alt

সারাদেশ

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবা-ছেলের মানবেতর জীবনযাপন

প্রতিনিধি, নওগাঁ : রোববার, ০৯ মার্চ ২০২৫

আমিও চোখে দেখি না, আমার ছেলেও দেখতে পায় না। আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে যে কয়টা টাকা পাই সেটা দিয়ে সংসার চলে না। রমজান মাস কয়েকটা রোজা চলে গেল। সেহরির সময় না খেয়েও রোজা থাকতে হয় আবার ইফতারের সময় শুধু পানি দিয়েও ইফতার করতে হয়। আমার প্রতিবন্ধী ভাতার যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনমু?

ছলছল চোখে এসব কথা বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজ্জাফর হোসেন। তার বাড়ি নওগাঁর পত্নিতলা উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে। তার ছোট ছেলে ১৯ বছর বয়সী মারুফও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মাটির একটি জরজীর্ণ ঘরে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন এই পরিবারটি।

জানা যায়, মোজ্জাফর হোসেন ছোট বেলা থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলের সহযোগিতায় রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা রোজগার করতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন মোজ্জাফর। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ে করার পরে তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। তারপর থেকে বাবা-মায়ের খুঁজ খবর নেয় না তারা। আর ছোট ছেলে মারুফ দশম শ্রেনীতে পড়াশোনা অবস্থায় সড়কে একটি ঔষুধ কোম্পানি গাড়ির ধাক্কায় হারিয়ে ফেলে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি। এতে একই পরিবারে বাবা-ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন মোফাজ্জর। অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজ্জাফর হোসেন অশ্রুসজল চোখে বলেন, আগে বড় দুই ছেলেদের সাহায্য রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা পাইতাম তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলতো। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ের পর ছেড়ে চলে যায়। ছোট যে ছেলে ছিলো, সেও দুর্ঘটনায় আমার মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। এরপর আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ শুরু করে। কিন্তু যে কয় টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের তিনজনের সংসার চলে না। আয় রোজগার করার মতো আর কোন সদস্য নেই পরিবারে। এখন বয়স হয়ে গেছে। আগের মতো রাস্তায় ঠিক মতো গানও গাইতে পারি না। আমার প্রতিবন্ধীর ভাতার যে কই টাকা পাই তা দিয়েও চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনব? অনেক কষ্ট করে কোন বেলা খেয়ে আবার কোন বেলা না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। এখন রোজার সময় ঠিকমতো সেহরি ও ইফতার জোগাড় করতে পারি না। অনেক সময় ইফতারে শুধু পানি ও সেহরিতে না খেয়েও রোজা থাকতে হয়।

মোজ্জাফর বলেন, ডাক্তার বলেছে ছেলের চোখে অপারেশন করালে দেখতে পাবে। কিন্তু অপারেশন জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন, সেই টাকা নেই আমার কাছে। তাই বিত্তবানরা যদি আমাদের একুট সহযোগিতা করতেন তাহলে আমরা ছেলে চোখে দেখতে পেতেন।

মোজ্জাফরের ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মারুফ বলেন, একটা সময় সবার মতো নিজের চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো, গাছ পালা দেখতে পেতাম। স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা করে বাবার পাশে দাঁড়াবো। সংসারের হাল ধরবো। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা আমার চোখের আলো কেড়ে নিলো। এখন ইচ্ছে থাকলেও দেখতে পারিনা। আমরা বাবা-ছেলে এখন সমাজের বোঝা। বাবার কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা। ডাক্তার বলেছে অপারেশন করানো হলে দেখতে পাবো। কিন্তু যেখানে এক বেলা খাবারই ঠিকমতো জোটেনা, সেখানে চিকিৎসা করানোর টাকা পাবো কই। দুনিয়ায় এমন কি কেউ নেই যার সহায়তায় দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে এবং বাবার পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জনি বলেন, সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে তাদেরকে কিছু দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সমাজের বিত্তবানরা তাদের কথা চিন্তা করে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়ালে পরিবারটির অভাব কেটে যাবে। মারুফ ছেলেটির চোখের ভালো চিকিৎসা করালে সে আবারো আগের মতো দেখতে পারবে।

এবিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, তারা যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পান, তাহলে খুঁজ খবর নিয়ে তাদের সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দরখাস্ত করলে তাদের চিকিৎসার জন্য কোন সহযোগিতার সুযোগ থাকলে করা হবে।

ছবি

সাভারে জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, লুট হলো সোনা ও নগদ টাকা

রংপুরে ধর্ষনের শাস্তি ফাঁসি প্রকাশ্য কার্যকরের দাবিতে মশাল মিছিল

ছবি

সুনামগঞ্জ জেলার নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তোফায়েল আহাম্মেদ

চাঁদাবাজির অভিযোগে নোয়াখালীতে বিএনপির ৩ নেতাকে অব্যাহতি

পোরশায় পাঁচ শতাধিক আমগাছ উপড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

মতলবে লঞ্চ থেকে ২৫ মণ জাটকা জব্দ

ছবি

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক সহ দুইজন আটক, অবশেষে বহিষ্কার

বাগেরহাটে ২৯ দিনে গ্রেপ্তার ৩৪৭

টমটম চালক খুনের ঘটনায় আটক ২

ভালুকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্রসহ নিহত ২

ছবি

তামাকজাত কোম্পানির লোভনীয় ফাঁদে কৃষক, কমছে খাদ্য উৎপাদন

ছবি

মতলবে নাছিরের দইয়ের কদর বাড়ছে

সীমান্তে বালু উত্তোলন করায় পাইপ ভাঙচুর, মেশিন জব্দ

চাঁদাবাজির অভিযোগে নোয়াখালীতে বিএনপির ৩ নেতাকে অব্যাহতি

ছবি

নাইক্ষ্যংছড়িতে ডাকাতির চেষ্টা, জনতার হাতে অস্ত্রসহ আটক ১, গুলিতে আহত ২

গৌরনদীতে এক যুবকের আত্মহত্যা

পলাশে বাস সার্ভিস না থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ

রায়গঞ্জে সবজিতে স্বস্তি, চড়া মাছ-মাংসের বাজার

ছবি

বোয়ালখালীতে আগুনে পুড়ল ৫ বসতঘর

গোবিন্দগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ

মুন্সীগঞ্জে দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

ছবি

মহাদেবপুরে মসজিদে সাব মার্সিবল পাম্প প্রদান

কমলগঞ্জে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ইটভাটা

চাঁদপুরে গ্যাস লিকেজে একই পরিবারের দগ্ধ ৬

ছবি

হিমাগারে আলু সংরক্ষণের কার্ড সংকট, বিপাকে চাষিরা

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, দুই ভাইসহ নিহত ৩

হবিগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যুবকের মৃত্যু

গৌরনদীতে সরকারি বাধা উপেক্ষা করে দোকান নির্মাণ

করিমগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজছাত্র নিহত

ছবি

সবজির দামে হতাশ কৃষক

ছবি

পদ্মা-মেঘনায় জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নৌযানের জ্বালানি অপ্রতুল

বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় ভারত : রাজনাথ সিং

চট্টগ্রামে আ.লীগ-ছাত্রলীগের আরও ৪০ গ্রেপ্তার

ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যু ১

হিযবুত তাহরীরের ৩৬ সদস্য গ্রেপ্তার

নিখোঁজ মেয়ের সন্ধান চাওয়ায় ওসির কাছে অপমান হওয়ার অভিযোগ বাবার

tab

সারাদেশ

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবা-ছেলের মানবেতর জীবনযাপন

প্রতিনিধি, নওগাঁ

রোববার, ০৯ মার্চ ২০২৫

আমিও চোখে দেখি না, আমার ছেলেও দেখতে পায় না। আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে যে কয়টা টাকা পাই সেটা দিয়ে সংসার চলে না। রমজান মাস কয়েকটা রোজা চলে গেল। সেহরির সময় না খেয়েও রোজা থাকতে হয় আবার ইফতারের সময় শুধু পানি দিয়েও ইফতার করতে হয়। আমার প্রতিবন্ধী ভাতার যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনমু?

