মুন্সীগঞ্জ : আলুর বাম্পার ফলন, কিন্তু বাজারে দাম কম এবং হিমাগারে জায়গা সংকট। আলু নিয়ে বিপদে কৃষকরা -সংবাদ
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে অন্য বছরের তুলনায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কম এবং হিমাগারে জায়গা না থাকায় বিপদে পড়েছেন কৃষক। দিনের পর দিন আলুবোঝাই ট্রাক, লরি, ট্রলি নিয়ে হিমাগারের সামনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকলেও জায়গা পাচ্ছেন না। এতে হতাশায় ভুগছেন উপজেলার কৃষক। হিমাগার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার তাদের সক্ষমতার তুলনায় আলুর ফলন হয়েছে বেশি।
নদী পথে উপজেলার হাসাইল, দিঘিরপাড়, কামারখাড়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, আলু নিয়ে সারিবদ্ধ ট্রলারে কয়েক দিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন কৃষক। হিমাগারে যাওয়া গাড়ি ফের ঘাটে আসতে দিন পার হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরাও অলস সময় পার করছে। এতে কৃষকের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রলারচালক, শ্রমিক ও গাড়িচালক।
কৃষক বলছেন, গাড়ি না পাওয়ায় দিনের পর দিন ঘাটেই আলু নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এতে গরমে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্টোর মালিকরা ইচ্ছা করেই শ্রমিক কম নিয়া তাদের ভোগান্তিতে ফেলছে বলে অভিযোগ তাদের। আর ট্রলারচালকের ভাষ্য, একবার পণ্য নিয়ে যদি ঘাটে বসে থাকেন, তাহলে যে টাকা আয় হবে, সে টাকা এখানেই শেষ করে খালি হাতে বাড়ি যেতে হবে। আগে হিমাগারের ভাড়া ২০০ টাকা হলেও এখন ৪০০ টাকা হয়েছে জানিয়ে আলদি গ্রামের কৃষক ওয়াজল শিকদার বলেন, আলু ১০-১২ টাকা কেজি। কৃষক কয় টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে, সরকার তা নির্ধারণ করে দিল না কেন? হিমাগারের ভাড়া বেশি হয়ে গেছে। আর কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার দুলাল মন্ডলের ভাষ্য, ‘আগে যা ভাড়া রাখতাম, তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। এ কারণে এ মৌসুমে ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।’
ঘাটের শ্রমিক বলছেন, সকালে এক গাড়ি পণ্য উঠালে তিন ঘণ্টা পর ফেরে। এতে বেকার সময় কাটাতে হয় তাদের। আলু নামাতে না পারায় গাড়িচালকরাও সমস্যায় পড়ছেন। তারা জানান, পণ্য নিয়ে স্টোরে গেলে মালিকরা বলে, জায়গা নেই। পণ্য নিয়ে আসতে নিষেধ করেন তারা। এক গাড়ি পণ্য নিয়ে হিমাগারে গেলে তা নামিয়ে আসতে রাত হয়ে যায়। সারাদিন এক গাড়ি পণ্য নামালে খরচও ওঠে না। একজনের ভাষ্য, ‘আমাদেরও তো সংসার আছে।’
১৩ হাজার টন আলু রাখার জায়গা রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কোল্ড স্টোরেজে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে ৯ হাজার টন আলু রাখা হয়েছে। স্টোর প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। হয়তো আর দু-একদিন নেয়া যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ২৮টি হিমাগারের মধ্যে ২৬টি সচল রয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার ৭ টন আলু হিমাগারগুলোয় তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘হিমাগারের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের ভাড়া পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’
কর্তৃপক্ষ বলছে, হিমাগার সমিতি থেকে দেশব্যাপী কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও মুন্সীগঞ্জে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম বলেন, ‘খরচটা বেশি হয়ে গেছে। তারাও তাদের সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা কোনো সহায়তা করতে পারি কিনা, সে চেষ্টা চলছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলার আলু চাষিরা সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি আশু হস্তক্ষেপ ও নজরদারী কামনা করছেন।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে হিমাগারে আলু রাখার জন্য সরাসরি ট্রলি, ভ্যান, ও পিকআপ নিয়ে ব্যস্ত কৃষকরা।
