ভালুকা (ময়মনসিংহ) : বোরো খেতে আগাছা পরিষ্কার করছেন নারী শ্রমিকরা - সংবাদ
ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকের ঘাম ঝড়ানো বোরো ধানের দিগন্তজোড়া মাঠ ভরে উঠেছে সারি সারি সবুজ পাতার আবিরে আর মাঝখানে ভর দুপুরে আগাছা পরিষ্কার করছেন কোমড়ে শাড়ির আঁচল গোঁজা জয়তনসহ ওরা কজন নারী শ্রমিক।
আমন কাটার পর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রামের মাঠে মাঠে শুরু হয় বোরো ধান রোপণ। কোন কোন এলাকায় রবিশস্য ঘরে তুলে ওই জমি চাষ করে ক্ষেত তৈরি করে বিলম্বে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়।
যারা মৌসুমের প্রথমেই ক্ষেত তৈরি করে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন তাদের ক্ষেতের ধান গোছা হয়ে সবুজ রং ধারণ করেছে। ওইসব ধানক্ষেতে আগাছা বাছাই, সার ও কীটনাশক প্রয়োগের সময় হওয়ায় চারিদিকে শ্রমিকের চাহিদা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বোরো ধানের ক্ষেতে আগাছা বাছাইয়ের কাজ করছেন পুরুষের পাশাপশি নারী শ্রমিকরা। কারণ হিসেবে কৃষকরা জানান বর্তমানে ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর মিল ফ্যাক্টরিতে কাজ পাওয়ায় কৃষি কাজে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে ফলে এখন মাঝ বয়সি গরিব অক্ষরজ্ঞানহীন নারী শ্রমিকরা ক্ষেতে খামারে কৃষি কাজ করছে তাও সংখ্যায় খুবই কম।
৩ মার্চ সোমবার দুপুরে উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের হারিশ^র গ্রামে বোরো ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। এদের মধ্যে একজনের নাম জয়তন নেছা। তিনি জানান নিজের খেয়ে ৪০০ টাকা রোজ তারা দুপুর রোদে বোরো ক্ষেতে আগাছা বাছাইয়ের কাজ করেন। সামান্য মজুরীতে তাদের সংসার খুব কষ্টে কাটে।
ক্ষেতে খলায় কাজ না করলে বেঁচে থাকার কোন পথ নাই তাই বাধ্য হয়েই কম মজুরীতে তারা এ গ্রাম ও গ্রাম গৃহস্তের ক্ষেতে খলায় কাজ করে থাকেন।
এদের মধ্যে আকিমন নামে একজন বলেন, ‘পুরুষ বেটাগো দুই বেলা খোরাকি দেয় আর নগে ৫/৬শ ট্যাহা রোজ দিয়ন নাগছাল আর আমরা বেটি মানুষ তাই একবেলা খোরাকি আমাগো নাই, সারাদিন কাম করাই ৪০০ টেহা হাতে ধরাই বিদায় করছালদ’।
অর্থাৎ পুরুষ শ্রমিকদের ২ বেলা খাবার দিয়ে ৫/৬শ টাকা রোজ মজুরী দেয়া হয় আর তাদেরকে সারাদিন খাটিয়ে বিনা খোরাকিতে মাত্র ৪০০ টাকা মজুরী দিয়ে বিদায় করেন গৃহস্থরা।
কারণ হিসেবে গৃহস্থ্যদের ধারনা পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় নারী শ্রমিকরা কায়িক পরিশ্রম কম দিয়ে থাকে এজন্য তাদেরকে মজুরি সামান্য কম দেয়া হয়।
উপজেলার হবিরবাড়ী পাখিরচালা গ্রামের কৃষক আতাব উদ্দীন জানান, নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি প্রায় ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। জমি চাষ, পানি সেচ, বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ সহ এ পর্যন্ত প্রতি কাঠায় দুই হাজার টাকার উপরে খরচ করেছেন তিনি। এখন চলছে আগাছা বাছাইয়ের কাজ। সামনে পোকার আক্রমন হলে কীটনাশক প্রয়োগ জরুরি হয়ে পরবে। তবে তিনি জানান যদি রোগ বালাই কিংবা খড়া না হয় এ বছর মাঠে বোরোর ফসল ভালো হবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। উফসী ১৬ হাজার ৪৮৬ হেক্টর, হাইব্রিড ২১৬৫।
বোর মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ হতে বোর আবাদে চাষিদের মাঠ পর্যায়ে লগু পদ্ধতিতে চারা রোপণসহ প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : বোরো খেতে আগাছা পরিষ্কার করছেন নারী শ্রমিকরা - সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫
ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকের ঘাম ঝড়ানো বোরো ধানের দিগন্তজোড়া মাঠ ভরে উঠেছে সারি সারি সবুজ পাতার আবিরে আর মাঝখানে ভর দুপুরে আগাছা পরিষ্কার করছেন কোমড়ে শাড়ির আঁচল গোঁজা জয়তনসহ ওরা কজন নারী শ্রমিক।
আমন কাটার পর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রামের মাঠে মাঠে শুরু হয় বোরো ধান রোপণ। কোন কোন এলাকায় রবিশস্য ঘরে তুলে ওই জমি চাষ করে ক্ষেত তৈরি করে বিলম্বে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়।
যারা মৌসুমের প্রথমেই ক্ষেত তৈরি করে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন তাদের ক্ষেতের ধান গোছা হয়ে সবুজ রং ধারণ করেছে। ওইসব ধানক্ষেতে আগাছা বাছাই, সার ও কীটনাশক প্রয়োগের সময় হওয়ায় চারিদিকে শ্রমিকের চাহিদা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বোরো ধানের ক্ষেতে আগাছা বাছাইয়ের কাজ করছেন পুরুষের পাশাপশি নারী শ্রমিকরা। কারণ হিসেবে কৃষকরা জানান বর্তমানে ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর মিল ফ্যাক্টরিতে কাজ পাওয়ায় কৃষি কাজে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে ফলে এখন মাঝ বয়সি গরিব অক্ষরজ্ঞানহীন নারী শ্রমিকরা ক্ষেতে খামারে কৃষি কাজ করছে তাও সংখ্যায় খুবই কম।
৩ মার্চ সোমবার দুপুরে উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের হারিশ^র গ্রামে বোরো ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। এদের মধ্যে একজনের নাম জয়তন নেছা। তিনি জানান নিজের খেয়ে ৪০০ টাকা রোজ তারা দুপুর রোদে বোরো ক্ষেতে আগাছা বাছাইয়ের কাজ করেন। সামান্য মজুরীতে তাদের সংসার খুব কষ্টে কাটে।
ক্ষেতে খলায় কাজ না করলে বেঁচে থাকার কোন পথ নাই তাই বাধ্য হয়েই কম মজুরীতে তারা এ গ্রাম ও গ্রাম গৃহস্তের ক্ষেতে খলায় কাজ করে থাকেন।
এদের মধ্যে আকিমন নামে একজন বলেন, ‘পুরুষ বেটাগো দুই বেলা খোরাকি দেয় আর নগে ৫/৬শ ট্যাহা রোজ দিয়ন নাগছাল আর আমরা বেটি মানুষ তাই একবেলা খোরাকি আমাগো নাই, সারাদিন কাম করাই ৪০০ টেহা হাতে ধরাই বিদায় করছালদ’।
অর্থাৎ পুরুষ শ্রমিকদের ২ বেলা খাবার দিয়ে ৫/৬শ টাকা রোজ মজুরী দেয়া হয় আর তাদেরকে সারাদিন খাটিয়ে বিনা খোরাকিতে মাত্র ৪০০ টাকা মজুরী দিয়ে বিদায় করেন গৃহস্থরা।
কারণ হিসেবে গৃহস্থ্যদের ধারনা পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় নারী শ্রমিকরা কায়িক পরিশ্রম কম দিয়ে থাকে এজন্য তাদেরকে মজুরি সামান্য কম দেয়া হয়।
উপজেলার হবিরবাড়ী পাখিরচালা গ্রামের কৃষক আতাব উদ্দীন জানান, নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি প্রায় ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। জমি চাষ, পানি সেচ, বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ সহ এ পর্যন্ত প্রতি কাঠায় দুই হাজার টাকার উপরে খরচ করেছেন তিনি। এখন চলছে আগাছা বাছাইয়ের কাজ। সামনে পোকার আক্রমন হলে কীটনাশক প্রয়োগ জরুরি হয়ে পরবে। তবে তিনি জানান যদি রোগ বালাই কিংবা খড়া না হয় এ বছর মাঠে বোরোর ফসল ভালো হবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। উফসী ১৬ হাজার ৪৮৬ হেক্টর, হাইব্রিড ২১৬৫।
বোর মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ হতে বোর আবাদে চাষিদের মাঠ পর্যায়ে লগু পদ্ধতিতে চারা রোপণসহ প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।