পানি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সেচের চাহিদা পূরণে ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদী থেকে পানি আনার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -সংবাদ
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট চরমে। একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানি। দুয়ে মিলে ভয়াবহ অবস্থা। বরেন্দ্র এলাকায় ৩টি কৃষি মৌসুমের পুরো চাষাবাদ হয় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নামায় এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সময়সীমা যেমন বেড়েছে, তেমনি কৃষি কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার পানির সংকট তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থা যখন চলমান তখন ভূগর্ভস্থ পানি না তুলে পদ্মানদীর পানি ব্যবহার করে বরেন্দ্র অঞ্চলের আবাদি জমিতে চাষাবাদ ঠিক রাখতে আরও এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ হতে ‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মানদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রচারণ (ইআইডিএল)’ প্রকল্পের ইনটেক পাম্পস্টেশন গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকার জোত গোসাইদাস সারাংপুর হতে বুস্টার-১ ও বুস্টার-২ পাম্পস্টেশন হয়ে দুধাই খালে পানি সরবরাহের জন্য ১ হাজার মি.মি. ডায়ার এইচডিপিই পাইপলাইন নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দুটি স্টেশন ক্রস করে খাড়িতে যাবে এই পানি।
এই প্রকল্পটি শেষ হলে অত্র অঞ্চলের ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর অনাবাদি জমি নতুন করে চাষের আওতায় আসবে। ফলে ৩০ হাজার কৃষক উপকৃত হবে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর ১ লাখ ৪০ হাজার মে. টন বাড়তি ফসল উৎপাদন হবে। ফলে অর্থনীতি নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ।
বিএমডিএ গোদাগাড়ী-১ জোনের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ সরকার জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে ডিপটিউবওয়েলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বিএমডির চেয়ারম্যান ড. এম. আসাদুজ্জামান এই অঞ্চলের পানির সংকট কমাতে এবং কৃষি আবাদে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মানদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ (ইআইডিএল)’ প্রকল্পের ইনটেক পাম্পস্টেশন গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকার জোত গোসাইদাস সারাংপুর হতে বুস্টার-১ ও বুস্টার-২ পাম্পস্টেশন হয়ে দুধাই খালে পানি সরবরাহ করে কৃষি জমিতে দেয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ১৮-২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে এই পানি সরবরাহ হবে।
এই উন্নয়ন কাজটি করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরএফএল। এতে এইচডিপি পাইপ দ্বারা ১২০ কিউসেক পানি সরবরাহ করা হবে। এতে ১২০টি এলএলপি পাম্পস্টেশন স্থাপন হবে। এসব পাম্প থেকে কৃষক নতুন করে তাদের অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় এনে ফসল উৎপাদন করতে পারবে। এতে করে বহু কৃষকের উপকার হবে।
তিনি আরও জানান, পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে কিছু কৃষকের জমির ওপর দিয়ে পাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে পাইপ নির্মাণকালে মাটি খনন ও নির্মাণ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় মাঠের বিভিন্ন ধরনের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মূল্য পরিশোধের জন্য ফসলওয়ারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অনেক কৃষককে ক্ষতিপূরণ বাবদ মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে এবং যাদের এখনও ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি আগামীতে তা পরিশোধ করা হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় আসা উপকারভোগী কৃষক ও বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, আমাদের ৫০ বিঘা জমি রয়েছে পানির অভাবে পুরো জমি ঠিকমতো আবাদ করতে পারতাম না। সেচের আওতায় ৩০ বিঘা জমি থাকায় সেগুলো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হতো বাকি ২০ বিঘা জমি অনাবাদি হিসেবে পরে থাকতো। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে আমার অনাবাদি জমিগুলো আবাদের আওতায় আসবে। এতে আমাদের ফসল উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যাবে। তিনি বিএমডিএর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে কিছু ফসল ক্ষতি হয়েছে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ আমি পেয়েছি। এই প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে তার মতো অনেক কৃষক উপকৃত হবেন বলে জানান।
সুলতানুল ইসলাম নামের অপর কৃষক জানান, পানির অভাবে আমরা অনেক জমি আবাদ করতে পারিনি। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার ৮০ বিঘা জমি আছে। বিএমডিএর পদ্মানদী হতে পানি সরবরাহ কাজটি সম্পন্ন হলে পুরো জমিগুলো আবাদের আওতায় আনতে পারবো। এতে আমাদের যেমন বাড়তি ফসল উৎপাদন হবে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে বেশ উপকার হবে বলে জানান এই কৃষক।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মানদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রচারণ (ইআইডিএল)’ প্রকল্প পরিচালক শিব্বির আহমেদ বলেন, এই প্রকল্পটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে আরম্ভ হয়েছে। এটি ৫৪৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২০২৭ সালের শুরুতে কাজটি শেষ হবে এবং কৃষকরা উপকার পেতে শুরু করবে। তিনি আরও জানান, এই উন্নয়ন কাজের ফলে যেমন ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমবে অন্যদিকে নতুন করে ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আসবে এবং ১ লাখ ৪০ হাজার মে. টন বাড়তি ফসল উৎপাদন হবে।
