চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয়লেনের দাবিতে মানববন্ধন -সংবাদ
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান।
মানববন্ধনে তারা সড়কটি প্রশস্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। বক্তারা বলেন, প্রতিবার ঈদ-কোরবানী ও বিভিন্ন উপলক্ষ্য আসে। কিন্তু কক্সবাজার সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামছে না। এই ঈদে একটু স্বস্তির আশায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগের বদলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কেবল কক্সবাজার নয়, সারাদেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। এই সড়কে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সড়কে কোনোভাবেই মৃত্যুর মিছিল থামছে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই সড়ক দ্রুত ৬ লেনে উন্নীত করে মৃত্যুর মিছিল থামান।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ইমন মোহাম্মদ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটি আমরা ছয় লেনের চাই। যে ছয় লেনের মধ্যে মাঝখানে একটি ডিভাইডার থাকবে। দু’পাশে তিন লেন করে থাকবে। বিশেষ করে লবণের গাড়িগুলোর যে পরিবহন, এই লবণ তপ্ত রোদে গলে যায়। যার ফলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চালকরা যেতে চেষ্টা করে এবং এতে দুর্ঘটনা ঘটে। আবার ওই গাড়িগুলো থেকে লবণের পানি পড়ে রাস্তা পিচ্ছিল হয়। এজন্যও দুর্ঘটনা হয়।
তিনি বলেন, রাস্তাটিও এতটা সরু যে, দুটি বাস পাশাপাশি গেলে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো গাড়ি যাওয়ার সুযোগ থাকে না। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুর্ঘটনা ঘটার আরেকটি কারণ হলো, অবৈধ অটোরিকশা মহাসড়কে চলে। এ সড়ক ৬ লেনে উন্নীত হলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজারের গুরুত্ব আরও বাড়বে এবং দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। পর্যটকরা তখন সেখানে যেতে আরও উৎসাহিত হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান সাঈদী বলেন, আমরা আজ প্রাণের দাবি নিয়ে এসেছি। আমাদের দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়কটি ঢাকা শহরের ফুটপাতের চেয়েও খারাপ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক-১ হয়েও এটির প্রশস্ততা গড়ে ১৮ ফিট। দুটো গাড়ি স্বাভাবিকভাবে যেতে পারে না। যার ফলে এখানে মৃত্যুটা যেন নিশ্চিত বিষয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনুসারে এই সড়কটি খুব শীঘ্রই যেন ৬ লেনে উন্নীত হয়, এটা আমরা চাই। এটা না হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। আমরা আশ্বাস চাই না, বাস্তবায়ন চাই। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া না দেখলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এড. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এই সরু রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ গাড়িতে প্রবেশ করছে। অথচ এই সরু ও আকা-বাঁকা রাস্তার কারণে বারবার সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। বারবার লাশ পড়ছে, কালো পিচগুলো রক্তে লাল হয়ে ওঠেছে। বিভিন্ন পরিবার আজ নিঃস্ব হয়েছে। এরপরেও সরকারের টনক নড়ে না।
তিনি বলেন, কয়েকটি স্পিড ব্রেকার এবং সড়কের উভয়পাশে ইট দিয়ে আমাদের সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্টভাবে বলছি, এই রক্তঝড়া ক্ষত মলম দিয়ে দূর করা যাবে না। তাই বলছি, অবিলম্বে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে করা হোক। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের ছেলে। সড়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা চট্টগ্রামের। উনি সন্দ্বীপের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করেছেন। তাকে অনুরোধ করবো আমাদের চট্টগ্রামবাসীর জন্য, বাংলাদেশের জন্য এ সড়ক ৬ লেনের উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, পত্রিকা-টেলিভিশন খুললেই দেখি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। আমরা এই মৃত্যুর মিছিল আর দেখতে চাই না। কক্সবাজার দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, তাই সেখানে লাখ লাখ পর্যটক বেড়াতে যায়। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অনেক অবকাঠামো সেখানে। ফলে গাড়ির চাপ বেড়েছে। সড়কের উন্নয়ন না করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে এখানে টানেল করা হয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কাজ শুরু করুন অবিলম্বে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া অংশে ঈদুল ফিতরের প্রথম তিনদিনে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
আহত হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি। স্থানীয় বাসিন্দারা এসব দুর্ঘটনার জন্য মূলত চালকদের বেপরোয়া গতি, লবণবাহী ট্রাকের পানি ফেলা এবং অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলারের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলকে দায়ি করছেন।
হাইওয়ে পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন মাসে এই সড়কে ৫৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৪০ জন নিহত এবং ৭৩ জন আহত হয়েছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অংশে ৩৭টি দুর্ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয়লেনের দাবিতে মানববন্ধন -সংবাদ
