alt

সারাদেশ

ভালুকার পাল সম্প্রদায়ের জীবিকার মাধ্যম মৃৎশিল্প

প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ) : রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

পাত্র তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী -সংবাদ

নব বর্ষের আগমনী বার্তা গ্রামের মানুষের মাঝে আদিকাল হতে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। পহেলা বৈশাখ বাঙালির ঘরে ঘরে নানা আয়োজনে নতুনত্বের আবাহ এনে দেয়। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে ভালুকার মৃৎশিল্পী বা পাল সম্প্রদায়ের গৃহিণীরা ব্যস্ত সময় পার করেন মাটির তৈজসপত্র তৈরীতে। গ্রাম-শহর মহল্লায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর বৈশাখী মেলায় নানা পণ্যের বাহারি দোকানপাটে পছন্দের পণ্য কিনতে দলে দলে ভীড় করে নারী শিশু কিশোর কিশোরীসহ সব বয়সের মানুষ। গ্রাম্য মেলার আদি বৈশিষ্ট মৃৎশিল্পী পাল সম্প্রদায়ের তৈরি বিভিন্ন মাটির তৈজসপত্র। সারি সারি দোকানে মাটির পুতুল, হাতি ঘোড়া, মাটির ব্যাংক ইত্যাদি শিশুদের নজর কারা তৈজসপত্র বেচা কেনায় জমে উঠে বৈশাখী মেলায়।

এক সময়ের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাটির তৈজসপত্র নির্মাণকারী পাল সম্প্রদায়ের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় তাদের জীবনে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। বিজ্ঞানের আধুনিকায়ন ও উন্নত প্রযুক্তির তৈরি দীর্ঘস্থায়ী বাসনপত্র ও সামগ্রীর কাছে মাটির তৈরি ঠুনকো জিনিষ এখন আর মানুষের নজরে লাগে না। তার পরও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মাটির তৈরী হাড়ি পাতিলের প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি বলে এখনও পাল সম্প্রদায়ের অনেকে সাত পুরুষের আদি পেশা জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ধরে রেখেছেন। উপজেলার মল্লিকবাড়ী বাজার-সংলগ্ন অনেক পুরনো পালপাড়া। যেখানে দিনভর চলত মাটি গুলে বাসনপত্র তৈরির কাজ। মাটি নরম করা, চাকা ঘুড়িয়ে এক খ- মাটিতে সুনিপুণ হাত বুলিয়ে তৈরি হতো নানা আকৃতির হাঁড়ি পাতিল। সারাদিন রোদে শুকিয়ে পুইনঘরে কাঠখড় দিয়ে পুড়ে তৈরি হতো টনটনে হাঁড়িপাতিল ও নানা রকম বাসন কোসন। পাতিলের উপর মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রং তুলিতে চমৎকার আলপনা ফুটিয়ে তুলে সেসব জিনিস হাটে বাজারে গ্রামেগঞ্জে বিক্রি করে তাদের ঘরে আসতো সংসার খরচের নগদ অর্থ। তবে প্রতি বছর নব বর্ষের সময় তাদের কাজের চাপ অনেকটা বেড়ে যায় মেলার তৈজসপত্র তৈরি উপলক্ষে। ১২ এপ্রিল শনিবার মল্লিকবাড়ী পালপাড়ায় গেলে শুভারানী পাল (৪৫) বলেন,অল্প বয়সে শাখা সিঁদুর পরে স্বামী শশুরের ভিটায় এসে কাঠের চাকা হাতে লয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন, খেলনা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ভাতের পেয়ালা, ভাতের ডহি, পানির হাঁিড় কলস, পিঠার খোলা, খৈ ভাজার পাতিল, গরুর চাড়ি, ধান চাল রাহনের বড় ঝালা, মুটকি, আলো জ্বালানোর মাটির প্রদীপ অনেক কিছু তৈরী হতো। এত কাজ ছিল যে ভাত খাওয়ার সময় হতো না, ফইরারা ঘাটে নাও ভিড়িয়ে বাড়ি থেকে পাতিল নিয়া যাইত নাও ভরে। এখন আর অত কাজ নাই, মিষ্টির দোকানে দৈয়ের পেয়ালা আর রসের হাঁড়ি, পিঠার খোলা পাইলা ছাড়া আর কিছুই চলে না, পেটের দায়ে সাত পুরুষের কাম কইরা কোন রকমে বাইচ্চা আছেন তারা”। তবে নববর্ষের সময় মেলায় মেলায় শিশুদের খেলনা জাতীয় কিছু তৈজসপত্র তারা বিক্রি করি। প্রতিটি দৈয়ের পাতিল তিন টাকায় বিক্রি হয় ফরিয়াদের কাছে। ফরিয়ারা নিয়ে পাঁচ টাকা করে বিক্রি করে মিষ্টির দোকানে। মাটি প্রস্তুত থাকলে সারাদিনে ১০০ পাতিল তৈরি করতে পারি। সামান্য আয় রোজগারে অতি কষ্টে সংসার চলে। তার উপর এনজিও হতে নেয়া ঋণের টাকার কিস্তি পরিষোধে হিমসিম খেতে হয় সারা মাস। তিনি জানান চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ আসলে তাদের তৈরি খেলনা সামগ্রী, মাটির বিভিন্ন সাইজের পাতিলের ব্যাপক কাটতি হতো। মাটির পাতিলে করে গ্রামের মেলা থেকে মুড়ি ও গরম গরম জিলিপি কিনে দলবেঁধে বাড়ি ফেরা ছিল নববর্ষের উৎসবের চিরচেনা বৈশিষ্ট। এখন আর সেই রকম আয়োজন হয়না। মাটির পাতিলের কদর আগের মতো না থাকায় তাদের আয় রোজগার একেবারেই কমে গেছে। পরাণ পাল জানান, তাদের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় আয় রোজগার নাই বললেই চলে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে তাদের জীবন চলে। এক সময় তাদের তৈরি মাটির জিনিষ পত্র বিক্রি করে সারা বছরের সংসার খরচ চালিয়ে দু’পয়সা উপড়ি থাকতো। আবাদি জমি নাই যে ফসল ফলিয়ে তা দিয়ে ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ চালাবেন। অর্থকড়ি নেই যে পেশা বদলিয়ে অন্য ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করবেন। সরকারি সাহায্য সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। গৃহস্তের কাছ থেকে চড়া দামে এঁটেল মাটি কিনে কিছু কিছু হাঁড়ি পাতিল তৈরি করেন। পাতিল পুড়ার পুঁইন জ্বালানোর লাকড়ির দাম অনেক বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় বাজারে মাটির হাঁড়ি পাতিলের দাম পাওয়া যায় না। এই এলাকায় পাল সম্প্রদায়ের ৩০-৪০টি পরিবার এখনও বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি আকড়ে ধরে পরে আছে। এদের মধ্যে অনেকেই জীবিকার তাড়নায় কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে পেশা বদল করেছে। আবাহমান বাংলার গৃহস্থ পরিবারের নিত্য কর্মের সহায়ক চিরচেনা প্রাচীনতম ঐতিহ্যভরা মৃৎশিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে তারা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছে।

