alt

সারাদেশ

ব্যস্ততা নেই খোকসার কামারপাড়ায়

প্রতিনিধি, খোকসা (কুষ্টিয়া) : শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

খোকসা (কুষ্টিয়া) : কামারপাড়ায় দিন-রাত লোহা পেটানোয় ব্যস্ত কারিগররা -সংবাদ

ঈদ এলেই ব্যস্ততা বেড়ে যেতো কামার পাড়ায়। দিন-রাত লোহা পেটানোর শব্দ। ঘুমে ব্যঘাত হত প্রতিবেশীদের। দিন পাল্টেছে। এখন আর ব্যস্ততা নেই কামার পাড়ায়। অনেকেই পেশা ছেড়েছেন। কিন্তু শচীন কর্মকার, সুদেব কর্মকার ও সুকুমার কর্মকার সহোদর পেশা ছাড়েনি। তবে তারা আর আগামী প্রজন্মকে লোহা পেটানোর ব্যবসায় আনতে চান না।

সূত্র মতে কুষ্টিয়ার খোকসার ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে মানিকাট, কমলাপুর, আজইল, ভবানীগঞ্জ, উথলি, মামুদানীপুরসহ ১০টি গ্রামে প্রায় ৭ শত পরিবার কৃষি ও ঘর গৃহস্থালীর কাজে দা, কাঁচি, কুড়াল, বটিসহ নানা পদের জিনিষপত্র তৈরি করে দুধে মাছে চলতো। কিন্তু লোহা পিটে যন্ত্র বানোর মত কঠিন কাজ এখন আর কেউ করতে চায় না। এ ছাড়া স্পাত লোহা ও কয়লা সংকট রয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও ঈদ উৎসব এলে পাইকাররা গ্রামে গ্রামে এসে দিনের পর দিন মালের জন্য অপেক্ষা করতেন।

জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের মামুদানীপুর কামার সম্প্রদায়ের ১৪ থেকে ১৫টি পরিবারের সববাস ছিল। এই গ্রামের লোহার কর্মকারদের তৈরী দা, কাঁচি, কুড়াল, বটি, খুন্তা (মাটিতে গর্ত করার যন্ত্র) এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হতো। স্পাত লোহা, কয়লা ও শ্রমিকের সংকটে অনেকেই লোহার কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় পাড়ি জমিয়েছে।

তবে পেশা বদলাতে পারেনি মামুদানিপুর গ্রামের মৃত তারাপদ কর্মকারের তিন ছেলে শচীন কর্মকার, সুদেব কর্মকার ও সুকুমার কর্মকার। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও চার পুরুষের ব্যবসা ধরে রেখেছেন। ঘর গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহারের দা, বোটি কাচি তৈরী ও মেরামতের কাজ করে তাদের তিন ভাইয়ের ১২ জনের পৃথক পরিবার চলছে। ছেলে সন্তানদের লেখা পড়া করাচ্ছেন। তবে আগামী প্রজন্মকে আর এই পেশায় আনতে চান না।

পাইকপাড়া ফুলতলা থেকে ফুলবাড়ি বাজারে যেতেই মামুদানীপুর। পাকা রাস্তার পাশে বিশাল বটগাছের নিচে সাড়ে সাড়ে কয়েকটা জীর্ণশীর্ন ঘর দাঁড়িয়ে আছে। শনখড়ে দিয়ে পুরু করে ছাউনি দেওয়া একটি ঘরে কর্মব্যস্ত কয়েকজন মানুষ। লোহা পেটার টুংটাং শব্দের সাথে হাফরের (বাতাস দেওয়ার যন্ত্র) বাতাসের ফুস ফাঁস শব্দ রাস্তা থেকেই পাওয়া যাচ্ছিলো। একমনে কাজ করেছেন তিনজন। পাশে চড়াটের উপর বসে গল্প করছিল কাজ দিতে আসা অপেক্ষায় থাকা কৃষকেরা।

পৈত্রিক ব্যবসার প্রধান কারিগর শচীন কর্মকার। খুবই কম কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন সবার ছোট সুকুমার কর্মকার। সামান্য কিছু জমির ফসল আর ব্যবসার আয় দিয়ে তারে তিন ভাইয়ের তিনটি সংসার চলে। আগে ঈদের এক মাস আগে থেকে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেত। এখন আর তেমন ব্যস্ততা নেই। সারা বছর ঘর গৃস্থালি ও কৃষকের দা কাঁচি তৈরী ও মেরামত করে থাকেন।

তাদের পাশেই জীর্ণদশাগ্রস্থ ঘরে কাজ করছিলেন পাশের গ্রাম ফুলবাড়ির ভম্বল কর্মকারের ছেলে বিপ্লব কর্মকার। মাঠে ৬শতক জমি তার পূঁজি। থাকেন পরের জমিতে ঘর করে। এই ব্যবসা করেই জীবিকা চলে।

