খোকসা (কুষ্টিয়া) : মাথায় করে টমেটো তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক -সংবাদ
ফসলের দামে হতাশ হয়ে বিষ কিনতে চাইলেন নারী কৃষি উদ্যোক্তার স্বামী হালিম শেখ। এ সময় তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন সঙ্গে ছিলেন। এই দম্পতি শীতকালীন সবজি চাষ করেন। বাজারে ৫ টাকায় টমেটো ও ১৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে নিজের ক্ষেতে ফিরে এমন মন্তব্য করলেন তিনি। তিনি দাবি করেন, তার টমেটোই খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে।
কুষ্টিয়ার খোকসার পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাতিলডাঙ্গী গ্রামের কৃষক দম্পতি হালিম শেখ ও সেলিনা খাতুন। এ মৌসুমে পাতা কপি কেটে ২০ শতক জমিতে নাবি করে (বিলম্বে) টমেটো আবাদ করেছেন। রবিবার সকালে ৩ মণ টমেটো ও কয়েক মণ মূলকাটা পেঁয়াজ নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। বাজার দর ও মধ্যস্বত্বাভোগিদের দৌরত্বে তিনি প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি বিক্রি করেছেন ৫ টাকায়। আর পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৬শ টাকা মন দরে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। বিক্রিমূল্য থেকে আড়ৎদার (মধ্যস্বত্বাভোগী) প্রতি কেজিতে আড়ৎ বাবদ ২ টাকা কেটে নিয়েছেন। আসা যাওয়ার ভ্যান ভাড়া গুনতে হয়েছে ২শ’ টাকা। টমেটো বিক্রি করে খরচ বাদে কৃষক পেয়েছেন কেজিতে ১ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০৮ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। শুধু পাতিলডাঙ্গী গ্রামে ৬০ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে অনেকে চড়া দামে টমেটো বিক্রি করেছেন। এখন মৌসূম শেষ তাই দামে হেরফের হচ্ছে।
সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিত পাতিলডাঙ্গী গ্রামে সবজি চাষি দুলাল, বিশ্বনাথ, নারয়ন, প্রশান্ত, হালিম, কালামসহ প্রায় ৫০ জন কৃষক শীতে ১০০ বিঘা জমিতে ফুলকপি, পাতাকপি, সিম, গাজর জাতিয় সবজি আবাদ করেছিলেন। এবছর তাদের সবাইকে লোকশান গুনতে হয়েছে।
রবিবার সকাল তখন প্রায় ১১টা। কৃষক হালিম শেখ তখন সবে বাজার থেকে জমিতে ফিরেছেন। তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন তখন আর দুজন নিয়ে ক্ষেত থেকে টমেটো তোলায় ব্যস্ত। তার ক্ষেতের আইলে পৌঁচ্ছানোর আগেই কৃষক বলে উঠলেন, ‘শুধু ফসল দেখে খুশি হবেন না। আগে বিষ কিনে দেন, পরে কথা বলি।’ জমিতে টমেটো তোলা ব্যস্ত কৃষকের স্ত্রী স্বামী মুখের দিকে ফেল ফেলিয়ে তাকিয়ে রইলেন।
কৃষানি সেলিনা গাছ থেকে টমেটো ছিড়তে ছিড়তে বললেন, প্রায় ২ যুগ ধরে স্বামীর সঙ্গে সবজির আবাদ করে আসছেন। প্রতি বছর শীতের তিন মাস স্বামী-স্ত্রী সবজির জমিতে শ্রম দেন। এতদিন লুকশান হয়নি। কিছু না কিছু টাকা ডানে রাখতে পেরেছেন। এ বছরে যা গতি শুরু হয়েছে তাতে ফসল বিক্রি করে ভ্যান খরচও হচ্ছে না।
কৃষক হালিম জানান, তার কাছ থেকে ৫টাকা দরে কেনা টমেটো চারগুন বেশি দরে ২০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু নিজে শ্রম দিয়ে ১ কেজি টমেটো বিক্রি করে পাচ্ছেন ১ টাকা। তিনি বলেন, প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে কৃষকের ব্যয় হয়েছে ১১শ টাকা। কিন্তু সেই পেঁয়াজ বিক্রি করে এলেন মাত্র ৬শ টাকা মণ দরে।
তিনি আরও বলেন, যদি খুচরা বাজারের সঙ্গে পাইকারি বাজারের সমন্বয় থাকতো তবে কৃষক তার উৎপাদন করা ফসলের ন্যায্য দাম পেতেন। কিন্তু কৃষকের দুঃখ দেখার কেউ নেই।
সাবেক শিক্ষক কৃষক অমল কুমার বলেন, সবজি চাষিদের জন্য বছরটি খুবই খারাপ। কপি-টমেটোসহ সব ফসলেই লোকসান হয়েছে। এর জন্য আড়ৎদার শ্রেণীরকেই দুষলেন এই শিক্ষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল নোমান নিজেও রবিবারের কৃষি পণ্যের বাজার সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, কৃষকের প্রতিমন পেঁয়াজ উৎপাদনে হাজার টাকার বেশী ব্যয় হয়েছে। বাজার দরে কৃষকের লোকশান গুনতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাজার নির্ধারণের জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্ত কাজ করে। ওই খানে তাদের কিছু করার নেই।
খোকসা বাজারের আড়ৎদার রাজা বলেন, আসলে কাচা বাজারের কোন ঠিক ঠিকানা নেই। পণ্য আমদানির সঙ্গে বাজারদর নির্ভর করে। এ ছাড়া ব্যবসায়ি সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে তারা আড়ৎদারি নিয়ে থাকেন।
