ডিমলা (নীলফামারী) : হাসপাতালের রোগীদের অভিযোগ খবর অত্যন্ত নিম্নমানের -সংবাদ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হলেও রোগীদের অভিযোগ, খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের এবং পরিমাণও অনেক কম।
সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতাল প্রবেশ মুখেই ময়লা আবর্জনার স্তূপের বাগার। শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযুক্ত, যেখানে কিলবিল করছে কীট পতঙ্গ। মেঝে ও দেয়ালে দেখা যায় পানের পিক ময়লার দাগ। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত স্যালাইনের সরঞ্জাম ও ওষুধের কার্টুন। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিবেশ নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত, যা চিকিৎসা গ্রহণের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত পরিবেশ ।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স নামক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাগজে-কলমে দায়িত্ব পেলেও মূলত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজিপি টেন্ডারে চার নম্বরে থাকা সত্ত্বেও শুধু স্বাস্থ্য কর্মকর্তার যোগসাজশে এই কাজটি বাগিয়ে নিয়েছে উক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
হাসপাতালে প্রতিদিন সকালে রোগীদের দুইটি পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম ও এক চামচ চিনি দেওয়া হয়। দুপুরে দেয়া হয় ৭.৫০ গ্রাম ওজনের সিলভার কার্প মাছ, ১০০ গ্রাম মোটা চালের ভাত, ডাল ও ভাজি মেশানো তরকারি। রাতে প্রায়শই দুপুরের অবশিষ্ট খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। অথচ টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী, সপ্তাহে চার দিন মাছ এবং দুই দিন মাংস দেয়ার কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে।
সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ১২৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যেখানে সকালে দুইটি পাউরুটি, দুইটি সিদ্ধ ডিম, একটি কলা ও ২০ গ্রাম চিনি; দুপুরে ও রাতে ১০০ গ্রাম মাছ, ২০০ গ্রাম ভাত, ২০ গ্রাম ডাল এবং পরিমাণ মতো সবজি দেয়ার কথা। তবে ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরবরাহ করা হচ্ছে সিলভারকার্প, বার্মিজ রুই, তেলাপিয়া মাছ এবং মোটা চালের ভাত। অনেক সময় পচা ও বাসি তরকারি এবং পরিমাণেও কম খাবার পরিবেশন করে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেএ বিষয়ে একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি মর্মে রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান।
এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন রোগীর। উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গারহাট এলাকার বকুল নামের এক রোগী জানান, ‘চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। পাতলা ডাল দেয়। মাছ মাংসে ঝাল বা মসলার কোনো স্বাদ নেই। আর যে ভাত দেয় সেটা খাওয়ার অনুপযোগী।’
খগাখরিবাড়ী ইউনিয়নের টুনিরহাট এলাকার মহিলা ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন নুরজাহান বেগম বলেন, হাডপাতালের রান্না করা তরকারিতে মসলা ছাড়া। দুপুরের খাবার কোনোমতে খাওয়া গেলেও রাতের খাবার মুখে দেয়ার মতো না।
বালাপাড়া সুন্দরখাতা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মুনতাহানা বেগম মহিলা ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে শুয়ে বলেন, “বাবা যে ভাত দেয়, পেট ভরে না। আরও চাইলে দেয় না। ক্ষুধ নিয়েই থাকতে হয়। চিকিৎসা করাতে এসেছি, টাকা তো আর নেই যে বাইরে থেকে কিনে খাবো।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাগজে-কলমে মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স থাকলেও মূল ক্ষমতা ডা. মো. রাশেদুজ্জামানের হাতে রয়েছে। বারবার বলা সত্ত্বেও খাবারের মানের কোনো উন্নতি হয়নি। ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না সাধারণ কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে খাদ্য সরবরাহকারী শাহিনুর ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুজ্জামানের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো প্রকারের তথ্য দিতে রাজি না ।