মুন্সীগঞ্জ : আলুর বাম্পার ফলন, কিন্তু বাজারে দাম কম এবং হিমাগারে জায়গা সংকট। আলু নিয়ে বিপদে কৃষকরা -সংবাদ
শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে অন্য বছরের তুলনায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কম এবং হিমাগারে জায়গা না থাকায় বিপদে পড়েছেন কৃষক। দিনের পর দিন আলুবোঝাই ট্রাক, লরি, ট্রলি নিয়ে হিমাগারের সামনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকলেও জায়গা পাচ্ছেন না। এতে হতাশায় ভুগছেন উপজেলার কৃষক। হিমাগার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার তাদের সক্ষমতার তুলনায় আলুর ফলন হয়েছে বেশি।
নদী পথে উপজেলার হাসাইল, দিঘিরপাড়, কামারখাড়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, আলু নিয়ে সারিবদ্ধ ট্রলারে কয়েক দিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন কৃষক। হিমাগারে যাওয়া গাড়ি ফের ঘাটে আসতে দিন পার হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরাও অলস সময় পার করছে। এতে কৃষকের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রলারচালক, শ্রমিক ও গাড়িচালক।
কৃষক বলছেন, গাড়ি না পাওয়ায় দিনের পর দিন ঘাটেই আলু নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এতে গরমে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্টোর মালিকরা ইচ্ছা করেই শ্রমিক কম নিয়া তাদের ভোগান্তিতে ফেলছে বলে অভিযোগ তাদের। আর ট্রলারচালকের ভাষ্য, একবার পণ্য নিয়ে যদি ঘাটে বসে থাকেন, তাহলে যে টাকা আয় হবে, সে টাকা এখানেই শেষ করে খালি হাতে বাড়ি যেতে হবে। আগে হিমাগারের ভাড়া ২০০ টাকা হলেও এখন ৪০০ টাকা হয়েছে জানিয়ে আলদি গ্রামের কৃষক ওয়াজল শিকদার বলেন, আলু ১০-১২ টাকা কেজি। কৃষক কয় টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে, সরকার তা নির্ধারণ করে দিল না কেন? হিমাগারের ভাড়া বেশি হয়ে গেছে। আর কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার দুলাল মন্ডলের ভাষ্য, ‘আগে যা ভাড়া রাখতাম, তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। এ কারণে এ মৌসুমে ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।’
ঘাটের শ্রমিক বলছেন, সকালে এক গাড়ি পণ্য উঠালে তিন ঘণ্টা পর ফেরে। এতে বেকার সময় কাটাতে হয় তাদের। আলু নামাতে না পারায় গাড়িচালকরাও সমস্যায় পড়ছেন। তারা জানান, পণ্য নিয়ে স্টোরে গেলে মালিকরা বলে, জায়গা নেই। পণ্য নিয়ে আসতে নিষেধ করেন তারা। এক গাড়ি পণ্য নিয়ে হিমাগারে গেলে তা নামিয়ে আসতে রাত হয়ে যায়। সারাদিন এক গাড়ি পণ্য নামালে খরচও ওঠে না। একজনের ভাষ্য, ‘আমাদেরও তো সংসার আছে।’
১৩ হাজার টন আলু রাখার জায়গা রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কোল্ড স্টোরেজে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে ৯ হাজার টন আলু রাখা হয়েছে। স্টোর প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। হয়তো আর দু-একদিন নেয়া যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ২৮টি হিমাগারের মধ্যে ২৬টি সচল রয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার ৭ টন আলু হিমাগারগুলোয় তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘হিমাগারের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের ভাড়া পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’
কর্তৃপক্ষ বলছে, হিমাগার সমিতি থেকে দেশব্যাপী কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও মুন্সীগঞ্জে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম বলেন, ‘খরচটা বেশি হয়ে গেছে। তারাও তাদের সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা কোনো সহায়তা করতে পারি কিনা, সে চেষ্টা চলছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলার আলু চাষিরা সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি আশু হস্তক্ষেপ ও নজরদারী কামনা করছেন।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে হিমাগারে আলু রাখার জন্য সরাসরি ট্রলি, ভ্যান, ও পিকআপ নিয়ে ব্যস্ত কৃষকরা।