গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : পৌরসভার আকায় বালুয়াপাড়া মোড়ে ত্রি-খালের মোহনায় বক্স কালভার্ট করে নির্মাণ করা হয়েছে মেয়র মার্কেট -সংবাদ
পুরো শহরের খাল এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। যে যার মতো দখল করছে সরকারি খাল। শুষ্ক মৌসুমে প্রভাবশালীদের চলে খাল দখলের প্রতিযোগিতা, যা বর্ষা মৌসুমে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার বাসিন্দারা। এ শহরের ৫টি মৌজায় ৩৬.৫৬ একর খাল রয়েছে। এর মধ্যে শত কোটি টাকার সরকারি খাল ভূমি দস্যুদের দখলে। যা আন্দোলনেও বাতিল হয়নি শ্রেণি পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে দেয়া ‘আলোচিত লিজ বন্দোবস্ত।’ খাল রক্ষণাবেক্ষনকারী প্রতিষ্ঠান গৌরীপুর পৌরসভাও মানেনি নীতিমালা, খালের আকার পরিবর্তন, কালকে সংকোচিত করে বক্স কালভার্ট নির্মাণ, খালের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে বিপনী বিতান। উৎসস্থলও দখলে!
ভূমি দখলবাজ চক্র শুধু বাস্তবে দখলে নেয়নি, এ চক্রটি গুরুত্বপূর্ণ খালের রেকর্ডপত্রও ভূমি বিভাগ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এসএ রেকর্ডের সিংহভাগ দালিলিক প্রমাণ পত্র স্থানীয় ভূমি অফিসে নেই। এ খালের রেকর্ডের পাতা ছিঁড়া, কোথাও কোথাও দাগের অংশ ও জমির অংশ নেই। বাস্তবে আর রেকর্ডপত্রে প্রতিযোগিতা দিয়ে চলছে খাল দখল। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌর ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্লাহ জানান, এসএ রেকর্ডপত্র এ কার্যালয়ে এখন নেই। এসএ খতিয়ানে গোলকপুর মৌজায় খাল থাকলেও বর্তমানে বিআরএস জরিপে খাল নেই। পৌরসভার গৌরীপুর মৌজায় একটি খাল রেকর্ডে নামা এসেছে। অনেকগুলো খালের ভূমির পরিমাণও কমে গেছে।
গৌরীপুর পৌরসভার ভূমি উন্নয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসএ (আরওআর) রেকর্ড অনুযায়ী এ পৌরসভার কৃষ্ণপ্রসাদপুর সতিশা মৌজায় খাল ১একর ৯৬শতাংশ, বালুয়াপাড়া নদী ১একর ৬৩ শতাংশ, দাপুনিয়ায় খাল ৭৬শতাংশ, গোলকপুর ১০শতাংশ, গৌরীপুর মৌজায় ৯৫২দাগে ১একর ৬৮শতাংশ, ২০১৩দাগে ১একর ৪শতাংশ, ২৪৪৫দাগে ৪৮শতাংশ, ২৫৭৭দাগে বালুয়া নদী ৪ একর ৪২শতাংশ, ৩২৪০দাগে ১৩ একর ৫৮শতাংশ, ৩২৩৮ দাগে ৮ একর ৭৭শতাংশ, ৩২২৮ দাগে ২একর ১৪শতাংশ খাল রেকর্ডে রয়েছে। বিআরএস রেকর্ডে দেখা যায়, দাপুনিয়া মৌজার বিআরএস দাগ ২৮০, ২৮৫, ৩৪১ ও ৩৪৬নং শ্রেণিতে খাল রয়েছে। এরমধ্যে নকশায় (কাগজপত্রে) গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী’র বাসার পাশে খালের সূচনায় প্রস্থে রয়েছে ৩৩ফুট, সাবেক এমপি আব্দুল হামিদের বাসার সামনে ৩৯ফুট ও ঝলক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের সামনে ৩৯ফুট ৮ ইঞ্চি। বাস্তবে খালের উভয়পাড়ে কোথায় ৮ফুট, কোথাও ১০ফুট প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। কলাবাগান-মাস্টারপাড়া