সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আড়াই লাখ মেট্টিক টন
মৌলভীবাজার : হাকালুকি হাওরের বুকজুড়ে কর্মব্যস্ত কৃষক -সংবাদ
দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে শুরু হয়েছে বোর ধান কাটা। আকাশে মেঘের গর্জনে স্বপ্নের ফসল বোর ফসল ঘরে তোলতে ব্যবস্থ এখন কৃষক পরিবারের লোকজন। ধান কাটা শুরু হয়েছে জেলার অন্য দুই হাওর হাইল হাওর এবং কাওয়াদীঘি হাওরে।
ধান কাটায় প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এবারের বোর মৌসুমে মৌলভীবাজার জেলায় ন ১৭১টি আধুনিক ধান কাটার মেশিন সচল রয়েছে।
দীর্ঘ খড়ায় বিলম্বিত হয়েছে বোর ফসল। তবে অপেক্ষাকৃত নিচু এবং সেচ সুবিধার জমিতে ইতোমধ্যেই ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে, হাকালুকি হাওরের কৃষক আব্দুর রহিম জানিয়েছেন এ তথ্য।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ি এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। এ হাওরে এখন বাতাসে কৃষকের স্বপ্ন দুলে। জমিতে এখন বোর ধানের তিন অবস্থা।
অধিকাংশ জমিতে ধানের শীষ পাকার অপেক্ষায়। তবে এক চতুর্থাংশ জমির ফসল সোনালী আকার ধারণ করেছে ইতোমধ্যেই। এসব জমির ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা। আগামি পনের দিনের মধ্যে পরো হাওরেই ধান কাটার উপযুক্ত হবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
হাকালুকি হাওরের বুকজুড়ে এখন কর্মব্যস্থ কৃষক। কোথাও ধান কাটা হচ্ছে, কাটা ধান কাঁধ ভাড়ে, ট্রলিতে কিংবা ঠেলা গাড়িতে বহন করে উঁচু স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাটা ধান মারাই দিচ্ছে কেউ কেউ। এখন প্রায় সব কৃষকই ধান মারাই মেশিন দিয়ে ধান মারাই দিচ্ছে। গরু দিয়ে ধান মারাইর প্রচলন নেই বললেই চলে। কোন কোন এলাকায় কম্ভাইহার্বেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, হাওরের নিম্নাঞ্চলে যেখানে পর্যাপ্ত পানির সুবিধা ছিল সেখানে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে উঁচু জমিতে সাম্প্রতিক খড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফলন। অনেক এলাকায় খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পানি সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি। জমি ফেটে গিয়েছিল। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এসব এলাকার ফসলে প্রাণ ফিরেছে। ধানের শীষ অপেক্ষাকৃত ছোট আকারে বের হওয়ায় ফলন কম হবে শুকিয়ে যাওয়া এসব জমিতে, বলছিলেন জুড়ি এলাকার কৃষত মন্তাজ মিয়া।
কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকার কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এবারের বোর ফলনে খরচ মিটে যাবে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে খড়া না হলে আরও ভালো ফলন হতো। এখন ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি বেশি। অনেকট শ্রমিক দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরি চাচ্ছে। যদি ধান কাটার বড় মেশিন সহজলভ্য হতো তাহলে ধান কাটার খরচ কমতো। এতে কৃষকরা উপকৃত হতো। তিনি জানান, ৪ একর জমিতে বোর আবাদ করছেন এবং ২০০ মণের কাছাকাছি ধান পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
রাজনগর উপজেলার মনু ইরিগেশন প্রজেক্টভুক্ত কাওয়াদীঘি হাওর মূলত ইরিগেশন প্রজেক্টের পানিতে বোর ধানের চাষ হয়। এবারও ভালো ফলন হয়েছে বাঁধ দিয়ে সংরক্ষিত এই কাওয়াদীঘি হাওরে। অন্তেহরি গ্রামের কৃষক অনিল দাশের শঙ্খা ধানের নায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে। তিনি বলেন, ধান চাষে খরচ বেড়েছে। তাই ধানের নায্যমূল্য পাওয়া গেলে খরচ পোষানো সম্ভব হবে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন জানান, মৌলভীবাজার জেলায় চলতি মৌসুমে ৬২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা। ফলে জেলায় বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। ধান কাটার মৌসুমে কৃষকদের জেলায় বর্তমানে ১৭১টি আধুনিক ধান কাটার মেশিন সচল রয়েছে, যা কৃষকদের শ্রম ও সময় বাঁচাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, এ ছাড়া ধান যেন দ্রুত ও নিরাপদে ঘরে তোলা যায়, সেজন্য আমাদেরটিম মাঠে কাজ করছে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মো. আজাদ মিয়া জানান, এবার ২৭ একর জমিতে ব্রি-৮৮ জাতের ধান লাগিয়েছেন। ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি একরে ৫০ থেকে ৫৫ মণ ধান আশা করছেন। একই এলাকার কৃষক ফজলু মিয়া জানান, ১০ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন এবং ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশা করছেন।
হাইল হাওরের ধান কাটছেন অনেক চা শ্রমিক। মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোর অনিয়মিত শ্রমিকদের একটা অংশ গত কয়েক বছর ধরে বোর মৌসুমে হাওরের ধান কাটতে যান। ফলে অন্য জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিকের ওপর চাপ কমেছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, এবার ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে ব্রি-৯২ জাতটি হাওর এলাকার মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। কোন দুর্যোগ না হওলে আশা করছি ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টনের বেশি ধান উৎপাদিত হবে এ বছর।
সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আড়াই লাখ মেট্টিক টন
মৌলভীবাজার : হাকালুকি হাওরের বুকজুড়ে কর্মব্যস্ত কৃষক -সংবাদ
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে শুরু হয়েছে বোর ধান কাটা। আকাশে মেঘের গর্জনে স্বপ্নের ফসল বোর ফসল ঘরে তোলতে ব্যবস্থ এখন কৃষক পরিবারের লোকজন। ধান কাটা শুরু হয়েছে জেলার অন্য দুই হাওর হাইল হাওর এবং কাওয়াদীঘি হাওরে।
ধান কাটায় প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এবারের বোর মৌসুমে মৌলভীবাজার জেলায় ন ১৭১টি আধুনিক ধান কাটার মেশিন সচল রয়েছে।
দীর্ঘ খড়ায় বিলম্বিত হয়েছে বোর ফসল। তবে অপেক্ষাকৃত নিচু এবং সেচ সুবিধার জমিতে ইতোমধ্যেই ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে, হাকালুকি হাওরের কৃষক আব্দুর রহিম জানিয়েছেন এ তথ্য।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ি এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। এ হাওরে এখন বাতাসে কৃষকের স্বপ্ন দুলে। জমিতে এখন বোর ধানের তিন অবস্থা।
অধিকাংশ জমিতে ধানের শীষ পাকার অপেক্ষায়। তবে এক চতুর্থাংশ জমির ফসল সোনালী আকার ধারণ করেছে ইতোমধ্যেই। এসব জমির ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা। আগামি পনের দিনের মধ্যে পরো হাওরেই ধান কাটার উপযুক্ত হবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
হাকালুকি হাওরের বুকজুড়ে এখন কর্মব্যস্থ কৃষক। কোথাও ধান কাটা হচ্ছে, কাটা ধান কাঁধ ভাড়ে, ট্রলিতে কিংবা ঠেলা গাড়িতে বহন করে উঁচু স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাটা ধান মারাই দিচ্ছে কেউ কেউ। এখন প্রায় সব কৃষকই ধান মারাই মেশিন দিয়ে ধান মারাই দিচ্ছে। গরু দিয়ে ধান মারাইর প্রচলন নেই বললেই চলে। কোন কোন এলাকায় কম্ভাইহার্বেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, হাওরের নিম্নাঞ্চলে যেখানে পর্যাপ্ত পানির সুবিধা ছিল সেখানে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে উঁচু জমিতে সাম্প্রতিক খড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফলন। অনেক এলাকায় খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পানি সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি। জমি ফেটে গিয়েছিল। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এসব এলাকার ফসলে প্রাণ ফিরেছে। ধানের শীষ অপেক্ষাকৃত ছোট আকারে বের হওয়ায় ফলন কম হবে শুকিয়ে যাওয়া এসব জমিতে, বলছিলেন জুড়ি এলাকার কৃষত মন্তাজ মিয়া।
কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকার কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এবারের বোর ফলনে খরচ মিটে যাবে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে খড়া না হলে আরও ভালো ফলন হতো। এখন ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি বেশি। অনেকট শ্রমিক দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরি চাচ্ছে। যদি ধান কাটার বড় মেশিন সহজলভ্য হতো তাহলে ধান কাটার খরচ কমতো। এতে কৃষকরা উপকৃত হতো। তিনি জানান, ৪ একর জমিতে বোর আবাদ করছেন এবং ২০০ মণের কাছাকাছি ধান পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
রাজনগর উপজেলার মনু ইরিগেশন প্রজেক্টভুক্ত কাওয়াদীঘি হাওর মূলত ইরিগেশন প্রজেক্টের পানিতে বোর ধানের চাষ হয়। এবারও ভালো ফলন হয়েছে বাঁধ দিয়ে সংরক্ষিত এই কাওয়াদীঘি হাওরে। অন্তেহরি গ্রামের কৃষক অনিল দাশের শঙ্খা ধানের নায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে। তিনি বলেন, ধান চাষে খরচ বেড়েছে। তাই ধানের নায্যমূল্য পাওয়া গেলে খরচ পোষানো সম্ভব হবে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন জানান, মৌলভীবাজার জেলায় চলতি মৌসুমে ৬২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা। ফলে জেলায় বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। ধান কাটার মৌসুমে কৃষকদের জেলায় বর্তমানে ১৭১টি আধুনিক ধান কাটার মেশিন সচল রয়েছে, যা কৃষকদের শ্রম ও সময় বাঁচাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, এ ছাড়া ধান যেন দ্রুত ও নিরাপদে ঘরে তোলা যায়, সেজন্য আমাদেরটিম মাঠে কাজ করছে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মো. আজাদ মিয়া জানান, এবার ২৭ একর জমিতে ব্রি-৮৮ জাতের ধান লাগিয়েছেন। ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি একরে ৫০ থেকে ৫৫ মণ ধান আশা করছেন। একই এলাকার কৃষক ফজলু মিয়া জানান, ১০ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন এবং ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশা করছেন।
হাইল হাওরের ধান কাটছেন অনেক চা শ্রমিক। মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোর অনিয়মিত শ্রমিকদের একটা অংশ গত কয়েক বছর ধরে বোর মৌসুমে হাওরের ধান কাটতে যান। ফলে অন্য জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিকের ওপর চাপ কমেছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, এবার ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে ব্রি-৯২ জাতটি হাওর এলাকার মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। কোন দুর্যোগ না হওলে আশা করছি ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টনের বেশি ধান উৎপাদিত হবে এ বছর।