‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে তার কেলেঙ্কারি দ্রুত বিচারাধীন করার পরামর্শ এফএটিএফের
যুক্তরাজ্যে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর অর্থপাচারের ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ইকবাল আহমেদ ওবিই’র নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পরে ফিনিন্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে তার কেলেংকারি দ্রুত বিচারাধীন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এর আগে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সে অনিয়ম করে ২’শত হাজার পাউন্ড গায়েবের অভিযোগে দেশটির আদালত ইকবাল আহমেদকে ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে। অভিযোগ উঠেছে, এই ইকবাল আহমেদ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমার্ক গ্রুপের আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের করেছেন। তাকে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্স থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইকবাল আহমদ অবি’র উত্থান সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি বিগত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন। তার ফেইসবুক প্রোফাইলজুড়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে অসংখ্য ছবি শেয়ার করা হতো, যা তাকে ‘হাসিনা বিশ্বস্ত’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই অবি’র ভিন্নমুখী কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ইকবাল আহমেদ ওবিই’র সীমার্ক গ্রুপের মাছের ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু সরকারের প্রতি লোকজনের বিশ্বস্ত হওয়ায় তার কোম্পানির গুদামে যেতো মাছ রপ্তানির নামে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও সোনার বার।
বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি, বিদেশে বিশেষ করে লন্ডন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সম্পদের মালিকানা গড়ে তুলেছেন। শুধু লন্ডনেই তার প্রায় দু’ডজন খানেক বাড়ি ও অত্যাধুনিক প্রপার্টি রয়েছে, যা মূলত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সম্পদের পরিমাণ শত শত কোটি টাকারও বেশি, যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের করের টাকা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে উৎসারিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লন্ডনে এই ব্যক্তির ভাই ও ভাতিজাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা করে আসছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইবকো হোল্ডিংস লিমিটেড, মাই ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, ভারমিলিওন গ্রুপ লিমিটেড, ফ্লায়িং ইউনিকর্ন লিমিটেড, ওপেন হাও হোল্ডিংস লিমিটেড, ইবকো লিমিটেড, সিমার্ক পিএলসিসহ মোট ১৪টি কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলো মূলত রিয়েল এস্টেট, বিনিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। এতে শেখ পরিবারের সদস্যদের নামেও কোম্পানিগুলোতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অনেকে জানান, ইকবাল আহমেদ পারেন না এমন কোনো কাজ নেই। ইতোপূর্বে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সে অনিয়ম করে গায়েব করেন ২’শত হাজার পাউন্ড। এরপর ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ ইকবাল আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করলে ইকবাল আহমেদ মামলায় হেরে যান। দেশটির আদালত ইকবাল আহমেদের উপর ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে এবং চেম্বার অব কমার্স থেকে আজীবন বহিষ্কার করে।
এর আগে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির গোপন অর্থ দাতা ওবিই দলটিকে ১২ হাজার পাউন্ড ডোনেশন দেয়ার পর খরচ ফেরতের দাবি করে বিতর্কিত হয়েছেন। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দাতা তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য পার্টির তহবিল ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তার এই আচরণ নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যেখানে জনগণের করের টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তীব্র হয়েছিল। এই ঘটনাকে ঘিরে দলটির অভ্যন্তরীণ আর্থিক নীতিমালা ও নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়নে কঠোর নিয়মকানুন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছিল।
এদিকে, ওবিই’র অর্থপাচারের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে অবি’র কেলেঙ্কারি দ্রুত বিচারাধীন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একজন ব্যক্তির মাধ্যমে এত বড় আকারের দুর্নীতি সম্ভব হয় শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকারের উচিত এই নেটওয়ার্কের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা।’
এ বিষয়ে ইকবাল আহমদ ওবি’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে তার কেলেঙ্কারি দ্রুত বিচারাধীন করার পরামর্শ এফএটিএফের
সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
যুক্তরাজ্যে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর অর্থপাচারের ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ইকবাল আহমেদ ওবিই’র নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পরে ফিনিন্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে তার কেলেংকারি দ্রুত বিচারাধীন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এর আগে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সে অনিয়ম করে ২’শত হাজার পাউন্ড গায়েবের অভিযোগে দেশটির আদালত ইকবাল আহমেদকে ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে। অভিযোগ উঠেছে, এই ইকবাল আহমেদ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমার্ক গ্রুপের আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের করেছেন। তাকে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্স থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইকবাল আহমদ অবি’র উত্থান সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি বিগত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন। তার ফেইসবুক প্রোফাইলজুড়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে অসংখ্য ছবি শেয়ার করা হতো, যা তাকে ‘হাসিনা বিশ্বস্ত’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই অবি’র ভিন্নমুখী কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ইকবাল আহমেদ ওবিই’র সীমার্ক গ্রুপের মাছের ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু সরকারের প্রতি লোকজনের বিশ্বস্ত হওয়ায় তার কোম্পানির গুদামে যেতো মাছ রপ্তানির নামে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও সোনার বার।
বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি, বিদেশে বিশেষ করে লন্ডন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সম্পদের মালিকানা গড়ে তুলেছেন। শুধু লন্ডনেই তার প্রায় দু’ডজন খানেক বাড়ি ও অত্যাধুনিক প্রপার্টি রয়েছে, যা মূলত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সম্পদের পরিমাণ শত শত কোটি টাকারও বেশি, যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের করের টাকা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে উৎসারিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লন্ডনে এই ব্যক্তির ভাই ও ভাতিজাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা করে আসছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইবকো হোল্ডিংস লিমিটেড, মাই ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, ভারমিলিওন গ্রুপ লিমিটেড, ফ্লায়িং ইউনিকর্ন লিমিটেড, ওপেন হাও হোল্ডিংস লিমিটেড, ইবকো লিমিটেড, সিমার্ক পিএলসিসহ মোট ১৪টি কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলো মূলত রিয়েল এস্টেট, বিনিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। এতে শেখ পরিবারের সদস্যদের নামেও কোম্পানিগুলোতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অনেকে জানান, ইকবাল আহমেদ পারেন না এমন কোনো কাজ নেই। ইতোপূর্বে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সে অনিয়ম করে গায়েব করেন ২’শত হাজার পাউন্ড। এরপর ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ ইকবাল আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করলে ইকবাল আহমেদ মামলায় হেরে যান। দেশটির আদালত ইকবাল আহমেদের উপর ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে এবং চেম্বার অব কমার্স থেকে আজীবন বহিষ্কার করে।
এর আগে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির গোপন অর্থ দাতা ওবিই দলটিকে ১২ হাজার পাউন্ড ডোনেশন দেয়ার পর খরচ ফেরতের দাবি করে বিতর্কিত হয়েছেন। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দাতা তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য পার্টির তহবিল ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তার এই আচরণ নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যেখানে জনগণের করের টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তীব্র হয়েছিল। এই ঘটনাকে ঘিরে দলটির অভ্যন্তরীণ আর্থিক নীতিমালা ও নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়নে কঠোর নিয়মকানুন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছিল।
এদিকে, ওবিই’র অর্থপাচারের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে অবি’র কেলেঙ্কারি দ্রুত বিচারাধীন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একজন ব্যক্তির মাধ্যমে এত বড় আকারের দুর্নীতি সম্ভব হয় শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকারের উচিত এই নেটওয়ার্কের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা।’
এ বিষয়ে ইকবাল আহমদ ওবি’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।