alt

সারাদেশ

রূপগঞ্জে ভালো নেই জামদানি শিল্পের কারিগররা

প্রতিনিধি, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : জামদানি তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর -সংবাদ

বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরও দুর্দশা কাটেনি জামদানি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগরদের। ভালো নেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জামদানি শিল্পের কারিগররা। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তাঁতিরা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়। এর মধ্যে গোদের উপর বিষ ফোঁড়া হয়ে উঠেছে ভারতীয় নকল জামদানির বিক্রি।

জানা গে?ছে, জামদানি শাড়ি পছন্দ করেন না এমন নারী বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এই চাহিদাকেই পুঁজি করে সস্তার নকল জামদানিতে বাজার ভরে গিয়েছে। সাধারণের চেনার উপায় নেই- কোনটি আসল আর কোনটি নকল জামদানি। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও নকল জামদানি কিনছেন। নিজে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, প্রতারণা করছেন সেই সব খেঁটে খাওয়া দক্ষ কারিগরদের সঙ্গে।

জামদানি ব্যবসায়ী কাজী আব্দুল হাসেম মিয়া ব?লেন, যেখানে একটি জামদানি শাড়ির দাম হওয়ার কথা ২০ হাজার টাকা, তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ থেকে ৫ হাজার টাকায়। তাহলে কি এটা আসল জামদানি?

জামদানি শাড়ি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, আসল-নকল জামদানির পার্থক্য তো দামেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রেতাদের জামদানির প্রতি দুর্বলতা আছে। আর এটাকেই পুঁজি করে টাঙ্গাইল ও রাজশাহীর শাড়িতে জামদানির নকশা করে তা জামদানি বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত থেকেও এ ধরনের শাড়ি প্রচুর আসছে। এগুলো আসলে নকল জামদানি। তবে দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে। এই পলিয়েস্টার জামদানি দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে অস্বস্তি বোধ হয়। এছাড়া ত্বকের নানা সমস্যা হতে পারে।

জামদানি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হা?মিদুল্লাহ ব?লেন, ঐতিহ্যের জামদানির পরিবর্তে এখন নকল জামদানির ছড়াছড়ি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কম দামে নকল জামদানি কিনে তাকে আসল জামদানি বলে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। নকল জামদানির মান ভালো না হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। নকলের ভিড়ে আসল হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আসল জামদানি গুলো তাঁতিরা হাতে ও তাঁতে তৈরি করে বলে এগুলো অনেক কষ্টসাধ্য ও শ্রমসাধ্য। এগুলোর দামও বেশি। ফলে কম দামে নকল জামদানি কিনে নিচ্ছে ভোক্তারা।

জামদানি উৎপাদনকারীদের মতে, জামদানি শাড়ি হাতে তৈরি হয়। এতে উন্নতমানের কটন, হাফ সিল্ক ও টাইডাই সুতা এবং নিজস্ব রঙের সমন্বয় করা হয়। উভয় পিঠে দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য নকশা থাকে এবং সেটি মসৃণ হয়। আঁচলেও কাজ থাকে বেশি। সবচেয়ে কম নকশার কাজের একটি জামদানি তৈরিতে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। ভালোমানের একটি জামদানি তৈরি করতে এক মাসের বেশি সময় চলে যায়। এর দামও বেশি। অন্যদিকে নকল জামদানি মেশিনে তৈরি হচ্ছে। নিম্নমানের শাড়িতে জামদানির অনুকরণে হুবহু নকশা সেঁটে দেয়া হচ্ছে। সাধারণত কাপড়ের একপিঠে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহারে খসখসে ও বটে ওপরের দিকে উঠে যাবে। তুলনামূলক এর দামও কম। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাই?লে তাঁতি মো. ইসমাইল হোসেন, কাকলী বেগম, লোকমান হোসেন, আমান উল্লাহ বলেন, আসল-নকল চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে জামদানির দাম। আসল জামদানিতে কারুকাজ যতই কম থাকুক না কেন তার দাম এখনকার বাজার মূল্যে ৬ হাজার টাকার কম হবে না। এর ওপরে মানভেদে জামদানি শাড়ির দাম ১ লাখ টাকার ওপরেও হয়ে থাকে। মানসম্মত জামদানির মূল্য হবে ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কম দামের জামদানিতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