ছবি

চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় আরও ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

ঠিকাদারকে ফোন করে ‘জিলাপির আবদার’, ওসির অডিও ফাঁস

মহেশখালীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীর লাঠির আঘাতে বিএনপি কর্মীর মৃত্যু,আটক ১

ছবি

জাজিরায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ২

ছবি

রামুতে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে বৌদ্ধ স্নান ও জলকেলি উৎসব অনুষ্ঠিত

ছবি

ডিসি হিলে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর, অনুষ্ঠান বাতিল

ছবি

ট্রাইব্যুনালের ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ জন্য পুলিশের হেফাজতে রাঙামাটির এসপি অনির্বান চৌধুরী

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

শিবগঞ্জে একই গাছে দুই ফসল টম আলু

বোরো ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

ফাগুয়ার রঙে রঙিন চা বাগান

ছবি

বেদে সম্প্রদায়ের ভাসমান জীবনের গল্প

ছবি

ধর্মপাশায় ডোবার পানিতে ডুবে মামাতো ভাই-বোনের মৃত্যু

ছবি

সীতাকুণ্ডে লিফট ছিঁড়ে পড়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যু

সিদ্ধিরগঞ্জে ৩ খুন, সন্দেহভাজন যুবক ৫ দিনের রিমান্ডে

ছবি

মোরেলগঞ্জে বিএনপি কাউন্সিলের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর, আহত ৭

