মৌলভীবাজার : গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নাগলিঙ্গম ফুল -সংবাদ
উজ্জ্বল গোলাপি রঙের ফুল, অজস্র পাপড়ি, মাঝের কেশরগুচ্ছের পরাগচক্র সাপের ফনার মতো বেঁকে থাকে। যখন ফুল ফুটে তখন গাছের কাণ্ড দেখা যায় না। ফুটন্ত ফুল হতে অদ্ভুত মাদকতাময় গন্ধ বের হয়। এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম। নাগলিঙ্গম ফুলে মাদকতার সুবাসে ভোরের বাতাস মাতোয়ারা হয়।
নাগলিঙ্গমের ফুলের রং গাঢ় গোলাপি, সঙ্গে হালকা হলুদ রঙের মিশ্রণ। পাপড়ি ছয়টি, অজস্র কেশরযুক্ত গোলাকার কুল্লি পাকানো।
নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা ‘শ্যামলী নিসর্গ’ বইয়ে নাগলিঙ্গম সম্পর্কে লিখেছেন, আপনি (এ ফুলের) বর্ণে, গন্ধে, বিন্যাসে অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। এমন আশ্চর্য ভোরের একটি মনোহর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেক দিন আপনার মনে থাকবে।’ নাগলিঙ্গম ফুল সারা বছর ফুটলেও গ্রীষ্মকাল হচ্ছে উপযুক্ত সময়। শীত এবং শরৎকালে গাছে অপেক্ষাকৃত কম ফুল ফোটে। নাগলিঙ্গমের টুকটুকে লাল ফুলগুলো খুবই সুন্দর, সবার দৃষ্টি কাড়ে।’
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক মোঃ ইসমাইল হোসেনের তথ্য মতে, নাগলিঙ্গম এক প্রকার বৃক্ষ জাতীয় দুর্লভ উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। এটি খুবই বিরল প্রজাতির একটি গাছ।
মৌলভীবাজার জেলায় ২টি নাগলিঙ্গম গাছে ফুল আসার তথ্য পাওয়া গেছে। এর একটি শ্রীমঙ্গলস্থ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিটিআরআই) একটি এবং অন্যটি জেলার পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার জনপথ মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত নৌ কর্মকর্তা দেওয়ান গউছউদ্দিন আহমদের বাড়িতে। এবাড়িতে ইতিমধ্যেই আরো দুটি চারা গাছের জন্ম হয়েছে প্রাকৃতির ভাবেই। বিটিআরআইয়ের এগাছটি প্রায়
সরজমিনে দেখাগেছে, নাগলিঙ্গম গাছটিতে যখন ফুল ফোটে তখন অনিন্দ সুন্দর একটি দৃশ্যের অবতারণ হয়। পুরো গাছে ফুল আর ফুল। অজস্য ফুলের মাঝে মাঝেই ফল ধরতে থাকে। গাছের কান্ড ভেদ করে ফুল বের হয়। ধারণা করা হয় এ ফুলের নাগলিঙ্গম নাম হয়েছিল সাপের ফণার মতো বাঁকানো পরাগচক্রের কারণে। তবে বৈজ্ঞানিক নাম ‘কুরুপিটা গুইয়ানেনসিস’। নাগঙ্গিমের অন্য নাম হাতি জোলাপ। হাতির প্রিয় খাবার এর ফল- এমন তথ্যও পাওয়া যায়। ফল যখন পেকে ফেটে যায় তখন এক ধরণের ঝাঝালো গন্ধ বের হয়।
চৈত্রের শেষ থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে, ভাদ্র মাস পর্যন্ত ফুল ফুটে। অজস্র ফুলে গাছটি রঙিন হয়ে ওঠে। শহরশ্রী গ্রামের নাগলিঙ্গম গাছটি এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে। গোড়া থেকেই ফুল এসেছে গাছটির প্রায় পুরো শরীর জুড়ে। কোন কোনোটি কুড়ির পর্যায়ে ফোটার অপেক্ষায়। ফুল আর কুড়ের আড়ালে পাতাই দেখা যায় না। অনেকে ফুল দেখতে ভিড় করছেন এই বাড়িতে। দিনের শুরুতে ভোরের সিগ্ন বাতাসে এ ফুলের গ্রাণ সবচেয়ে ভালো অনুভব করা যায়।
বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত নৌ কর্মকর্তা দেওয়ান গউছউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, প্রায় ৬০ বছর আগে তাঁর বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা দেওয়ান মহীউদ্দিন আহমদ একটি ফুলের চারা এনে বাড়িতে রোপণ করেছিলেন। তখনো তাঁরা জানতেন না এ গাছটি কী জাতের ফুলের গাছ। গাছটি বড় হয়ে ফুল ধরা শুরু করলে তখন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন এটি নাগলিঙ্গম গাছ। গত ১৫-১৬ বছর ধরে এ গাছ ফুল দিচ্ছে। এবার সবচেয়ে বেশী ফুল ফুটেছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) সাবেক পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলীর তথ্য মতে, বিটিআরআই ক্যাম্পাসে বিদ্যমান নাগলিঙ্গম গাছটি ১৯৯৩ সালের ১ডিসেম্বর বাংলাদেশ চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ আল হোসেন রোপণ করেছিলেন।
বিটিআরআই ক্যাম্পাসে এখনো এ গাছটি বিদ্যমান আছে এবং নিয়মিতই এ গাছে ফুল ও ফল আসছে। বারও ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে বহৎ আকৃতির এ গাছটি। বছরে অন্তত দুই বার ফুল আসে , জানিয়েছেন বিটিআরআই ক্যাম্পাসের পরিচর্যাকারিরা।
