সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : ফসলি জমি কমে যাওয়ায় বিলীন হচ্ছে কৃষি জমি -সংবাদ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিল্পের বিকাশে দ্রুত কমেছে ফসলি জমি। উপজেলার সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ফসলি জমি কমে যাওয়ায় খাদ্য ও শস্য ভান্ডার খ্যাত এ উপজেলাটি কৃষিতে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক দশকেই সবজি ও খাদ্যের জন্য এ উপজেলার মানুষকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগ মনে করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি অধ্যুষিত সীতাকুণ্ড উপজেলার কৃষকরা সুদীর্ঘকাল ধরেই খাদ্য শস্য ও সবজি উৎপাদন এবং রপ্তানির মাধ্যমে এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছিলেন। এখানে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে নিয়মিত চাষাবাদ হয়ে থাকে। মৌসুম ভেদে এখানে যেমন উৎপাদন হয় বোরো, আমন, আউশসহ নানারকম হাইব্রীড ও বন্যা, খরা সহিষ্ণু ধান তেমনি উৎপাদন হয় শিম, টমেটো, লাউ, কুমড়ো, বরবটি, বেগুন, ঝিঙ্গা, ভেন্ডি, পেঁপে, কলা, শাক, করলা, কাঁকরোলসহ আরো নানান রকম সবজি এবং ফলমূল। যা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হতো দেশের বিভিন্ন শহরে এমনকি বিদেশেও।
এদিকে এভাবে যুগ যুগ ধরে এ উপজেলাটি কৃষিতে সুনাম অক্ষুন্ন রাখলেও বিগত দুই দশকে এ উপজেলাটিতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিল্পায়ন। সীতাকুণ্ড ভৌগলিকভাবে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত হওয়ায় সুলভ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সুলভ শ্রমিকসহ নানান সুবিধার কারণে দেশের ছোট বড় অসংখ্য শিল্প গ্রুপ এখানে সুবিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এতে হাজার হাজার একর ফসলি জমি হারিয়ে গেছে।
সরেজমিনে উপজেলাটি কৃষি অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানে পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে সুবিশাল বঙ্গোপসাগরের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। কোন মৌসুমেই এসব জমি খালি থাকে না। কৃষকরা মৌসুম অনুযায়ী শাক-সবজি আবাদ করছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে শিল্পায়নের আগ্রাসনে প্রচুর জমি হারিয়ে ফেলায় কৃষকরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন।
পরিদর্শনকালে উপজেলার সলিমপুর, ভাটিয়ারী, সোনাইছড়ি, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, পৌরসভা, মুরাদপুর, বারৈয়াঢালা ও সৈয়দপুর পর্যন্ত প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ফসলি জমি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষির জমির উপরে যত্রতত্র তৈরী করা হয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও নানারকম বসত বাড়ি। ফলে একসময় যেখানে মাঠের পর মাঠ সবজিতে ঢাকা থাকত সেখানে এখন বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্দারীটোলা গ্রামের পশ্চিমে গিয়ে দেখা যায়, এখানে সুবিশাল মাঠের অধিকাংশ এলাকা এখন কল-কারখানার স্থাপনায় হারিয়ে গেছে। এই গ্রামের বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, বাড়বকুণ্ডের পশ্চিম অংশের ফসলি জমিতে কোনরকম কারখানা ছিলো না। আনুমানিক দুই দশক ধরে এখানে পাল্লা দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখন তো কৃষি জমি আছে নাম মাত্র। যেদিকে তাকাবেন দেখবেন সব বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের দখলে।
একই চিত্র কুমিরা, ভাটিয়ারী, সলিমপুরে। এ তিনটি ইউনিয়ন উপজেলার সর্ব দক্ষিণে। চট্টগ্রামের খুব কাছে এসব ইউনিয়নের অবস্থান হওয়ায় উপজেলার সবচেয়ে বেশি শিল্পায়ন হয়েছে এ তিনটি ইউনিয়নে। এখানে পূর্বে পাহাড় থেকে পশ্চিমে সাগর উপকূল পর্যন্ত সর্বত্র কারখানা স্থাপনের প্রতিযোগিতায় কৃষি জমি এক দশমাংশে নেমে এসেছে। ভাটিয়ারীর বাসিন্দা নন্দন রায় বলেন, যে গতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তাতে আগামী এক দশকে এখানে চাষাবাদের আর কোন জায়গা অবশিষ্ট থাকবে কিনা সন্দেহ আছে।
এদিকে এই তিন ইউনিয়নের মতো এত বেশি না হলেও বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, পৌরসভা, বারৈয়াঢালা কিংবা সৈয়দপুর ইউনিয়নেও শিল্পায়ন বা অন্যান্য স্থাপনার আগ্রাসন একেবারে কম নয়। ফলে সর্বত্র দ্রুত কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। মুরাদপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. ওসমান বলেন, কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। না হয় আমদানী করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লা সাংবাদিকদের বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলাটি কৃষিতে সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। এ উপজেলার শিম, টমেটো থেকে শুরু করে নানান সবজি ও ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি ইউরোপ আমেরিকাতেও রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানকার মাটি কৃষির জন্য খুবই উপযোগি।
ফলে চাষাবাদে বহু সাফল্য আছে। কিন্তু অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে এখানে কৃষি জমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এটি বন্ধ করা না গেলে বিদেশে রপ্তানি তো দূরের কথা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উপর নির্ভর করতে হবে সীতাকুণ্ড বাসীকে।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : ফসলি জমি কমে যাওয়ায় বিলীন হচ্ছে কৃষি জমি -সংবাদ
রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিল্পের বিকাশে দ্রুত কমেছে ফসলি জমি। উপজেলার সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ফসলি জমি কমে যাওয়ায় খাদ্য ও শস্য ভান্ডার খ্যাত এ উপজেলাটি কৃষিতে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক দশকেই সবজি ও খাদ্যের জন্য এ উপজেলার মানুষকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগ মনে করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি অধ্যুষিত সীতাকুণ্ড উপজেলার কৃষকরা সুদীর্ঘকাল ধরেই খাদ্য শস্য ও সবজি উৎপাদন এবং রপ্তানির মাধ্যমে এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছিলেন। এখানে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে নিয়মিত চাষাবাদ হয়ে থাকে। মৌসুম ভেদে এখানে যেমন উৎপাদন হয় বোরো, আমন, আউশসহ নানারকম হাইব্রীড ও বন্যা, খরা সহিষ্ণু ধান তেমনি উৎপাদন হয় শিম, টমেটো, লাউ, কুমড়ো, বরবটি, বেগুন, ঝিঙ্গা, ভেন্ডি, পেঁপে, কলা, শাক, করলা, কাঁকরোলসহ আরো নানান রকম সবজি এবং ফলমূল। যা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হতো দেশের বিভিন্ন শহরে এমনকি বিদেশেও।
এদিকে এভাবে যুগ যুগ ধরে এ উপজেলাটি কৃষিতে সুনাম অক্ষুন্ন রাখলেও বিগত দুই দশকে এ উপজেলাটিতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিল্পায়ন। সীতাকুণ্ড ভৌগলিকভাবে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত হওয়ায় সুলভ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সুলভ শ্রমিকসহ নানান সুবিধার কারণে দেশের ছোট বড় অসংখ্য শিল্প গ্রুপ এখানে সুবিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এতে হাজার হাজার একর ফসলি জমি হারিয়ে গেছে।
সরেজমিনে উপজেলাটি কৃষি অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানে পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে সুবিশাল বঙ্গোপসাগরের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। কোন মৌসুমেই এসব জমি খালি থাকে না। কৃষকরা মৌসুম অনুযায়ী শাক-সবজি আবাদ করছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে শিল্পায়নের আগ্রাসনে প্রচুর জমি হারিয়ে ফেলায় কৃষকরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন।
পরিদর্শনকালে উপজেলার সলিমপুর, ভাটিয়ারী, সোনাইছড়ি, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, পৌরসভা, মুরাদপুর, বারৈয়াঢালা ও সৈয়দপুর পর্যন্ত প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ফসলি জমি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষির জমির উপরে যত্রতত্র তৈরী করা হয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও নানারকম বসত বাড়ি। ফলে একসময় যেখানে মাঠের পর মাঠ সবজিতে ঢাকা থাকত সেখানে এখন বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্দারীটোলা গ্রামের পশ্চিমে গিয়ে দেখা যায়, এখানে সুবিশাল মাঠের অধিকাংশ এলাকা এখন কল-কারখানার স্থাপনায় হারিয়ে গেছে। এই গ্রামের বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, বাড়বকুণ্ডের পশ্চিম অংশের ফসলি জমিতে কোনরকম কারখানা ছিলো না। আনুমানিক দুই দশক ধরে এখানে পাল্লা দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখন তো কৃষি জমি আছে নাম মাত্র। যেদিকে তাকাবেন দেখবেন সব বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের দখলে।
একই চিত্র কুমিরা, ভাটিয়ারী, সলিমপুরে। এ তিনটি ইউনিয়ন উপজেলার সর্ব দক্ষিণে। চট্টগ্রামের খুব কাছে এসব ইউনিয়নের অবস্থান হওয়ায় উপজেলার সবচেয়ে বেশি শিল্পায়ন হয়েছে এ তিনটি ইউনিয়নে। এখানে পূর্বে পাহাড় থেকে পশ্চিমে সাগর উপকূল পর্যন্ত সর্বত্র কারখানা স্থাপনের প্রতিযোগিতায় কৃষি জমি এক দশমাংশে নেমে এসেছে। ভাটিয়ারীর বাসিন্দা নন্দন রায় বলেন, যে গতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তাতে আগামী এক দশকে এখানে চাষাবাদের আর কোন জায়গা অবশিষ্ট থাকবে কিনা সন্দেহ আছে।
এদিকে এই তিন ইউনিয়নের মতো এত বেশি না হলেও বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, পৌরসভা, বারৈয়াঢালা কিংবা সৈয়দপুর ইউনিয়নেও শিল্পায়ন বা অন্যান্য স্থাপনার আগ্রাসন একেবারে কম নয়। ফলে সর্বত্র দ্রুত কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। মুরাদপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. ওসমান বলেন, কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। না হয় আমদানী করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লা সাংবাদিকদের বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলাটি কৃষিতে সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। এ উপজেলার শিম, টমেটো থেকে শুরু করে নানান সবজি ও ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি ইউরোপ আমেরিকাতেও রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানকার মাটি কৃষির জন্য খুবই উপযোগি।
ফলে চাষাবাদে বহু সাফল্য আছে। কিন্তু অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে এখানে কৃষি জমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এটি বন্ধ করা না গেলে বিদেশে রপ্তানি তো দূরের কথা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উপর নির্ভর করতে হবে সীতাকুণ্ড বাসীকে।