গাইবান্ধা : রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে লাকড়ি -সংবাদ
গাইবান্ধার রান্না ও অন্যান্যকাজে কাঠ,খড়ি ও লাকড়ি ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা ৪লাখ ৯৬হাজার ৫৪৩। মোট পরিবারের প্রায় ৭২ শতাংশই কাঠ-খড়ি দিয়ে জ্বালানি চাহিদা পূরন করে থাকে। এতে করে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশে ও বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী গাইবান্ধা জেলার মোট পরিবার সংখ্যা ৬লাখ ৯৭হাজার ৩২০টি। এরমধ্যে কাঠ-খড়ি-লাকড়ি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪লাখ ৯৬হাজার ৫৪৩, এলপিজি গ্যাস ব্যবহারকারী ৩৪হাজার ৯২২, বায়োগ্যাস ৬৫০, ইলেকট্রিসিটি ৫১১ ও ৩ শতাধিক পরিবার নানা কিছু ব্যবহার করে রান্না করে থাকেন। তবে রান্নায় জ্বালানি ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সুন্দরগগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলার মোট পরিবারের ৯৬ শতাংশই কাঠ-খড়ির উপর নির্ভরশীল। সবচেয়ে কম জ্বালানি ব্যবহার করে সাঘাটা উপজেলায় এবং এই উপজেলায় মোট পরিবারের ৫৭ শতাংশ কাঠ-খড়ির উপর নির্ভরশীল। গাইবান্ধা জেলায় এলপিজি ব্যবহার করে রান্নার কাজ করে ৫ শতাংশ পরিবার। সবচেয়ে বেশি এলপিজি ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা গাইবান্ধা সদর উপজেলায়। এই উপজেলার এলপিজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ শতাংশ। এছাড়াও ১৮.৪৪ শতাংশ পরিবার খড়, গাছপালার শুকনো পাতা, তুষ, ভুষি ব্যবহার করে থাকে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর কাপাসিয়া গ্রামের সালেহা বেগম জানান, অভাব-অনটনের সংসার জ্বালানি হিসেবে গাছের পাতা,খড়ি দিয়ে রান্না করে থাকি। এই গ্রামের মর্জিনা বেওয়া বলেন, জন্ম থেকেই দেখছে খড়ি দিয়ে রান্না করা হয়, আমরাও এভাবে করছি। তবে, জ্বালানিতে রান্নায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে তার কোন ধারনা নেই।
সাঘাটা উপজেলার হাসিলকান্দি গ্রামের সাবিনা বেগম বলেন, আর্থিক দন্যতা ও সুযোগ-সুবিধা না থাকায় রান্নায় জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি ব্যবহার করি। এতে করে তাপমাত্রায় অনেক সমস্যা কথা তার জানা থাকলে উপায়ন্তরহীন এই নারীর বিকল্প কিছু নেই বলে তিনি জানান।
এদিকে, সাঘাটা দক্ষিন দিঘলকান্দি চরের গ্রামের নুর ইসলাম প্রামানিক জানান, চলতি এপ্রিল মাসেই অধিক তাপমাত্রায় চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা বাড়ছে বলে তিনি জানান।
কালুরপাড়া গ্রামের মানিকজান বেওয়া বলেন, সারাদিন বিভিন্ন চরে খড়ি সংগ্র করে রান্নার জন্য যোগার করতে হয়। তবে এই দায়িত্বভার নারীদের বলে তিনি জানান। রান্নার ধোয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও কিছুই করার নেই এই মানিকজান বেওয়ার। কেননা চরে প্রেক্ষাপটে বিকল্প কিছু করার সামর্থ্য নেই। প্রায় ২০ বছর ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি জীবনযাপন করছেন।
এ প্রসংগে জ্বালানি গবেষক জিয়াউল হক মুক্তা জানান, যেকোন ধরণের তাপ ও ধোয়া জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে জ্বালানি হিসেবে কাঠ, খড়ি, লাকড়ি এগুলো থেকে যে ধরনের ধোয়া বের হয় তা পরিবেশ ও মানবজীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। এজন্য তিনি সৌরতাপ ব্যবহারের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
উন্নয়ন গবেষক ও গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান, দারিদ্রতা ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে গাইবান্ধার বেশিরভাগ পরিবারে রান্নায় জ্বালানি ব্যবহার করে। এতে করে সবচেয়ে বেশি নারীই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। এছাড়াও রান্না থেকে নির্গত কালো ধোয়া পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি জানান, জ্বালানিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে নারীর স্বাস্থ্যঝুকি হ্রাস পাবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড, আইনুন নিশাত জানান, পরিবেশ দুষনের কারণে এখন শান্তিমতো নিঃশ্বাস নিতে পারিনা। এরজন্য আমরাই দায়ী, পরিবেশ রক্ষায় আইন থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এজন্য তিনি আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরামর্শ প্রদান করেন।
