কম খরচে অধিক ফলন হয় সূর্যমুখীর। তৈল জাতীয় এ বীজ চাষ ভালো হওয়ায় সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে টাঙ্গাইলের কৃষক ও গ্রাম-বাংলার ফসলি জমি। ভোর হলেই মিষ্টি সোনা রোদে ঝলমল করে উঠে সূর্যমুখী ফুলগুলো। হালকা বাতাসে ফুলগুলো দুলনা খাচ্ছে। দেখে মনে হয় সবুজ পাতার আড়াল থেকে মুখ উঁচু করে হাসছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখী দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এ ফুলের নাম সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখীর বাগানে প্রায় প্রতিদিন চলে প্রজাপতি আর মৌ-মাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্যে খুশি কৃষক, তেমনি মোহিত করছে ফুলপ্রেমী মানুষকে।
সূর্যমুখী শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। বাজারেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। কৃষি প্রণোদনার আওতায় টাঙ্গাইলে চাষ হয়েছে তেলজাতীয় ফসল এই সূর্যমুখী ফুল। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় গতবারের ন্যায় এবারও সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়েছে টাঙ্গাইলে। এতে খুশি চাষিরাও। তা ছাড়া বর্তমানে আকাশ ছোঁয়া তেলের দাম বৃদ্ধিতে ভোজ্য তেলের চাহিদাও পূরণ করবে এ হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী। তাই কম খরচে ভালো ফলন হওয়ায় দিন দিন সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।
কালিহাতী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখী ফুলে শতকরা ৯৯ ভাগ উপকারী ফ্যাট আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা-৬, ওমেগা-৯ অলিক এসিড, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল। সরিষা, সয়াবিন এর চেয়ে সূর্যমুখী তৈল অসস্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কম। সূর্যমুখী ফুলের তৈলের পরিমাণ শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ। এতে মানবদেহের জন্য উপকারী লিনোলিনিক এসিড আছে (৬৮%)।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু অজিত ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুল। এনিয়ে জেলায় মোট ১৮০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। ১২টি উপজেলার মধ্যে- টাঙ্গাইল সদরে ৪৫, বাসাইলে ৩৬, কালিহাতী ০৭, ঘাটাইলে ০৮, নাগরপুরে ১৫, মির্জাপুরে ১১, মধুপুরে ২০, ভূঞাপুরে ১০, গোপালপুরে ১৫, সখীপুরে ০২, দেলদুয়ারে ০৬ ও ধনবাড়ীতে ০৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়।
কালিহাতী উপজেলার সালাংকা পূর্বপাড়া ২ নং ওয়ার্ড গ্রামের শরিফুল আলম মামুন বলেন, প্রতিত জমিতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। উপজেলা পরিষদের পাশে হওয়াতে প্রতিদিন বিকেল বেলায় আমার জমিতে ফোটা সূর্যমুখী ফুল দেখার জন্য দূর-দূরান্ত হতে অনেক দর্শনার্থীরা দেখতে আসত। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলে সময় কাটান বিনোদনপ্রেমীরা। তা দেখে আমার আনন্দ লাগে। তা ছাড়া আমার ফুলের আবাদ দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ বছর সূর্যমুখী চাষে ভালো সফলতা আসবে এবং অনেক লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি। তিনি আরও জানান, কৃষি অফিস থেকে যদি আমাকে সহযোগিতা করেন, তাহলে আসামি বছর আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করার ইচ্ছে আছে।
সূর্যমুখীর মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিনোদনপ্রেমীরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখীর মাঠে। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছে। স্থানীয় কৃষকরা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে সূর্যমুখী চাষের জন্য নানা ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন। এ ছাড়া স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষডুক যোগাযোগ করছে।