সুদেব কর্মকার ঘরের এক কোনে বসে কাঁচিতে ধার তুলছিলেন। তিনি জানান, আগে ঈদ-পূজা এলেই কর্মব্যস্ততায় তাদের চোখের ঘুম বন্ধ হয়ে যেতো। এখন আর তেমন কাজ হয় না। কারখানায় তৈরী রেডিমেট দা কাচি বটির উপর মানুষের ঝোঁক বেশী। লোহার কাজ তাদের পূর্ব পুরুষেরাও করতে। এই গ্রামে ১৪/১৫ ঘর কর্মকার সম্পদায়ের লোক বসবাস করতো। স্পাত লোহা, শ্রমিক ও মূলধন না মেলায় সবাই পেশা ছেড়েছে। তাদের তিন ভাইয়ের বিকল্প পেশা না থাকায় গ্রামে শুধু তারাই এই ব্যবসা করছেন। তবে ছেলেদের আর এই ব্যবসায় আনতে চান না।

ছবি

ঈদের দিনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ঝরল ৫ প্রাণ

ছবি

লালমনিরহাটে ‘ঢেকে রাখা’ মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ভাঙল প্রশাসন

বগুড়ায় বিষাক্ত মদ খেয়ে ২ জনের মৃত্যৃ, অসুস্থ্য ২

ছবি

গফরগাঁওয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ঈদগাহ মাঠে ১৪৪ ধারা

জামালপুরে সরকারি পুকুর থেকে মাছ চুরি, বিএনপি নেতার নামে মামলা, দল থেকে অব্যাহতি

ছবি

বরগুনায় শেখ হাসিনার নামে ঈদসামগ্রী বিতরণ, বিএনপির বিক্ষোভ

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদ্‌যাপন

ছবি

ময়মনসিংহে বাস চাপায় একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে জামালপুরের ১৬ গ্রামে ঈদ উদ্‌যাপন

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে বৌলাই নদীতে নৌকাডুবি নিহত-৪ আহত-১০

ছবি

চট্টগ্রামে প্রাইভেট কার থামিয়ে গুলি: নিহত ২, আহত ২

ছবি

সাইকেলে চরে শরণখোলায় এলেন নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত

ছবি

পলাশে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ

ছবি

ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটক-দর্শনার্থীদের বরণে প্রস্তুত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে মামলা

নাসিরনগরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অটোচালকের মৃত্যু

ছবি

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৩৯.৮ ডিগ্রি, বইছে মাঝারি তাপপ্রবাহ

দোহারে দুস্থ অসহায় পরিবারে মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ

ঈদে মিলল না রসিকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ফরিদ আহাম্মেদের গ্রাচুয়িটিসহ অন্য পাওনা

ঈদে বান্দরবানে ৮০ শতাংশ হোটেল বুকিংসম্পন্ন, হতাশ থানচি-রুমার ব্যবসায়ীরা

মেহেন্দিগঞ্জে নোঙর করা লঞ্চে আগুন

চট্টগ্রামে সাবেক এমপিপুত্র গ্রেপ্তার

ঈদ উপলক্ষে বরিশালমুখি জনস্রোত শুরু হলেও গুটিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলো

ছবি

বীরগঞ্জে ঈদের ছুটিতেও বেচাকেনা জমজমাট, ভিড় বাড়ছে ফুটপাতে

জুলাই-আগস্টে শহীদ ও আহত পরিবারের মাঝে চেক প্রদান

ঘোড়াঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বালু ব্যবসায়ী দণ্ডিত

ছবি

মীরসরাইয়ে ২০ কৃষকের সূর্যমুখী চাষে সফলতা

ট্রেনে-বাসে চট্টগ্রাম নগরী ছাড়ছে মানুষ

ছবি

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট নেই

ছবি

গাজীপুরের সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গী শিক্ষার্থীরা

তরুলতা রক্তদান সংগঠনের ইফতার সামগ্রী বিতরণ

স্বেচ্ছাসেবক দলের ২ নেতার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ

ছুটির দিনে বেতন উত্তোলন করতে পেরে খুশি শিক্ষকরা

গৌরীপুরে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, চালক আহত

টানা ৪০ দিন জামাতে নামাজ আদায় করে পুরস্কার পেল ২১ কিশোর-তরুণ

নন্দীগ্রামে বাস চাপায় শিক্ষিকা নিহত

tab

সারাদেশ

ব্যস্ততা নেই খোকসার কামারপাড়ায়

প্রতিনিধি, খোকসা (কুষ্টিয়া)

খোকসা (কুষ্টিয়া) : কামারপাড়ায় দিন-রাত লোহা পেটানোয় ব্যস্ত কারিগররা -সংবাদ

শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

ঈদ এলেই ব্যস্ততা বেড়ে যেতো কামার পাড়ায়। দিন-রাত লোহা পেটানোর শব্দ। ঘুমে ব্যঘাত হত প্রতিবেশীদের। দিন পাল্টেছে। এখন আর ব্যস্ততা নেই কামার পাড়ায়। অনেকেই পেশা ছেড়েছেন। কিন্তু শচীন কর্মকার, সুদেব কর্মকার ও সুকুমার কর্মকার সহোদর পেশা ছাড়েনি। তবে তারা আর আগামী প্রজন্মকে লোহা পেটানোর ব্যবসায় আনতে চান না।

