গাইবান্ধা : সাঘাটার দিঘলকান্দি চরে মরিচ শুকাতে ব্যস্ত নারী চাষি -সংবাদ
গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের হাটবাজারে এক কেজি কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। বাজার মূল্য গত একমাস ধরে একই অবস্থা থাকা চরম বিপাকে পড়েছেন মরিচ চাষীরা।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগে নদী ও চরাঞ্চল বেষ্টিত জেলা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাটে মোট মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ৫শ হেক্টর জমি। তবে, মরিচের অধিক মূল্য ও বাজারে চাহিদা থাকায় লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে আরো বেশি চাষাবাদ হয়েছে বলে জানা যায়।
তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় কাচা-পাকা মরিচ। বেশিরভাগ গাছে মরিচর্ ঙ ধরেছে। ইতোমধ্যে পাকা মরিচ সংগ্রহ করে শুকানোও শুরু করেছেন। পাকা মরিচের সাথে উঠছে কাঁচা মরিচও। তবে, বাজারে কাচা মরিচের মূল্য না থাকা চরম বিপাকে পরেছেন চাষীরা। এক মন মরিচ উঠাতে শ্রমিক ও পরিববহন মূল্য দিতে চাষীর হাতে কিছুই থাকছে না।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দিঘলকান্দি চরের শামসুল হক সরকার জানান, চলতি মৌসুমে তিন একর জমিতে মরিচের চাষ করেছি। ইতোমধ্যে একবার কাচা মরিচ তুলে বাজারে দুই হাজার টাকা মনে বিক্রিও করেছি। কিন্ত এখন আর বাজারে কাচা মরিচ এর মূল্য একেবারেই নেই। বাজারে একমন কাচা মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ টাকায়। আর এক মন মরিচের বিপরীতে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হচ্ছে ৫শ টাকা।
ফুলছড়ি উপজেলার বাগবাড়ি চরের চাষি আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। তবে, এখন মরিচের চাহিদা কম থাকায় উৎপাদন খরচ হিসেবে এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, বেলে দোআশ মাটিতে মরিচ চাষ হয়। কিন্তু এখন বাজারে একেবারেই চাহিদা নেই। আবার জমিতেও মরিচ রাখা সম্ভব হচ্ছে না, একারণে ভীষন চিন্তিত তিনি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া বলেন, চরের সবচেয়ে লাভজনক কৃষি ফসল হলো মরিচ। মরিচের বাজার মূল্য বেশি থাকায় চরের বেশিরভাগ মানুষ মরিচ চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু বর্তমানে মরিচ এর মূল্যে না থাকায় চাষীরা বিপাকে পড়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর গ্রামের হামিদা বেগম বেগম বলেন, মরিচ চাষ মানুষজনের অর্থের জোগান দিচ্ছে। বির অঞ্চল অর্থাৎ নদীপাড়ের কৃষি শ্রমিকেরা চরে এসে শ্রমবিক্রি করে টাকা পেয়ে সংসার চালাচ্ছেন, যার কারণে এসব শ্রমিকদের অভাবের সময়ে অন্য জেলায় যেতে হচ্ছে না, কিন্তু ক্ষতিতে রয়েছেন চাষীরা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান গাইবান্ধা জেলার ব্রান্ডিং ফসল শস্য মরিচ। জেলার মরিচের চাহিদা পূরণ হয়ে সারা দেশে চরাঞ্চলের মরিচ বিক্রি হয়ে থাকে। ক্রমেই চাষাবাদের পরিমাণও বাড়ছে। তবে নদীতে পানি না থাকায় যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতায় হাটবাজারে মরিচ বিক্রি করতে পরিবহনে অধিক অর্থ গুণতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মার্কেট চ্যানেল তৈরি হলে চাষীরা উপকৃত হবেন।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, অর্থকারী ফসলের মধ্যে মরিচ অন্যতম। আর চরের মাটি মরিচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বছরজুড়ে মরিচের বাজার মূল্য বেশি থাকায় চাষীরা ঝুঁকেছেন মরিচ চাষে। একারণে মরিচ চাষে চাষীরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কিন্তু বর্তমানে একসাথে মরিচ উঠতে শুরু করায় বাজার মূল্য অনেকটাই কম। কিছুদিন পরেই মূল্য পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা কৃষিবিপণন ও মার্কেটিং অফিসার শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, উৎপাদন বেশি হওয়ায় মরিচের মূল্য কিছুটা কমে গেছে, তবে খুব দ্রুতই মূল্য বেড়ে যাবে বলে তিনি জানান। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ জানান, চরের মানুষজনের অন্যতম অর্থকারী ফসল এখন মরিচ। মরিচ চাষ করে চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের মরিচ ঘাটতিও পূরণ করছেন। তিনি জানান উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনিও আশা করেন দ্রুত মরিচের বাজার বেড়ে যাবে।