মৌলভীবাজার : গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নাগলিঙ্গম ফুল -সংবাদ
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
উজ্জ্বল গোলাপি রঙের ফুল, অজস্র পাপড়ি, মাঝের কেশরগুচ্ছের পরাগচক্র সাপের ফনার মতো বেঁকে থাকে। যখন ফুল ফুটে তখন গাছের কাণ্ড দেখা যায় না। ফুটন্ত ফুল হতে অদ্ভুত মাদকতাময় গন্ধ বের হয়। এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম। নাগলিঙ্গম ফুলে মাদকতার সুবাসে ভোরের বাতাস মাতোয়ারা হয়।
নাগলিঙ্গমের ফুলের রং গাঢ় গোলাপি, সঙ্গে হালকা হলুদ রঙের মিশ্রণ। পাপড়ি ছয়টি, অজস্র কেশরযুক্ত গোলাকার কুল্লি পাকানো।
নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা ‘শ্যামলী নিসর্গ’ বইয়ে নাগলিঙ্গম সম্পর্কে লিখেছেন, আপনি (এ ফুলের) বর্ণে, গন্ধে, বিন্যাসে অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। এমন আশ্চর্য ভোরের একটি মনোহর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেক দিন আপনার মনে থাকবে।’ নাগলিঙ্গম ফুল সারা বছর ফুটলেও গ্রীষ্মকাল হচ্ছে উপযুক্ত সময়। শীত এবং শরৎকালে গাছে অপেক্ষাকৃত কম ফুল ফোটে। নাগলিঙ্গমের টুকটুকে লাল ফুলগুলো খুবই সুন্দর, সবার দৃষ্টি কাড়ে।’
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক মোঃ ইসমাইল হোসেনের তথ্য মতে, নাগলিঙ্গম এক প্রকার বৃক্ষ জাতীয় দুর্লভ উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। এটি খুবই বিরল প্রজাতির একটি গাছ।
মৌলভীবাজার জেলায় ২টি নাগলিঙ্গম গাছে ফুল আসার তথ্য পাওয়া গেছে। এর একটি শ্রীমঙ্গলস্থ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিটিআরআই) একটি এবং অন্যটি জেলার পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার জনপথ মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত নৌ কর্মকর্তা দেওয়ান গউছউদ্দিন আহমদের বাড়িতে। এবাড়িতে ইতিমধ্যেই আরো দুটি চারা গাছের জন্ম হয়েছে প্রাকৃতির ভাবেই। বিটিআরআইয়ের এগাছটি প্রায়
সরজমিনে দেখাগেছে, নাগলিঙ্গম গাছটিতে যখন ফুল ফোটে তখন অনিন্দ সুন্দর একটি দৃশ্যের অবতারণ হয়। পুরো গাছে ফুল আর ফুল। অজস্য ফুলের মাঝে মাঝেই ফল ধরতে থাকে। গাছের কান্ড ভেদ করে ফুল বের হয়। ধারণা করা হয় এ ফুলের নাগলিঙ্গম নাম হয়েছিল সাপের ফণার মতো বাঁকানো পরাগচক্রের কারণে। তবে বৈজ্ঞানিক নাম ‘কুরুপিটা গুইয়ানেনসিস’। নাগঙ্গিমের অন্য নাম হাতি জোলাপ। হাতির প্রিয় খাবার এর ফল- এমন তথ্যও পাওয়া যায়। ফল যখন পেকে ফেটে যায় তখন এক ধরণের ঝাঝালো গন্ধ বের হয়।
চৈত্রের শেষ থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে, ভাদ্র মাস পর্যন্ত ফুল ফুটে। অজস্র ফুলে গাছটি রঙিন হয়ে ওঠে। শহরশ্রী গ্রামের নাগলিঙ্গম গাছটি এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে। গোড়া থেকেই ফুল এসেছে গাছটির প্রায় পুরো শরীর জুড়ে। কোন কোনোটি কুড়ির পর্যায়ে ফোটার অপেক্ষায়। ফুল আর কুড়ের আড়ালে পাতাই দেখা যায় না। অনেকে ফুল দেখতে ভিড় করছেন এই বাড়িতে। দিনের শুরুতে ভোরের সিগ্ন বাতাসে এ ফুলের গ্রাণ সবচেয়ে ভালো অনুভব করা যায়।
বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত নৌ কর্মকর্তা দেওয়ান গউছউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, প্রায় ৬০ বছর আগে তাঁর বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা দেওয়ান মহীউদ্দিন আহমদ একটি ফুলের চারা এনে বাড়িতে রোপণ করেছিলেন। তখনো তাঁরা জানতেন না এ গাছটি কী জাতের ফুলের গাছ। গাছটি বড় হয়ে ফুল ধরা শুরু করলে তখন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন এটি নাগলিঙ্গম গাছ। গত ১৫-১৬ বছর ধরে এ গাছ ফুল দিচ্ছে। এবার সবচেয়ে বেশী ফুল ফুটেছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) সাবেক পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলীর তথ্য মতে, বিটিআরআই ক্যাম্পাসে বিদ্যমান নাগলিঙ্গম গাছটি ১৯৯৩ সালের ১ডিসেম্বর বাংলাদেশ চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ আল হোসেন রোপণ করেছিলেন।
বিটিআরআই ক্যাম্পাসে এখনো এ গাছটি বিদ্যমান আছে এবং নিয়মিতই এ গাছে ফুল ও ফল আসছে। বারও ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে বহৎ আকৃতির এ গাছটি। বছরে অন্তত দুই বার ফুল আসে , জানিয়েছেন বিটিআরআই ক্যাম্পাসের পরিচর্যাকারিরা।