ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের দোবিলা বিল বাংলা ১৪৩১ সালের ৩০ চৈত্র মাস পর্যন্ত ইজারা থাকলেও স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের দুই নেতা বিল দখল করে নেওয়াই ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী ইজারা গ্রহণ কারীরা জানান। এ দখল বাণিজ্যের কারণে ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে বলে ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা মনে করছেন। তাদের এই লুটপাট ও দখল বাণিজ্যের কারণে আসামি দিনে এই ইউনিয়নে বিএনপির ভোট ব্যাংক শুন্যের কোঠায় চলে যেতে পারে বলেও তাদের আশাংকা।

ভুক্তভোগী জালাল নামের এক ব্যক্তি জানান, মহেশপুরের আজমপুর ইউনিয়নের দোবিলায় ২৩১ একর জমি আছে। সরকার প্রতি বছর এখান থেকে ৪০ লাখের অধিক টাকা লিজ ইজারা গ্রহণ করে থাকে। আমরা মহেশপুর হালদার মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর নামে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদে প্রতিবছর ১ বৈশাখের আগে নবায়ন চুক্তিতে সরকারের কোষাগারে ৪০ লাখ টাকা ইজারা পরিশোধ করে মাছ চাষ করে থাকি। বিলের ৩টি পাট আছে এক অংশ আদমপুরের নিচে অন্যটা সৈয়দপুর ও নওদাগ্রামের অংশ নিয়ে। আমি ও আনিসুর রহমান টিপুসহ কয়েকজন সৈয়দপুর ও নওদাগ্রামের অংশে ৫টি পুকুরসহ ৩০০বিঘার মত বিলে মাছ চাষ করে আসছিলাম। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলে পর দিন ইউনিয়ন বিএনপির ৮ নং ওয়ার্ড সভাপতি তবিবর রহমান ও ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম বিলটি লুট করে দেন। পরে আমরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে বলি আমরা তো ঋণগ্রস্ত অনেক টাকা তা আমাদেরকে যদি ৩০ চৈত্র পর্যন্ত সময় দেয়া হয় তাহলে আমরা নতুন করে মাছ চাষ করে ঋণটা পরিশোধ করতে পারবো। তারা আমাদেও আশ্বাসদেন তার পর আমরা পূনরায় ২০ লাখ টাকার মাছ ছেড়ে খাবার দেয়া শুরু করি। সঙ্গে ৫টি পুকুরের গাভীতে ৩ হাজার কলা গাছ আছে। এই অবস্থায় এখনও আমাদের সময় থাকতে তবিবর ও তরিকুল আমাদের কলা কেটে বিক্রি শুরু করেছে আর বিল ও পুকুর দখল নিয়ে মাছ চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছে। আমরা আর বিলের যেতে পারছি না।

বিল দখলের চিত্র সরেজমিনে দেখতে গেলে বর্তমান বিলের মালিক ও গার্ড ওহেদুল ইসলাম জানান, এখন বিএনপির আন্ডারে বিল চাষ হচ্ছে। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম ও ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি তবিবর রহমান তবি।

মহেশপুর হালদার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ও বিলের ইজারা গ্রহীতা সাধন হালদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, চলতি বছর ৩০ চৈত্র পর্যন্ত বিলের মালিকানা আছে জালাল ও টিপুগং গত বছর আমার কাছ থেকে সাবলিজ নিয়ে তারা মাছ চাষ করছে। গায়ের জোরে তবি আর তরিকুল তাদের সময় থাকার পরও দখল করে নিয়েছে। দোবিলা বিলের সাবলিজ গ্রহীতা আছুব হোসেন জানান, ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য সরকারের কোষাগারে ৪০ লাখ ৩ হাজার টাকা সাধন হালদারের সমিতির নামে জমা দিয়ে আমি সাধন হালদারের কাছ থেকে লিখে নিয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে একটি অংশের জন্য তবি ও তরিকুল আর একটি অংশের জন্য ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক সোহাগ সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর একটি অংশ আমি নিজে চাষ করবো। ১ বৈশাখ থেকে আমি বিল চাষ শুরু করবো বলে তিনি জানান।

১২ নং আজমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মোজাম জানান, আমার ইউনিয়নটি বিএনপির ঘাটি হিসাবে পরিচিত তার মধ্যে ৮ নং ওয়ার্ডটিতে এক চেটিয়া বিএনপির ভোট। আমরা ৪২০০ ভোটের মধ্যে ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ পেতাম। বর্তমানে যে ভাবে দখল বাণিজ্য চলছে তাতে ১২/১৩০০ পাব কিনা সন্দেহ।

ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মফিজুর রহমান মাস্টারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি /সম্পাদক ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি করেছিল আমরা ঋণগ্রস্ত আমদের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত সময় আছে, যদি আমাদের একটু সহায়তা করেন তাহলে আমাদের ছাড়া মাছ বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করতে পারবো। আমরা বলে ছিলাম তাদের চাষ করতে পরে ৩০ চৈত্র আসার আগেই তাদের বিল দখল করে নিয়েছে আমি শুনেছি। কিন্তু মহেশপুর উপজেলা ও পৌরসভার ২ নেতা বিল নিয়ন্ত্রণ করছেন।

ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা সাধন হালদারের কাছ থেকে লিখে নিয়ে বিল কান্দার লোকেরা বিল চাষ করছি। আজমপুর ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি তবিবর রহমান তবির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন দো বিলার ৩টা অংশ সাধন হালদারের কাছ থেকে পরবর্তি এক বছরের বাংলা ১৪৩২ সাল পর্যন্ত লিখে নেয়া হয়েছে। আমরা তার একটি অংশে মাছ চাষ করছি। আমি আওয়ামী লীগের কাউকে কোনো শেয়ার দিইনি।