গ্যাস সিলিন্ডার কারখানায় অভিযান, গ্রেপ্তার ১

টিকটকে পরিচয় পলাশে কিশোরী ধর্ষণের শিকার, আটক ১

রামু থানার সাবেক এসআইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

যশোরে মেয়েদের শয়নকক্ষে সিসি ক্যামেরা, কওমি মাদ্রাসা বন্ধ

খাসিয়াদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর

কক্সবাজারে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার

কর্ণফুলীতে লক্ষাধিক টাকার জাল পুড়িয়ে ধ্বংস

কলারোয়ায় পুলিশের ওপর হামলা মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা, গ্রেপ্তার ৫

ছবি

রায়পুরে সংঘর্ষে নিহত স্পেন প্রবাসী আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে স্ত্রী-সন্তানের মানববন্ধন

ছবি

পদ্মার পানি প্রবাহিত না হওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে খাল

ছবি

চাঁদপুরে ৫ টন জাটকা জব্দ

পবিপ্রবিতে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি রোষানলে পড়ে পালিয় বেড়াচ্ছেন জেলে নিখিল

কসবায় ট্রাক-বাসের সংঘর্ষে নিহত ২

সুন্দরবনের হরিণের চামড়াসহ মাংস উদ্ধার

ডুমুরিয়ায় পাঁচটি নদীর চর দখলের মহোৎসব

ফরিদপুরে ব্যবসায়ী হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ না দেয়ায় পোশাক কারখানায় ভাঙচুর, ৪৫ জন আটক

কৃষকদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ফকিরহাটে গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেল চালকের, গাছ চাপায় শ্রমিক নিহত

tab

সারাদেশ

ভালুকার পাল সম্প্রদায়ের জীবিকার মাধ্যম মৃৎশিল্প

প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

পাত্র তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী -সংবাদ

রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

নব বর্ষের আগমনী বার্তা গ্রামের মানুষের মাঝে আদিকাল হতে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। পহেলা বৈশাখ বাঙালির ঘরে ঘরে নানা আয়োজনে নতুনত্বের আবাহ এনে দেয়। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে ভালুকার মৃৎশিল্পী বা পাল সম্প্রদায়ের গৃহিণীরা ব্যস্ত সময় পার করেন মাটির তৈজসপত্র তৈরীতে। গ্রাম-শহর মহল্লায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর বৈশাখী মেলায় নানা পণ্যের বাহারি দোকানপাটে পছন্দের পণ্য কিনতে দলে দলে ভীড় করে নারী শিশু কিশোর কিশোরীসহ সব বয়সের মানুষ। গ্রাম্য মেলার আদি বৈশিষ্ট মৃৎশিল্পী পাল সম্প্রদায়ের তৈরি বিভিন্ন মাটির তৈজসপত্র। সারি সারি দোকানে মাটির পুতুল, হাতি ঘোড়া, মাটির ব্যাংক ইত্যাদি শিশুদের নজর কারা তৈজসপত্র বেচা কেনায় জমে উঠে বৈশাখী মেলায়।

