই কারবারি আটক

কক্সবাজারে ছয় ছিনতাইকারি গ্রেপ্তার

ট্রাফিক সদস্যের নাক ফাটানোয় ছাত্রদল নেতা আটক

চাঁদা না পেয়ে হকারকে অপহরণ, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্সের অভিযান

খোলাবাজারে অনুমোদনহীন ঔষধ বিক্রি, বিক্রেতার দণ্ড

দম্পতিকে কুপিয়ে জখম, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর

দক্ষিণাঞ্চলে ৬টি সেতুর নাম পরিবর্তন

যুবককে তুলে নিয়ে চোখ উৎপাটন-পায়ের রগ কর্তন, আটক ১

রাজশাহীতে ট্রাক-অ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

দুই জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধা ও অটোচালক নিহত

সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে আলোচনা করায় ইমামকে মারধর, ঘটনার জেরে বাড়িঘর ভাঙচুর

সাভারে চলন্ত বাসে ডাকাতি

মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা

পাহাড়ে লালমাটি কাটা বন্ধে অভিযান, ৩ জনের জেল

মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

আক্কেলপুরে ফলের দোকানে জরিমানা

সিংড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ৩

ছবি

সচল ও সুরক্ষায় গাছ থেকে পেরেক অপসারণের উদ্যোগ

রাউজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট -জরিমানা

ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হামলা, চিনে ফেলায় গলা কেটে হত্যা

বগুড়ায় ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ

ডেভিল হান্ট অভিযানে বাগেরহাটে ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন গ্রেপ্তার

ছবি

চান্দিনায় ফুটপাত ও বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান, জরিমানা

সাভারে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

সিরাজদিখানে ফসলি জমিতে হাউজিংয়ের বিলবোর্ড অপসারণ

ডিমলায় সন্ত্রাসী কায়দায় আম-কাঁঠালের বাগান দখল

কালকিনির ট্রিপল মার্ডারের আসামি ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাই গ্রেপ্তার

ছবি

মেঘনায় ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ সংরক্ষণে কঠোর তৎপরতা

ছবি

কচুরিপানা পরিষ্কারে প্রাণ ফিরে পেল গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া খাল

নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন, দগ্ধ ৮

মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা সমস্যায় জর্জরিত

tab

সারাদেশ

মোরেলগঞ্জে দৈন্যদশায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো

প্রতিনিধি, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : চা দোকানিকে প্রদান করা হচ্ছে ঢুলিগাতী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা -সংবাদ

সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা অফিসের আওতাধীন ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো চরম দৈন্যদশার মধ্যে রয়েছে। নিরাপত্তাপ্রহরীরাই এখন ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর। সাধারণ রোগীরা কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তদারকি নেই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। সপ্তাহে একদিন খোলা হচ্ছে একাধিক কেন্দ্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ৪ লাখ মানুষের গ্রামীণ জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীদের সেবাদান কার্যক্রম লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের তত্ত্বাবধানে ১৬টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিনার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রেই রয়েছে জনবল সংকট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনিয়মিত কেন্দ্রে আগমন, জরাজীর্ণ ভবন এবং একাধিক কেন্দ্র খোলা হচ্ছে সপ্তাহে একদিন।

মাঠ পর্যায়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো তদারকির জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তার পরিদর্শনের কথা থাকলেও তিনি বিগত ১ বছরেরও অধিক সময় অনেক কেন্দ্র পরিদর্শনে যায়নি। এ রকম অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান তারেকের বিরুদ্ধে। সেবাদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলো থেকে গর্ভকালীন সেবা এনসি, প্রসব সেবা নরমাল ডেলিভারি, কিশোর কিশোরীদের বয়স সন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সেবা, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীদের সেবাদান। এ ছাড়াও এই পদ্ধতি গ্রহণকারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারিদের জটিলতার সময় সেবাদান কার্যক্রম। এই কেন্দ্রে থেকে নিয়মিত ২৩ প্রকারের ওষুধপত্র দেওয়া হয় রোগীদেরকে। বর্তমানে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম। ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। সরকারের বছরে এই প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা ব্যায় হলেও, কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হোগলাপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি খোলা থাকলেও গত ২ বছর ধরে সকল দায়িত্ব পালন করছেন একমাত্র নিরাপত্তাপ্রহরী মো. শাহাজালাল। রোগীরা এসে চিকিৎসা না পেয়ে যাচ্ছেন ফিরে। কেন্দ্র প্রধান উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও), এফডব্লিউভি এবং আয়াসহ সকল পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। গত ৮ মাস ধরে অতিরিক্ত দায়িত্বে একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) শারমিন আক্তার মিতু সপ্তাহে শুধুমাত্র একদিন বৃহস্পতিবার এসে রোগী দেখছেন। পার্শ্ববর্তী চিংড়াখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিরও বিগত ২ বছর ধরে চিত্র একই। সেখানে নিরাপত্তাপ্রহরী রিয়াজুল শেখই একমাত্র ভরসা।

