যশোরে আলোচিত উদীচীর অনুষ্ঠানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘাতকেরা পর্দার আড়ালেই থেকে গেলো। দীর্ঘ ২৬ বছরেও ‘দেশের প্রথম জঙ্গি হামলার’ এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। বরং আইনি ও প্রশাসনিক দুর্বলতায় মামলার রায়ে চার্জশিটভুক্ত আসামিরা সবাই খালাস পেয়ে যান। এরপর উচ্চ আদালত থেকে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা গত ১৫ বছর ধরেই ঝুলে আছে। এমনই পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের ২৬ বছর পূর্তি হচ্ছে।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে শক্তিশালী দু’টি বোমা হামলা চালানো হয়। বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও দেড শতাধিক নিরীহ মানুষ আহত হন।
নিহতরা হলেন, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, নূর ইসলাম, ইলিয়াস মুন্সী, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম মিলন, মোহাম্মদ বুলু, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম পিন্টু ও বাবু রামকৃষ্ণ। দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও ছেড়ে দিচ্ছেন বিচারের আশা।
আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা হয়। প্রথমে কোতোয়ালি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তীতে তা সিআইডির ওপর ন্যস্ত হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরবর্তীতে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর ৭ বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মামলার এমন রায়ে যশোরসহ সারাদেশে প্রগতিশীল ঘরানার মানুষ বিস্মিত হন।
আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যান এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
এরপর দেশের আলোচিত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান আটক হওয়ার পর পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা স্বীকার করে। তার ওপর ভিত্তি করে এ মামলার পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। মুফতি হান্নানের চাঞ্চল্যকর জবানবন্দির পর উদীচী হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। পরবর্তীতে এই হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানকে যশোরে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
২০১০ সালের ৮ জুন উদীচী মামলার আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির পর আসামিদের বক্তব্য জানতে চেয়ে বিচারিক বেঞ্চ নোটিশ জারির আদেশ দেন। হাইকোর্ট থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত নথিপত্র ২০১০ সালের ২৬ জুলাই যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে খালাস পাওয়া আসামিরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তৎকালীন সরকার গণমানুষের নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে জড়িয়ে উদীচী হত্যা মামলায় জড়িয়েছিল। অথচ তরিকুল ইসলামই সেই সময় সর্বাগ্রে ছুটে আসেন। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। মসজিদে মসজিদে মাইকে ঘোষণা দিয়ে রক্তের ব্যবস্থা করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে মামলার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। তবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর উদীচী মামলা সংক্রান্ত কোনো শুনানি বা কার্যক্রম হয়নি।
উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সংগঠনটি। কর্মসূচির মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় টাউন হল ময়দানের শহিদবেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সকাল ১১টায় উদীচী কার্যালয়ে আলোচনা ও স্মরণসভা এবং সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে শহিদবেদিতে মশাল প্রজ্বালন।
বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫
যশোরে আলোচিত উদীচীর অনুষ্ঠানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘাতকেরা পর্দার আড়ালেই থেকে গেলো। দীর্ঘ ২৬ বছরেও ‘দেশের প্রথম জঙ্গি হামলার’ এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। বরং আইনি ও প্রশাসনিক দুর্বলতায় মামলার রায়ে চার্জশিটভুক্ত আসামিরা সবাই খালাস পেয়ে যান। এরপর উচ্চ আদালত থেকে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা গত ১৫ বছর ধরেই ঝুলে আছে। এমনই পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের ২৬ বছর পূর্তি হচ্ছে।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে শক্তিশালী দু’টি বোমা হামলা চালানো হয়। বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও দেড শতাধিক নিরীহ মানুষ আহত হন।
নিহতরা হলেন, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, নূর ইসলাম, ইলিয়াস মুন্সী, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম মিলন, মোহাম্মদ বুলু, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম পিন্টু ও বাবু রামকৃষ্ণ। দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও ছেড়ে দিচ্ছেন বিচারের আশা।
আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা হয়। প্রথমে কোতোয়ালি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তীতে তা সিআইডির ওপর ন্যস্ত হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরবর্তীতে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর ৭ বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মামলার এমন রায়ে যশোরসহ সারাদেশে প্রগতিশীল ঘরানার মানুষ বিস্মিত হন।
আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যান এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
এরপর দেশের আলোচিত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান আটক হওয়ার পর পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা স্বীকার করে। তার ওপর ভিত্তি করে এ মামলার পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। মুফতি হান্নানের চাঞ্চল্যকর জবানবন্দির পর উদীচী হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। পরবর্তীতে এই হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানকে যশোরে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
২০১০ সালের ৮ জুন উদীচী মামলার আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির পর আসামিদের বক্তব্য জানতে চেয়ে বিচারিক বেঞ্চ নোটিশ জারির আদেশ দেন। হাইকোর্ট থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত নথিপত্র ২০১০ সালের ২৬ জুলাই যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে খালাস পাওয়া আসামিরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তৎকালীন সরকার গণমানুষের নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে জড়িয়ে উদীচী হত্যা মামলায় জড়িয়েছিল। অথচ তরিকুল ইসলামই সেই সময় সর্বাগ্রে ছুটে আসেন। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। মসজিদে মসজিদে মাইকে ঘোষণা দিয়ে রক্তের ব্যবস্থা করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে মামলার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। তবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর উদীচী মামলা সংক্রান্ত কোনো শুনানি বা কার্যক্রম হয়নি।
উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সংগঠনটি। কর্মসূচির মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় টাউন হল ময়দানের শহিদবেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সকাল ১১টায় উদীচী কার্যালয়ে আলোচনা ও স্মরণসভা এবং সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে শহিদবেদিতে মশাল প্রজ্বালন।