বিসিক জামদা?নি শিল্পপল্লীর জামদানি কারিগর কবির হোসেন বলেন, ত্রিশ বছর আগে যখন তাঁতের কাজ শুরু করি তখন সারাদেশে জামদানির চাহিদা ছিল অনেক বেশি। এখন চাহিদা আগের থেকে বাড়লেও তাঁতিদের দুর্দশা কাটেনি। কারণ, বেশির ভাগ ক্রেতাই কম দামে ভারতীয় জামদানি কিনছেন। জামদানি প্রিয় ক্রেতাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে অসাধু বিক্রেতারা বাহারি নকশার এসব ভারতীয় শাড়ি গছিয়ে দিয়ে বলছেন এটাই ‘আসল’ জামদানি। কম দামে পেয়ে তুষ্ট হয়ে কিনে পরে ক্রেতারা বুঝতে পেরে আমাদের গালমন্দ করেন। সোহাগ জামদানি হাউসের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সুতা কেনার টাকাই পাই না। ৫ হাজার টাকা দামের শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়ে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। 

এ প্রসঙ্গে জামদানি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা ব?লেন, ভারত তাদের উপ্পাদা জামদানিকে ‘আসল জামদানি’ বলে বিক্রি করছে। এটা গায়ের জোরে করলে তো হবে না। ভারতের ‘উপ্পাদা জামদানি’ জামদানিই না। বাজার নকল জামদানিতে ভরে গেছে। টাঙ্গাইলের শাড়িতে কিছু বুটিক করেই জামদানি বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভারত থেকে দেদারসে এ ধরনের শাড়ি আসছে যা জামদানি বলে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যেখানে একটি জামদানি শাড়ির দাম হওয়ার কথা ২০ হাজার টাকা, তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ হাজার টাকায়। তাহলে কি এটা আসল জামদানি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জামদানি শাড়ি বিক্রেতা বলেন, আসল-নকল জামদানির পার্থক্যতো দামেই। ৬/৭ হাজার টাকার নিচে তো কোনো জামদানিই হবে না। অথচ ২ হাজার টাকাতেও জামদানি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের ক্রেতাদের জামদানির প্রতি দুর্বলতা আছে। আর এটাকেই পুঁজি করে টাঙ্গাইল ও রাজশাহীর শাড়িতে জামদানির নকশা করে তা জামদানি বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত থেকেও এ ধরনের শাড়ি প্রচুর আসছে। এগুলো আসলে নকল জামদানি। তবে দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে। এই পলিস্টার জামদানি দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে অস্বস্তি বোধ হয়। এছাড়া ত্বকের নানা সমস্যা হতে পারে।

জামদানি ব্যবসায়ী মতিন মিয়া বলেন, বর্তমানে জামদানি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ সম্পৃক্ত। জামদানির চাহিদা থাকার পরও ভালো নেই এ শিল্পের কারিগররা। কারণ নকল জামদানিতে বাজার ভরে যাওয়ায় হাতের তৈরি জামদানির আসল কারিগররা মার খাচ্ছেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পাওয়ার লুম দিয়ে পলিস্টার সুতায় জামদানি তৈরি করছেন। এতে ঐতিহ্য হারাচ্ছে জামদানি। অথচ হাতে একটি জামদানি তৈরি করতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগে। রূপগঞ্জে যেসব জামদানি তৈরি হচ্ছে সেগুলো আসল জামদানি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় হাতে বোনা আসল জামদানি কম চলে। তিনি বলেন, ক্রেতারা তো বুঝতে চান না। তারা ১৫শ-১৬শ টাকায় নকল জামদানি কেনেন। এত কম টাকায় তো জামদানি শাড়ি হবে না।

নোয়াপাড়ার বিসিক জামদানি শিল্প নগরীর জামদানি প্রস্তুতকারক এবং জামদানি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, জামদানি তৈরির একমাত্র পল্লী হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। পার্শ্ববর্তী থানা সোনারগাঁওয়ে কিছু জামদানির প্রস্তুতকারক রয়েছেন। বিসিকের জামদানি পল্লীতে প্রত্যেকের ছোট-বড় প্লট রয়েছে। দেশের তৈরি জামদানিতে বিশ্বব্যাপী যে ঐতিহ্য, মূলত তারাই আদি ব্যবসা হিসেবে এটি ধরে রেখেছেন। এখান থেকে দেশব্যাপী জামদানি সরবরাহ হচ্ছে। নকল জামদানি তৈরি ও সরবরাহের কোনো সুযোগ বিসিক জামদানি পল্লীতে নেই।

এ ব্যাপারে বিসিক জামদানি শিল্প নগরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত জনৈক কর্মকর্তা বলেন, সব শ্রেণীর ক্রেতাকে ধরতে জামদানি ঘিরে এ ধরনের প্রতারণা হতে পারে। তবে আদি জামদানিকারক কেউ-ই এ অনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত নয়। এখানে যাদের প্লট রয়েছে তারা সবাই বিসিকের তত্ত্বাবধানে জামদানি তৈরি করছে। নিজস্ব নকশা ও রঙের সমন্বয় করে জামদানি তৈরি করছে। পাশাপাশি বিসিকের নকশা অনুযায়ী জামদানি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে রঙ, সুতা ও গুণগতমানে কোথায়ও গলদ থাকছে বলে আমি মনে করি না। জামদানি শাড়িটা মূলত দৃষ্টিনন্দন নিখুঁত হাতে তৈরি কারুকার্যের কারণেই প্রসিদ্ধ। এটি তৈরি বেশ সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তাই প্রকৃত জামদানির সঙ্গে দামের সম্পর্কটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জামদানি শিল্প রক্ষায় সরকার আন্তরিক। এ শিল্প রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

সিলেটে ফেব্রুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২ জনের প্রাণহানি

ছবি

সিলেটে গাছ সুরক্ষায় পেরেক অপসারণ শুরু

কুষ্টিয়া-দৌলতপুর চরাঞ্চলে হঠাৎ চরমপন্থি আতঙ্ক

ছবি

নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার, ভাঙছে সড়ক বাড়ছে জনদুর্ভোগ

রাজশাহীতে ট্রাক-অ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষে নিহত ৩

নির্ধারিত সময়ে অফিসে না আসায় ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত, আহত ১

কেরানীগঞ্জে অপহৃত শ্রমিক উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৬

সরিষাবাড়ীতে অবৈধ ইটভাটাকে জরিমানা

ছবি

রংপুরে আলুর কেজি ১০ টাকা, কৃষক সর্বস্বান্ত

ছবি

ভালুকায় বোরো খেতে সবুজের সমারোহ আগাছা তুলতে ব্যস্ত নারী শ্রমিকরা

শার্শায় পূর্ব শত্রুতার জেরে ৪ জনকে কুপিয়ে জখম

সীমান্তে ৫ বাংলাদেশি নাগরিক আটক

বাগহাটায় ফিলিং স্টেশন ভাঙচুরের প্রতিবাদে নরসিংদীর ২২ সিএনজি স্টেশন বন্ধ

হবিগঞ্জে জরিমানা করায় ক্যাব সভাপতির বাসায় হামলা

ছবি

গাইবান্ধায় মাসব্যাপী ইফতার ও রাতের খাবার কর্মসূচি

নড়াইলে বাজার মনিটরিংয়ে ৩ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

অবশেষে মহাদেবপুরের আত্রাই নদীর বালুমহাল ইজারা না দেয়ার সিদ্ধান্ত

বালুর বস্তাচাপা অবস্থায় শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সাপাহারে বাতাসে বইছে আম্র মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণ

