নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে মাটিতে নুয়ে পড়েছে বোরো ধান -সংবাদ
বগুড়ার নন্দীগ্রামে শুরু হয়েছে আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই। বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে একদিনের বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে মাটির সাথে লুটিয়ে পড়েছে কৃষকের সোনালি ফসল ইরি-বোরো ধান।
একদিকে জমিতে ভরপুর পানি জমে আছে, অন্যদিকে শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরি এবং বৈরী আবহাওয়া সব মিলিয়ে বোরোর বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই নন্দীগ্রামের কৃষকদের মুখে। এদিকে পুরোদমে ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগতে পারে।
এই আগাম জাতের ধান আগেই পাকতে শুরু করে। অনেক কৃষকই দ্রুত বাজারে ধান তুলতে এবং ভালো দাম পেতে এই জাত বেছে নেন। এ উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে আগাম জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে।
কৃষকরা মিনিকেট, ব্রি-ধান ৯০, বিনা-৭, বিনা-১৭ ও কাটারিভোগ আবাদ করেছেন। আগাম জাতের ধান গড়ে বিঘাপ্রতি ধানের ফলন হচ্ছে ২০ থেকে ২২ মণ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নন্দীগ্রামে ১৯ হজার ৮শ’ ৫২ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম জাতের ধান চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন।
উপজেলার বেশকিছু এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি একটু বেশি থাকলেও আগাম বিক্রির সুযোগ থাকায় তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন।
এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে তাদের ধানের বীজ, হাল চাষ, সার ও ধান কাটা সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ একদিনের বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেছে, জমিতে পানি জমে রয়েছে, এ কারণে অধিক মজুরি দিয়ে ধান কেটে নিতে হচ্ছে কৃষকদের।
বেশ কিছু এলাকায় দেখা যায় বৃষ্টির পানি পাকা ধান ক্ষেতে জমে আছে। শ্রমিকরা পানির মধ্যেই ধান কাটছে। শুকনা সময় বিঘাপ্রতি ধান কাটা আনা ও মাড়াই করতে আটজন শ্রমিক লাগলেও বর্তমানে জমিতে পানি জমে থাকায় ১০ থেকে তার অধিক শ্রমিক লাগছে। এতে করে কৃষকের সময় ও টাকা বেশি লাগছে।
উপজেলার নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের হাটলাল গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, আমি এ বছর ১৮ বিঘা জমিতে আগাম ধান লাগিয়েছি। এখনো পুরোপুরি ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়নি, কিন্তু আমি আগাম জাতের ধান চাষাবাদ করায় আগেই ধান কাটা শুরু করেছি।
ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে কিন্তু বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধান মাটিতে পড়ে গেছে। শ্রমিকের দাম এত বেশি যে সাত হাজার টাকা বিঘা জমি কেটে নিতে হচ্ছে। যদি ধানের বাজার ভালো না থাকে তাহলে লাভের সম্ভাবনা খুবই কম।
কৃষক সাইদুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ২৫ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করেছি, ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে শ্রমিকের দাম একটু বেশি, তবে এখন বাজারে ধানের দাম একটু ভালো।
বর্তমানে বাজারে ধানের দাম প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১৩শ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ধান কাটা শেষ পর্যন্ত যদি বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলে আশা করা যায় কিছুটা লাভের মুখ দেখা যাবে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা ধানের বাজারমূল্যও ভালো পাচ্ছেন। আমার কৃষকদের পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় আশা করছি কৃষকরা লাভবান হবেন।
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে মাটিতে নুয়ে পড়েছে বোরো ধান -সংবাদ
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
বগুড়ার নন্দীগ্রামে শুরু হয়েছে আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই। বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে একদিনের বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে মাটির সাথে লুটিয়ে পড়েছে কৃষকের সোনালি ফসল ইরি-বোরো ধান।
একদিকে জমিতে ভরপুর পানি জমে আছে, অন্যদিকে শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরি এবং বৈরী আবহাওয়া সব মিলিয়ে বোরোর বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই নন্দীগ্রামের কৃষকদের মুখে। এদিকে পুরোদমে ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগতে পারে।
এই আগাম জাতের ধান আগেই পাকতে শুরু করে। অনেক কৃষকই দ্রুত বাজারে ধান তুলতে এবং ভালো দাম পেতে এই জাত বেছে নেন। এ উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে আগাম জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে।
কৃষকরা মিনিকেট, ব্রি-ধান ৯০, বিনা-৭, বিনা-১৭ ও কাটারিভোগ আবাদ করেছেন। আগাম জাতের ধান গড়ে বিঘাপ্রতি ধানের ফলন হচ্ছে ২০ থেকে ২২ মণ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নন্দীগ্রামে ১৯ হজার ৮শ’ ৫২ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম জাতের ধান চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন।
উপজেলার বেশকিছু এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি একটু বেশি থাকলেও আগাম বিক্রির সুযোগ থাকায় তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন।
এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে তাদের ধানের বীজ, হাল চাষ, সার ও ধান কাটা সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ একদিনের বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেছে, জমিতে পানি জমে রয়েছে, এ কারণে অধিক মজুরি দিয়ে ধান কেটে নিতে হচ্ছে কৃষকদের।
বেশ কিছু এলাকায় দেখা যায় বৃষ্টির পানি পাকা ধান ক্ষেতে জমে আছে। শ্রমিকরা পানির মধ্যেই ধান কাটছে। শুকনা সময় বিঘাপ্রতি ধান কাটা আনা ও মাড়াই করতে আটজন শ্রমিক লাগলেও বর্তমানে জমিতে পানি জমে থাকায় ১০ থেকে তার অধিক শ্রমিক লাগছে। এতে করে কৃষকের সময় ও টাকা বেশি লাগছে।
উপজেলার নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের হাটলাল গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, আমি এ বছর ১৮ বিঘা জমিতে আগাম ধান লাগিয়েছি। এখনো পুরোপুরি ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়নি, কিন্তু আমি আগাম জাতের ধান চাষাবাদ করায় আগেই ধান কাটা শুরু করেছি।
ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে কিন্তু বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধান মাটিতে পড়ে গেছে। শ্রমিকের দাম এত বেশি যে সাত হাজার টাকা বিঘা জমি কেটে নিতে হচ্ছে। যদি ধানের বাজার ভালো না থাকে তাহলে লাভের সম্ভাবনা খুবই কম।
কৃষক সাইদুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ২৫ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করেছি, ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে শ্রমিকের দাম একটু বেশি, তবে এখন বাজারে ধানের দাম একটু ভালো।
বর্তমানে বাজারে ধানের দাম প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১৩শ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ধান কাটা শেষ পর্যন্ত যদি বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলে আশা করা যায় কিছুটা লাভের মুখ দেখা যাবে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা ধানের বাজারমূল্যও ভালো পাচ্ছেন। আমার কৃষকদের পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় আশা করছি কৃষকরা লাভবান হবেন।