রংপুর : অবৈধ দখলের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় ফুসফুস বলে পরিচিত শ্যামা সুন্দরী খাল -সংবাদ
বিভাগীয় মহানগরী রংপুরের ফুসফুস বলে পরিচিত শ্যামা সুন্দরী খাল যার গভীরতা ছিলো ৪০ ফুটেরও বেশী সেটি এখন বিভিন্ন বর্জ্য আর ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। সেই সাথে সরু ক্যানালে রূপ নিয়েছে পুরো খালটি ।
অথচ খালটি বৃষ্টির পানিসহ রংপুর মহানগরীর সকল পানি এই খালের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা নদীতে পতিত হয়। কিন্তু অবৈধ দখলের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই পুরো নগরী জুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। চরম দুর্ভোগে পড়ে ৩০ লাখ নগরবাসি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সোয়া তিনশ বছর আগে রংপুর অঞ্চলের মহারাজা জানকী বল্লভ সেনের স্বর্গীয় মাতা শ্যামা সুন্দরী সেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য এবং ম্যালেরিয়া দূর করার জন্য রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকা থেকে মাহিগজ্ঞ পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করেন মহারাজা। এমনভাবে শ্যামাসনুন্দরী খাল খনন করা হয় ঘাঘট নদীর শেষ প্রান্তে থেকে খাল খনন শুরু করা হয়। ওই সময় খালটি মুলত ঘাঘট নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করে খনন করা হয়। তখন ৪০ ফুটেরও বেশি দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ করা হয় দুপার্শ্বে ৬০ ফুট। নির্মাণ কাজ শেষ হবার পর নগরীর কাচারী বাজার এলাকায় একটি দৃষ্টি নন্দন নাম ফলক তৈরী করা হয়। সেখানে লেখা হয় ”পীড়ার আঁকড় ভুমি প্রনালী কাটিয়া তা করিবার দূর মাতা শ্যামা সুন্দরীর স্মরণে জানকি বল্লভ সুত এই কীত্তি করে”। এটি উদ্বোধন করার সময় এসব কথা উল্লেখ করা হয়। দৃষ্টি নন্দন নাম ফলকটি এখনও সেখানে রয়েছে। পরবের্তী কালে ২০০৯-১০ সালে এটি পুনঃসংস্কার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে খালটির বিভিন্ন জায়গা দখল হয়ে যায়। বাসা বাড়ির ময়লা শহরের বর্জ্য ফেলতে ফেলতে এখন এটা ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। খালের দুপার্শ্বে বেশির ভাগ বাসার ল্যাট্টিনের লাইন সহ পয়ঃপ্রনালীর সংযোগ খালের সাথে দেয়ায় এখানকার পানি বিষাক্তহয়ে গেছে। এর গভীরতা বেশির ভাগ স্থানে ৫ থেকে ৮ ফুটের মধ্যে নেমে গেছে। এখন এটি নগরবাসির জন্য আর্শিবাদের বদলে অভিশাপে পরিনত হয়েছে। এদিকে রংপুর মহানগরীর সব ধরনের পানি প্রবাহিত হয় শ্যামা সুন্দরী খাল দিয়ে। নগরীর সকল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এই খালকে ঘিরে নির্মাণ করা হলেও এখন একটু বৃষ্টি হলে নগরী জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ শ্যামাসুন্দরী খাল ও তিস্তা নদী নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বলেছেন, শ্যামাসুন্দরী খাল হলো রংপুর মহানগরীর পানি নিস্কাশনের একমাত্র স্থান এটা এখন ময়লা ভাগারে পরিনত হয়েছে। দিন দিন বেদখল হচ্ছে জায়গা, বাসা বাড়ির পয়ঃপ্রনালী আর বর্জ্য দিয়ে ভাগাড়ে পরিনত হয়ে গেছে। এটাকে পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ বাড়ানো না গেলে পুরো নগরবাসি চরম বিপদে পড়বেন নগরী জুড়ে বছর জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে ।
সার্বিক ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেছেন, শ্যামা সুন্দরী খাল দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। এটা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল জানান রংপুরের ঐতিহ্য শ্যামা সুন্দরী খালের দু পার্শ্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে। সেই সাথে এর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রংপুর : অবৈধ দখলের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় ফুসফুস বলে পরিচিত শ্যামা সুন্দরী খাল -সংবাদ
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
বিভাগীয় মহানগরী রংপুরের ফুসফুস বলে পরিচিত শ্যামা সুন্দরী খাল যার গভীরতা ছিলো ৪০ ফুটেরও বেশী সেটি এখন বিভিন্ন বর্জ্য আর ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। সেই সাথে সরু ক্যানালে রূপ নিয়েছে পুরো খালটি ।
অথচ খালটি বৃষ্টির পানিসহ রংপুর মহানগরীর সকল পানি এই খালের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা নদীতে পতিত হয়। কিন্তু অবৈধ দখলের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই পুরো নগরী জুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। চরম দুর্ভোগে পড়ে ৩০ লাখ নগরবাসি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সোয়া তিনশ বছর আগে রংপুর অঞ্চলের মহারাজা জানকী বল্লভ সেনের স্বর্গীয় মাতা শ্যামা সুন্দরী সেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য এবং ম্যালেরিয়া দূর করার জন্য রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকা থেকে মাহিগজ্ঞ পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করেন মহারাজা। এমনভাবে শ্যামাসনুন্দরী খাল খনন করা হয় ঘাঘট নদীর শেষ প্রান্তে থেকে খাল খনন শুরু করা হয়। ওই সময় খালটি মুলত ঘাঘট নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করে খনন করা হয়। তখন ৪০ ফুটেরও বেশি দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ করা হয় দুপার্শ্বে ৬০ ফুট। নির্মাণ কাজ শেষ হবার পর নগরীর কাচারী বাজার এলাকায় একটি দৃষ্টি নন্দন নাম ফলক তৈরী করা হয়। সেখানে লেখা হয় ”পীড়ার আঁকড় ভুমি প্রনালী কাটিয়া তা করিবার দূর মাতা শ্যামা সুন্দরীর স্মরণে জানকি বল্লভ সুত এই কীত্তি করে”। এটি উদ্বোধন করার সময় এসব কথা উল্লেখ করা হয়। দৃষ্টি নন্দন নাম ফলকটি এখনও সেখানে রয়েছে। পরবের্তী কালে ২০০৯-১০ সালে এটি পুনঃসংস্কার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে খালটির বিভিন্ন জায়গা দখল হয়ে যায়। বাসা বাড়ির ময়লা শহরের বর্জ্য ফেলতে ফেলতে এখন এটা ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। খালের দুপার্শ্বে বেশির ভাগ বাসার ল্যাট্টিনের লাইন সহ পয়ঃপ্রনালীর সংযোগ খালের সাথে দেয়ায় এখানকার পানি বিষাক্তহয়ে গেছে। এর গভীরতা বেশির ভাগ স্থানে ৫ থেকে ৮ ফুটের মধ্যে নেমে গেছে। এখন এটি নগরবাসির জন্য আর্শিবাদের বদলে অভিশাপে পরিনত হয়েছে। এদিকে রংপুর মহানগরীর সব ধরনের পানি প্রবাহিত হয় শ্যামা সুন্দরী খাল দিয়ে। নগরীর সকল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এই খালকে ঘিরে নির্মাণ করা হলেও এখন একটু বৃষ্টি হলে নগরী জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ শ্যামাসুন্দরী খাল ও তিস্তা নদী নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বলেছেন, শ্যামাসুন্দরী খাল হলো রংপুর মহানগরীর পানি নিস্কাশনের একমাত্র স্থান এটা এখন ময়লা ভাগারে পরিনত হয়েছে। দিন দিন বেদখল হচ্ছে জায়গা, বাসা বাড়ির পয়ঃপ্রনালী আর বর্জ্য দিয়ে ভাগাড়ে পরিনত হয়ে গেছে। এটাকে পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ বাড়ানো না গেলে পুরো নগরবাসি চরম বিপদে পড়বেন নগরী জুড়ে বছর জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে ।
সার্বিক ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেছেন, শ্যামা সুন্দরী খাল দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। এটা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল জানান রংপুরের ঐতিহ্য শ্যামা সুন্দরী খালের দু পার্শ্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে। সেই সাথে এর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।