ফরিদপুরে দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৩

আদমদীঘিতে কৃষকের চার গরু চুরি

মান্দায় ৩ মাদকসেবীর কারাদণ্ড

ছবি

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা: যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার, দেশি অস্ত্র উদ্ধার

সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত দুইজনের পরিচয় মিলেছে

ছবি

মাতামুহুরি নদীর চর থেকে মরদেহ উদ্ধার

ছবি

অল্প টাকার জন্য মারামারি, প্রাণ গেল দলিল লেখকের

ছবি

ফতুল্লায় বিদেশি অস্ত্র ও গুলি সহ দুই ভাই গ্রেপ্তার

সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ ৮

ছবি

মজানের দ্বিতীয় দিনে উখিয়ায় বাজার মনিটরিং, অর্থদণ্ড

ছবি

অল্প টাকার জন্য মারামারি, প্রাণ গেল দলিল লেখকের

রাজারহাটে মাদকসহ দুই কারবারি আটক

কক্সবাজারে ছয় ছিনতাইকারি গ্রেপ্তার

ট্রাফিক সদস্যের নাক ফাটানোয় ছাত্রদল নেতা আটক

চাঁদা না পেয়ে হকারকে অপহরণ, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্সের অভিযান

tab

সারাদেশ

রূপগঞ্জে ভালো নেই জামদানি শিল্পের কারিগররা

প্রতিনিধি, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : জামদানি তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর -সংবাদ

মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরও দুর্দশা কাটেনি জামদানি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগরদের। ভালো নেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জামদানি শিল্পের কারিগররা। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তাঁতিরা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়। এর মধ্যে গোদের উপর বিষ ফোঁড়া হয়ে উঠেছে ভারতীয় নকল জামদানির বিক্রি।

জানা গে?ছে, জামদানি শাড়ি পছন্দ করেন না এমন নারী বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এই চাহিদাকেই পুঁজি করে সস্তার নকল জামদানিতে বাজার ভরে গিয়েছে। সাধারণের চেনার উপায় নেই- কোনটি আসল আর কোনটি নকল জামদানি। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও নকল জামদানি কিনছেন। নিজে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, প্রতারণা করছেন সেই সব খেঁটে খাওয়া দক্ষ কারিগরদের সঙ্গে।

জামদানি ব্যবসায়ী কাজী আব্দুল হাসেম মিয়া ব?লেন, যেখানে একটি জামদানি শাড়ির দাম হওয়ার কথা ২০ হাজার টাকা, তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ থেকে ৫ হাজার টাকায়। তাহলে কি এটা আসল জামদানি?

জামদানি শাড়ি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, আসল-নকল জামদানির পার্থক্য তো দামেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রেতাদের জামদানির প্রতি দুর্বলতা আছে। আর এটাকেই পুঁজি করে টাঙ্গাইল ও রাজশাহীর শাড়িতে জামদানির নকশা করে তা জামদানি বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত থেকেও এ ধরনের শাড়ি প্রচুর আসছে। এগুলো আসলে নকল জামদানি। তবে দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে। এই পলিয়েস্টার জামদানি দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে অস্বস্তি বোধ হয়। এছাড়া ত্বকের নানা সমস্যা হতে পারে।

