ঋতুরাজ বসন্তের ফাল্গুন মাসের দোল পূর্ণিমায় আবির রাঙ্গানোর উৎসব ‘ফাগুয়া’র রঙে রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল চা শিল্পাঞ্চল মৌলভীবাজারের ছোট-বড় ৯২টি চা বাগান।
ধর্মীয় আচার আর লোকজ নাচ, গান, রঙের খেলায় মেতে উঠেছিল চা শ্রমিক জনগোষ্টি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগান মাঠে আয়োজন করে চা শ্রমিকদের মুল ফাগুয়া উৎসবের। এ উৎসবে প্রধান অতিথি অন্তবর্তী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ভার্চুয়ালী অংশ নিয়ে চা শ্রমিকদের সাথে একাত্ম হন।
গত শনিবার ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিক কলোনির সামনে ফুটবল মাঠকে রাঙ্গিয়ে তোলা হয়েছিল ফাগুয়া উৎসব উপলক্ষে। মাঠের একপাশে উচু আর রঙ্গিন মঞ্চ। নানা রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দশকের বসার স্থান। মঞ্চ থেকে অতিথিরা শুকনো রং ছিটিয়ে শুরু করেন ফাগুয়া উৎসব। অতিথিদের বক্তব্যের শেষে চা জনগোষ্ঠী শিল্পীরা গানে ও নৃত্যে তুলে ধরেন তাঁদের জীবনকাহিনি। জেলা প্রশাসন ও ফাগুয়া উৎসব উদ্?যাপন পরিষদের আয়োজনে এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত ফাগুয়া উৎসব এভাবে বিকেল গড়িয়ে চলতে থাকে ফুলছড়া চা বাগান মাঠে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন এর সভাপতিত্বে এউৎসবে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম, ফিনলে টি কোম্পানীর বালিশিরা ভ্যালীর ডিজিএম মো.সালাউদ্দিন, চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিংহ বাড়াইক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ফাগুয়া উৎসব উৎযাপন কমিটির সভাপতি ও এনসিপি’র কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক প্রিতম দাশ।
চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক জানিয়েছেন, ফাগুয়া চা শ্রমিকদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। চা শ্রমিকেরা এই উৎসবে অনেক আনন্দ করে।
চা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেমন নানা ভাষাভাষী মানুষ আছে, তেমনি তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টিতে ভিন্নতা আছে। দিনে দিনে চা জনগোষ্ঠীর অনেক ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এসব সংস্কৃতি ধরে রাখতে এগিয়ে আসার দাবি জানান এ চা জনগোষ্টি আদিবাসী নেতা।
ফাগুয়া উৎসব উদ্?যাপন পরিষদের প্রীতম দাশ বলেন, ফাগুয়া উৎসব বড় উৎসব হওয়ায় বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন।
উৎসব উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালী করা হয়। এ উৎসবে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীতি গুরুবন্দনা (ভোজপুরী), কুমুর দ্বৈত (বাড়াইক), হালি গীত (ভোজপুরী), পত্র সওরা (উড়িষ্যা), ডাল ও কাঠি নৃত্য (তেলেও), চড়াইয়া নৃত্য (উড়িষ্যা), কমেডি (ভোজপুরী) হাড়ি নৃত্য (উড়িষ্যা), ঝুমুর (মাহাতো কুর্মী), বিরহা, হোলি গীত (ভোজপুরী), হোড়কা বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে, হোলি গীত পরিবেশন করা হয়।
এতে সাতগাঁও চা বাগানের শ্রীমোহন লাল কৈরী ও তার দল ভোজপুরি নৃত্য ‘হোলি গীত’, নিউ সমনবাগ চা বাগানের মুক্তি কুর্মী ও তার দল ‘কুরমালি নৃত্য’, জঙ্গলবাড়ী চা বাগানের ভেরুনিকা কন্দ ও তার দল ‘কুই নিত্য’, শমসেরনগর চা বাগানের শেরতেলু তেলেগু-গনেশ আলমিক ও তার দল ‘গানতি বেজনী’, শিশেলবাড়ী চা বাগানের ভাগ্যরাজ বল্লম ও তার দল ‘ওড়িষা নৃত্য’, মিরতিংগা চা বাগানের ফুলমনি ও তার দল ‘শারুল নৃত্য’, ভুরভুড়িয়া চা বাগানের পুজা রিখিয়ানস ও তার দল ‘লাঠি নৃত্য’, কাকিয়াছড়া চা বাগানের সীমা মুন্ডা ও তার দল ‘মুন্ডারী নৃত্য’, সিন্দুরখান চা বাগানের পুনম বাড়াইক ও তার দল ‘ডমকচ নৃত্য’ও চন্দন বুনার্জি ও তার দল ‘ওড়িষা ভজন নৃত্য’, লাখাইছড়া চা বাগানের স্বপন সাওতাল ও তার দল ‘সাওতাল নৃত্য পরিবেশন করে। এ উৎসবে মোট ১৮টি চা বাগানের চা শ্রমিক জনগোষ্টির শিল্পীরা নিজস্ব লোকজ সংস্কৃতির নৃত্য প্রদর্শন করেন।
রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
ঋতুরাজ বসন্তের ফাল্গুন মাসের দোল পূর্ণিমায় আবির রাঙ্গানোর উৎসব ‘ফাগুয়া’র রঙে রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল চা শিল্পাঞ্চল মৌলভীবাজারের ছোট-বড় ৯২টি চা বাগান।
ধর্মীয় আচার আর লোকজ নাচ, গান, রঙের খেলায় মেতে উঠেছিল চা শ্রমিক জনগোষ্টি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগান মাঠে আয়োজন করে চা শ্রমিকদের মুল ফাগুয়া উৎসবের। এ উৎসবে প্রধান অতিথি অন্তবর্তী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ভার্চুয়ালী অংশ নিয়ে চা শ্রমিকদের সাথে একাত্ম হন।
গত শনিবার ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিক কলোনির সামনে ফুটবল মাঠকে রাঙ্গিয়ে তোলা হয়েছিল ফাগুয়া উৎসব উপলক্ষে। মাঠের একপাশে উচু আর রঙ্গিন মঞ্চ। নানা রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দশকের বসার স্থান। মঞ্চ থেকে অতিথিরা শুকনো রং ছিটিয়ে শুরু করেন ফাগুয়া উৎসব। অতিথিদের বক্তব্যের শেষে চা জনগোষ্ঠী শিল্পীরা গানে ও নৃত্যে তুলে ধরেন তাঁদের জীবনকাহিনি। জেলা প্রশাসন ও ফাগুয়া উৎসব উদ্?যাপন পরিষদের আয়োজনে এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত ফাগুয়া উৎসব এভাবে বিকেল গড়িয়ে চলতে থাকে ফুলছড়া চা বাগান মাঠে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন এর সভাপতিত্বে এউৎসবে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম, ফিনলে টি কোম্পানীর বালিশিরা ভ্যালীর ডিজিএম মো.সালাউদ্দিন, চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিংহ বাড়াইক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ফাগুয়া উৎসব উৎযাপন কমিটির সভাপতি ও এনসিপি’র কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক প্রিতম দাশ।
চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক জানিয়েছেন, ফাগুয়া চা শ্রমিকদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। চা শ্রমিকেরা এই উৎসবে অনেক আনন্দ করে।
চা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেমন নানা ভাষাভাষী মানুষ আছে, তেমনি তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টিতে ভিন্নতা আছে। দিনে দিনে চা জনগোষ্ঠীর অনেক ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এসব সংস্কৃতি ধরে রাখতে এগিয়ে আসার দাবি জানান এ চা জনগোষ্টি আদিবাসী নেতা।
ফাগুয়া উৎসব উদ্?যাপন পরিষদের প্রীতম দাশ বলেন, ফাগুয়া উৎসব বড় উৎসব হওয়ায় বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন।
উৎসব উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালী করা হয়। এ উৎসবে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীতি গুরুবন্দনা (ভোজপুরী), কুমুর দ্বৈত (বাড়াইক), হালি গীত (ভোজপুরী), পত্র সওরা (উড়িষ্যা), ডাল ও কাঠি নৃত্য (তেলেও), চড়াইয়া নৃত্য (উড়িষ্যা), কমেডি (ভোজপুরী) হাড়ি নৃত্য (উড়িষ্যা), ঝুমুর (মাহাতো কুর্মী), বিরহা, হোলি গীত (ভোজপুরী), হোড়কা বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে, হোলি গীত পরিবেশন করা হয়।
এতে সাতগাঁও চা বাগানের শ্রীমোহন লাল কৈরী ও তার দল ভোজপুরি নৃত্য ‘হোলি গীত’, নিউ সমনবাগ চা বাগানের মুক্তি কুর্মী ও তার দল ‘কুরমালি নৃত্য’, জঙ্গলবাড়ী চা বাগানের ভেরুনিকা কন্দ ও তার দল ‘কুই নিত্য’, শমসেরনগর চা বাগানের শেরতেলু তেলেগু-গনেশ আলমিক ও তার দল ‘গানতি বেজনী’, শিশেলবাড়ী চা বাগানের ভাগ্যরাজ বল্লম ও তার দল ‘ওড়িষা নৃত্য’, মিরতিংগা চা বাগানের ফুলমনি ও তার দল ‘শারুল নৃত্য’, ভুরভুড়িয়া চা বাগানের পুজা রিখিয়ানস ও তার দল ‘লাঠি নৃত্য’, কাকিয়াছড়া চা বাগানের সীমা মুন্ডা ও তার দল ‘মুন্ডারী নৃত্য’, সিন্দুরখান চা বাগানের পুনম বাড়াইক ও তার দল ‘ডমকচ নৃত্য’ও চন্দন বুনার্জি ও তার দল ‘ওড়িষা ভজন নৃত্য’, লাখাইছড়া চা বাগানের স্বপন সাওতাল ও তার দল ‘সাওতাল নৃত্য পরিবেশন করে। এ উৎসবে মোট ১৮টি চা বাগানের চা শ্রমিক জনগোষ্টির শিল্পীরা নিজস্ব লোকজ সংস্কৃতির নৃত্য প্রদর্শন করেন।