বেতাগী (বরগুনা) : জুতা মেরামত ও রং করার কাজে ব্যস্ত অনিল চন্দ্র ঋষিদাস -সংবাদ
দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কি রে? হাসবি তোরা, বাঁচবি তোরা, মরণ যদি আসেই ঘিরে....। এ চরণ দুটি অজয় ভট্টাচার্যের লেখা একটি আধুনিক গানের কলি। বাস্তব জীবনের সাথে এ কথাগুলো মিল রয়েছে। ঠিক এমন দুঃখে নিয়ে জীবন গড়া অনিলের গল্প।
বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য বাবার সঙ্গে জুতা সেলাই ও রং করার কাজ করেন। পুরো নাম অনিল চন্দ্র ঋষিদাস। তাঁর সাথে একান্ত আলোচনাকালে জানা-অজানা বিস্তারিত কথা।
পেটের দায়ে তাঁর বাবাই এ কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এভাবেই তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটে এখন বয়স ৬০ বছর । বিভিন্ন অসুখে-বিসুখে বয়স জীবন জর্জরিত । আজও তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ।
বেতাগী বাসস্ট্যান্ডে চৌ-মাথার পূর্ব পাশে বেতাগী-মির্জাগঞ্জ সড়কে পল্লী বিদ্যুতের সাব স্টেশনের সামনে ছোট একটা ঘরে বসে জুতা সেলাই আর কালি করার কাজ করেন অনিল চন্দ্র্র ঋষিদাস। বাড়ি পাশবর্তী উপজেলা মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী বাজারে । মাত্র ২ শতাংশ জমি থাকলেও ছোট্ট একটি টিনের ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন । তিনি জানান, দুঃখভরা জীবনের গল্পের পরতে পরতে কেবলই অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তা। ২০০৭ সালের ১২ মার্চ মা সুমিত্রা রানী এবং ওই একই বছর ৫ ডিসেম্বর বাবা হরিচরণ ঋষিদাস মারা যান। ৩ ভাই ও ১ বোনসহ ৪ ভাই-বোনের মধ্যে অনিল দ্বিতীয়। বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর বড়সহ অন্যরা সকলে পৃথক হয়ে যায়। সংসারের সকল দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে অনিলের ঘাড়ে। তার উর্পাজিত টাকায় স্ত্রী ও ২ ছেলেসহ ৪ সদস্যের সংসার চলে। জীবন সংগ্রামে অবিরাম কাজ করে চলছে।
অনিল জানায়, আমার বাবার তেমন কোনো সহায়-সম্পদ ছিল না। টাকার অভাবে আমরা চার ভাই- বোনের কেউই পড়ালেখা করতে পারিনি। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বাবা আমাদের এ কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। বাবার সঙ্গে জুতা সেলাই ও জুতায় কালি করা শিখে ফেলেছি। সেই ছোটবেলায় যে কাজ শুরু করেছি, তা আজও করে যাচ্ছি। বর্তমানে কেউ অর্ডার দিলে জুতা বানিয়ে দিতে পারি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায়।
গত ৭ বছর যাবত লিভার ও কিডনিতে সমস্যা রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে ৩ হাজার টাকার ঔষুধ খেতে হচ্ছে। এসব কাজ করে দিনে গড়ে ২০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন। এ টাকা দিয়ে তো সবদিন ভালো খাবার খাওয়া যায় না। বছরে এক-দুবার মাংস-ভাত খাই। বাকি দিনগুলো শাক-সবজি খেয়ে কাটিয়ে দেই। ইচ্ছে থাকলেও টানাপোড়েনের সংসারে জীবনে কখনো ভালো খাবার খেতে পারিনি আমরা। ছেলে-মেয়েগুলোর জন্য খুব কষ্ট হয়। কষ্টের কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন।
অনিলের বড় ছেলে অসিম ঋষিদাস (৩২) মাত্র ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এখন দিন মজুরের কাজ করছে দিনমজুরের কাজ করে। গত ৬ মাস পূর্বে বিবাহ করে সংসার থেকে আলাদা হয়ে যায়। ছোট ছেলে হৃদয় ঋষিদাস (২৬) মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা কওে প্রতিমা তৈরির শিল্পীদের সাথে সহকারি হিসেবে কাজ করছে। ধার-দেনা ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ গত তিন বছর পূর্বে মেয়ে সবিতা বিবাহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাঁচ বছর পূর্বে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সন্ধ্যার পরে বেতাগী বাসস্ট্যান্ডে তাঁর দোকানের পাশে তৈল ও পেট্রোলের দোকানে আগুন লেগে তাঁর দোকানও সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
অনিল জানায়,’ গত ৩০ বছর বেতাগী লঞ্চঘাটে এবং ১৫ বছর বাসস্ট্যান্ডে দোকান করি। টাকার অভাবে নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি, এখন আমার ছেলে-মেয়েদেরকের লেখাপড়া শেখাতে পারি নাই। বাবা হিসেবে নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হয়। তিনি আরো জানান,’ বাবা মা মারা যাওয়ার পর সংকট আরো বেড়ে যায়। এরই মধ্যে ঋণ ও ধারদেনা করে মেয়ে বিয়ে এবং নিজের অসুখে এখন অনেক টাকা ঋণী হয়েছি। বর্তমানে কাজ কম থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছি।’
সাবেক প্যানেল মেয়র মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন,‘ সরকারী সাহায্যে তাকে দেওয়া হবে। এছাড়া নিয়মানুসারে তাকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।’
