ঈদের ছুটিতে নওগাঁর বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের মিলনমেলা। পরিবার, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনদের নিয়ে হাজারো মানুষ ছুটে এসেছেন এই প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘুরে দেখতে। কেউ স্মৃতির খাতায় ছবিবন্দি করছেন, কেউবা ইতিহাসে হারিয়ে যাচ্ছেন এই প্রাচীন স্থাপনার মাঝে।
রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী : গতবারের তুলনায় এবছর ঈদুল ফিতরে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো বেশি। ঈদের পাঁচ দিন-সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত-পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের দীর্ঘ ছুটি থাকায় অনেকেই পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে এই ঐতিহাসিক স্থানে এসেছেন।
পাঁচ দিনে টিকেট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৭১ হাজার ৯৯০ টাকা। সোমবার (ঈদের দিন) : ১৮, ৬৭৮ জন দর্শনার্থী, টিকিট বিক্রি ৫.৮০ লাখ টাকা। মঙ্গলবার : ১৫, ৯৪৮ জন, বিক্রি ৪.৯০ লাখ টাকা। বুধবার : ১০, ৯৫৫ জন, বিক্রি ৩.৫০ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার : ৮, ৬৮৯ জন, বিক্রি ২.৬৬ লাখ টাকা।
শুক্রবার : ৫, ৬১৬ জন, বিক্রি ১.৮৪ লাখ টাকা।
নিরাপত্তা ও যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য :
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিহার চত্বরে মোতায়েন ছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। যানজট নিয়ন্ত্রণে ছিল ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা। ফলে এবছর যাতায়াতে কোনো বিড়ম্বনা হয়নি, দর্শনার্থীরা ছিলেন স্বস্তিতে।
পাহাড়পুরের সৌন্দর্য ও সুব্যবস্থা : ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার, প্রত্নসামগ্রী ও বই সম্বলিত কক্ষ, পুরুষ-মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট, একটি মসজিদ, অফিসার ও স্টাফ কোয়ার্টার এবং আনসার সদস্যদের আবাসন। বিশ্রামের জন্য রয়েছে ১০টি ছাউনি ও বসার স্থান। এসব ছাউনিতে ক্লান্ত দর্শনার্থীরা বিশ্রাম নিচ্ছেন। বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় রয়েছে পুরাতন ঢঙে নির্মিত একটি পুকুর, মনোরম পাথওয়ে ও সেতু। তবে মন্দিরের চূড়ায় উঠার কাঠের সিঁড়িটি বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এ নিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে কিছুটা আক্ষেপও লক্ষ্য করা গেছে।
দর্শনার্থীদের অনুভূতি : বিভিন্ন জায়গার ভ্রমণ প্রিয়াসি দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরের নাম আমরা অনেক শুনেছি ও জেনেছি কিন্তু সময়ের অভাবে এটি বাস্তবে দেখার সময় হয়নি। আর এ বছর ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে এসে বাস্তবে এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে খুব ভালো লাগছে।
দিনাজপুরের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছয় বন্ধু তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে এখানে এসেছি। জায়গাটা যেমন ঐতিহাসিক, তেমনি শান্ত ও সুন্দর।’
ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা পাহাড়পুর ঘুরতে চাচ্ছিল, তাই ঈদের আনন্দ বাড়াতে এখানে চলে এসেছি।’
ভ্রমণপিপাসু নাহিদ ও সাব্বির বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। এবার এসে সত্যিই অভিভূত হয়েছি-এত বছরের পুরনো স্থাপনা এত ভালোভাবে টিকে আছে দেখে বিস্মিত হয়েছি।’
দর্শনার্থী তরিকুল, সপ্না, শেলি, রকি, নাজমুল ও সাদিয়া সহ অনেকেই বলেন, আমরা এখানে এর আগে বহুবার এসেছি। কিন্তু এবার এখানে এসে মনে হচ্ছে নতুন এক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরকে দেখছি ও পুরো পাহাড়পুরটি পরিদর্শন করে আমরা খুবই আনন্দ পেয়েছি।
বাণিজ্যিক কার্যক্রমেও প্রাণচাঞ্চল্য: বৌদ্ধবিহারের আশপাশের হোটেল, রেস্তোরাঁ, কসমেটিকস ও ঝিনুকের দোকানগুলো ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে রঙিন সাজে সেজেছে। দোকানিরা জানান, ঈদের সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, এবং প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষের মতামত :
পাহাড়পুর জাদুঘরের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার ঈদে দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। নিরাপত্তা ও যাতায়াতব্যবস্থা ভালো থাকায় দর্শনার্থীরা সহজেই এখানে আসতে পেরেছেন। আমরা পর্যাপ্ত বিশ্রামস্থল তৈরি করেছি যাতে এই গরমেও দর্শনার্থীরা আরাম বোধ করেন।’
