রাজশাহী : রাস্তার উপরে ট্রাক ভর্তি আলু এভাবেই সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে -সংবাদ
গত মৌসুমে আলুর দাম ভালো থাকায় এবার অনেকেই আলু চাষ করেছিল। ভালো লাভের আশায় চাষীরা আলু চাষে নামলেও এবার দামের চিত্রটা যেন আলাদা। আলু উত্তোলনের শুরুতেই উত্তরাঞ্চল জুড়ে শুরু হয়েছে দামে ধস। এবার আলুর দাম একেবারেই কম। জমিতে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা কেজি দামে।
ভুক্তভোগী আলুচাষিরা বলছেন, দু’চার বছরের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে আলুর দাম এতটা কমেনি। এ বছর আলুর দামে কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ফলে উৎপাদিত আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের আলুচাষিরা। ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা না পারছে জমি থেকে আলু বিক্রি করতে। আবার অগ্রিম বুকিং না থাকায় হিমাগারেও রাখতে পারছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২৭ টন হিসাবে উক্ত জমিতে এবার প্রায় ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী জেলার মধ্যে রয়েছে রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর।
ভুক্তভোগী আজাদ রহমান জানান, গত বছর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া ছিল চার টাকা। এবার এক লাফে সংরক্ষণ ভাড়া বাড়িয়ে আট টাকা করা হয়েছে।
এ বছর আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানোর আন্দোলনের কারণে অধিকাংশ সাধারণ কৃষক আলু রাখার জন্য হিমাগারে কোনো বুকিং সংগ্রহ করতে পারেনি। এখন জমি থেকে আলু তুুলে সাধারণ কৃষক না পারছে হিমাগারে দিতে না পারছে বাড়িতে রাখতে। ফলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পানির দামে আলু কিনে নিচ্ছে জমি থেকে। অসহায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তানোরের রাতইল গ্রামের সামশুদ্দিন বলেন, এবার আবাদ মৌসুমে বীজ আলুর দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এক বিঘা জমিতে আলু আবাদে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এক বিঘা জমিতে এবার তার আলু হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ কেজি। প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বিঘায় এবার তার লোকসান দাঁড়াচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলে আলু আবাদের ঋণ পরিশোধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
মোহনপুরের নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের আলুচাষি আব্দুস সামাদ বলেন, রাজশাহীর সাধারণ আলুচাষিরা এবার হিমাগারে কোনো বুকিং পায়নি। আমরা গত কয়েক মাস ধরে বুকিং পেতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলে আলু সংরক্ষণের ২২১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ধারণক্ষমতা ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। যা উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত মোট আলুর মাত্র ২৩ ভাগ। বাকি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ২৮৮ টন আলু সাময়িকভাবে গৃহস্থ্য পর্যায়ে সংরক্ষণ এবং চলতি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, হিমাগারের ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিমাগারে বুকিং শুরু হয় আবাদ শুরুর অনেক আগেই। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর আগেই বুকিং হয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোতালেব হোসেন জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় এবার আলুর দাম কমে গেছে।
রাজশাহী : রাস্তার উপরে ট্রাক ভর্তি আলু এভাবেই সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে -সংবাদ
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
গত মৌসুমে আলুর দাম ভালো থাকায় এবার অনেকেই আলু চাষ করেছিল। ভালো লাভের আশায় চাষীরা আলু চাষে নামলেও এবার দামের চিত্রটা যেন আলাদা। আলু উত্তোলনের শুরুতেই উত্তরাঞ্চল জুড়ে শুরু হয়েছে দামে ধস। এবার আলুর দাম একেবারেই কম। জমিতে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা কেজি দামে।
ভুক্তভোগী আলুচাষিরা বলছেন, দু’চার বছরের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে আলুর দাম এতটা কমেনি। এ বছর আলুর দামে কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ফলে উৎপাদিত আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের আলুচাষিরা। ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা না পারছে জমি থেকে আলু বিক্রি করতে। আবার অগ্রিম বুকিং না থাকায় হিমাগারেও রাখতে পারছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২৭ টন হিসাবে উক্ত জমিতে এবার প্রায় ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী জেলার মধ্যে রয়েছে রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর।
ভুক্তভোগী আজাদ রহমান জানান, গত বছর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া ছিল চার টাকা। এবার এক লাফে সংরক্ষণ ভাড়া বাড়িয়ে আট টাকা করা হয়েছে।
এ বছর আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানোর আন্দোলনের কারণে অধিকাংশ সাধারণ কৃষক আলু রাখার জন্য হিমাগারে কোনো বুকিং সংগ্রহ করতে পারেনি। এখন জমি থেকে আলু তুুলে সাধারণ কৃষক না পারছে হিমাগারে দিতে না পারছে বাড়িতে রাখতে। ফলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পানির দামে আলু কিনে নিচ্ছে জমি থেকে। অসহায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তানোরের রাতইল গ্রামের সামশুদ্দিন বলেন, এবার আবাদ মৌসুমে বীজ আলুর দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এক বিঘা জমিতে আলু আবাদে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এক বিঘা জমিতে এবার তার আলু হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ কেজি। প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বিঘায় এবার তার লোকসান দাঁড়াচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলে আলু আবাদের ঋণ পরিশোধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
মোহনপুরের নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের আলুচাষি আব্দুস সামাদ বলেন, রাজশাহীর সাধারণ আলুচাষিরা এবার হিমাগারে কোনো বুকিং পায়নি। আমরা গত কয়েক মাস ধরে বুকিং পেতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলে আলু সংরক্ষণের ২২১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ধারণক্ষমতা ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। যা উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত মোট আলুর মাত্র ২৩ ভাগ। বাকি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ২৮৮ টন আলু সাময়িকভাবে গৃহস্থ্য পর্যায়ে সংরক্ষণ এবং চলতি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, হিমাগারের ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিমাগারে বুকিং শুরু হয় আবাদ শুরুর অনেক আগেই। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর আগেই বুকিং হয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোতালেব হোসেন জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় এবার আলুর দাম কমে গেছে।