পানি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সেচের চাহিদা পূরণে ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদী থেকে পানি আনার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট চরমে। একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানি। দুয়ে মিলে ভয়াবহ অবস্থা। বরেন্দ্র এলাকায় ৩টি কৃষি মৌসুমের পুরো চাষাবাদ হয় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নামায় এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সময়সীমা যেমন বেড়েছে, তেমনি কৃষি কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার পানির সংকট তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থা যখন চলমান তখন ভূগর্ভস্থ পানি না তুলে পদ্মানদীর পানি ব্যবহার করে বরেন্দ্র অঞ্চলের আবাদি জমিতে চাষাবাদ ঠিক রাখতে আরও এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ হতে ‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মানদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রচারণ (ইআইডিএল)’ প্রকল্পের ইনটেক পাম্পস্টেশন গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকার জোত গোসাইদাস সারাংপুর হতে বুস্টার-১ ও বুস্টার-২ পাম্পস্টেশন হয়ে দুধাই খালে পানি সরবরাহের জন্য ১ হাজার মি.মি. ডায়ার এইচডিপিই পাইপলাইন নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দুটি স্টেশন ক্রস করে খাড়িতে যাবে এই পানি।
এই প্রকল্পটি শেষ হলে অত্র অঞ্চলের ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর অনাবাদি জমি নতুন করে চাষের আওতায় আসবে। ফলে ৩০ হাজার কৃষক উপকৃত হবে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর ১ লাখ ৪০ হাজার মে. টন বাড়তি ফসল উৎপাদন হবে। ফলে অর্থনীতি নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ।
বিএমডিএ গোদাগাড়ী-১ জোনের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ সরকার জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে ডিপটিউবওয়েলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বিএমডির চেয়ারম্যান ড. এম. আসাদুজ্জামান এই অঞ্চলের পানির সংকট কমাতে এবং কৃষি আবাদে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মানদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ (ইআইডিএল)’ প্রকল্পের ইনটেক পাম্পস্টেশন গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকার জোত গোসাইদাস সারাংপুর হতে বুস্টার-১ ও বুস্টার-২ পাম্পস্টেশন হয়ে দুধাই খালে পানি সরবরাহ করে কৃষি জমিতে দেয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ১৮-২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে এই পানি সরবরাহ হবে।
এই উন্নয়ন কাজটি করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরএফএল। এতে এইচডিপি পাইপ দ্বারা ১২০ কিউসেক পানি সরবরাহ করা হবে। এতে ১২০টি এলএলপি পাম্পস্টেশন স্থাপন হবে। এসব পাম্প থেকে কৃষক নতুন করে তাদের অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় এনে ফসল উৎপাদন করতে পারবে। এতে করে বহু কৃষকের উপকার হবে।
তিনি আরও জানান, পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে কিছু কৃষকের জমির ওপর দিয়ে পাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে পাইপ নির্মাণকালে মাটি খনন ও নির্মাণ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় মাঠের বিভিন্ন ধরনের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মূল্য পরিশোধের জন্য ফসলওয়ারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অনেক কৃষককে ক্ষতিপূরণ বাবদ মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে এবং যাদের এখনও ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি আগামীতে তা পরিশোধ করা হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় আসা উপকারভোগী কৃষক ও বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, আমাদের ৫০ বিঘা জমি রয়েছে পানির অভাবে পুরো জমি ঠিকমতো আবাদ করতে পারতাম না। সেচের আওতায় ৩০ বিঘা জমি থাকায় সেগুলো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হতো বাকি ২০ বিঘা জমি অনাবাদি হিসেবে পরে থাকতো। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে আমার অনাবাদি জমিগুলো আবাদের আওতায় আসবে। এতে আমাদের ফসল উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যাবে। তিনি বিএমডিএর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে কিছু ফসল ক্ষতি হয়েছে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ আমি পেয়েছি। এই প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে তার মতো অনেক কৃষক উপকৃত হবেন বলে জানান।
সুলতানুল ইসলাম নামের অপর কৃষক জানান, পানির অভাবে আমরা অনেক জমি আবাদ করতে পারিনি। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার ৮০ বিঘা জমি আছে। বিএমডিএর পদ্মানদী হতে পানি সরবরাহ কাজটি সম্পন্ন হলে পুরো জমিগুলো আবাদের আওতায় আনতে পারবো। এতে আমাদের যেমন বাড়তি ফসল উৎপাদন হবে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে বেশ উপকার হবে বলে জানান এই কৃষক।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মানদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রচারণ (ইআইডিএল)’ প্রকল্প পরিচালক শিব্বির আহমেদ বলেন, এই প্রকল্পটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে আরম্ভ হয়েছে। এটি ৫৪৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২০২৭ সালের শুরুতে কাজটি শেষ হবে এবং কৃষকরা উপকার পেতে শুরু করবে। তিনি আরও জানান, এই উন্নয়ন কাজের ফলে যেমন ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমবে অন্যদিকে নতুন করে ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আসবে এবং ১ লাখ ৪০ হাজার মে. টন বাড়তি ফসল উৎপাদন হবে।