এই কেন্দ্রটিতেও সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে দৈবজ্ঞহাটি কেন্দ্রের (এফডব্লিউভি) দিলশাদ জোবায়দা স্বর্ণা। তেলিগাতি ইউনিয়নের ঢুলিগাতী পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘ এক যুগ ধরে পরিত্যাক্ত জরাজীর্ণ ভবন থাকায় গত ২-৩ বছর ধরে ভারাটিয়া একটি চায়ের দোকানে সেখানে সপ্তাহের একদিন শনিবার সেবা দিচ্ছেন তেলিগাতির স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের একজন। এই কেন্দ্রটিতেও নিরাপত্তাপ্রহরী এম রহমানই ভরসা। বহরবুনিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘবছর পড়ে থাকায়, সেখানে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে অস্থায়ী ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে। তাও আবার সপ্তাহে ২-১ দিন। এদিকে, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কচুবুনিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) নাজমা খাতুন সপ্তাহে সোমবার এবং মঙ্গলবার এই দুদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি রয়েছেন অনুপস্থিত। অনুরূপ পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি গত আড়াই বছর ধরে সপ্তাহে একদিন কেন্দ্র খুলে সেবা দিয়ে থাকেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এফডব্লিউএ মুন্নি আক্তার।

হোগলাপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে সেবা নিতে আশা ফকিরহাট গ্রামের নাজমা বেগম, বড় হরিপুর গ্রামের রহিমা বেগম, গোবিন্দপুর গ্রামের বিলকিস আক্তার, সাফিয়া বেগম, শিশু রাব্বি শেখ এবং তানিয়া আক্তারসহ একাধিক রোগী ডাক্তার না পেয়ে দীর্ঘ সময় বসে থেকে ফিরে যাচ্ছেন।

এ সময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, ৩-৪ মাইল কষ্ট করে পায়ে হেটে এসে ডাক্তারই যদি না পাই, তাহলে তারা এটা খুলে রেখেছেন কেনো ? কর্মকর্তারা কী কিছু দেখছেন না? হোগলাপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের নিরাপত্তাপ্রহরী মো. শাহাজালাল বলেন, গত ২ বছর ধরে সকালে অফিস খুলি আর বন্ধ করি। আমি কিভাবে ওষুধ দেবো? আমিতো আর ডাক্তার নই। অফিস ঝাড়– দেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ আমার একারই করতে হয়। মিতু ম্যাডাম প্রতি সপ্তাহের শুধু বৃহস্পতিবার এসে রোগী দেখেন। হোগলাপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শারমীন আক্তার মিতু এবং চিংড়াখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা (এফডব্লিউভি) দিলশাদ জোবায়দাস্বর্ণা জানান, তারা দুজন বর্তমানে বনগ্রাম এবং দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নে মূল কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন হোগলাপাশা এবং চিংড়াখালীতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান তারেক বলেন, এই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জনবল সংকটের বিষয়টি ইতোপূর্বে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।

জেলার মোরেলগঞ্জ এবং শরণখোলা এই দুই উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার কারণে বর্তমানে একাধিক কাজ করতে হচ্ছে তাকে। তিনি নিয়মিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনে যাচ্ছেন না এমন অভিযোগ অস্বিকার করে ডা. হাসান তারেক বলেন, অভিযোগটি সঠিক নয়।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে কেউ কোন দায়িত্বে অবহেলা করলে, খোঁজখবর নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

back to top