জামদানি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হা?মিদুল্লাহ ব?লেন, ঐতিহ্যের জামদানির পরিবর্তে এখন নকল জামদানির ছড়াছড়ি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কম দামে নকল জামদানি কিনে তাকে আসল জামদানি বলে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। নকল জামদানির মান ভালো না হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। নকলের ভিড়ে আসল হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আসল জামদানি গুলো তাঁতিরা হাতে ও তাঁতে তৈরি করে বলে এগুলো অনেক কষ্টসাধ্য ও শ্রমসাধ্য। এগুলোর দামও বেশি। ফলে কম দামে নকল জামদানি কিনে নিচ্ছে ভোক্তারা।

জামদানি উৎপাদনকারীদের মতে, জামদানি শাড়ি হাতে তৈরি হয়। এতে উন্নতমানের কটন, হাফ সিল্ক ও টাইডাই সুতা এবং নিজস্ব রঙের সমন্বয় করা হয়। উভয় পিঠে দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য নকশা থাকে এবং সেটি মসৃণ হয়। আঁচলেও কাজ থাকে বেশি। সবচেয়ে কম নকশার কাজের একটি জামদানি তৈরিতে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। ভালোমানের একটি জামদানি তৈরি করতে এক মাসের বেশি সময় চলে যায়। এর দামও বেশি। অন্যদিকে নকল জামদানি মেশিনে তৈরি হচ্ছে। নিম্নমানের শাড়িতে জামদানির অনুকরণে হুবহু নকশা সেঁটে দেয়া হচ্ছে। সাধারণত কাপড়ের একপিঠে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহারে খসখসে ও বটে ওপরের দিকে উঠে যাবে। তুলনামূলক এর দামও কম। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাই?লে তাঁতি মো. ইসমাইল হোসেন, কাকলী বেগম, লোকমান হোসেন, আমান উল্লাহ বলেন, আসল-নকল চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে জামদানির দাম। আসল জামদানিতে কারুকাজ যতই কম থাকুক না কেন তার দাম এখনকার বাজার মূল্যে ৬ হাজার টাকার কম হবে না। এর ওপরে মানভেদে জামদানি শাড়ির দাম ১ লাখ টাকার ওপরেও হয়ে থাকে। মানসম্মত জামদানির মূল্য হবে ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কম দামের জামদানিতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

বিসিক জামদা?নি শিল্পপল্লীর জামদানি কারিগর কবির হোসেন বলেন, ত্রিশ বছর আগে যখন তাঁতের কাজ শুরু করি তখন সারাদেশে জামদানির চাহিদা ছিল অনেক বেশি। এখন চাহিদা আগের থেকে বাড়লেও তাঁতিদের দুর্দশা কাটেনি। কারণ, বেশির ভাগ ক্রেতাই কম দামে ভারতীয় জামদানি কিনছেন। জামদানি প্রিয় ক্রেতাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে অসাধু বিক্রেতারা বাহারি নকশার এসব ভারতীয় শাড়ি গছিয়ে দিয়ে বলছেন এটাই ‘আসল’ জামদানি। কম দামে পেয়ে তুষ্ট হয়ে কিনে পরে ক্রেতারা বুঝতে পেরে আমাদের গালমন্দ করেন। সোহাগ জামদানি হাউসের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সুতা কেনার টাকাই পাই না। ৫ হাজার টাকা দামের শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়ে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। 

এ প্রসঙ্গে জামদানি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা ব?লেন, ভারত তাদের উপ্পাদা জামদানিকে ‘আসল জামদানি’ বলে বিক্রি করছে। এটা গায়ের জোরে করলে তো হবে না। ভারতের ‘উপ্পাদা জামদানি’ জামদানিই না। বাজার নকল জামদানিতে ভরে গেছে। টাঙ্গাইলের শাড়িতে কিছু বুটিক করেই জামদানি বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভারত থেকে দেদারসে এ ধরনের শাড়ি আসছে যা জামদানি বলে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যেখানে একটি জামদানি শাড়ির দাম হওয়ার কথা ২০ হাজার টাকা, তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ হাজার টাকায়। তাহলে কি এটা আসল জামদানি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জামদানি শাড়ি বিক্রেতা বলেন, আসল-নকল জামদানির পার্থক্যতো দামেই। ৬/৭ হাজার টাকার নিচে তো কোনো জামদানিই হবে না। অথচ ২ হাজার টাকাতেও জামদানি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের ক্রেতাদের জামদানির প্রতি দুর্বলতা আছে। আর এটাকেই পুঁজি করে টাঙ্গাইল ও রাজশাহীর শাড়িতে জামদানির নকশা করে তা জামদানি বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত থেকেও এ ধরনের শাড়ি প্রচুর আসছে। এগুলো আসলে নকল জামদানি। তবে দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে। এই পলিস্টার জামদানি দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে অস্বস্তি বোধ হয়। এছাড়া ত্বকের নানা সমস্যা হতে পারে।