মহল্লায় প্রবাহিত ২৬৮৫ দাগের খালটি গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়ক থেকে শুরু হয়েছে। সূচনা লগ্নে এ খালটির প্রস্থ ২০ফুট, মাস্টারপাড়ার ঝলক হ্যাচারীর পিছনে এ খালের প্রস্থ ২৮ফুট ও সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরজাহান খোদেজার বাসার পিছনে এ খালের প্রস্থ রয়েছে ৩৪ফুট। বাস্তবে দেখা যায়, ডা. একেএমএ মুকতাদির ও নুরুল আমিনের বাসার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালটি মারা গেছে। এ খালের দৃশ্যমান চিহ্ন সড়কের পাশে খোঁজে পাওয়া যায়নি। ডা. মুকতাদির এর বাসার পিছনে সরু পাইপ দেয়া আছে। পানি প্রবাহিত না হওয়ায় পুরো খালটি ভরাট হয়ে গেছে। ঝলক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের পিছনে মাত্র ৬/৭ফুট দৃশ্যমান থাকলেও পানি প্রবাহ বন্ধ।
এদিকে ঝলমল সিনেমা হল সড়ক থেকে বালুয়াখালগামী বিআরএস ১৯৯২দাগের খাল রয়েছে। এ খালের প্রস্থ ১৩ফুট খোদ গৌরীপুর পৌরসভা খালটিকে দখলে নিয়ে বক্স তৈরি করায় পানি চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। গৌরীপুর মৌজার ১৪২৯ দাগে সজিরের বাসার সন্নিকটে খালের প্রস্থ ১৩ফুট। অথচ সেখান ৭/৮ফুট থাকলেও বক্সকালভার্টের কারণে এলাকার পানি এ খালে প্রবাহিত হচ্ছে না। রাইসমিল থেকে ১২৬৪ দাগের খালটি সর্বোচ্চ ৯২ ফুট ও সর্বনিম্ন ৩২ ফুট প্রস্থের রয়েছে। ভালুকা ব্রিজ থেকে কোনাপাড়ার বালকি বিলেগামী ৭২৩৬ ও ৭২৩৮নং দাগের খালটি সর্বোচ্চ ৯২ফুট, মধ্যবর্তীস্থানে ৮৫ ফুট, ৬৮ ফুট রয়েছে। পৌর শহরের ভালুকা মৌজার ১৬৮শতাংশের খালের মাত্র ৩০ শতাংশ বাকি রেখে পুরো দখলে নেন ভালুকার মৃত সেক তমুর পুত্র মোঃ ইব্রাহিম সেক। পৌর ভূমি অফিসের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ১৯৬২সনের আরওআর রেকর্ডেও খাল উল্লেখ রয়েছে। ‘নামা’ শ্রেণিভূক্ত করে ১৯৭৯-৮০সনে ১৫৭৬নং হিসাবের মাধ্যমে ১৩৮শতাংশ ভূমি বন্দোবস্তকৃত করে নেন মোঃ ইব্রাহিম সেক। এই অবৈধ বন্দোবস্তের কারণে ৩৭বছরে খালের উপরে গড়ে উঠেছে শতাধিক ঘর-বাড়ি। ভূমি অফিসে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে আরো চমকপ্রদ তথ্য। এই খাল শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘লাল রঙের কালি’ দিয়ে লেখা হয়েছে ‘নামা’। পৌর ভূমি অফিস আরো জানায়, ১৩৮শতাংশ থেকে ২০০৬সনের ৮জুন তারিখে বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত মোবারক আলীর পুত্র মো. জালাল উদ্দিন ২৯১৯নং হিসাবের ৯৫২নং খতিয়ানে ১৫শতাংশ, একই বছরের ১৮জুন স্টেশন রোডের মৃত আমজত আলীর পুত্র মো. আব্দুর রহমান ২৯২৯ নং হিসাবের ৪২৫৮নং খতিয়ানে ১৪শতাংশ, ২০০৭ সনের ২২মার্চ মৌলানা আব্দুল কদ্দুছ আমিনীর পুত্র মিজানুর রহমান আমিনী ও তার কন্যা মোছা. ছাবিনা ইয়াসমিন ৩০৪৪নং হিসাবের ৪৩৫৩নং খতিয়ানে সোয়া ১২শতাংশ, ২০১০সনের ২০ডিসেম্বর জারিয়ার মৃত আমজত আলীর পুত্র মোঃ আব্দুর রহমান ৩৭৫৭নং হিসাবে ৫২০৯নং খতিয়ানে ৫ শতাংশ নামজারি করে নিয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৮৭শতাংশ জমি এখনও ভালুকা গ্রামের সেক তমুর পুত্র ইব্রাহিম সেকের নামেই রয়েছে। গ্রহিতাদের হিসাবমতে, প্রতি শতাংশের মূল্য ৪ লক্ষ টাকা হিসাবে ১৩৮শতাংশ জমির গড়মূল্য ৫ কোটি ৫২লক্ষ টাকা।