উপজেলার বেলেটিয়া গ্রামের পিতা মো. আব্দুল আউযালের ছেলে আশরাফ আলী ও তার স্ত্রী জানান, ৩৩ শতাংশ জায়গায় আগে ভুট্টা চাষাবাদ করতাম। এবছর কালিহাতী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লক সুপারভাইজারের সহযোগিতায় সূর্যমুখী ফুল চাষাবাদ আগ্রহী হই। আশা করছি ভুট্টা আবাদের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভবান হওয়া যাবে। এবছর সূর্যমুখী ফুল চাষ ভালো হলে আসামি বছর আরও বেশি জায়গা নিয়ে সূর্যমুখী চাষ করবো। এ সময় সূর্যমুখী জমিতে দেখা মিলে কালো রঙের মৌ-মাছি সহ নানারকম প্রজাতির মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ছুটে চলছে। ফুলে মৌ-মাছির বিচ্ছুরণ দেখে মাদ্রাসায় পড়ুয়া দুই কোমলমতি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সূর্যমুখী ফুল দেখে আনন্দিত হয়ে বাড়িতে রেখে দেওয়ার জন্য সূর্যমুখী ফুল ছেড়ে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে।
টাঙ্গাইল খামার বাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ২৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু অজিত হয়েছে ১৮০ হেক্টর, জেলায় মোট ১৮০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ হয়েছে।
এবছর ৮০ হেক্টর জমিতে ৬শ জন কৃষকে প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। গত বছর ৪৪২ মেট্রিকটন সূর্যমুখীর বীজের ফলন পেলেও এ বছর ১৮০ হেক্টর জমি থেকে ৪৫০ মেট্রিকটন সূর্যমুখীর বীজের ফলন পাব বলে আশা করছি।
তিনি আরও জানান, এ বছর জেলায় সূর্যমুখী বেশির ভাগই চাষ করা হাইব্রিড জাতের এবং বাংলাদেশ গবেষণাগার থেকে বারি-১৪ সূর্যমুখীর উৎপাদন বেশি হয়। আর তেলের পরিমাণও বেশি থাকে। সব দিক বিবেচনা করে তেলের চাহিদা পূরণ করে।
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
কম খরচে অধিক ফলন হয় সূর্যমুখীর। তৈল জাতীয় এ বীজ চাষ ভালো হওয়ায় সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে টাঙ্গাইলের কৃষক ও গ্রাম-বাংলার ফসলি জমি। ভোর হলেই মিষ্টি সোনা রোদে ঝলমল করে উঠে সূর্যমুখী ফুলগুলো। হালকা বাতাসে ফুলগুলো দুলনা খাচ্ছে। দেখে মনে হয় সবুজ পাতার আড়াল থেকে মুখ উঁচু করে হাসছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখী দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এ ফুলের নাম সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখীর বাগানে প্রায় প্রতিদিন চলে প্রজাপতি আর মৌ-মাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্যে খুশি কৃষক, তেমনি মোহিত করছে ফুলপ্রেমী মানুষকে।
সূর্যমুখী শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। বাজারেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। কৃষি প্রণোদনার আওতায় টাঙ্গাইলে চাষ হয়েছে তেলজাতীয় ফসল এই সূর্যমুখী ফুল। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় গতবারের ন্যায় এবারও সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়েছে টাঙ্গাইলে। এতে খুশি চাষিরাও। তা ছাড়া বর্তমানে আকাশ ছোঁয়া তেলের দাম বৃদ্ধিতে ভোজ্য তেলের চাহিদাও পূরণ করবে এ হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী। তাই কম খরচে ভালো ফলন হওয়ায় দিন দিন সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।