ছলছল চোখে এসব কথা বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজ্জাফর হোসেন। তার বাড়ি নওগাঁর পত্নিতলা উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে। তার ছোট ছেলে ১৯ বছর বয়সী মারুফও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মাটির একটি জরজীর্ণ ঘরে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন এই পরিবারটি।

জানা যায়, মোজ্জাফর হোসেন ছোট বেলা থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলের সহযোগিতায় রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা রোজগার করতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন মোজ্জাফর। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ে করার পরে তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। তারপর থেকে বাবা-মায়ের খুঁজ খবর নেয় না তারা। আর ছোট ছেলে মারুফ দশম শ্রেনীতে পড়াশোনা অবস্থায় সড়কে একটি ঔষুধ কোম্পানি গাড়ির ধাক্কায় হারিয়ে ফেলে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি। এতে একই পরিবারে বাবা-ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন মোফাজ্জর। অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজ্জাফর হোসেন অশ্রুসজল চোখে বলেন, আগে বড় দুই ছেলেদের সাহায্য রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা পাইতাম তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলতো। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ের পর ছেড়ে চলে যায়। ছোট যে ছেলে ছিলো, সেও দুর্ঘটনায় আমার মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। এরপর আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ শুরু করে। কিন্তু যে কয় টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের তিনজনের সংসার চলে না। আয় রোজগার করার মতো আর কোন সদস্য নেই পরিবারে। এখন বয়স হয়ে গেছে। আগের মতো রাস্তায় ঠিক মতো গানও গাইতে পারি না। আমার প্রতিবন্ধীর ভাতার যে কই টাকা পাই তা দিয়েও চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনব? অনেক কষ্ট করে কোন বেলা খেয়ে আবার কোন বেলা না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। এখন রোজার সময় ঠিকমতো সেহরি ও ইফতার জোগাড় করতে পারি না। অনেক সময় ইফতারে শুধু পানি ও সেহরিতে না খেয়েও রোজা থাকতে হয়।

মোজ্জাফর বলেন, ডাক্তার বলেছে ছেলের চোখে অপারেশন করালে দেখতে পাবে। কিন্তু অপারেশন জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন, সেই টাকা নেই আমার কাছে। তাই বিত্তবানরা যদি আমাদের একুট সহযোগিতা করতেন তাহলে আমরা ছেলে চোখে দেখতে পেতেন।

মোজ্জাফরের ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মারুফ বলেন, একটা সময় সবার মতো নিজের চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো, গাছ পালা দেখতে পেতাম। স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা করে বাবার পাশে দাঁড়াবো। সংসারের হাল ধরবো। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা আমার চোখের আলো কেড়ে নিলো। এখন ইচ্ছে থাকলেও দেখতে পারিনা। আমরা বাবা-ছেলে এখন সমাজের বোঝা। বাবার কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা। ডাক্তার বলেছে অপারেশন করানো হলে দেখতে পাবো। কিন্তু যেখানে এক বেলা খাবারই ঠিকমতো জোটেনা, সেখানে চিকিৎসা করানোর টাকা পাবো কই। দুনিয়ায় এমন কি কেউ নেই যার সহায়তায় দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে এবং বাবার পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জনি বলেন, সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে তাদেরকে কিছু দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সমাজের বিত্তবানরা তাদের কথা চিন্তা করে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়ালে পরিবারটির অভাব কেটে যাবে। মারুফ ছেলেটির চোখের ভালো চিকিৎসা করালে সে আবারো আগের মতো দেখতে পারবে।

এবিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, তারা যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পান, তাহলে খুঁজ খবর নিয়ে তাদের সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দরখাস্ত করলে তাদের চিকিৎসার জন্য কোন সহযোগিতার সুযোগ থাকলে করা হবে।

back to top