বেতাগী (বরগুনা) : জুতা মেরামত ও রং করার কাজে ব্যস্ত অনিল চন্দ্র ঋষিদাস -সংবাদ
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কি রে? হাসবি তোরা, বাঁচবি তোরা, মরণ যদি আসেই ঘিরে....। এ চরণ দুটি অজয় ভট্টাচার্যের লেখা একটি আধুনিক গানের কলি। বাস্তব জীবনের সাথে এ কথাগুলো মিল রয়েছে। ঠিক এমন দুঃখে নিয়ে জীবন গড়া অনিলের গল্প।
বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য বাবার সঙ্গে জুতা সেলাই ও রং করার কাজ করেন। পুরো নাম অনিল চন্দ্র ঋষিদাস। তাঁর সাথে একান্ত আলোচনাকালে জানা-অজানা বিস্তারিত কথা।
পেটের দায়ে তাঁর বাবাই এ কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এভাবেই তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটে এখন বয়স ৬০ বছর । বিভিন্ন অসুখে-বিসুখে বয়স জীবন জর্জরিত । আজও তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ।
বেতাগী বাসস্ট্যান্ডে চৌ-মাথার পূর্ব পাশে বেতাগী-মির্জাগঞ্জ সড়কে পল্লী বিদ্যুতের সাব স্টেশনের সামনে ছোট একটা ঘরে বসে জুতা সেলাই আর কালি করার কাজ করেন অনিল চন্দ্র্র ঋষিদাস। বাড়ি পাশবর্তী উপজেলা মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী বাজারে । মাত্র ২ শতাংশ জমি থাকলেও ছোট্ট একটি টিনের ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন । তিনি জানান, দুঃখভরা জীবনের গল্পের পরতে পরতে কেবলই অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তা। ২০০৭ সালের ১২ মার্চ মা সুমিত্রা রানী এবং ওই একই বছর ৫ ডিসেম্বর বাবা হরিচরণ ঋষিদাস মারা যান। ৩ ভাই ও ১ বোনসহ ৪ ভাই-বোনের মধ্যে অনিল দ্বিতীয়। বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর বড়সহ অন্যরা সকলে পৃথক হয়ে যায়। সংসারের সকল দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে অনিলের ঘাড়ে। তার উর্পাজিত টাকায় স্ত্রী ও ২ ছেলেসহ ৪ সদস্যের সংসার চলে। জীবন সংগ্রামে অবিরাম কাজ করে চলছে।
অনিল জানায়, আমার বাবার তেমন কোনো সহায়-সম্পদ ছিল না। টাকার অভাবে আমরা চার ভাই- বোনের কেউই পড়ালেখা করতে পারিনি। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বাবা আমাদের এ কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। বাবার সঙ্গে জুতা সেলাই ও জুতায় কালি করা শিখে ফেলেছি। সেই ছোটবেলায় যে কাজ শুরু করেছি, তা আজও করে যাচ্ছি। বর্তমানে কেউ অর্ডার দিলে জুতা বানিয়ে দিতে পারি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায়।
গত ৭ বছর যাবত লিভার ও কিডনিতে সমস্যা রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে ৩ হাজার টাকার ঔষুধ খেতে হচ্ছে। এসব কাজ করে দিনে গড়ে ২০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন। এ টাকা দিয়ে তো সবদিন ভালো খাবার খাওয়া যায় না। বছরে এক-দুবার মাংস-ভাত খাই। বাকি দিনগুলো শাক-সবজি খেয়ে কাটিয়ে দেই। ইচ্ছে থাকলেও টানাপোড়েনের সংসারে জীবনে কখনো ভালো খাবার খেতে পারিনি আমরা। ছেলে-মেয়েগুলোর জন্য খুব কষ্ট হয়। কষ্টের কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন।
অনিলের বড় ছেলে অসিম ঋষিদাস (৩২) মাত্র ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এখন দিন মজুরের কাজ করছে দিনমজুরের কাজ করে। গত ৬ মাস পূর্বে বিবাহ করে সংসার থেকে আলাদা হয়ে যায়। ছোট ছেলে হৃদয় ঋষিদাস (২৬) মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা কওে প্রতিমা তৈরির শিল্পীদের সাথে সহকারি হিসেবে কাজ করছে। ধার-দেনা ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ গত তিন বছর পূর্বে মেয়ে সবিতা বিবাহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাঁচ বছর পূর্বে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সন্ধ্যার পরে বেতাগী বাসস্ট্যান্ডে তাঁর দোকানের পাশে তৈল ও পেট্রোলের দোকানে আগুন লেগে তাঁর দোকানও সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
অনিল জানায়,’ গত ৩০ বছর বেতাগী লঞ্চঘাটে এবং ১৫ বছর বাসস্ট্যান্ডে দোকান করি। টাকার অভাবে নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি, এখন আমার ছেলে-মেয়েদেরকের লেখাপড়া শেখাতে পারি নাই। বাবা হিসেবে নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হয়। তিনি আরো জানান,’ বাবা মা মারা যাওয়ার পর সংকট আরো বেড়ে যায়। এরই মধ্যে ঋণ ও ধারদেনা করে মেয়ে বিয়ে এবং নিজের অসুখে এখন অনেক টাকা ঋণী হয়েছি। বর্তমানে কাজ কম থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছি।’
সাবেক প্যানেল মেয়র মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন,‘ সরকারী সাহায্যে তাকে দেওয়া হবে। এছাড়া নিয়মানুসারে তাকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।’