কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে খোলস ছেড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে থাকা অস্ত্রধারী চরমপন্থীরা সন্ত্রাসীরা। হঠাৎ রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর হয়ে উঠেছে এসব চরমপন্থি সংগঠন গুলো। ফলে আতঙ্ক ছড়াতে মাঝে মধেই হচ্ছে গুলি বর্ষণ, বোমা হামলা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুটপাট এমনকি খুনের মতো ঘটনা। উপজেলার চিলমারী, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর ও মরিচা এ ৪টি ইউনিয়ন বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল হওয়ায় দৌলতপুরের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। আবার আদাবাড়ীয়া, প্রাগপুর ও চিলমারী ইউনিয়নজুড়ে রয়েছে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার ভারত বাংলা সীমান্ত, যার ১৮ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া, বাকি ২৮ কিলোমিটার অরক্ষিত, যার ফলে খুব সহজেই প্রবেশ করছে বিভিন্ন প্রকার মাদক ও অস্ত্র। এছাড়া খুব সহজেই সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে গা-ঢাকা দিতে পারছে এসব অঞ্চলে।
এদিকে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল হওয়ায় সহজে পুলিশ প্রশাসন প্রবেশ করতে পারে না, আর এরই সুযোগে বালুরঘাট, কৃষিজমি, ফসল লুট, জবর দখল ও একছত্র মাদকের আধিপত্য বিস্তার নিতে নতুন করে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছে চরমপন্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশকের পর হঠাৎ চরাঞ্চলে কয়েকটি চরমপন্থী সংগঠন নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমানে লালচাঁদ বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী (রাখি বাহিনী), সাঈদ বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, হানিফ বাহিনী, সজল বাহিনী ও কাকন বাহিনী অন্যতম। এ সব বাহিনীর সদস্যদের ওই অঞ্চলে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরে প্রকাশ্যে দিবালকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু (৫০) কে তার নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত বছরের ২ নভেম্বর রাতে অস্ত্রের মুখে এক ব্যবসায়ীর ৫ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইলফোন ছিনতাই করে নেয় একদল সশস্ত্র ছিনতাইকারী যারা চল্লিশ বাহিনীর প্রধান রাখি বাহিনীর সদস্য। গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত দুইটার দিকে উপজেলার আদাবাড়ীয়া ইউনিয়নের তেকালা এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে একটি নির্মাণাধীন সেতুর শ্রমিকদের রাত্রি যাপনের অস্থায়ী ঘর লক্ষ্য করে ৫-৬টি বোমা বিস্ফরন করে আতঙ্ক ছড়ানো হয়। এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে মাদক চোরাচালানকে কেন্দ্র করে চোরাকারবারী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এক মাদক চোরাকারবারী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কৃষক দম্পতিকে বেঁধে রেখে গরু ও ছাগল লুট করা হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে মরিচা ইউনিয়নে রাজু হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পদ্মার চরে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই রাতে মরিচা এলাকার শহিদ মন্ডলের বাথান থেকে অন্তত ৫০টি মহিষ ও ১৫টি গরু লুট করে সন্ত্রাসীরা। এরপর ফিলিপনগর ইউনিয়নের আবেদের ঘাট এলাকায় কালু কবিরাজের বাথান থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৪টির বেশি গরু লুট করা হয়।
এছাড়া চরাঞ্চলের আরও কয়েকটি বাথানে গরু-মহিষ লুটের ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়াও দিনে দুপুরে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। এসব ঘটনায় ভয়ে সাধারণ মানুষ থানায় অভিযোগ করতেও সাহস পাচ্ছে না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কঠোর হাতে দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ বিষয়ে লালচাঁদের ছেলে রুবেল হোসেন বলেন, লালচাঁদ বাহিনী নামে আর কোন বাহিনী নেই, তবে অনেক লোক বাবার নাম ভাঙ্গিয়ে এই অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে আমরা এই বিষয়ে কিছুই জানি না।
চল্লিশ বাহিনীর প্রধান রাখির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি জেল থেকে বের হয়ে ব্যবসা করি বর্তমানে আমার চরের মধ্যে ১৮০ বিঘা কলার বাগান ও গুরুর বাথান আছে এবং ঢাকাতেও আমার ব্যবসা আছে। চরে যেগুলো ঘটছে এগুলো আমার নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, আমি এসব সংগঠনের কিছুই জানিনা, তবে লালচাঁদ বাহিনীর হয়ে কাজ করার জন্য আমাকে বলা হয়েছিল আমি না করায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এরকম অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা।
থানা সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাবলু মোল্লা বলেন, শুধু চরাঞ্চল নয় সারাদৌলতপুর চরমপন্থীদের দখলে, কিছু নেতারা ছোট ছোট ছেলেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, লুটপাঁ, ভাঙচুর করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, এমনকি মাঠের ফসল পর্যন্ত কেটে নিয়েছে।
এরা মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ এরা কোন নেতার ছত্রছায়ায় থেকে তারা এগুলো করছে খতিয়ে দেখে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
চরাঞ্চলে চরমপন্থী বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা বলেন, আমরা প্রতিদিন অভিযান করি, তাদের নামের লিস্ট কালেকশন করেছি তাদের ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আপনারা জানেন কদিন আগে আমরা সাঈদ বাহিনীর প্রধান সাঈদকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠিয়েছি বাকি লোক গুলোকে ধরার চেষ্টা করছি।
মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে খোলস ছেড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে থাকা অস্ত্রধারী চরমপন্থীরা সন্ত্রাসীরা। হঠাৎ রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর হয়ে উঠেছে এসব চরমপন্থি সংগঠন গুলো। ফলে আতঙ্ক ছড়াতে মাঝে মধেই হচ্ছে গুলি বর্ষণ, বোমা হামলা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুটপাট এমনকি খুনের মতো ঘটনা। উপজেলার চিলমারী, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর ও মরিচা এ ৪টি ইউনিয়ন বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল হওয়ায় দৌলতপুরের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। আবার আদাবাড়ীয়া, প্রাগপুর ও চিলমারী ইউনিয়নজুড়ে রয়েছে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার ভারত বাংলা সীমান্ত, যার ১৮ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া, বাকি ২৮ কিলোমিটার অরক্ষিত, যার ফলে খুব সহজেই প্রবেশ করছে বিভিন্ন প্রকার মাদক ও অস্ত্র। এছাড়া খুব সহজেই সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে গা-ঢাকা দিতে পারছে এসব অঞ্চলে।
এদিকে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল হওয়ায় সহজে পুলিশ প্রশাসন প্রবেশ করতে পারে না, আর এরই সুযোগে বালুরঘাট, কৃষিজমি, ফসল লুট, জবর দখল ও একছত্র মাদকের আধিপত্য বিস্তার নিতে নতুন করে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছে চরমপন্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশকের পর হঠাৎ চরাঞ্চলে কয়েকটি চরমপন্থী সংগঠন নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমানে লালচাঁদ বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী (রাখি বাহিনী), সাঈদ বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, হানিফ বাহিনী, সজল বাহিনী ও কাকন বাহিনী অন্যতম। এ সব বাহিনীর সদস্যদের ওই অঞ্চলে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরে প্রকাশ্যে দিবালকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু (৫০) কে তার নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত বছরের ২ নভেম্বর রাতে অস্ত্রের মুখে এক ব্যবসায়ীর ৫ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইলফোন ছিনতাই করে নেয় একদল সশস্ত্র ছিনতাইকারী যারা চল্লিশ বাহিনীর প্রধান রাখি বাহিনীর সদস্য। গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত দুইটার দিকে উপজেলার আদাবাড়ীয়া ইউনিয়নের তেকালা এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে একটি নির্মাণাধীন সেতুর শ্রমিকদের রাত্রি যাপনের অস্থায়ী ঘর লক্ষ্য করে ৫-৬টি বোমা বিস্ফরন করে আতঙ্ক ছড়ানো হয়। এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে মাদক চোরাচালানকে কেন্দ্র করে চোরাকারবারী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এক মাদক চোরাকারবারী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কৃষক দম্পতিকে বেঁধে রেখে গরু ও ছাগল লুট করা হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে মরিচা ইউনিয়নে রাজু হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পদ্মার চরে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই রাতে মরিচা এলাকার শহিদ মন্ডলের বাথান থেকে অন্তত ৫০টি মহিষ ও ১৫টি গরু লুট করে সন্ত্রাসীরা। এরপর ফিলিপনগর ইউনিয়নের আবেদের ঘাট এলাকায় কালু কবিরাজের বাথান থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৪টির বেশি গরু লুট করা হয়।
এছাড়া চরাঞ্চলের আরও কয়েকটি বাথানে গরু-মহিষ লুটের ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়াও দিনে দুপুরে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। এসব ঘটনায় ভয়ে সাধারণ মানুষ থানায় অভিযোগ করতেও সাহস পাচ্ছে না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কঠোর হাতে দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ বিষয়ে লালচাঁদের ছেলে রুবেল হোসেন বলেন, লালচাঁদ বাহিনী নামে আর কোন বাহিনী নেই, তবে অনেক লোক বাবার নাম ভাঙ্গিয়ে এই অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে আমরা এই বিষয়ে কিছুই জানি না।
চল্লিশ বাহিনীর প্রধান রাখির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি জেল থেকে বের হয়ে ব্যবসা করি বর্তমানে আমার চরের মধ্যে ১৮০ বিঘা কলার বাগান ও গুরুর বাথান আছে এবং ঢাকাতেও আমার ব্যবসা আছে। চরে যেগুলো ঘটছে এগুলো আমার নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, আমি এসব সংগঠনের কিছুই জানিনা, তবে লালচাঁদ বাহিনীর হয়ে কাজ করার জন্য আমাকে বলা হয়েছিল আমি না করায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এরকম অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা।
থানা সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাবলু মোল্লা বলেন, শুধু চরাঞ্চল নয় সারাদৌলতপুর চরমপন্থীদের দখলে, কিছু নেতারা ছোট ছোট ছেলেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, লুটপাঁ, ভাঙচুর করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, এমনকি মাঠের ফসল পর্যন্ত কেটে নিয়েছে।
এরা মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ এরা কোন নেতার ছত্রছায়ায় থেকে তারা এগুলো করছে খতিয়ে দেখে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
চরাঞ্চলে চরমপন্থী বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা বলেন, আমরা প্রতিদিন অভিযান করি, তাদের নামের লিস্ট কালেকশন করেছি তাদের ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আপনারা জানেন কদিন আগে আমরা সাঈদ বাহিনীর প্রধান সাঈদকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠিয়েছি বাকি লোক গুলোকে ধরার চেষ্টা করছি।