কালিহাতী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখী ফুলে শতকরা ৯৯ ভাগ উপকারী ফ্যাট আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা-৬, ওমেগা-৯ অলিক এসিড, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল। সরিষা, সয়াবিন এর চেয়ে সূর্যমুখী তৈল অসস্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কম। সূর্যমুখী ফুলের তৈলের পরিমাণ শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ। এতে মানবদেহের জন্য উপকারী লিনোলিনিক এসিড আছে (৬৮%)।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু অজিত ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুল। এনিয়ে জেলায় মোট ১৮০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। ১২টি উপজেলার মধ্যে- টাঙ্গাইল সদরে ৪৫, বাসাইলে ৩৬, কালিহাতী ০৭, ঘাটাইলে ০৮, নাগরপুরে ১৫, মির্জাপুরে ১১, মধুপুরে ২০, ভূঞাপুরে ১০, গোপালপুরে ১৫, সখীপুরে ০২, দেলদুয়ারে ০৬ ও ধনবাড়ীতে ০৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়।
কালিহাতী উপজেলার সালাংকা পূর্বপাড়া ২ নং ওয়ার্ড গ্রামের শরিফুল আলম মামুন বলেন, প্রতিত জমিতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। উপজেলা পরিষদের পাশে হওয়াতে প্রতিদিন বিকেল বেলায় আমার জমিতে ফোটা সূর্যমুখী ফুল দেখার জন্য দূর-দূরান্ত হতে অনেক দর্শনার্থীরা দেখতে আসত। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলে সময় কাটান বিনোদনপ্রেমীরা। তা দেখে আমার আনন্দ লাগে। তা ছাড়া আমার ফুলের আবাদ দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ বছর সূর্যমুখী চাষে ভালো সফলতা আসবে এবং অনেক লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি। তিনি আরও জানান, কৃষি অফিস থেকে যদি আমাকে সহযোগিতা করেন, তাহলে আসামি বছর আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করার ইচ্ছে আছে।
সূর্যমুখীর মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিনোদনপ্রেমীরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখীর মাঠে। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছে। স্থানীয় কৃষকরা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে সূর্যমুখী চাষের জন্য নানা ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন। এ ছাড়া স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষডুক যোগাযোগ করছে।
উপজেলার বেলেটিয়া গ্রামের পিতা মো. আব্দুল আউযালের ছেলে আশরাফ আলী ও তার স্ত্রী জানান, ৩৩ শতাংশ জায়গায় আগে ভুট্টা চাষাবাদ করতাম। এবছর কালিহাতী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লক সুপারভাইজারের সহযোগিতায় সূর্যমুখী ফুল চাষাবাদ আগ্রহী হই। আশা করছি ভুট্টা আবাদের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভবান হওয়া যাবে। এবছর সূর্যমুখী ফুল চাষ ভালো হলে আসামি বছর আরও বেশি জায়গা নিয়ে সূর্যমুখী চাষ করবো। এ সময় সূর্যমুখী জমিতে দেখা মিলে কালো রঙের মৌ-মাছি সহ নানারকম প্রজাতির মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ছুটে চলছে। ফুলে মৌ-মাছির বিচ্ছুরণ দেখে মাদ্রাসায় পড়ুয়া দুই কোমলমতি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সূর্যমুখী ফুল দেখে আনন্দিত হয়ে বাড়িতে রেখে দেওয়ার জন্য সূর্যমুখী ফুল ছেড়ে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে।
টাঙ্গাইল খামার বাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ২৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু অজিত হয়েছে ১৮০ হেক্টর, জেলায় মোট ১৮০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ হয়েছে।
এবছর ৮০ হেক্টর জমিতে ৬শ জন কৃষকে প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। গত বছর ৪৪২ মেট্রিকটন সূর্যমুখীর বীজের ফলন পেলেও এ বছর ১৮০ হেক্টর জমি থেকে ৪৫০ মেট্রিকটন সূর্যমুখীর বীজের ফলন পাব বলে আশা করছি।
তিনি আরও জানান, এ বছর জেলায় সূর্যমুখী বেশির ভাগই চাষ করা হাইব্রিড জাতের এবং বাংলাদেশ গবেষণাগার থেকে বারি-১৪ সূর্যমুখীর উৎপাদন বেশি হয়। আর তেলের পরিমাণও বেশি থাকে। সব দিক বিবেচনা করে তেলের চাহিদা পূরণ করে।