এ বিষয়ে নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে এবং সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিমলা (নীলফামারী) : হাসপাতালের রোগীদের অভিযোগ খবর অত্যন্ত নিম্নমানের -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হলেও রোগীদের অভিযোগ, খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের এবং পরিমাণও অনেক কম।
সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতাল প্রবেশ মুখেই ময়লা আবর্জনার স্তূপের বাগার। শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযুক্ত, যেখানে কিলবিল করছে কীট পতঙ্গ। মেঝে ও দেয়ালে দেখা যায় পানের পিক ময়লার দাগ। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত স্যালাইনের সরঞ্জাম ও ওষুধের কার্টুন। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিবেশ নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত, যা চিকিৎসা গ্রহণের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত পরিবেশ ।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স নামক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাগজে-কলমে দায়িত্ব পেলেও মূলত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজিপি টেন্ডারে চার নম্বরে থাকা সত্ত্বেও শুধু স্বাস্থ্য কর্মকর্তার যোগসাজশে এই কাজটি বাগিয়ে নিয়েছে উক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
হাসপাতালে প্রতিদিন সকালে রোগীদের দুইটি পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম ও এক চামচ চিনি দেওয়া হয়। দুপুরে দেয়া হয় ৭.৫০ গ্রাম ওজনের সিলভার কার্প মাছ, ১০০ গ্রাম মোটা চালের ভাত, ডাল ও ভাজি মেশানো তরকারি। রাতে প্রায়শই দুপুরের অবশিষ্ট খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। অথচ টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী, সপ্তাহে চার দিন মাছ এবং দুই দিন মাংস দেয়ার কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে।
সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ১২৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যেখানে সকালে দুইটি পাউরুটি, দুইটি সিদ্ধ ডিম, একটি কলা ও ২০ গ্রাম চিনি; দুপুরে ও রাতে ১০০ গ্রাম মাছ, ২০০ গ্রাম ভাত, ২০ গ্রাম ডাল এবং পরিমাণ মতো সবজি দেয়ার কথা। তবে ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরবরাহ করা হচ্ছে সিলভারকার্প, বার্মিজ রুই, তেলাপিয়া মাছ এবং মোটা চালের ভাত। অনেক সময় পচা ও বাসি তরকারি এবং পরিমাণেও কম খাবার পরিবেশন করে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেএ বিষয়ে একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি মর্মে রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান।
এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন রোগীর। উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গারহাট এলাকার বকুল নামের এক রোগী জানান, ‘চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। পাতলা ডাল দেয়। মাছ মাংসে ঝাল বা মসলার কোনো স্বাদ নেই। আর যে ভাত দেয় সেটা খাওয়ার অনুপযোগী।’
খগাখরিবাড়ী ইউনিয়নের টুনিরহাট এলাকার মহিলা ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন নুরজাহান বেগম বলেন, হাডপাতালের রান্না করা তরকারিতে মসলা ছাড়া। দুপুরের খাবার কোনোমতে খাওয়া গেলেও রাতের খাবার মুখে দেয়ার মতো না।
বালাপাড়া সুন্দরখাতা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মুনতাহানা বেগম মহিলা ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে শুয়ে বলেন, “বাবা যে ভাত দেয়, পেট ভরে না। আরও চাইলে দেয় না। ক্ষুধ নিয়েই থাকতে হয়। চিকিৎসা করাতে এসেছি, টাকা তো আর নেই যে বাইরে থেকে কিনে খাবো।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাগজে-কলমে মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স থাকলেও মূল ক্ষমতা ডা. মো. রাশেদুজ্জামানের হাতে রয়েছে। বারবার বলা সত্ত্বেও খাবারের মানের কোনো উন্নতি হয়নি। ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না সাধারণ কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে খাদ্য সরবরাহকারী শাহিনুর ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুজ্জামানের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো প্রকারের তথ্য দিতে রাজি না ।
এ বিষয়ে নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে এবং সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।