সিরাজগঞ্জ : হাটে গামছা নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতা -সংবাদ
সিরাজগঞ্জে ঈদ উপলক্ষে শাড়ী লুঙ্গীর পাশাপাশি গামছার হাটও জমে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন হাটে হামছা বিক্রি হলেও পাচিলা হাট গামছার জন্য বিখ্যাত। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার জেলার উল্লাপাড়া পাচিলাতে এই হাট বসে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এই হাট থেকে গামছা কিনে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, প্রতি হাটে প্রায় কোটি টাকার গামছা বিক্রি হয়। মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ব্যবসায়িক কারণে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন বাহারী রঙ্গের হরেক রকমের গামছা তৈরি করা হচ্ছে। যার সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। বাহারী রং আর শৈল্পীক কারণে এর জুড়ি মেলা ভার। এখানকার তাঁতীদের উৎপাদিত গামছা কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দুটি বিশাল গামছার হাট। দুর দুরান্তের পাইকাররা এখান থেকে গামছা কিনে নিয়ে যাচ্ছে সারাদেশে। যুগ যুগ ধরে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এ শিল্পকে ধরে রেখেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতীরা।
এ কাজে জীবন এবং জিবিকা চালাচ্ছে জেলার কয়েক হাজার তাঁতী। সিরাজগঞ্জের সদর, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পুরুষ ও নারী কারিগরারা তাঁতে গামছা বুনে। সকাল থেকে রাত অবধি এখানকার গ্রামগুলোতে তাঁতীদের গামছা বুনোনের খট খট শব্দে মুখর থাকে অবিরত। সকাল থেকে রাত অবধি চলে এই গামছা বুনন কাজ। যুগ যুগ ধরে বংশ পরস্পরায় তারা নিজ হাতে হরেক রকম সুতোয় এ গামছা বোনে। জেলায় কয়েক হাজার তাঁতীরা এ কাজের মাধ্যমেই চালায় তাদের জীবন জিবিকা। উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের পাঁচিল গামছা তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা।
এখানে প্রায় প্রতি বাড়িতেই গামছা বুননের দৃশ্য দেখা যায়। নারীরা সুতায় রং দেয়া, চরকায় সুতা কাটার পাশাপাশি পুরুষের সঙ্গে সমান তালে তাঁত বোনে। মহিলা তাঁত শ্রমিকেরা দৈনিক খটখটি তাঁতে গামছা বুনে মুজুরি পায় ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। অন্যদিকে একজন তাঁত শ্রমিক দিনে পাওয়ারলুমে ৮-১০ থান গামছা বুনতে পারে। একথান (৪ পিস) গামছা বুনে শ্রমিকেরা পারিশ্রমিক পায় ৫ থেকে সাড়ে ৫শত টাকা।
পাচিলা গ্রামের তাঁতী আনছার আলী জানান, তাঁত বুনে যে পারিশ্রমিক পাওয়া যায় তাতে সংসার চালানো কঠিন। তবুও আমরা এ পেশা ধরে আছি। এটা ছাড়া আমরা বিকল্প কোন কাজ জানি না। তাই বাধ্য হয়ে এটা ধরেই আছি। একাধিক তাঁতী জানায়, দফায় দফায় রং সুতার অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এ কাজে তেমন একটা লাভবান হতে পারছে না। তবুও ঐতিহ্য ধরে তারা এ পেশায় রয়েছেন। বাড়ির পাশে হাট খুব সহজেই তাঁতীরা তাদের গামছা বিক্রি করে। এ হাটে চলে লাখ লাখ টাকার গামছা বেচা কেনা। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী এই হাট। বেলকুচির গামছা হাটে ঢাকার পাইকারী মহাজন শফিকুল ও কাজিপুরের আমিনুর জানান, ২০ বছর ধরে এ হাটে গামছা কিনে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। এখন গামছার বাজার একটু ভাল। গত সপ্তাহে প্রতি থান (৪ পিস) ৩৫০ টাকায় কিনেছি। এ সপ্তাহে সেই গামছা ৪শ টাকা করে কিনতেছি। তাঁতকুঞ্জ হিসেবে খ্যাত জেলার গামছা মিলের মালিক সবুর আলী বলেন এক সময় গামছা বুনে তারা লাভবান হলেও রং সুতার দাম বৃদ্ধিতে তারা এখন তেমন একটা লাভবান হচ্ছে না।
পাচিলা এলাকার তাঁত ব্যবসায়ী আলহাজ্ব ইদ্রিস আলী জানান, সিরাজগঞ্জের গামছা উন্নত মানের হওয়ায় এখানকার গামছার কদর রয়েছে দেশব্যাপী। প্রতি হাটে ৮০ লাখ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার গামছা বিক্রি হয়। হাইওয়ে রাস্তার পাশে এই হাটের অবস্থান হওয়ায় সারাদেশ থেকে পাইকাররা এসে গামছা কিনে নিয়ে যায়।
সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি লিখন সরকার জানান, নিউমার্কেটে গামছার দোকান সহ মোট দোকান রয়েছে ২৫০ টির মতো।
এখানে প্রতি সোমবার ও বৃস্পতিবারে গামছা ও লুুঙ্গির হাট বসে। রং ও সুতার দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জের তৈরি গামছা পাইকারি দরে বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা উল্লেখিত হাট বারে কিনে নিয়ে যায়। ঈদ উপলক্ষে কেনা বেচাও অনেকটাই ভালো। তিনি আরও জানান, অতিসম্প্রতি হাটে মহিলা পকেট মারের উপদ্রব অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিরাজগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারীভাবে রং সুতার দামের কমানোসহ ঋণ সহায়তার ব্যবস্থার দাবি জানান এলাকার ব্যবসায়ী মহল।