খোকসা (কুষ্টিয়া) : মাথায় করে টমেটো তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক -সংবাদ
রোববার, ০৯ মার্চ ২০২৫
ফসলের দামে হতাশ হয়ে বিষ কিনতে চাইলেন নারী কৃষি উদ্যোক্তার স্বামী হালিম শেখ। এ সময় তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন সঙ্গে ছিলেন। এই দম্পতি শীতকালীন সবজি চাষ করেন। বাজারে ৫ টাকায় টমেটো ও ১৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে নিজের ক্ষেতে ফিরে এমন মন্তব্য করলেন তিনি। তিনি দাবি করেন, তার টমেটোই খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে।
কুষ্টিয়ার খোকসার পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাতিলডাঙ্গী গ্রামের কৃষক দম্পতি হালিম শেখ ও সেলিনা খাতুন। এ মৌসুমে পাতা কপি কেটে ২০ শতক জমিতে নাবি করে (বিলম্বে) টমেটো আবাদ করেছেন। রবিবার সকালে ৩ মণ টমেটো ও কয়েক মণ মূলকাটা পেঁয়াজ নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। বাজার দর ও মধ্যস্বত্বাভোগিদের দৌরত্বে তিনি প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি বিক্রি করেছেন ৫ টাকায়। আর পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৬শ টাকা মন দরে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। বিক্রিমূল্য থেকে আড়ৎদার (মধ্যস্বত্বাভোগী) প্রতি কেজিতে আড়ৎ বাবদ ২ টাকা কেটে নিয়েছেন। আসা যাওয়ার ভ্যান ভাড়া গুনতে হয়েছে ২শ’ টাকা। টমেটো বিক্রি করে খরচ বাদে কৃষক পেয়েছেন কেজিতে ১ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০৮ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। শুধু পাতিলডাঙ্গী গ্রামে ৬০ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে অনেকে চড়া দামে টমেটো বিক্রি করেছেন। এখন মৌসূম শেষ তাই দামে হেরফের হচ্ছে।
সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিত পাতিলডাঙ্গী গ্রামে সবজি চাষি দুলাল, বিশ্বনাথ, নারয়ন, প্রশান্ত, হালিম, কালামসহ প্রায় ৫০ জন কৃষক শীতে ১০০ বিঘা জমিতে ফুলকপি, পাতাকপি, সিম, গাজর জাতিয় সবজি আবাদ করেছিলেন। এবছর তাদের সবাইকে লোকশান গুনতে হয়েছে।
রবিবার সকাল তখন প্রায় ১১টা। কৃষক হালিম শেখ তখন সবে বাজার থেকে জমিতে ফিরেছেন। তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন তখন আর দুজন নিয়ে ক্ষেত থেকে টমেটো তোলায় ব্যস্ত। তার ক্ষেতের আইলে পৌঁচ্ছানোর আগেই কৃষক বলে উঠলেন, ‘শুধু ফসল দেখে খুশি হবেন না। আগে বিষ কিনে দেন, পরে কথা বলি।’ জমিতে টমেটো তোলা ব্যস্ত কৃষকের স্ত্রী স্বামী মুখের দিকে ফেল ফেলিয়ে তাকিয়ে রইলেন।
কৃষানি সেলিনা গাছ থেকে টমেটো ছিড়তে ছিড়তে বললেন, প্রায় ২ যুগ ধরে স্বামীর সঙ্গে সবজির আবাদ করে আসছেন। প্রতি বছর শীতের তিন মাস স্বামী-স্ত্রী সবজির জমিতে শ্রম দেন। এতদিন লুকশান হয়নি। কিছু না কিছু টাকা ডানে রাখতে পেরেছেন। এ বছরে যা গতি শুরু হয়েছে তাতে ফসল বিক্রি করে ভ্যান খরচও হচ্ছে না।
কৃষক হালিম জানান, তার কাছ থেকে ৫টাকা দরে কেনা টমেটো চারগুন বেশি দরে ২০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু নিজে শ্রম দিয়ে ১ কেজি টমেটো বিক্রি করে পাচ্ছেন ১ টাকা। তিনি বলেন, প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে কৃষকের ব্যয় হয়েছে ১১শ টাকা। কিন্তু সেই পেঁয়াজ বিক্রি করে এলেন মাত্র ৬শ টাকা মণ দরে।
তিনি আরও বলেন, যদি খুচরা বাজারের সঙ্গে পাইকারি বাজারের সমন্বয় থাকতো তবে কৃষক তার উৎপাদন করা ফসলের ন্যায্য দাম পেতেন। কিন্তু কৃষকের দুঃখ দেখার কেউ নেই।
সাবেক শিক্ষক কৃষক অমল কুমার বলেন, সবজি চাষিদের জন্য বছরটি খুবই খারাপ। কপি-টমেটোসহ সব ফসলেই লোকসান হয়েছে। এর জন্য আড়ৎদার শ্রেণীরকেই দুষলেন এই শিক্ষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল নোমান নিজেও রবিবারের কৃষি পণ্যের বাজার সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, কৃষকের প্রতিমন পেঁয়াজ উৎপাদনে হাজার টাকার বেশী ব্যয় হয়েছে। বাজার দরে কৃষকের লোকশান গুনতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাজার নির্ধারণের জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্ত কাজ করে। ওই খানে তাদের কিছু করার নেই।
খোকসা বাজারের আড়ৎদার রাজা বলেন, আসলে কাচা বাজারের কোন ঠিক ঠিকানা নেই। পণ্য আমদানির সঙ্গে বাজারদর নির্ভর করে। এ ছাড়া ব্যবসায়ি সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে তারা আড়ৎদারি নিয়ে থাকেন।