গাইবান্ধা : রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে লাকড়ি -সংবাদ
রোববার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫
গাইবান্ধার রান্না ও অন্যান্যকাজে কাঠ,খড়ি ও লাকড়ি ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা ৪লাখ ৯৬হাজার ৫৪৩। মোট পরিবারের প্রায় ৭২ শতাংশই কাঠ-খড়ি দিয়ে জ্বালানি চাহিদা পূরন করে থাকে। এতে করে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশে ও বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী গাইবান্ধা জেলার মোট পরিবার সংখ্যা ৬লাখ ৯৭হাজার ৩২০টি। এরমধ্যে কাঠ-খড়ি-লাকড়ি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪লাখ ৯৬হাজার ৫৪৩, এলপিজি গ্যাস ব্যবহারকারী ৩৪হাজার ৯২২, বায়োগ্যাস ৬৫০, ইলেকট্রিসিটি ৫১১ ও ৩ শতাধিক পরিবার নানা কিছু ব্যবহার করে রান্না করে থাকেন। তবে রান্নায় জ্বালানি ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সুন্দরগগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলার মোট পরিবারের ৯৬ শতাংশই কাঠ-খড়ির উপর নির্ভরশীল। সবচেয়ে কম জ্বালানি ব্যবহার করে সাঘাটা উপজেলায় এবং এই উপজেলায় মোট পরিবারের ৫৭ শতাংশ কাঠ-খড়ির উপর নির্ভরশীল। গাইবান্ধা জেলায় এলপিজি ব্যবহার করে রান্নার কাজ করে ৫ শতাংশ পরিবার। সবচেয়ে বেশি এলপিজি ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা গাইবান্ধা সদর উপজেলায়। এই উপজেলার এলপিজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ শতাংশ। এছাড়াও ১৮.৪৪ শতাংশ পরিবার খড়, গাছপালার শুকনো পাতা, তুষ, ভুষি ব্যবহার করে থাকে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর কাপাসিয়া গ্রামের সালেহা বেগম জানান, অভাব-অনটনের সংসার জ্বালানি হিসেবে গাছের পাতা,খড়ি দিয়ে রান্না করে থাকি। এই গ্রামের মর্জিনা বেওয়া বলেন, জন্ম থেকেই দেখছে খড়ি দিয়ে রান্না করা হয়, আমরাও এভাবে করছি। তবে, জ্বালানিতে রান্নায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে তার কোন ধারনা নেই।
সাঘাটা উপজেলার হাসিলকান্দি গ্রামের সাবিনা বেগম বলেন, আর্থিক দন্যতা ও সুযোগ-সুবিধা না থাকায় রান্নায় জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি ব্যবহার করি। এতে করে তাপমাত্রায় অনেক সমস্যা কথা তার জানা থাকলে উপায়ন্তরহীন এই নারীর বিকল্প কিছু নেই বলে তিনি জানান।
এদিকে, সাঘাটা দক্ষিন দিঘলকান্দি চরের গ্রামের নুর ইসলাম প্রামানিক জানান, চলতি এপ্রিল মাসেই অধিক তাপমাত্রায় চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা বাড়ছে বলে তিনি জানান।
কালুরপাড়া গ্রামের মানিকজান বেওয়া বলেন, সারাদিন বিভিন্ন চরে খড়ি সংগ্র করে রান্নার জন্য যোগার করতে হয়। তবে এই দায়িত্বভার নারীদের বলে তিনি জানান। রান্নার ধোয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও কিছুই করার নেই এই মানিকজান বেওয়ার। কেননা চরে প্রেক্ষাপটে বিকল্প কিছু করার সামর্থ্য নেই। প্রায় ২০ বছর ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি জীবনযাপন করছেন।
এ প্রসংগে জ্বালানি গবেষক জিয়াউল হক মুক্তা জানান, যেকোন ধরণের তাপ ও ধোয়া জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে জ্বালানি হিসেবে কাঠ, খড়ি, লাকড়ি এগুলো থেকে যে ধরনের ধোয়া বের হয় তা পরিবেশ ও মানবজীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। এজন্য তিনি সৌরতাপ ব্যবহারের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
উন্নয়ন গবেষক ও গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান, দারিদ্রতা ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে গাইবান্ধার বেশিরভাগ পরিবারে রান্নায় জ্বালানি ব্যবহার করে। এতে করে সবচেয়ে বেশি নারীই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। এছাড়াও রান্না থেকে নির্গত কালো ধোয়া পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি জানান, জ্বালানিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে নারীর স্বাস্থ্যঝুকি হ্রাস পাবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড, আইনুন নিশাত জানান, পরিবেশ দুষনের কারণে এখন শান্তিমতো নিঃশ্বাস নিতে পারিনা। এরজন্য আমরাই দায়ী, পরিবেশ রক্ষায় আইন থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এজন্য তিনি আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরামর্শ প্রদান করেন।