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
ঈদের ছুটিতে নওগাঁর বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের মিলনমেলা। পরিবার, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনদের নিয়ে হাজারো মানুষ ছুটে এসেছেন এই প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘুরে দেখতে। কেউ স্মৃতির খাতায় ছবিবন্দি করছেন, কেউবা ইতিহাসে হারিয়ে যাচ্ছেন এই প্রাচীন স্থাপনার মাঝে।
রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী : গতবারের তুলনায় এবছর ঈদুল ফিতরে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো বেশি। ঈদের পাঁচ দিন-সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত-পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের দীর্ঘ ছুটি থাকায় অনেকেই পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে এই ঐতিহাসিক স্থানে এসেছেন।
পাঁচ দিনে টিকেট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৭১ হাজার ৯৯০ টাকা। সোমবার (ঈদের দিন) : ১৮, ৬৭৮ জন দর্শনার্থী, টিকিট বিক্রি ৫.৮০ লাখ টাকা। মঙ্গলবার : ১৫, ৯৪৮ জন, বিক্রি ৪.৯০ লাখ টাকা। বুধবার : ১০, ৯৫৫ জন, বিক্রি ৩.৫০ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার : ৮, ৬৮৯ জন, বিক্রি ২.৬৬ লাখ টাকা।
শুক্রবার : ৫, ৬১৬ জন, বিক্রি ১.৮৪ লাখ টাকা।
নিরাপত্তা ও যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য :
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিহার চত্বরে মোতায়েন ছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। যানজট নিয়ন্ত্রণে ছিল ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা। ফলে এবছর যাতায়াতে কোনো বিড়ম্বনা হয়নি, দর্শনার্থীরা ছিলেন স্বস্তিতে।
পাহাড়পুরের সৌন্দর্য ও সুব্যবস্থা : ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার, প্রত্নসামগ্রী ও বই সম্বলিত কক্ষ, পুরুষ-মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট, একটি মসজিদ, অফিসার ও স্টাফ কোয়ার্টার এবং আনসার সদস্যদের আবাসন। বিশ্রামের জন্য রয়েছে ১০টি ছাউনি ও বসার স্থান। এসব ছাউনিতে ক্লান্ত দর্শনার্থীরা বিশ্রাম নিচ্ছেন। বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় রয়েছে পুরাতন ঢঙে নির্মিত একটি পুকুর, মনোরম পাথওয়ে ও সেতু। তবে মন্দিরের চূড়ায় উঠার কাঠের সিঁড়িটি বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এ নিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে কিছুটা আক্ষেপও লক্ষ্য করা গেছে।
দর্শনার্থীদের অনুভূতি : বিভিন্ন জায়গার ভ্রমণ প্রিয়াসি দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরের নাম আমরা অনেক শুনেছি ও জেনেছি কিন্তু সময়ের অভাবে এটি বাস্তবে দেখার সময় হয়নি। আর এ বছর ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে এসে বাস্তবে এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে খুব ভালো লাগছে।
দিনাজপুরের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছয় বন্ধু তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে এখানে এসেছি। জায়গাটা যেমন ঐতিহাসিক, তেমনি শান্ত ও সুন্দর।’
ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা পাহাড়পুর ঘুরতে চাচ্ছিল, তাই ঈদের আনন্দ বাড়াতে এখানে চলে এসেছি।’
ভ্রমণপিপাসু নাহিদ ও সাব্বির বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। এবার এসে সত্যিই অভিভূত হয়েছি-এত বছরের পুরনো স্থাপনা এত ভালোভাবে টিকে আছে দেখে বিস্মিত হয়েছি।’
দর্শনার্থী তরিকুল, সপ্না, শেলি, রকি, নাজমুল ও সাদিয়া সহ অনেকেই বলেন, আমরা এখানে এর আগে বহুবার এসেছি। কিন্তু এবার এখানে এসে মনে হচ্ছে নতুন এক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরকে দেখছি ও পুরো পাহাড়পুরটি পরিদর্শন করে আমরা খুবই আনন্দ পেয়েছি।
বাণিজ্যিক কার্যক্রমেও প্রাণচাঞ্চল্য: বৌদ্ধবিহারের আশপাশের হোটেল, রেস্তোরাঁ, কসমেটিকস ও ঝিনুকের দোকানগুলো ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে রঙিন সাজে সেজেছে। দোকানিরা জানান, ঈদের সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, এবং প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষের মতামত :
পাহাড়পুর জাদুঘরের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার ঈদে দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। নিরাপত্তা ও যাতায়াতব্যবস্থা ভালো থাকায় দর্শনার্থীরা সহজেই এখানে আসতে পেরেছেন। আমরা পর্যাপ্ত বিশ্রামস্থল তৈরি করেছি যাতে এই গরমেও দর্শনার্থীরা আরাম বোধ করেন।’