চলতি খরা মৌসুমে তীব্র দাবদাহের কারনে জন জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে সকালে সূর্য উঠার পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে রোদের প্রখরতা। দুপুরে যেন সূর্য আগুন ঝরাচ্ছিল প্রকৃতিতে। কাজের জন্য মাঠে থাকা প্রাণগুলো যেন ক্লান্ত হয়ে উঠেছিল। রাস্তায় চলাচল করা মানুষের সংখ্যাও তুলনামুলক কমে গিয়েছিল। রাজশাহীসহ দেশের সাত জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৫ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও রাঙ্গামাটি জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
সারা দেশ দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রবিবার দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতে প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরদিন সোমবার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এ ছাড়া আগামী মঙ্গল ও বুধবার সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি. রাজশাহীতে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন তাপপ্রবাহে শুধু মানুষ নয়, সমস্ত প্রাণিকুলের যেন হাঁসফাঁস অবস্থা।
এদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে অতিরিক্ত খরা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। দিনদিন বাড়ছে তপ্ত-উত্তপ্ত বরেন্দ্রভূমির রুক্ষতার মাত্রা। বিশেষ করে এই অঞ্চলে পানি সঙ্কটের প্রভাবে জনজীবনে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশগত প্রতিকূলতা। দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তনে নির্ধারিত মৌসুমে এলাকার নদ-নদীতে পানি থাকছে না। বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে যাওয়া সেচকাজে ও ভূগর্ভস্থ পানির অধিক ব্যাবহার নগরীর সিংহভাগ পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়া ,সর্বপরি পদ্মা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় রাজশাহীর সবত্র বিরাজ করছে রুক্ষ আবহাওয়া । একই সাথে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যা্চ্ছে আশক্ষাজনক হারে ।
রাজশাহী অঞ্চলে নতুন সেচ নীতিমালা কর্যকর হয়েছে চলতি বছরের বোরো চাষ থেকে। প্রথম বছরের নীতিমালা কার্যকর করায় পানি সংকটে ১০ হাজারের ওপরে জমিতে চাষ করা সম্ভব হয়নি।
কৃষকরা বলছেন, পানি না পাওয়ার কারণে তারা এই চাষ করতে পারেননি। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে কমছে ধানের উৎপাদন। কৃষি বিভাগ বলছে, ধান চাষ কমলেও অন্য চাষ বাড়ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ মিলে রাজশাহী বিভাগের কৃষি অঞ্চল। এ অঞ্চলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে। তবে গতবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮৬৫ হেক্টর জমি বেশি বোরো ধান চাষ হয়। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে ধান চাষ হয় ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে।
এরমধ্যে রাজশাহী জেলাতে কমেছে এক হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। নওগাঁতে কমেছে ৫৪০ হেক্টর জমিতে, নাটোরে কমেছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমেছে ৪ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে।
বিএমডিএর তথ্য বলছে, পানি সংকটে থাকা আট উপজেলায় সংস্থাটির মোট তিন হাজার ৫৮৮টি সচল গভীর নলকুপ রয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৯৬০টি নলকুপ তীব্র পানি সংকটপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি নলকূপ ২৪-৪০ হেক্টর জমিতে পানি সেচ সরবরাহ করতে পারে।
বিএমডিএর নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্থিতিশীল রাখতে বছরে একটি গভীর নলকূপ মোট ১৯৬০ ঘণ্টা চালানো হবে। এরমধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত আসন্ন বোরো মৌসুমে একটি গভীর নলকূপ মোট ৯৮০ ঘণ্টা চলবে। ফলে এসব নলকূপের আওতাধীন জমিতে বোরো ধান চাষ অর্ধেক থেকে শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, ধান চাষ গত বছরের তুলনায় কমেছে। তবে এবার অধিক হারে সরিষা চাষ হয়েছে। মূলত এ কারণেই চাষ কিছুটা কমতে পারে। আশা করছি এগুলো সামনের আউশে এসে পূরণ হবে। তবে পানি সংকটে চাষ করতে পারছেন না এমনটি আমি শুনিনি। কৃষকরা তাদের ইচ্ছামতো চাষ করছেন। মূলত তারা এবার সরিষার কারণে ধান চাষ কম করেছেন। আগামীতে এটি পূরণ হয়ে যাবে।