এদিকে জেএলনং ২৪ নং দাপুনিয়া মৌজার ৪৯৯নং দাগে এ খালের প্রথমদিকে রয়েছে ১৬ফুট ৬ইঞ্চি প্রশস্থ, মাঝে ২৬ফুট ৫ইঞ্চি, মোহনায় ৪৩ফুট ও ৪৯ফুট প্রশস্থ। খালের নির্ধারিত গতিপথ ও প্রশস্থ কমিয়ে ১০ফুট প্রশস্থের বক্সকালভার্ট নির্মাণ করা হয়ছে। এ কারণে পানির স্বাভাবিক স্রতো কমে যাওয়ায় ফসলি জমি ও নিচু এলাকায় বসবাসকারী এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার স্বীকার হচ্ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩’তে জলস্রতের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা সৃষ্টি বা উহার গতিপথ পরিবর্তন করে পানি সম্পদের উপর কোন স্থাপনা নির্মাণ বা ভরাট কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল জানান, নকশায় খালের অবস্থান ও পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গৌরীপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মার্কেটের উন্নয়নের স্বার্থে গৌরীপুর পৌরসভা একাধিক প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করেছে। অনুমোদনবিহীন বক্সকালভার্ট নির্মাণে ৫টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭০হাজার ১৪৪টাকা।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা বলেন, সিএস ও এসএ রেকর্ড অনুযায়ী খালের রেকর্ড সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গৌরীপুর পৌরসভার ভিতরে যেসব খাল বেদখলে আছে। সেগুলোও উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : পৌরসভার আকায় বালুয়াপাড়া মোড়ে ত্রি-খালের মোহনায় বক্স কালভার্ট করে নির্মাণ করা হয়েছে মেয়র মার্কেট -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫
পুরো শহরের খাল এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। যে যার মতো দখল করছে সরকারি খাল। শুষ্ক মৌসুমে প্রভাবশালীদের চলে খাল দখলের প্রতিযোগিতা, যা বর্ষা মৌসুমে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার বাসিন্দারা। এ শহরের ৫টি মৌজায় ৩৬.৫৬ একর খাল রয়েছে। এর মধ্যে শত কোটি টাকার সরকারি খাল ভূমি দস্যুদের দখলে। যা আন্দোলনেও বাতিল হয়নি শ্রেণি পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে দেয়া ‘আলোচিত লিজ বন্দোবস্ত।’ খাল রক্ষণাবেক্ষনকারী প্রতিষ্ঠান গৌরীপুর পৌরসভাও মানেনি নীতিমালা, খালের আকার পরিবর্তন, কালকে সংকোচিত করে বক্স কালভার্ট নির্মাণ, খালের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে বিপনী বিতান। উৎসস্থলও দখলে!
