২০১৫ সালের মার্চে শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনার (১৩) ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি প্রশাসন। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ।
মামলা সূত্রে যানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলাধীন ছোট মুলনা গ্রামের আজগর খানের মেয়ে ও জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনা ২০১৫ সালের ১১ মার্চ একই গ্রামের বাসিন্দা বান্ধবী পাখি আক্তারের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। পরে বান্ধবী পাখি বাড়িতে ফিরলেও চাঁদনী আর ফিরে আসেনি। পরে তিনদিন পর চাঁদনীর লাশ বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যক্ত খালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় চাঁদনীর বাবা প্রথমে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে জাজিরা থানায় মামলা করেন। তার তিন মাস পর তিনি শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৯ জনকে আসামি করে পুনরায় মামলা করেন। ঐ মামলায় আসামি ছিলেন- মোসা. পাখি আক্তার, মিলন ওরফে দুলাল মাদবর, জুয়েল ঢালী, মাসুদ বেপারী, ওয়াসিম তালুকদার, সোহেল ঢালী, রাজন, রুবেল তালুকদার, তোতা বেপারী। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে প্রধান আসামি মোসা. পাখি আক্তার ও মিলন ওরফে দুলাল মাদবরসহ ৪ জনকে বাদ দিয়ে মাসুদ ব্যাপারী, ওয়াসিম তালুকদার, জুয়েল ঢালী, রুবেল তালুকদার ও রাজন পাঠান নামের পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তখন মামলার বাদী হত্যাকাণ্ডের শিকার শিক্ষার্থীর বাবা আজগর খান আদালতে পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করার কথা জানালেও তিনি ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তা আর করতে পারেননি।
এরপর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুস সালাম এই মামলাটির রায় ঘোষণা করেন সেখানে সব আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়ে রায়ে উল্লেখ করা হয় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
চাঁদনীর মা শরীফা বেগম সংবাদকে বলেন, ‘আমার নিস্পাপ মেয়েটাকে কুকুর-শিয়ালের দল চিরে খেয়েছে, ওরা আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। আমার ছোট মেয়টাকে ভয়ে ঠিকমত স্কুলে পাঠাতে পারিনি। তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আমার বড় ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী আরেক ছেলে ঢাকা থাকে। ঢাকায় থাকা ছেলে ঠিকমতো বাড়িতে এসে থাকতে পারেনি। বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। ওরা এমপির দল করতো তাই এগুলো করার সাহস পেতো। এই সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে মরতে চাই।’
এদিকে ২০১৫ সালে চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের মত নৃশংস ঘটনায় হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার বাস্তবায়নের দাবিতে গঠিত সামাজিক সংগঠন ‘নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ’ ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদনীর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
ঐ সংগঠনের আহ্বায়ক জামাল মাদবর সংবাদকে বলেন, ‘২০১৫ সালের ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী চাঁদনীকে কতিপয় নরপিশাচরা ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর চাঁদনীর বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলেও দীর্ঘ চার বছর চলে তদন্তের নামে প্রহসন। প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে মামলাটি মিটিয়ে দেয়ার অপচেষ্টাও চলে। আজ ১০ বছর পার হলেও ভুক্তভোগীর পরিবারসহ আমরা সচেতন নাগরিক সমাজ বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। অনতিবিলম্বে এই শিশু শিক্ষার্থী চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার চাই। নয়তো নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মামলার বাদী, চাঁদনীর হতভাগা বাবা, সন্তানের হত্যাকাণ্ডের বিচার না পেয়ে অকালে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কতটা লজ্জার বিষয়। স্বাধীন দেশের একজন পিতা সন্তানের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আমরা এই সংস্কৃতির অবসান চাই। আমরা চাই চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলাটি পূনরায় তদন্ত করে মূলহোতাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করা হোক।’
সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
২০১৫ সালের মার্চে শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনার (১৩) ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি প্রশাসন। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ।
মামলা সূত্রে যানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলাধীন ছোট মুলনা গ্রামের আজগর খানের মেয়ে ও জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনা ২০১৫ সালের ১১ মার্চ একই গ্রামের বাসিন্দা বান্ধবী পাখি আক্তারের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। পরে বান্ধবী পাখি বাড়িতে ফিরলেও চাঁদনী আর ফিরে আসেনি। পরে তিনদিন পর চাঁদনীর লাশ বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যক্ত খালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় চাঁদনীর বাবা প্রথমে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে জাজিরা থানায় মামলা করেন। তার তিন মাস পর তিনি শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৯ জনকে আসামি করে পুনরায় মামলা করেন। ঐ মামলায় আসামি ছিলেন- মোসা. পাখি আক্তার, মিলন ওরফে দুলাল মাদবর, জুয়েল ঢালী, মাসুদ বেপারী, ওয়াসিম তালুকদার, সোহেল ঢালী, রাজন, রুবেল তালুকদার, তোতা বেপারী। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে প্রধান আসামি মোসা. পাখি আক্তার ও মিলন ওরফে দুলাল মাদবরসহ ৪ জনকে বাদ দিয়ে মাসুদ ব্যাপারী, ওয়াসিম তালুকদার, জুয়েল ঢালী, রুবেল তালুকদার ও রাজন পাঠান নামের পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তখন মামলার বাদী হত্যাকাণ্ডের শিকার শিক্ষার্থীর বাবা আজগর খান আদালতে পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করার কথা জানালেও তিনি ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তা আর করতে পারেননি।
এরপর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুস সালাম এই মামলাটির রায় ঘোষণা করেন সেখানে সব আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়ে রায়ে উল্লেখ করা হয় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
চাঁদনীর মা শরীফা বেগম সংবাদকে বলেন, ‘আমার নিস্পাপ মেয়েটাকে কুকুর-শিয়ালের দল চিরে খেয়েছে, ওরা আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। আমার ছোট মেয়টাকে ভয়ে ঠিকমত স্কুলে পাঠাতে পারিনি। তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আমার বড় ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী আরেক ছেলে ঢাকা থাকে। ঢাকায় থাকা ছেলে ঠিকমতো বাড়িতে এসে থাকতে পারেনি। বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। ওরা এমপির দল করতো তাই এগুলো করার সাহস পেতো। এই সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে মরতে চাই।’
এদিকে ২০১৫ সালে চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের মত নৃশংস ঘটনায় হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার বাস্তবায়নের দাবিতে গঠিত সামাজিক সংগঠন ‘নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ’ ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদনীর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
ঐ সংগঠনের আহ্বায়ক জামাল মাদবর সংবাদকে বলেন, ‘২০১৫ সালের ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী চাঁদনীকে কতিপয় নরপিশাচরা ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর চাঁদনীর বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলেও দীর্ঘ চার বছর চলে তদন্তের নামে প্রহসন। প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে মামলাটি মিটিয়ে দেয়ার অপচেষ্টাও চলে। আজ ১০ বছর পার হলেও ভুক্তভোগীর পরিবারসহ আমরা সচেতন নাগরিক সমাজ বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। অনতিবিলম্বে এই শিশু শিক্ষার্থী চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার চাই। নয়তো নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মামলার বাদী, চাঁদনীর হতভাগা বাবা, সন্তানের হত্যাকাণ্ডের বিচার না পেয়ে অকালে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কতটা লজ্জার বিষয়। স্বাধীন দেশের একজন পিতা সন্তানের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আমরা এই সংস্কৃতির অবসান চাই। আমরা চাই চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলাটি পূনরায় তদন্ত করে মূলহোতাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করা হোক।’