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান।
মানববন্ধনে তারা সড়কটি প্রশস্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। বক্তারা বলেন, প্রতিবার ঈদ-কোরবানী ও বিভিন্ন উপলক্ষ্য আসে। কিন্তু কক্সবাজার সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামছে না। এই ঈদে একটু স্বস্তির আশায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগের বদলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কেবল কক্সবাজার নয়, সারাদেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। এই সড়কে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সড়কে কোনোভাবেই মৃত্যুর মিছিল থামছে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই সড়ক দ্রুত ৬ লেনে উন্নীত করে মৃত্যুর মিছিল থামান।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ইমন মোহাম্মদ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটি আমরা ছয় লেনের চাই। যে ছয় লেনের মধ্যে মাঝখানে একটি ডিভাইডার থাকবে। দু’পাশে তিন লেন করে থাকবে। বিশেষ করে লবণের গাড়িগুলোর যে পরিবহন, এই লবণ তপ্ত রোদে গলে যায়। যার ফলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চালকরা যেতে চেষ্টা করে এবং এতে দুর্ঘটনা ঘটে। আবার ওই গাড়িগুলো থেকে লবণের পানি পড়ে রাস্তা পিচ্ছিল হয়। এজন্যও দুর্ঘটনা হয়।
তিনি বলেন, রাস্তাটিও এতটা সরু যে, দুটি বাস পাশাপাশি গেলে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো গাড়ি যাওয়ার সুযোগ থাকে না। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুর্ঘটনা ঘটার আরেকটি কারণ হলো, অবৈধ অটোরিকশা মহাসড়কে চলে। এ সড়ক ৬ লেনে উন্নীত হলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজারের গুরুত্ব আরও বাড়বে এবং দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। পর্যটকরা তখন সেখানে যেতে আরও উৎসাহিত হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান সাঈদী বলেন, আমরা আজ প্রাণের দাবি নিয়ে এসেছি। আমাদের দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়কটি ঢাকা শহরের ফুটপাতের চেয়েও খারাপ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক-১ হয়েও এটির প্রশস্ততা গড়ে ১৮ ফিট। দুটো গাড়ি স্বাভাবিকভাবে যেতে পারে না। যার ফলে এখানে মৃত্যুটা যেন নিশ্চিত বিষয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনুসারে এই সড়কটি খুব শীঘ্রই যেন ৬ লেনে উন্নীত হয়, এটা আমরা চাই। এটা না হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। আমরা আশ্বাস চাই না, বাস্তবায়ন চাই। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া না দেখলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এড. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এই সরু রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ গাড়িতে প্রবেশ করছে। অথচ এই সরু ও আকা-বাঁকা রাস্তার কারণে বারবার সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। বারবার লাশ পড়ছে, কালো পিচগুলো রক্তে লাল হয়ে ওঠেছে। বিভিন্ন পরিবার আজ নিঃস্ব হয়েছে। এরপরেও সরকারের টনক নড়ে না।
তিনি বলেন, কয়েকটি স্পিড ব্রেকার এবং সড়কের উভয়পাশে ইট দিয়ে আমাদের সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্টভাবে বলছি, এই রক্তঝড়া ক্ষত মলম দিয়ে দূর করা যাবে না। তাই বলছি, অবিলম্বে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে করা হোক। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের ছেলে। সড়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা চট্টগ্রামের। উনি সন্দ্বীপের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করেছেন। তাকে অনুরোধ করবো আমাদের চট্টগ্রামবাসীর জন্য, বাংলাদেশের জন্য এ সড়ক ৬ লেনের উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, পত্রিকা-টেলিভিশন খুললেই দেখি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। আমরা এই মৃত্যুর মিছিল আর দেখতে চাই না। কক্সবাজার দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, তাই সেখানে লাখ লাখ পর্যটক বেড়াতে যায়। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অনেক অবকাঠামো সেখানে। ফলে গাড়ির চাপ বেড়েছে। সড়কের উন্নয়ন না করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে এখানে টানেল করা হয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কাজ শুরু করুন অবিলম্বে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া অংশে ঈদুল ফিতরের প্রথম তিনদিনে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
আহত হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি। স্থানীয় বাসিন্দারা এসব দুর্ঘটনার জন্য মূলত চালকদের বেপরোয়া গতি, লবণবাহী ট্রাকের পানি ফেলা এবং অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলারের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলকে দায়ি করছেন।
হাইওয়ে পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন মাসে এই সড়কে ৫৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৪০ জন নিহত এবং ৭৩ জন আহত হয়েছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অংশে ৩৭টি দুর্ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।