ভগ্নপ্রায় শতাব্দী প্রাচীন স্থাপনাটি তৎকালীন শ্রীহট্ট জেলা বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরে তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজের কাচারি বাড়ি ।
সাত চল্লিশের দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ রোডে অবস্থিত এই বাড়িটি উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত। উনিশ শতকের শেষভাগে ডাউকি ফল্ট প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পের পরপরই তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজ কর্তৃক এতদঞ্চলে প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা আদায়ের জন্য শহরের মধ্যভাগে প্রায় পৌনে দুই একর জায়গার ওপরে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। আধুনিক ত্রিপুরার স্থপতি মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য দেববর্মন বাহাদুরের আমলে বাড়িটি নির্মিত। পরবর্তীতে মহারাজ বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের সময়ে পুরোদমে এই কাচারী বাড়ি থেকেই এ অঞ্চলে তাদের খাজনা আদায় তথা প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন।
ত্রিপুরা রাজ্য বলতে অধুনা যা বলা হয়, তা মূলত, পার্বত্য ত্রিপুরা। বর্তমান ত্রিপুরার কমলপুর সংলগ্ন কমলগঞ্জ, ভানুগাছ, শমশেরনগর, শ্রীমঙ্গলের বৃহদাংশ ছিল ত্রিপুরা মাণিক্য দেববর্মন রাজপরিবারের দখলে। শ্রীযুক্ত অচ্যুৎচরণ চৌধুরী তত্বনিধির শ্রীহট্টের ইতিহাসের আকরগ্রন্থ ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ততেও এর সত্যতা মেলে । শ্রীহট্টের কুলাউড়া এবং তৎসংলগ্ন ধর্মনগর, কৈলাশহরের কথা প্রয়াত, কৈলাশ চন্দ্র সিংহ রচিত ত্রিপুরা রাজপরিবারের ইতিহাস কথা ‘রাজমালা’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে ।
স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন একতলা এই বাড়িটি প্রস্থে ত্রিশ ফুট ও দৈর্ঘ্যে কুড়ি ফুট । রয়েছে তিনটি কক্ষ, আটটি দরজা ও নয়টি জানালা । যার প্রতিটি দেওয়াল এক ফুট চওড়া ও প্রাচীন চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত। ইতোমধ্যে এই স্থাপনার কোথাও আংশিক আবার কোথাও পুরোপুরি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। দেওয়াল ও ছাদে দেখা দিয়েছে বড় ফাটল। পুরো স্থাপনাজুড়ে শেওলা জমাট বেঁধেছে।
দেশভাগে ত্রিপুরা আজ ভারতে, জরাজীর্ণ ভবনে এখন আর কেউ আসেও না। অথচ এক সময় প্রজাদের ভিড়ে লোকারণ্য ছিল এই ভবনটি। রাজবাড়ীর খাজনা যুগের অবসান হয়েছে বহু আগে। মাণিক্য পরিবারের খাজনার স্মৃতি ধারণ করে নীরবে ভগ্ন অবস্থায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ত্রিপুরা মহারাজের ভবনটি। এখনো নির্মাণশৈলীর বহুমাত্রিক কারুকাজ রয়েছে চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে কালের অতল গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি।
সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
ভগ্নপ্রায় শতাব্দী প্রাচীন স্থাপনাটি তৎকালীন শ্রীহট্ট জেলা বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরে তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজের কাচারি বাড়ি ।
সাত চল্লিশের দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ রোডে অবস্থিত এই বাড়িটি উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত। উনিশ শতকের শেষভাগে ডাউকি ফল্ট প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পের পরপরই তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজ কর্তৃক এতদঞ্চলে প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা আদায়ের জন্য শহরের মধ্যভাগে প্রায় পৌনে দুই একর জায়গার ওপরে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। আধুনিক ত্রিপুরার স্থপতি মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য দেববর্মন বাহাদুরের আমলে বাড়িটি নির্মিত। পরবর্তীতে মহারাজ বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের সময়ে পুরোদমে এই কাচারী বাড়ি থেকেই এ অঞ্চলে তাদের খাজনা আদায় তথা প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন।
ত্রিপুরা রাজ্য বলতে অধুনা যা বলা হয়, তা মূলত, পার্বত্য ত্রিপুরা। বর্তমান ত্রিপুরার কমলপুর সংলগ্ন কমলগঞ্জ, ভানুগাছ, শমশেরনগর, শ্রীমঙ্গলের বৃহদাংশ ছিল ত্রিপুরা মাণিক্য দেববর্মন রাজপরিবারের দখলে। শ্রীযুক্ত অচ্যুৎচরণ চৌধুরী তত্বনিধির শ্রীহট্টের ইতিহাসের আকরগ্রন্থ ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ততেও এর সত্যতা মেলে । শ্রীহট্টের কুলাউড়া এবং তৎসংলগ্ন ধর্মনগর, কৈলাশহরের কথা প্রয়াত, কৈলাশ চন্দ্র সিংহ রচিত ত্রিপুরা রাজপরিবারের ইতিহাস কথা ‘রাজমালা’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে ।
স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন একতলা এই বাড়িটি প্রস্থে ত্রিশ ফুট ও দৈর্ঘ্যে কুড়ি ফুট । রয়েছে তিনটি কক্ষ, আটটি দরজা ও নয়টি জানালা । যার প্রতিটি দেওয়াল এক ফুট চওড়া ও প্রাচীন চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত। ইতোমধ্যে এই স্থাপনার কোথাও আংশিক আবার কোথাও পুরোপুরি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। দেওয়াল ও ছাদে দেখা দিয়েছে বড় ফাটল। পুরো স্থাপনাজুড়ে শেওলা জমাট বেঁধেছে।
দেশভাগে ত্রিপুরা আজ ভারতে, জরাজীর্ণ ভবনে এখন আর কেউ আসেও না। অথচ এক সময় প্রজাদের ভিড়ে লোকারণ্য ছিল এই ভবনটি। রাজবাড়ীর খাজনা যুগের অবসান হয়েছে বহু আগে। মাণিক্য পরিবারের খাজনার স্মৃতি ধারণ করে নীরবে ভগ্ন অবস্থায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ত্রিপুরা মহারাজের ভবনটি। এখনো নির্মাণশৈলীর বহুমাত্রিক কারুকাজ রয়েছে চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে কালের অতল গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি।