মৌলভীবাজার : ধান সেদ্ধ করায় ব্যস্ত কৃষাণি -সংবাদ
আকাশে কখনো খরতাপে বৈশাখী সূর্য, আবার কখনো কাল বৈশাখী মেঘের গর্জন, ঝুম ঝুম বৃষ্টি। আকাশের রঙ বদলানোর সাথে সাথে কৃষকের মন বদলায়। শঙ্কিত কৃষক কর্মব্যস্থ বোরো ফসলের মাঠে। বসে নেই ঘরের ‘‘শস্য-লক্ষ্নমী নারী’’। পরিবারে পুরুষ সদস্যদের সাথে নিজেরাও মাঠে নেমেছেন অনেক কৃষক পরিবারের নারী। আছেন নারী শ্রমিকও।
মৌলভীবাজার জেলার সদর ও রাজনগর উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে বিদ্যমান মনু ইরিগেশন প্রজেক্টের কাউয়াদীঘি হাওরের অন্তেহরি, বানেশ্রী, কাদিপুর, মিরপুর, কাশিমপুর এলাকায় দেখা যাচ্ছে এ ফসল তোলার উৎসব। এসব এলাকার বাতাসে এখন সেদ্ধ ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ ভাসে। ছড়ি আছে ধান, শুকনো খড়।
এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাওরের বুক জুড়ে এখন ধান কাটা, মারাই, শুকনো এবং পরিবহনের ব্যস্ততা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিষান-কিষানির অবসরের সময় নেই। কেউ ধান কাটছেন। কেউ ওই ধান কাঁধে বা মাথায় বয়ে আনছেন। অন্যদিকে চলছে ধান মাড়াই। সঙ্গে ধান সেদ্ধ ও শুকানোর কাজ। এমন চিত্র মৌলভীবাজারের হাওরের বিভিন্ন খোলার এবং হাওরপাড়ের বিভিন্ন গ্রামের এখনকার নিত্যদিনের।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, যাতে দ্রুত ধান মাড়ই এবং শুকানো যায় এজন্য হাওরের অপেক্ষাকৃত উচু ভুমিতে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ধান মাড়াইয়ের খলা। কৃষকরা ক্ষেতের ধান কেটে নিয়ে আসেন নিজ নিজ খলায়। এখানেই মাড়াই, সেদ্ধ, শুকানোর কাজ চলে। তারপর ধান নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে।
সুকীর্তি রানী বিশ্বাস। খড় ঠেলে আগুন দিতেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনের শিখা। বাতাসে ধোঁয়া ছড়িয়ে যায় চারদিকে। এর মধ্যেই বসে তিনি বলেন, ‘আমরা নারীরা এখানই (হাওরের খোলা মাঠে) সবতা (সবকিছু) শেষ করি। না করলে অয় (হয়) না। বাড়িত রইদ কম মিলে। এখানো সকাল থাকি (থেকে) সন্ধ্যা পর্যন্ত রইদ থাকে।’
হাওরে কাজকরা কৃষাণী সুকীর্তি রানী বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা নারীরা এখানোই (হাওরের খোলা মাঠে) সবতা (সবকিছু) শেষ করি। না করলে অয় (হয়) না। বাড়িত রইদ রোদ) কম মিলে। এখানে সকাল থাকি (থেকে) সন্ধ্যা পর্যন্ত রইদ (রোদ) থাকে।’
কাউয়াদীঘি হাওরের কাদিপুর এলাকার কিষানি সুমতী দাশকে তিনটি বড় পাতিলে মাঠে ধান সিদ্ধ করতে দেখা যায়। সুমতী দাশ জানান, মাঠে ধান সিদ্ধ করার রীতি অনেক পুরোনা। আগে মা দাদিরা করতেন। এখন তিনি করছেন। এ কাজে জমির খড়কে জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাশেই আছে ধান শুকানোর ব্যবস্থা। সিদ্ধ ধান ত্রিপল বিছিয়ে শুকানো হয়। ২/৩ দিনের ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ উপযোগী করা যায়। এক একটি পাতিলে ৪০ থেকে ৪২ কেজি ধান সেদ্ধ হয়। সেদ্ধ করতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো। কিন্তু বৃষ্টি হলে সমস্যা হয় বলে জানান এ কৃষাণী।
জবা রানী বিশ্বাস জানান, তিনি সকাল সাতটার দিকে খোলায় এসেছেন। সারা দিন মারাই ও দেয়া ধান শুকানোর কাজ করেন। পুরুষরা ধান কাটেন, মারা দেন। নারীরা সে ধান সিদ্ধ দিয়ে শুকিয়ে বাড়ি নেয়ার উপযোগী করেন। তিনি জানান, ২৫ বছর ধরে এই ধান তোলার কাজ করেন। রোদ থাকলে ১৫ দিনে ধান তোলা যায়। বৃষ্টি বেশী হলে আরো বেশী সময় লাগে।
মৌলভীবাজার : ধান সেদ্ধ করায় ব্যস্ত কৃষাণি -সংবাদ
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
আকাশে কখনো খরতাপে বৈশাখী সূর্য, আবার কখনো কাল বৈশাখী মেঘের গর্জন, ঝুম ঝুম বৃষ্টি। আকাশের রঙ বদলানোর সাথে সাথে কৃষকের মন বদলায়। শঙ্কিত কৃষক কর্মব্যস্থ বোরো ফসলের মাঠে। বসে নেই ঘরের ‘‘শস্য-লক্ষ্নমী নারী’’। পরিবারে পুরুষ সদস্যদের সাথে নিজেরাও মাঠে নেমেছেন অনেক কৃষক পরিবারের নারী। আছেন নারী শ্রমিকও।
মৌলভীবাজার জেলার সদর ও রাজনগর উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে বিদ্যমান মনু ইরিগেশন প্রজেক্টের কাউয়াদীঘি হাওরের অন্তেহরি, বানেশ্রী, কাদিপুর, মিরপুর, কাশিমপুর এলাকায় দেখা যাচ্ছে এ ফসল তোলার উৎসব। এসব এলাকার বাতাসে এখন সেদ্ধ ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ ভাসে। ছড়ি আছে ধান, শুকনো খড়।
এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাওরের বুক জুড়ে এখন ধান কাটা, মারাই, শুকনো এবং পরিবহনের ব্যস্ততা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিষান-কিষানির অবসরের সময় নেই। কেউ ধান কাটছেন। কেউ ওই ধান কাঁধে বা মাথায় বয়ে আনছেন। অন্যদিকে চলছে ধান মাড়াই। সঙ্গে ধান সেদ্ধ ও শুকানোর কাজ। এমন চিত্র মৌলভীবাজারের হাওরের বিভিন্ন খোলার এবং হাওরপাড়ের বিভিন্ন গ্রামের এখনকার নিত্যদিনের।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, যাতে দ্রুত ধান মাড়ই এবং শুকানো যায় এজন্য হাওরের অপেক্ষাকৃত উচু ভুমিতে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ধান মাড়াইয়ের খলা। কৃষকরা ক্ষেতের ধান কেটে নিয়ে আসেন নিজ নিজ খলায়। এখানেই মাড়াই, সেদ্ধ, শুকানোর কাজ চলে। তারপর ধান নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে।
সুকীর্তি রানী বিশ্বাস। খড় ঠেলে আগুন দিতেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনের শিখা। বাতাসে ধোঁয়া ছড়িয়ে যায় চারদিকে। এর মধ্যেই বসে তিনি বলেন, ‘আমরা নারীরা এখানই (হাওরের খোলা মাঠে) সবতা (সবকিছু) শেষ করি। না করলে অয় (হয়) না। বাড়িত রইদ কম মিলে। এখানো সকাল থাকি (থেকে) সন্ধ্যা পর্যন্ত রইদ থাকে।’
হাওরে কাজকরা কৃষাণী সুকীর্তি রানী বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা নারীরা এখানোই (হাওরের খোলা মাঠে) সবতা (সবকিছু) শেষ করি। না করলে অয় (হয়) না। বাড়িত রইদ রোদ) কম মিলে। এখানে সকাল থাকি (থেকে) সন্ধ্যা পর্যন্ত রইদ (রোদ) থাকে।’
কাউয়াদীঘি হাওরের কাদিপুর এলাকার কিষানি সুমতী দাশকে তিনটি বড় পাতিলে মাঠে ধান সিদ্ধ করতে দেখা যায়। সুমতী দাশ জানান, মাঠে ধান সিদ্ধ করার রীতি অনেক পুরোনা। আগে মা দাদিরা করতেন। এখন তিনি করছেন। এ কাজে জমির খড়কে জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাশেই আছে ধান শুকানোর ব্যবস্থা। সিদ্ধ ধান ত্রিপল বিছিয়ে শুকানো হয়। ২/৩ দিনের ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ উপযোগী করা যায়। এক একটি পাতিলে ৪০ থেকে ৪২ কেজি ধান সেদ্ধ হয়। সেদ্ধ করতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো। কিন্তু বৃষ্টি হলে সমস্যা হয় বলে জানান এ কৃষাণী।
জবা রানী বিশ্বাস জানান, তিনি সকাল সাতটার দিকে খোলায় এসেছেন। সারা দিন মারাই ও দেয়া ধান শুকানোর কাজ করেন। পুরুষরা ধান কাটেন, মারা দেন। নারীরা সে ধান সিদ্ধ দিয়ে শুকিয়ে বাড়ি নেয়ার উপযোগী করেন। তিনি জানান, ২৫ বছর ধরে এই ধান তোলার কাজ করেন। রোদ থাকলে ১৫ দিনে ধান তোলা যায়। বৃষ্টি বেশী হলে আরো বেশী সময় লাগে।