সূত্র মতে কুষ্টিয়ার খোকসার ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে মানিকাট, কমলাপুর, আজইল, ভবানীগঞ্জ, উথলি, মামুদানীপুরসহ ১০টি গ্রামে প্রায় ৭ শত পরিবার কৃষি ও ঘর গৃহস্থালীর কাজে দা, কাঁচি, কুড়াল, বটিসহ নানা পদের জিনিষপত্র তৈরি করে দুধে মাছে চলতো। কিন্তু লোহা পিটে যন্ত্র বানোর মত কঠিন কাজ এখন আর কেউ করতে চায় না। এ ছাড়া স্পাত লোহা ও কয়লা সংকট রয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও ঈদ উৎসব এলে পাইকাররা গ্রামে গ্রামে এসে দিনের পর দিন মালের জন্য অপেক্ষা করতেন।

জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের মামুদানীপুর কামার সম্প্রদায়ের ১৪ থেকে ১৫টি পরিবারের সববাস ছিল। এই গ্রামের লোহার কর্মকারদের তৈরী দা, কাঁচি, কুড়াল, বটি, খুন্তা (মাটিতে গর্ত করার যন্ত্র) এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হতো। স্পাত লোহা, কয়লা ও শ্রমিকের সংকটে অনেকেই লোহার কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় পাড়ি জমিয়েছে।

তবে পেশা বদলাতে পারেনি মামুদানিপুর গ্রামের মৃত তারাপদ কর্মকারের তিন ছেলে শচীন কর্মকার, সুদেব কর্মকার ও সুকুমার কর্মকার। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও চার পুরুষের ব্যবসা ধরে রেখেছেন। ঘর গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহারের দা, বোটি কাচি তৈরী ও মেরামতের কাজ করে তাদের তিন ভাইয়ের ১২ জনের পৃথক পরিবার চলছে। ছেলে সন্তানদের লেখা পড়া করাচ্ছেন। তবে আগামী প্রজন্মকে আর এই পেশায় আনতে চান না।

পাইকপাড়া ফুলতলা থেকে ফুলবাড়ি বাজারে যেতেই মামুদানীপুর। পাকা রাস্তার পাশে বিশাল বটগাছের নিচে সাড়ে সাড়ে কয়েকটা জীর্ণশীর্ন ঘর দাঁড়িয়ে আছে। শনখড়ে দিয়ে পুরু করে ছাউনি দেওয়া একটি ঘরে কর্মব্যস্ত কয়েকজন মানুষ। লোহা পেটার টুংটাং শব্দের সাথে হাফরের (বাতাস দেওয়ার যন্ত্র) বাতাসের ফুস ফাঁস শব্দ রাস্তা থেকেই পাওয়া যাচ্ছিলো। একমনে কাজ করেছেন তিনজন। পাশে চড়াটের উপর বসে গল্প করছিল কাজ দিতে আসা অপেক্ষায় থাকা কৃষকেরা।

পৈত্রিক ব্যবসার প্রধান কারিগর শচীন কর্মকার। খুবই কম কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন সবার ছোট সুকুমার কর্মকার। সামান্য কিছু জমির ফসল আর ব্যবসার আয় দিয়ে তারে তিন ভাইয়ের তিনটি সংসার চলে। আগে ঈদের এক মাস আগে থেকে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেত। এখন আর তেমন ব্যস্ততা নেই। সারা বছর ঘর গৃস্থালি ও কৃষকের দা কাঁচি তৈরী ও মেরামত করে থাকেন।

তাদের পাশেই জীর্ণদশাগ্রস্থ ঘরে কাজ করছিলেন পাশের গ্রাম ফুলবাড়ির ভম্বল কর্মকারের ছেলে বিপ্লব কর্মকার। মাঠে ৬শতক জমি তার পূঁজি। থাকেন পরের জমিতে ঘর করে। এই ব্যবসা করেই জীবিকা চলে।

সুদেব কর্মকার ঘরের এক কোনে বসে কাঁচিতে ধার তুলছিলেন। তিনি জানান, আগে ঈদ-পূজা এলেই কর্মব্যস্ততায় তাদের চোখের ঘুম বন্ধ হয়ে যেতো। এখন আর তেমন কাজ হয় না। কারখানায় তৈরী রেডিমেট দা কাচি বটির উপর মানুষের ঝোঁক বেশী। লোহার কাজ তাদের পূর্ব পুরুষেরাও করতে। এই গ্রামে ১৪/১৫ ঘর কর্মকার সম্পদায়ের লোক বসবাস করতো। স্পাত লোহা, শ্রমিক ও মূলধন না মেলায় সবাই পেশা ছেড়েছে। তাদের তিন ভাইয়ের বিকল্প পেশা না থাকায় গ্রামে শুধু তারাই এই ব্যবসা করছেন। তবে ছেলেদের আর এই ব্যবসায় আনতে চান না।

back to top