বৈদ্যুতিক ফাঁদে মরছে বন্যহাতি
চকরিয়া (কক্সবাজার) : বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা পড়ছে বন্যহাতি -সংবাদ
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটের আওতাধীন সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনের ভেতর বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন এক হাজার ৯৮৩ পরিবার। ২০২৪ সালের ৫ জুন ও ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি দুই দফায় এসব পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন চকরিয়া জোনাল অফিস এই নির্দেশ তোয়াক্কা না করে এসব পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বনভূমিতে ২ হাজার ১২২টি খুঁটি পুঁতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এমনকি বনের ভেতরে অবৈধ দোকান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জের গ্যারেজেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। আবার অনেকে ধানক্ষেত ও সবজি চাষ রক্ষা করতে কৌশলে সেখানকার বনের আশপাশ এলাকায় হাতি তাড়াতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতেছে। ইতোমধ্যে বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুৎ তারে জড়িয়ে মারা গেছেন অন্তত তিনটি বন্যহাতি। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ফাসিয়াখালী রেঞ্জের রিংভং বনবিট এলাকায় বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা গেছে একটি বন্যাহাতি। সরকারি নিষেধ স্বত্ত্বেও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন চালু করার বিনিময়ে পকেট ভারী হয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
জানা গেছে, সরকারি সংরক্ষিত বনভূমির বসতবাড়ি ও দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কারণে বন্যপ্রাণী ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ফলে বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসছে। বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে হাতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বড় অঙ্কের লেনদেনের বিনিময়ে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটের আওতাধীন সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনের বনভূমিতে বসবাসরত ১ হাজার ৯৮৩টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া জোনাল অফিস। এখনও নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি বন সংশ্লিষ্টদের।
চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসংলগ্ন চকরিয়া উপজেলার বনভূমিসহ সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও পল্লী বিদ্যুতের ২ হাজার ১২২টি বিদ্যুৎ খুঁটি রয়েছে। এসব খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে অবৈধভাবে নির্মিত বসতবাড়ি, দোকান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজে।
অথচ ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ অফিসের সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া কার্যালয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়া বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তরে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে দু’দফায় চিঠি দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারি নির্দেশ না মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে।’
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘সংরক্ষিত বনভূমিতে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইচ্ছে করলে বনবিভাগ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তবে বনবিভাগ অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এই আইন প্রয়োগ না করায় এখন অবৈধ দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রতিনিযত। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আইন প্রয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে।’
বনকর্মী ও স্থানীয় লোকজন জানান, সংরক্ষিত বন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণী বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। লামা বনবিভাগের ইয়াংছা ও কুমারী এলাকায় বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে সম্প্রতি একটি গর্ভবতী হাতি মারা গেছে। এ ছাড়া চুনতি অবয়ারণ্যেও হাতি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় বন্যপ্রাণীর বিচরণ ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার উত্তর-দক্ষিণ বনভূমিতে হরিণ বিলুপ্তপ্রায়। স্বল্পসংখ্যক হাতি থাকলেও খাদ্য সংকটের কারণে মানুষ ও হাতির মধ্যে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এ কারণে বনজীবী লোকজন প্রাণ হারাচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক এমআর মাহমুদ বলেন, সংরক্ষিত বনে অবৈধ বসবাস বন্ধে বনবিভাগকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অতীতে টাকার বিনিময়ে মানুষকে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। বনের জীববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় বনের ভেতর এসব অপতৎপরতা বন্ধ হওয়া দরকার বলে দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ সচেতন মহল।
বৈদ্যুতিক ফাঁদে মরছে বন্যহাতি
চকরিয়া (কক্সবাজার) : বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা পড়ছে বন্যহাতি -সংবাদ
সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটের আওতাধীন সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনের ভেতর বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন এক হাজার ৯৮৩ পরিবার। ২০২৪ সালের ৫ জুন ও ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি দুই দফায় এসব পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন চকরিয়া জোনাল অফিস এই নির্দেশ তোয়াক্কা না করে এসব পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বনভূমিতে ২ হাজার ১২২টি খুঁটি পুঁতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এমনকি বনের ভেতরে অবৈধ দোকান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জের গ্যারেজেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। আবার অনেকে ধানক্ষেত ও সবজি চাষ রক্ষা করতে কৌশলে সেখানকার বনের আশপাশ এলাকায় হাতি তাড়াতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতেছে। ইতোমধ্যে বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুৎ তারে জড়িয়ে মারা গেছেন অন্তত তিনটি বন্যহাতি। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ফাসিয়াখালী রেঞ্জের রিংভং বনবিট এলাকায় বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা গেছে একটি বন্যাহাতি। সরকারি নিষেধ স্বত্ত্বেও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন চালু করার বিনিময়ে পকেট ভারী হয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
জানা গেছে, সরকারি সংরক্ষিত বনভূমির বসতবাড়ি ও দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কারণে বন্যপ্রাণী ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ফলে বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসছে। বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে হাতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বড় অঙ্কের লেনদেনের বিনিময়ে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটের আওতাধীন সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনের বনভূমিতে বসবাসরত ১ হাজার ৯৮৩টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া জোনাল অফিস। এখনও নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি বন সংশ্লিষ্টদের।
চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসংলগ্ন চকরিয়া উপজেলার বনভূমিসহ সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও পল্লী বিদ্যুতের ২ হাজার ১২২টি বিদ্যুৎ খুঁটি রয়েছে। এসব খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে অবৈধভাবে নির্মিত বসতবাড়ি, দোকান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজে।
অথচ ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ অফিসের সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া কার্যালয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়া বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তরে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে দু’দফায় চিঠি দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারি নির্দেশ না মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে।’
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘সংরক্ষিত বনভূমিতে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইচ্ছে করলে বনবিভাগ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তবে বনবিভাগ অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এই আইন প্রয়োগ না করায় এখন অবৈধ দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রতিনিযত। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আইন প্রয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে।’
বনকর্মী ও স্থানীয় লোকজন জানান, সংরক্ষিত বন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণী বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। লামা বনবিভাগের ইয়াংছা ও কুমারী এলাকায় বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে সম্প্রতি একটি গর্ভবতী হাতি মারা গেছে। এ ছাড়া চুনতি অবয়ারণ্যেও হাতি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় বন্যপ্রাণীর বিচরণ ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার উত্তর-দক্ষিণ বনভূমিতে হরিণ বিলুপ্তপ্রায়। স্বল্পসংখ্যক হাতি থাকলেও খাদ্য সংকটের কারণে মানুষ ও হাতির মধ্যে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এ কারণে বনজীবী লোকজন প্রাণ হারাচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক এমআর মাহমুদ বলেন, সংরক্ষিত বনে অবৈধ বসবাস বন্ধে বনবিভাগকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অতীতে টাকার বিনিময়ে মানুষকে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। বনের জীববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় বনের ভেতর এসব অপতৎপরতা বন্ধ হওয়া দরকার বলে দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ সচেতন মহল।