রোববার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫
চলতি খরা মৌসুমে তীব্র দাবদাহের কারনে জন জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে সকালে সূর্য উঠার পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে রোদের প্রখরতা। দুপুরে যেন সূর্য আগুন ঝরাচ্ছিল প্রকৃতিতে। কাজের জন্য মাঠে থাকা প্রাণগুলো যেন ক্লান্ত হয়ে উঠেছিল। রাস্তায় চলাচল করা মানুষের সংখ্যাও তুলনামুলক কমে গিয়েছিল। রাজশাহীসহ দেশের সাত জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৫ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও রাঙ্গামাটি জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
সারা দেশ দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রবিবার দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতে প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরদিন সোমবার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এ ছাড়া আগামী মঙ্গল ও বুধবার সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি. রাজশাহীতে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন তাপপ্রবাহে শুধু মানুষ নয়, সমস্ত প্রাণিকুলের যেন হাঁসফাঁস অবস্থা।
এদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে অতিরিক্ত খরা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। দিনদিন বাড়ছে তপ্ত-উত্তপ্ত বরেন্দ্রভূমির রুক্ষতার মাত্রা। বিশেষ করে এই অঞ্চলে পানি সঙ্কটের প্রভাবে জনজীবনে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশগত প্রতিকূলতা। দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তনে নির্ধারিত মৌসুমে এলাকার নদ-নদীতে পানি থাকছে না। বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে যাওয়া সেচকাজে ও ভূগর্ভস্থ পানির অধিক ব্যাবহার নগরীর সিংহভাগ পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়া ,সর্বপরি পদ্মা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় রাজশাহীর সবত্র বিরাজ করছে রুক্ষ আবহাওয়া । একই সাথে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যা্চ্ছে আশক্ষাজনক হারে ।
রাজশাহী অঞ্চলে নতুন সেচ নীতিমালা কর্যকর হয়েছে চলতি বছরের বোরো চাষ থেকে। প্রথম বছরের নীতিমালা কার্যকর করায় পানি সংকটে ১০ হাজারের ওপরে জমিতে চাষ করা সম্ভব হয়নি।
কৃষকরা বলছেন, পানি না পাওয়ার কারণে তারা এই চাষ করতে পারেননি। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে কমছে ধানের উৎপাদন। কৃষি বিভাগ বলছে, ধান চাষ কমলেও অন্য চাষ বাড়ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ মিলে রাজশাহী বিভাগের কৃষি অঞ্চল। এ অঞ্চলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে। তবে গতবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮৬৫ হেক্টর জমি বেশি বোরো ধান চাষ হয়। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে ধান চাষ হয় ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে।
এরমধ্যে রাজশাহী জেলাতে কমেছে এক হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। নওগাঁতে কমেছে ৫৪০ হেক্টর জমিতে, নাটোরে কমেছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমেছে ৪ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে।
বিএমডিএর তথ্য বলছে, পানি সংকটে থাকা আট উপজেলায় সংস্থাটির মোট তিন হাজার ৫৮৮টি সচল গভীর নলকুপ রয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৯৬০টি নলকুপ তীব্র পানি সংকটপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি নলকূপ ২৪-৪০ হেক্টর জমিতে পানি সেচ সরবরাহ করতে পারে।
বিএমডিএর নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্থিতিশীল রাখতে বছরে একটি গভীর নলকূপ মোট ১৯৬০ ঘণ্টা চালানো হবে। এরমধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত আসন্ন বোরো মৌসুমে একটি গভীর নলকূপ মোট ৯৮০ ঘণ্টা চলবে। ফলে এসব নলকূপের আওতাধীন জমিতে বোরো ধান চাষ অর্ধেক থেকে শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, ধান চাষ গত বছরের তুলনায় কমেছে। তবে এবার অধিক হারে সরিষা চাষ হয়েছে। মূলত এ কারণেই চাষ কিছুটা কমতে পারে। আশা করছি এগুলো সামনের আউশে এসে পূরণ হবে। তবে পানি সংকটে চাষ করতে পারছেন না এমনটি আমি শুনিনি। কৃষকরা তাদের ইচ্ছামতো চাষ করছেন। মূলত তারা এবার সরিষার কারণে ধান চাষ কম করেছেন। আগামীতে এটি পূরণ হয়ে যাবে।