ভূমি দখলবাজ চক্র শুধু বাস্তবে দখলে নেয়নি, এ চক্রটি গুরুত্বপূর্ণ খালের রেকর্ডপত্রও ভূমি বিভাগ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এসএ রেকর্ডের সিংহভাগ দালিলিক প্রমাণ পত্র স্থানীয় ভূমি অফিসে নেই। এ খালের রেকর্ডের পাতা ছিঁড়া, কোথাও কোথাও দাগের অংশ ও জমির অংশ নেই। বাস্তবে আর রেকর্ডপত্রে প্রতিযোগিতা দিয়ে চলছে খাল দখল। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌর ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্লাহ জানান, এসএ রেকর্ডপত্র এ কার্যালয়ে এখন নেই। এসএ খতিয়ানে গোলকপুর মৌজায় খাল থাকলেও বর্তমানে বিআরএস জরিপে খাল নেই। পৌরসভার গৌরীপুর মৌজায় একটি খাল রেকর্ডে নামা এসেছে। অনেকগুলো খালের ভূমির পরিমাণও কমে গেছে।
গৌরীপুর পৌরসভার ভূমি উন্নয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসএ (আরওআর) রেকর্ড অনুযায়ী এ পৌরসভার কৃষ্ণপ্রসাদপুর সতিশা মৌজায় খাল ১একর ৯৬শতাংশ, বালুয়াপাড়া নদী ১একর ৬৩ শতাংশ, দাপুনিয়ায় খাল ৭৬শতাংশ, গোলকপুর ১০শতাংশ, গৌরীপুর মৌজায় ৯৫২দাগে ১একর ৬৮শতাংশ, ২০১৩দাগে ১একর ৪শতাংশ, ২৪৪৫দাগে ৪৮শতাংশ, ২৫৭৭দাগে বালুয়া নদী ৪ একর ৪২শতাংশ, ৩২৪০দাগে ১৩ একর ৫৮শতাংশ, ৩২৩৮ দাগে ৮ একর ৭৭শতাংশ, ৩২২৮ দাগে ২একর ১৪শতাংশ খাল রেকর্ডে রয়েছে। বিআরএস রেকর্ডে দেখা যায়, দাপুনিয়া মৌজার বিআরএস দাগ ২৮০, ২৮৫, ৩৪১ ও ৩৪৬নং শ্রেণিতে খাল রয়েছে। এরমধ্যে নকশায় (কাগজপত্রে) গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী’র বাসার পাশে খালের সূচনায় প্রস্থে রয়েছে ৩৩ফুট, সাবেক এমপি আব্দুল হামিদের বাসার সামনে ৩৯ফুট ও ঝলক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের সামনে ৩৯ফুট ৮ ইঞ্চি। বাস্তবে খালের উভয়পাড়ে কোথায় ৮ফুট, কোথাও ১০ফুট প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। কলাবাগান-মাস্টারপাড়া মহল্লায় প্রবাহিত ২৬৮৫ দাগের খালটি গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়ক থেকে শুরু হয়েছে। সূচনা লগ্নে এ খালটির প্রস্থ ২০ফুট, মাস্টারপাড়ার ঝলক হ্যাচারীর পিছনে এ খালের প্রস্থ ২৮ফুট ও সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরজাহান খোদেজার বাসার পিছনে এ খালের প্রস্থ রয়েছে ৩৪ফুট। বাস্তবে দেখা যায়, ডা. একেএমএ মুকতাদির ও নুরুল আমিনের বাসার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালটি মারা গেছে। এ খালের দৃশ্যমান চিহ্ন সড়কের পাশে খোঁজে পাওয়া যায়নি। ডা. মুকতাদির এর বাসার পিছনে সরু পাইপ দেয়া আছে। পানি প্রবাহিত না হওয়ায় পুরো খালটি ভরাট হয়ে গেছে। ঝলক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের পিছনে মাত্র ৬/৭ফুট দৃশ্যমান থাকলেও পানি প্রবাহ বন্ধ।
এদিকে ঝলমল সিনেমা হল সড়ক থেকে বালুয়াখালগামী বিআরএস ১৯৯২দাগের খাল রয়েছে। এ খালের প্রস্থ ১৩ফুট খোদ গৌরীপুর পৌরসভা খালটিকে দখলে নিয়ে বক্স তৈরি করায় পানি চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। গৌরীপুর মৌজার ১৪২৯ দাগে সজিরের বাসার সন্নিকটে খালের প্রস্থ ১৩ফুট। অথচ সেখান ৭/৮ফুট থাকলেও বক্সকালভার্টের কারণে এলাকার পানি এ খালে প্রবাহিত হচ্ছে না। রাইসমিল থেকে ১২৬৪ দাগের খালটি সর্বোচ্চ ৯২ ফুট ও সর্বনিম্ন ৩২ ফুট প্রস্থের রয়েছে। ভালুকা ব্রিজ থেকে কোনাপাড়ার বালকি বিলেগামী ৭২৩৬ ও ৭২৩৮নং দাগের খালটি সর্বোচ্চ ৯২ফুট, মধ্যবর্তীস্থানে ৮৫ ফুট, ৬৮ ফুট রয়েছে। পৌর শহরের ভালুকা মৌজার ১৬৮শতাংশের খালের মাত্র ৩০ শতাংশ বাকি রেখে পুরো দখলে নেন ভালুকার মৃত সেক তমুর পুত্র মোঃ ইব্রাহিম সেক। পৌর ভূমি অফিসের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ১৯৬২সনের আরওআর রেকর্ডেও খাল উল্লেখ রয়েছে। ‘নামা’ শ্রেণিভূক্ত করে ১৯৭৯-৮০সনে ১৫৭৬নং হিসাবের মাধ্যমে ১৩৮শতাংশ ভূমি বন্দোবস্তকৃত করে নেন মোঃ ইব্রাহিম সেক। এই অবৈধ বন্দোবস্তের কারণে ৩৭বছরে খালের উপরে গড়ে উঠেছে শতাধিক ঘর-বাড়ি। ভূমি অফিসে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে আরো চমকপ্রদ তথ্য। এই খাল শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘লাল রঙের কালি’ দিয়ে লেখা হয়েছে ‘নামা’। পৌর ভূমি অফিস আরো জানায়, ১৩৮শতাংশ থেকে ২০০৬সনের ৮জুন তারিখে বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত মোবারক আলীর পুত্র মো. জালাল উদ্দিন ২৯১৯নং হিসাবের ৯৫২নং খতিয়ানে ১৫শতাংশ, একই বছরের ১৮জুন স্টেশন রোডের মৃত আমজত আলীর পুত্র মো. আব্দুর রহমান ২৯২৯ নং হিসাবের ৪২৫৮নং খতিয়ানে ১৪শতাংশ, ২০০৭ সনের ২২মার্চ মৌলানা আব্দুল কদ্দুছ আমিনীর পুত্র মিজানুর রহমান আমিনী ও তার কন্যা মোছা. ছাবিনা ইয়াসমিন ৩০৪৪নং হিসাবের ৪৩৫৩নং খতিয়ানে সোয়া ১২শতাংশ, ২০১০সনের ২০ডিসেম্বর জারিয়ার মৃত আমজত আলীর পুত্র মোঃ আব্দুর রহমান ৩৭৫৭নং হিসাবে ৫২০৯নং খতিয়ানে ৫ শতাংশ নামজারি করে নিয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৮৭শতাংশ জমি এখনও ভালুকা গ্রামের সেক তমুর পুত্র ইব্রাহিম সেকের নামেই রয়েছে। গ্রহিতাদের হিসাবমতে, প্রতি শতাংশের মূল্য ৪ লক্ষ টাকা হিসাবে ১৩৮শতাংশ জমির গড়মূল্য ৫ কোটি ৫২লক্ষ টাকা।
এদিকে জেএলনং ২৪ নং দাপুনিয়া মৌজার ৪৯৯নং দাগে এ খালের প্রথমদিকে রয়েছে ১৬ফুট ৬ইঞ্চি প্রশস্থ, মাঝে ২৬ফুট ৫ইঞ্চি, মোহনায় ৪৩ফুট ও ৪৯ফুট প্রশস্থ। খালের নির্ধারিত গতিপথ ও প্রশস্থ কমিয়ে ১০ফুট প্রশস্থের বক্সকালভার্ট নির্মাণ করা হয়ছে। এ কারণে পানির স্বাভাবিক স্রতো কমে যাওয়ায় ফসলি জমি ও নিচু এলাকায় বসবাসকারী এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার স্বীকার হচ্ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩’তে জলস্রতের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা সৃষ্টি বা উহার গতিপথ পরিবর্তন করে পানি সম্পদের উপর কোন স্থাপনা নির্মাণ বা ভরাট কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল জানান, নকশায় খালের অবস্থান ও পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গৌরীপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মার্কেটের উন্নয়নের স্বার্থে গৌরীপুর পৌরসভা একাধিক প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করেছে। অনুমোদনবিহীন বক্সকালভার্ট নির্মাণে ৫টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭০হাজার ১৪৪টাকা।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা বলেন, সিএস ও এসএ রেকর্ড অনুযায়ী খালের রেকর্ড সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গৌরীপুর পৌরসভার ভিতরে যেসব খাল বেদখলে আছে। সেগুলোও উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।