জামদানি ব্যবসায়ী মতিন মিয়া বলেন, বর্তমানে জামদানি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ সম্পৃক্ত। জামদানির চাহিদা থাকার পরও ভালো নেই এ শিল্পের কারিগররা। কারণ নকল জামদানিতে বাজার ভরে যাওয়ায় হাতের তৈরি জামদানির আসল কারিগররা মার খাচ্ছেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পাওয়ার লুম দিয়ে পলিস্টার সুতায় জামদানি তৈরি করছেন। এতে ঐতিহ্য হারাচ্ছে জামদানি। অথচ হাতে একটি জামদানি তৈরি করতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগে। রূপগঞ্জে যেসব জামদানি তৈরি হচ্ছে সেগুলো আসল জামদানি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় হাতে বোনা আসল জামদানি কম চলে। তিনি বলেন, ক্রেতারা তো বুঝতে চান না। তারা ১৫শ-১৬শ টাকায় নকল জামদানি কেনেন। এত কম টাকায় তো জামদানি শাড়ি হবে না।

নোয়াপাড়ার বিসিক জামদানি শিল্প নগরীর জামদানি প্রস্তুতকারক এবং জামদানি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, জামদানি তৈরির একমাত্র পল্লী হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। পার্শ্ববর্তী থানা সোনারগাঁওয়ে কিছু জামদানির প্রস্তুতকারক রয়েছেন। বিসিকের জামদানি পল্লীতে প্রত্যেকের ছোট-বড় প্লট রয়েছে। দেশের তৈরি জামদানিতে বিশ্বব্যাপী যে ঐতিহ্য, মূলত তারাই আদি ব্যবসা হিসেবে এটি ধরে রেখেছেন। এখান থেকে দেশব্যাপী জামদানি সরবরাহ হচ্ছে। নকল জামদানি তৈরি ও সরবরাহের কোনো সুযোগ বিসিক জামদানি পল্লীতে নেই।

এ ব্যাপারে বিসিক জামদানি শিল্প নগরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত জনৈক কর্মকর্তা বলেন, সব শ্রেণীর ক্রেতাকে ধরতে জামদানি ঘিরে এ ধরনের প্রতারণা হতে পারে। তবে আদি জামদানিকারক কেউ-ই এ অনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত নয়। এখানে যাদের প্লট রয়েছে তারা সবাই বিসিকের তত্ত্বাবধানে জামদানি তৈরি করছে। নিজস্ব নকশা ও রঙের সমন্বয় করে জামদানি তৈরি করছে। পাশাপাশি বিসিকের নকশা অনুযায়ী জামদানি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে রঙ, সুতা ও গুণগতমানে কোথায়ও গলদ থাকছে বলে আমি মনে করি না। জামদানি শাড়িটা মূলত দৃষ্টিনন্দন নিখুঁত হাতে তৈরি কারুকার্যের কারণেই প্রসিদ্ধ। এটি তৈরি বেশ সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তাই প্রকৃত জামদানির সঙ্গে দামের সম্পর্কটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জামদানি শিল্প রক্ষায় সরকার আন্তরিক। এ শিল্প রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

back to top