সিরাজগঞ্জ : হাটে গামছা নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতা -সংবাদ
বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
সিরাজগঞ্জে ঈদ উপলক্ষে শাড়ী লুঙ্গীর পাশাপাশি গামছার হাটও জমে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন হাটে হামছা বিক্রি হলেও পাচিলা হাট গামছার জন্য বিখ্যাত। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার জেলার উল্লাপাড়া পাচিলাতে এই হাট বসে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এই হাট থেকে গামছা কিনে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, প্রতি হাটে প্রায় কোটি টাকার গামছা বিক্রি হয়। মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ব্যবসায়িক কারণে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন বাহারী রঙ্গের হরেক রকমের গামছা তৈরি করা হচ্ছে। যার সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। বাহারী রং আর শৈল্পীক কারণে এর জুড়ি মেলা ভার। এখানকার তাঁতীদের উৎপাদিত গামছা কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দুটি বিশাল গামছার হাট। দুর দুরান্তের পাইকাররা এখান থেকে গামছা কিনে নিয়ে যাচ্ছে সারাদেশে। যুগ যুগ ধরে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এ শিল্পকে ধরে রেখেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতীরা।
এ কাজে জীবন এবং জিবিকা চালাচ্ছে জেলার কয়েক হাজার তাঁতী। সিরাজগঞ্জের সদর, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পুরুষ ও নারী কারিগরারা তাঁতে গামছা বুনে। সকাল থেকে রাত অবধি এখানকার গ্রামগুলোতে তাঁতীদের গামছা বুনোনের খট খট শব্দে মুখর থাকে অবিরত। সকাল থেকে রাত অবধি চলে এই গামছা বুনন কাজ। যুগ যুগ ধরে বংশ পরস্পরায় তারা নিজ হাতে হরেক রকম সুতোয় এ গামছা বোনে। জেলায় কয়েক হাজার তাঁতীরা এ কাজের মাধ্যমেই চালায় তাদের জীবন জিবিকা। উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের পাঁচিল গামছা তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা।
এখানে প্রায় প্রতি বাড়িতেই গামছা বুননের দৃশ্য দেখা যায়। নারীরা সুতায় রং দেয়া, চরকায় সুতা কাটার পাশাপাশি পুরুষের সঙ্গে সমান তালে তাঁত বোনে। মহিলা তাঁত শ্রমিকেরা দৈনিক খটখটি তাঁতে গামছা বুনে মুজুরি পায় ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। অন্যদিকে একজন তাঁত শ্রমিক দিনে পাওয়ারলুমে ৮-১০ থান গামছা বুনতে পারে। একথান (৪ পিস) গামছা বুনে শ্রমিকেরা পারিশ্রমিক পায় ৫ থেকে সাড়ে ৫শত টাকা।
পাচিলা গ্রামের তাঁতী আনছার আলী জানান, তাঁত বুনে যে পারিশ্রমিক পাওয়া যায় তাতে সংসার চালানো কঠিন। তবুও আমরা এ পেশা ধরে আছি। এটা ছাড়া আমরা বিকল্প কোন কাজ জানি না। তাই বাধ্য হয়ে এটা ধরেই আছি। একাধিক তাঁতী জানায়, দফায় দফায় রং সুতার অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এ কাজে তেমন একটা লাভবান হতে পারছে না। তবুও ঐতিহ্য ধরে তারা এ পেশায় রয়েছেন। বাড়ির পাশে হাট খুব সহজেই তাঁতীরা তাদের গামছা বিক্রি করে। এ হাটে চলে লাখ লাখ টাকার গামছা বেচা কেনা। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী এই হাট। বেলকুচির গামছা হাটে ঢাকার পাইকারী মহাজন শফিকুল ও কাজিপুরের আমিনুর জানান, ২০ বছর ধরে এ হাটে গামছা কিনে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। এখন গামছার বাজার একটু ভাল। গত সপ্তাহে প্রতি থান (৪ পিস) ৩৫০ টাকায় কিনেছি। এ সপ্তাহে সেই গামছা ৪শ টাকা করে কিনতেছি। তাঁতকুঞ্জ হিসেবে খ্যাত জেলার গামছা মিলের মালিক সবুর আলী বলেন এক সময় গামছা বুনে তারা লাভবান হলেও রং সুতার দাম বৃদ্ধিতে তারা এখন তেমন একটা লাভবান হচ্ছে না।
পাচিলা এলাকার তাঁত ব্যবসায়ী আলহাজ্ব ইদ্রিস আলী জানান, সিরাজগঞ্জের গামছা উন্নত মানের হওয়ায় এখানকার গামছার কদর রয়েছে দেশব্যাপী। প্রতি হাটে ৮০ লাখ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার গামছা বিক্রি হয়। হাইওয়ে রাস্তার পাশে এই হাটের অবস্থান হওয়ায় সারাদেশ থেকে পাইকাররা এসে গামছা কিনে নিয়ে যায়।
সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি লিখন সরকার জানান, নিউমার্কেটে গামছার দোকান সহ মোট দোকান রয়েছে ২৫০ টির মতো।
এখানে প্রতি সোমবার ও বৃস্পতিবারে গামছা ও লুুঙ্গির হাট বসে। রং ও সুতার দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জের তৈরি গামছা পাইকারি দরে বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা উল্লেখিত হাট বারে কিনে নিয়ে যায়। ঈদ উপলক্ষে কেনা বেচাও অনেকটাই ভালো। তিনি আরও জানান, অতিসম্প্রতি হাটে মহিলা পকেট মারের উপদ্রব অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিরাজগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারীভাবে রং সুতার দামের কমানোসহ ঋণ সহায়তার ব্যবস্থার দাবি জানান এলাকার ব্যবসায়ী মহল।