ডিমলা (নীলফামার) : শ্যালো মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু -সংবাদ
নীলফামারীর ডিমলায় দেশের সর্ববৃহত্তম তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে ডান তীর রক্ষায় ভাঙন রোধ প্রকল্পের বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভরাটের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। জিও ব্যাগে বালু ভরাট করতে নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শ্যালো মেশিন ইঞ্জিনচালিত নিষিদ্ধ বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে পাউবোর নিয়োগকৃত সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদাররা। বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে তিস্তা পাড়ের আবাদি জমি নদীতে গর্ভে বিলীন হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজ এলাকাসহ চারদিকের আশপাশের বসতবাড়ী, উর্বর আবাদি জমি, নদীর তীর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙ্গে তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকার ঝুঁকিতে রয়েছে। সব কিছু জেনেও নিরব ভূমিকা পালন করছে তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ বা ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী।
তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় বসবাস কারীদের অভিযোগ, তিস্তা নদীর ভাঙন এলাকায় বালু উত্তোলন করা হলেও তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পাউবো কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে ভেস্তে যাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে। বিফলে যাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার ব্যয়ের এ প্রকল্প।
ডালিয়া পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে তিস্তা নদীর ডান তীর রক্ষায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয় যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর মৌজায় ১ হাজার ৭০ মিটার তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে ডান তীরে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলার (পিসিং)-এর প্রকল্পের কাজ চলছে। এ কাজে ৬ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরে চারটি প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ করে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া জরুরি কাজের নামে দরপত্র ছাড়াই ঝুনাগাছ চাপানীর ভেণ্ডাবাড়ী ও সোনাখুলির স্পার বাঁধ রক্ষায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলছে ডালিয়া পাউবোর অফিস কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য যে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব স্পার বাঁধ রক্ষায় দুটি প্রকল্পে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হয়। জিও ব্যাগ ভরাট করা হয়েছিল বাঁধের নিচের বালু উত্তোলন করে। এর ফলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ধসে পড়ে তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কাজের ঠিকাদারদের অধীনে প্রায় আট দিন ধরে বালু তোলার কাজ করছেন। আর স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার অধিক মুনাফার আসায় কোনো আইন না মেনে নদীর ভাঙন যেখানে বেশি, সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন তা বন্ধও করে না। এ ক্ষেত্রে পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকার সন্দেহ করেন তারা।
দ. সোনাখুলি ভাঙনকবলিত এলাকার মোজাফফর হোসেন বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিবছর বড় বড় বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হয় নদীতে। নদীর তলদেশে যেখানে ভাঙনটা হয়, সেখানে মেশিন দিয়ে বালু তুলে আবার সেখানেই বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধ তৈরি করা হয়।
একই এলাকার করিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, নদীর পানি বেরে বন্যা উঠলে এসব বালুর বস্তা নদীর গভীরে চলে গেলেও সবকিছু জেনে বুঝেও একইভাবে বছরের পর বছর কাজ হচ্ছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা এসব কাজে খরচ করলেও ভাঙন রোধে তেমন একটা। সুফল পাওয়া যায় না।
বাইশপুকুর এলাকার মকু মিয়া বলেন, বস্তার মধ্যে মোটা বালু দেওয়ার কথা, কিন্তু ঠিকাদারেরা দিচ্ছেন নদীর চিকন বালু-মাটি। মোটা বালু দিয়ে নদীর মধ্যে বস্তা ফেললে, তা শক্ত ও মজবুত হতো।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভাঙন এলাকায় মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। তিনি বোমা মেশিন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইউএনওকে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম আমরা চলতে দেব না। কেউ নির্দেশনা না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিমলা (নীলফামার) : শ্যালো মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু -সংবাদ
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
নীলফামারীর ডিমলায় দেশের সর্ববৃহত্তম তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে ডান তীর রক্ষায় ভাঙন রোধ প্রকল্পের বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভরাটের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। জিও ব্যাগে বালু ভরাট করতে নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শ্যালো মেশিন ইঞ্জিনচালিত নিষিদ্ধ বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে পাউবোর নিয়োগকৃত সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদাররা। বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে তিস্তা পাড়ের আবাদি জমি নদীতে গর্ভে বিলীন হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজ এলাকাসহ চারদিকের আশপাশের বসতবাড়ী, উর্বর আবাদি জমি, নদীর তীর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙ্গে তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকার ঝুঁকিতে রয়েছে। সব কিছু জেনেও নিরব ভূমিকা পালন করছে তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ বা ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী।
তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় বসবাস কারীদের অভিযোগ, তিস্তা নদীর ভাঙন এলাকায় বালু উত্তোলন করা হলেও তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পাউবো কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে ভেস্তে যাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে। বিফলে যাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার ব্যয়ের এ প্রকল্প।
ডালিয়া পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে তিস্তা নদীর ডান তীর রক্ষায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয় যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর মৌজায় ১ হাজার ৭০ মিটার তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে ডান তীরে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলার (পিসিং)-এর প্রকল্পের কাজ চলছে। এ কাজে ৬ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরে চারটি প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ করে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া জরুরি কাজের নামে দরপত্র ছাড়াই ঝুনাগাছ চাপানীর ভেণ্ডাবাড়ী ও সোনাখুলির স্পার বাঁধ রক্ষায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলছে ডালিয়া পাউবোর অফিস কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য যে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব স্পার বাঁধ রক্ষায় দুটি প্রকল্পে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হয়। জিও ব্যাগ ভরাট করা হয়েছিল বাঁধের নিচের বালু উত্তোলন করে। এর ফলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ধসে পড়ে তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কাজের ঠিকাদারদের অধীনে প্রায় আট দিন ধরে বালু তোলার কাজ করছেন। আর স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার অধিক মুনাফার আসায় কোনো আইন না মেনে নদীর ভাঙন যেখানে বেশি, সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন তা বন্ধও করে না। এ ক্ষেত্রে পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকার সন্দেহ করেন তারা।
দ. সোনাখুলি ভাঙনকবলিত এলাকার মোজাফফর হোসেন বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিবছর বড় বড় বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হয় নদীতে। নদীর তলদেশে যেখানে ভাঙনটা হয়, সেখানে মেশিন দিয়ে বালু তুলে আবার সেখানেই বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধ তৈরি করা হয়।
একই এলাকার করিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, নদীর পানি বেরে বন্যা উঠলে এসব বালুর বস্তা নদীর গভীরে চলে গেলেও সবকিছু জেনে বুঝেও একইভাবে বছরের পর বছর কাজ হচ্ছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা এসব কাজে খরচ করলেও ভাঙন রোধে তেমন একটা। সুফল পাওয়া যায় না।
বাইশপুকুর এলাকার মকু মিয়া বলেন, বস্তার মধ্যে মোটা বালু দেওয়ার কথা, কিন্তু ঠিকাদারেরা দিচ্ছেন নদীর চিকন বালু-মাটি। মোটা বালু দিয়ে নদীর মধ্যে বস্তা ফেললে, তা শক্ত ও মজবুত হতো।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভাঙন এলাকায় মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। তিনি বোমা মেশিন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইউএনওকে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম আমরা চলতে দেব না। কেউ নির্দেশনা না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।