গাইবান্ধা : সাঘাটার দিঘলকান্দি চরে মরিচ শুকাতে ব্যস্ত নারী চাষি -সংবাদ
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের হাটবাজারে এক কেজি কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। বাজার মূল্য গত একমাস ধরে একই অবস্থা থাকা চরম বিপাকে পড়েছেন মরিচ চাষীরা।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগে নদী ও চরাঞ্চল বেষ্টিত জেলা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাটে মোট মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ৫শ হেক্টর জমি। তবে, মরিচের অধিক মূল্য ও বাজারে চাহিদা থাকায় লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে আরো বেশি চাষাবাদ হয়েছে বলে জানা যায়।
তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় কাচা-পাকা মরিচ। বেশিরভাগ গাছে মরিচর্ ঙ ধরেছে। ইতোমধ্যে পাকা মরিচ সংগ্রহ করে শুকানোও শুরু করেছেন। পাকা মরিচের সাথে উঠছে কাঁচা মরিচও। তবে, বাজারে কাচা মরিচের মূল্য না থাকা চরম বিপাকে পরেছেন চাষীরা। এক মন মরিচ উঠাতে শ্রমিক ও পরিববহন মূল্য দিতে চাষীর হাতে কিছুই থাকছে না।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দিঘলকান্দি চরের শামসুল হক সরকার জানান, চলতি মৌসুমে তিন একর জমিতে মরিচের চাষ করেছি। ইতোমধ্যে একবার কাচা মরিচ তুলে বাজারে দুই হাজার টাকা মনে বিক্রিও করেছি। কিন্ত এখন আর বাজারে কাচা মরিচ এর মূল্য একেবারেই নেই। বাজারে একমন কাচা মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ টাকায়। আর এক মন মরিচের বিপরীতে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হচ্ছে ৫শ টাকা।
ফুলছড়ি উপজেলার বাগবাড়ি চরের চাষি আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। তবে, এখন মরিচের চাহিদা কম থাকায় উৎপাদন খরচ হিসেবে এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, বেলে দোআশ মাটিতে মরিচ চাষ হয়। কিন্তু এখন বাজারে একেবারেই চাহিদা নেই। আবার জমিতেও মরিচ রাখা সম্ভব হচ্ছে না, একারণে ভীষন চিন্তিত তিনি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া বলেন, চরের সবচেয়ে লাভজনক কৃষি ফসল হলো মরিচ। মরিচের বাজার মূল্য বেশি থাকায় চরের বেশিরভাগ মানুষ মরিচ চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু বর্তমানে মরিচ এর মূল্যে না থাকায় চাষীরা বিপাকে পড়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর গ্রামের হামিদা বেগম বেগম বলেন, মরিচ চাষ মানুষজনের অর্থের জোগান দিচ্ছে। বির অঞ্চল অর্থাৎ নদীপাড়ের কৃষি শ্রমিকেরা চরে এসে শ্রমবিক্রি করে টাকা পেয়ে সংসার চালাচ্ছেন, যার কারণে এসব শ্রমিকদের অভাবের সময়ে অন্য জেলায় যেতে হচ্ছে না, কিন্তু ক্ষতিতে রয়েছেন চাষীরা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান গাইবান্ধা জেলার ব্রান্ডিং ফসল শস্য মরিচ। জেলার মরিচের চাহিদা পূরণ হয়ে সারা দেশে চরাঞ্চলের মরিচ বিক্রি হয়ে থাকে। ক্রমেই চাষাবাদের পরিমাণও বাড়ছে। তবে নদীতে পানি না থাকায় যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতায় হাটবাজারে মরিচ বিক্রি করতে পরিবহনে অধিক অর্থ গুণতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মার্কেট চ্যানেল তৈরি হলে চাষীরা উপকৃত হবেন।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, অর্থকারী ফসলের মধ্যে মরিচ অন্যতম। আর চরের মাটি মরিচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বছরজুড়ে মরিচের বাজার মূল্য বেশি থাকায় চাষীরা ঝুঁকেছেন মরিচ চাষে। একারণে মরিচ চাষে চাষীরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কিন্তু বর্তমানে একসাথে মরিচ উঠতে শুরু করায় বাজার মূল্য অনেকটাই কম। কিছুদিন পরেই মূল্য পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা কৃষিবিপণন ও মার্কেটিং অফিসার শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, উৎপাদন বেশি হওয়ায় মরিচের মূল্য কিছুটা কমে গেছে, তবে খুব দ্রুতই মূল্য বেড়ে যাবে বলে তিনি জানান। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ জানান, চরের মানুষজনের অন্যতম অর্থকারী ফসল এখন মরিচ। মরিচ চাষ করে চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের মরিচ ঘাটতিও পূরণ করছেন। তিনি জানান উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনিও আশা করেন দ্রুত মরিচের বাজার বেড়ে যাবে।