গাইবান্ধা : চরের বালু সরিয়ে ধান রোপণ করা হচ্ছে -সংবাদ
প্রতিনিয়তি নদীভাঙন তিস্তা-যুমনায় বাড়ছে বালু চরে সংখ্যা, হ্রাস পাচ্ছে আবাদি জমি। আর এর প্রভাব পড়ছে কৃষিনির্ভর পরিবারের জীবন জীবিকায়। বেসরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনার চর জরিপ অনুযায়ী দুই দশক আগে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলায় চর সংখ্যা ছিল ৯শ’ ৮৬টি। বর্তমানে চর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১১শ’। তবে শতাধিক চরের নাম থাকলেও বসতি নেই। প্রতিনিয়ত নদীভাঙনে চরের সংখ্যা বাড়ছে এবং নদীর তলদেশে ভরাট হয়ে বালু চরে পরিণত হচ্ছে। এতে করে আবাদি জমি ভেঙে বালুতে পরিণত হয়।
বন্যা পরবর্তী তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র যমুনা চরের সেচ সুবিধা না থাকায় অন্ততপক্ষে ২০ হাজার হেক্টর জমি পতিত রয়েছে। এদিকে, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, গভীর নলকূপ সুবিধা. ডিজেল মূল্য বৃদ্ধি, নাব্যসংকট ও প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় এমন পরিস্থিতি রয়েছে বলে জানান চরাঞ্চলের চাষিরা।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গাবগাছি গ্রামের চাষি নুর ইসলাম জানান, চার বিঘা জমির মধ্যে এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করতে পেরেছি। অন্যজমিগুলো বালুময় হওয়ায় সেচ সুবিধা না থাকায় পতিত আছে। তিনি বলেন, পানির ব্যবস্থা থাকলে পতিত জমিতে ভুট্টা, মরিচ চাষাবাদ করা যেতো।
ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ খাটিয়ামারী গ্রামের আবু হানিফ মিয়া জানান, চরের বেশিরভাগ এলাকা বেলে দো-আঁশ মাটি। একারণে জমিতে পানিও বেশি লাগে। শস্য উৎপাদন খরচ বেশি হয়। তিনি বলেন, সরকারিভাবে সেচ সুবিধার ব্যবস্থা থাকলে এই পতিত থাকা জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা যেতো।
সাঘাটার সার বীজ ডিলার আখতারুজ্জামান বলেন, চরাঞ্চলের মাঠে এখন শস্য চাষাবাদে বেশ উপযোগী। জমির তুলনায় চাষির সংখ্যা অনেক কম। সেচ সুযোগ-সুবিধা না থাকায় বেশিরভাগ জমি অনাবাদি থাকে ।
সাঘাটার হাসিলকান্দি গ্রামের হাফিজার রহমান মোল্লা বলেন, বালু মাটি সরিয়ে জমিগুলো চাষাবাদ যোগ্য করা যায়, তবে শ্রমিকের অভাবে জমিগুলো শস্যচাষে উপযোগী করা যায় না। এছাড়াও জমিতে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হওয়ায় পানি নির্ভর শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, চরের জমি শস্য চাষাবাদের জন্য উপযোগী। তবে, প্রযুক্তির প্রয়োগ খুব বেশি না থাকায় জমিগুলো চাষাবাদ উপযোগী করা যায় না।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মিন্টু মিয়া বলেন, বন্যা পরবর্তীতে চরের জমিগুলো বালি পড়ে। একারণে চাষযোগ্য জমি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, সেচ ব্যবস্থা সচল করতে পাইপ ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, খোরশেদ আলম জানান, পতিত জমি ব্যবহারে চাষীদের নিয়মিতভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে, পানি ও সেচ সমস্যা কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তি নির্ভর না হওয়ায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি গবেষক মোজ্জাম্মেল হক জানান, চরের ব্যাপকভাবে মরিচ, ভুট্টা, বাদাম, বেগুন, পিঁয়াজসহ নানা ধরণের সবজি উৎপাদন হয়, যা দেশের সার্বিক খাদ্য চাহিদা পূরণে প্রভাব পড়ে। তবে, চরাঞ্চলে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার তেমন না থাকায় চাষাবাদে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
তিনি জানান যথাযথ পরিকল্পা গ্রহণ করে চরাঞ্চলের জমি সর্বাত্মক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশের শস্য ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট প্রভাব রাখবে।
পানি গবেষক ড, আইনুন নিশাত জানান, নদীর স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি পরিবর্তন হওয়ায় প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। উজানের বালু এসে নদীর তলদেশে ভর্তি হয়ে অনাবাদি জমির পরিমান বাড়ছে।
এতে করে কৃষি নির্ভর মানুষজন আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হোচ্ছে। এজন্য তিনি নদীর গতি প্রকৃতি বুঝে ব্যবস্থাগ্রহণের পরামর্শ দেন।