এক সময়ের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাটির তৈজসপত্র নির্মাণকারী পাল সম্প্রদায়ের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় তাদের জীবনে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। বিজ্ঞানের আধুনিকায়ন ও উন্নত প্রযুক্তির তৈরি দীর্ঘস্থায়ী বাসনপত্র ও সামগ্রীর কাছে মাটির তৈরি ঠুনকো জিনিষ এখন আর মানুষের নজরে লাগে না। তার পরও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মাটির তৈরী হাড়ি পাতিলের প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি বলে এখনও পাল সম্প্রদায়ের অনেকে সাত পুরুষের আদি পেশা জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ধরে রেখেছেন। উপজেলার মল্লিকবাড়ী বাজার-সংলগ্ন অনেক পুরনো পালপাড়া। যেখানে দিনভর চলত মাটি গুলে বাসনপত্র তৈরির কাজ। মাটি নরম করা, চাকা ঘুড়িয়ে এক খ- মাটিতে সুনিপুণ হাত বুলিয়ে তৈরি হতো নানা আকৃতির হাঁড়ি পাতিল। সারাদিন রোদে শুকিয়ে পুইনঘরে কাঠখড় দিয়ে পুড়ে তৈরি হতো টনটনে হাঁড়িপাতিল ও নানা রকম বাসন কোসন। পাতিলের উপর মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রং তুলিতে চমৎকার আলপনা ফুটিয়ে তুলে সেসব জিনিস হাটে বাজারে গ্রামেগঞ্জে বিক্রি করে তাদের ঘরে আসতো সংসার খরচের নগদ অর্থ। তবে প্রতি বছর নব বর্ষের সময় তাদের কাজের চাপ অনেকটা বেড়ে যায় মেলার তৈজসপত্র তৈরি উপলক্ষে। ১২ এপ্রিল শনিবার মল্লিকবাড়ী পালপাড়ায় গেলে শুভারানী পাল (৪৫) বলেন,অল্প বয়সে শাখা সিঁদুর পরে স্বামী শশুরের ভিটায় এসে কাঠের চাকা হাতে লয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন, খেলনা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ভাতের পেয়ালা, ভাতের ডহি, পানির হাঁিড় কলস, পিঠার খোলা, খৈ ভাজার পাতিল, গরুর চাড়ি, ধান চাল রাহনের বড় ঝালা, মুটকি, আলো জ্বালানোর মাটির প্রদীপ অনেক কিছু তৈরী হতো। এত কাজ ছিল যে ভাত খাওয়ার সময় হতো না, ফইরারা ঘাটে নাও ভিড়িয়ে বাড়ি থেকে পাতিল নিয়া যাইত নাও ভরে। এখন আর অত কাজ নাই, মিষ্টির দোকানে দৈয়ের পেয়ালা আর রসের হাঁড়ি, পিঠার খোলা পাইলা ছাড়া আর কিছুই চলে না, পেটের দায়ে সাত পুরুষের কাম কইরা কোন রকমে বাইচ্চা আছেন তারা”। তবে নববর্ষের সময় মেলায় মেলায় শিশুদের খেলনা জাতীয় কিছু তৈজসপত্র তারা বিক্রি করি। প্রতিটি দৈয়ের পাতিল তিন টাকায় বিক্রি হয় ফরিয়াদের কাছে। ফরিয়ারা নিয়ে পাঁচ টাকা করে বিক্রি করে মিষ্টির দোকানে। মাটি প্রস্তুত থাকলে সারাদিনে ১০০ পাতিল তৈরি করতে পারি। সামান্য আয় রোজগারে অতি কষ্টে সংসার চলে। তার উপর এনজিও হতে নেয়া ঋণের টাকার কিস্তি পরিষোধে হিমসিম খেতে হয় সারা মাস। তিনি জানান চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ আসলে তাদের তৈরি খেলনা সামগ্রী, মাটির বিভিন্ন সাইজের পাতিলের ব্যাপক কাটতি হতো। মাটির পাতিলে করে গ্রামের মেলা থেকে মুড়ি ও গরম গরম জিলিপি কিনে দলবেঁধে বাড়ি ফেরা ছিল নববর্ষের উৎসবের চিরচেনা বৈশিষ্ট। এখন আর সেই রকম আয়োজন হয়না। মাটির পাতিলের কদর আগের মতো না থাকায় তাদের আয় রোজগার একেবারেই কমে গেছে। পরাণ পাল জানান, তাদের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় আয় রোজগার নাই বললেই চলে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে তাদের জীবন চলে। এক সময় তাদের তৈরি মাটির জিনিষ পত্র বিক্রি করে সারা বছরের সংসার খরচ চালিয়ে দু’পয়সা উপড়ি থাকতো। আবাদি জমি নাই যে ফসল ফলিয়ে তা দিয়ে ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ চালাবেন। অর্থকড়ি নেই যে পেশা বদলিয়ে অন্য ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করবেন। সরকারি সাহায্য সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। গৃহস্তের কাছ থেকে চড়া দামে এঁটেল মাটি কিনে কিছু কিছু হাঁড়ি পাতিল তৈরি করেন। পাতিল পুড়ার পুঁইন জ্বালানোর লাকড়ির দাম অনেক বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় বাজারে মাটির হাঁড়ি পাতিলের দাম পাওয়া যায় না। এই এলাকায় পাল সম্প্রদায়ের ৩০-৪০টি পরিবার এখনও বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি আকড়ে ধরে পরে আছে। এদের মধ্যে অনেকেই জীবিকার তাড়নায় কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে পেশা বদল করেছে। আবাহমান বাংলার গৃহস্থ পরিবারের নিত্য কর্মের সহায়ক চিরচেনা প্রাচীনতম ঐতিহ্যভরা মৃৎশিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে তারা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছে।

back to top