গাইবান্ধা : চরের বালু সরিয়ে ধান রোপণ করা হচ্ছে -সংবাদ
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
প্রতিনিয়তি নদীভাঙন তিস্তা-যুমনায় বাড়ছে বালু চরে সংখ্যা, হ্রাস পাচ্ছে আবাদি জমি। আর এর প্রভাব পড়ছে কৃষিনির্ভর পরিবারের জীবন জীবিকায়। বেসরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনার চর জরিপ অনুযায়ী দুই দশক আগে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলায় চর সংখ্যা ছিল ৯শ’ ৮৬টি। বর্তমানে চর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১১শ’। তবে শতাধিক চরের নাম থাকলেও বসতি নেই। প্রতিনিয়ত নদীভাঙনে চরের সংখ্যা বাড়ছে এবং নদীর তলদেশে ভরাট হয়ে বালু চরে পরিণত হচ্ছে। এতে করে আবাদি জমি ভেঙে বালুতে পরিণত হয়।
বন্যা পরবর্তী তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র যমুনা চরের সেচ সুবিধা না থাকায় অন্ততপক্ষে ২০ হাজার হেক্টর জমি পতিত রয়েছে। এদিকে, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, গভীর নলকূপ সুবিধা. ডিজেল মূল্য বৃদ্ধি, নাব্যসংকট ও প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় এমন পরিস্থিতি রয়েছে বলে জানান চরাঞ্চলের চাষিরা।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গাবগাছি গ্রামের চাষি নুর ইসলাম জানান, চার বিঘা জমির মধ্যে এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করতে পেরেছি। অন্যজমিগুলো বালুময় হওয়ায় সেচ সুবিধা না থাকায় পতিত আছে। তিনি বলেন, পানির ব্যবস্থা থাকলে পতিত জমিতে ভুট্টা, মরিচ চাষাবাদ করা যেতো।
ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ খাটিয়ামারী গ্রামের আবু হানিফ মিয়া জানান, চরের বেশিরভাগ এলাকা বেলে দো-আঁশ মাটি। একারণে জমিতে পানিও বেশি লাগে। শস্য উৎপাদন খরচ বেশি হয়। তিনি বলেন, সরকারিভাবে সেচ সুবিধার ব্যবস্থা থাকলে এই পতিত থাকা জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা যেতো।
সাঘাটার সার বীজ ডিলার আখতারুজ্জামান বলেন, চরাঞ্চলের মাঠে এখন শস্য চাষাবাদে বেশ উপযোগী। জমির তুলনায় চাষির সংখ্যা অনেক কম। সেচ সুযোগ-সুবিধা না থাকায় বেশিরভাগ জমি অনাবাদি থাকে ।
সাঘাটার হাসিলকান্দি গ্রামের হাফিজার রহমান মোল্লা বলেন, বালু মাটি সরিয়ে জমিগুলো চাষাবাদ যোগ্য করা যায়, তবে শ্রমিকের অভাবে জমিগুলো শস্যচাষে উপযোগী করা যায় না। এছাড়াও জমিতে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হওয়ায় পানি নির্ভর শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, চরের জমি শস্য চাষাবাদের জন্য উপযোগী। তবে, প্রযুক্তির প্রয়োগ খুব বেশি না থাকায় জমিগুলো চাষাবাদ উপযোগী করা যায় না।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মিন্টু মিয়া বলেন, বন্যা পরবর্তীতে চরের জমিগুলো বালি পড়ে। একারণে চাষযোগ্য জমি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, সেচ ব্যবস্থা সচল করতে পাইপ ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, খোরশেদ আলম জানান, পতিত জমি ব্যবহারে চাষীদের নিয়মিতভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে, পানি ও সেচ সমস্যা কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তি নির্ভর না হওয়ায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি গবেষক মোজ্জাম্মেল হক জানান, চরের ব্যাপকভাবে মরিচ, ভুট্টা, বাদাম, বেগুন, পিঁয়াজসহ নানা ধরণের সবজি উৎপাদন হয়, যা দেশের সার্বিক খাদ্য চাহিদা পূরণে প্রভাব পড়ে। তবে, চরাঞ্চলে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার তেমন না থাকায় চাষাবাদে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
তিনি জানান যথাযথ পরিকল্পা গ্রহণ করে চরাঞ্চলের জমি সর্বাত্মক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশের শস্য ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট প্রভাব রাখবে।
পানি গবেষক ড, আইনুন নিশাত জানান, নদীর স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি পরিবর্তন হওয়ায় প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। উজানের বালু এসে নদীর তলদেশে ভর্তি হয়ে অনাবাদি জমির পরিমান বাড়ছে।
এতে করে কৃষি নির্ভর মানুষজন আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হোচ্ছে। এজন্য তিনি নদীর গতি প্রকৃতি বুঝে ব্যবস্থাগ্রহণের পরামর্শ দেন।