ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) : সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ এখন এলাকাবাসীর জন্য স্থায়ী দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে -সংবাদ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার চেচুরিয়া গ্রাম থেকে বানিয়াল পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ এখন এলাকাবাসীর জন্য এক স্থায়ী দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। চুক্তি সম্পাদনের ৭ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও শুধুমাত্র বক্স কাটিং করার পর অবশিষ্ট কাজ না করে জনদুর্ভোগ সৃৃষ্টি করে এবং দীর্ঘদিন যাবত কাজটি বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য দিনাজপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে একাধিক তাগাদা প্রদান করা সত্ত্বেও জনগুরুত্বপূর্ণ কাজটি শুরু করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস বাবু ট্রেডার্স। ঠিকাদারের এরূপ অনিহা ও উদ্যোগহীনতার কারণে কাজটির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার কারণে জনস্বার্থ ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, আরডিআরআইআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দিনাজপুর জেলার বানিয়াল-চেচুরিয়া গ্রামের রাস্তা উন্নত করণ কাজের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৯৮ লাখ ৩ হাজার ২১ টাকা, এবং সলভেজ কস্ট ধরা হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬৪ টাকা যা গত ২০২৪ ইং সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখে ঠিকা চুক্তি সম্পন্ন হয়। সম্পাদিত চুক্তি এবং কার্যাদেশ মোতাবেক কাজটি ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখের মধ্যে সমাপ্ত করার সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে থাকা হিয়ারিং বন্ডের ইটগুলো তুলে বক্স কাটিং করে শুধু বালু ফেলে রাখা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় খুঁড়ে রাখা মাটি ও বালু মিশে রাস্তা চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে হাজার হাজার মানুষসহ মাদ্রাসা-স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এই রাস্তাকে কেন্দ্র করে আশপাশের প্রায় ৬/৭ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এই এক কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে রয়েছে ১টি মাদ্রাসা, দুটি প্রি-ক্যাডেট স্কুল সহ ১টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাস্তার বেহাল দশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা।
বানিয়াল গ্রামের শফিরুল ইসলাম ও ফটুক মিয়া, সাজু মিয়াসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষিকাজ করে আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করি। কয়েক দিন পরই ধান কাটা শুরু হবে। এই সড়ক ছাড়া ধান সহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া আসার বিকল্প কোনো পথ নেই। ৬-৭ গ্রামের মানুষ এই পথ দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করে। এই সড়কটি সঠিক সময়ের মধ্যে ঠিক না করলে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। আর এজন্য আমরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাব না। গত মৌসুমেও আমাদের এরকম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে কোন গাড়ি ঢুকতে চাচ্ছে না। পরিবহন খরচ দ্বিগুণ দিতে চাইলেও তারা আসছে না। কারণ গাড়ি ঢুকলে চাকা ডেবে যায়, গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে।
চেচুুড়িয়া গ্রামের ভ্যানচালক শাহজাহান আলী আক্ষেপ করে বলেন, এ আস্তা (রাস্তা) দিয়ে কোন মালামাল নিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না, বালুর মধ্যে চাকা ডাবা (দেবে) যায়। একটু প্রেসার দিলেই মোটর পুড়ে যায়। গত ছয় মাসে হামার ভ্যানের দুইটি মোটর পুড়ে গেছে। হামার এই ক্ষতিপূরণ কে দিবি। হামরা তো গরিব মানুষ, হামাহরে দুঃখ আর কে দেকবি? এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন করেও ঠিকাদার বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দিনাজপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ঠিকাদারকে মৌখিক ভাবে বার বার তাগাদা দেয়া হলেও তিনি কাজ শুরু করেননি, বরংচ কাজ ফেলে রেখে চলে গেছেন। এমতাবস্থায় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ধারা অনুযায়ী কোন কারণ ছাড়া একটানা ২৮ দিন কাজ বন্ধ থাকায় ‘চুক্তির মৌলিক লঙ্ঘন’ হিসেবে বিবেচনা করে বাইকে অবহতির লক্ষে চুক্তি বাতিলের নিমিত্তে চলতি মাসের গত ২২ তারিখে ২৮ দিনের চূড়ান্ত লিখিত নোটিস প্রদান করা হয়েছে।
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) : সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ এখন এলাকাবাসীর জন্য স্থায়ী দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে -সংবাদ
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার চেচুরিয়া গ্রাম থেকে বানিয়াল পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ এখন এলাকাবাসীর জন্য এক স্থায়ী দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। চুক্তি সম্পাদনের ৭ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও শুধুমাত্র বক্স কাটিং করার পর অবশিষ্ট কাজ না করে জনদুর্ভোগ সৃৃষ্টি করে এবং দীর্ঘদিন যাবত কাজটি বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য দিনাজপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে একাধিক তাগাদা প্রদান করা সত্ত্বেও জনগুরুত্বপূর্ণ কাজটি শুরু করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস বাবু ট্রেডার্স। ঠিকাদারের এরূপ অনিহা ও উদ্যোগহীনতার কারণে কাজটির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার কারণে জনস্বার্থ ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, আরডিআরআইআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দিনাজপুর জেলার বানিয়াল-চেচুরিয়া গ্রামের রাস্তা উন্নত করণ কাজের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৯৮ লাখ ৩ হাজার ২১ টাকা, এবং সলভেজ কস্ট ধরা হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬৪ টাকা যা গত ২০২৪ ইং সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখে ঠিকা চুক্তি সম্পন্ন হয়। সম্পাদিত চুক্তি এবং কার্যাদেশ মোতাবেক কাজটি ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখের মধ্যে সমাপ্ত করার সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে থাকা হিয়ারিং বন্ডের ইটগুলো তুলে বক্স কাটিং করে শুধু বালু ফেলে রাখা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় খুঁড়ে রাখা মাটি ও বালু মিশে রাস্তা চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে হাজার হাজার মানুষসহ মাদ্রাসা-স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এই রাস্তাকে কেন্দ্র করে আশপাশের প্রায় ৬/৭ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এই এক কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে রয়েছে ১টি মাদ্রাসা, দুটি প্রি-ক্যাডেট স্কুল সহ ১টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাস্তার বেহাল দশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা।
বানিয়াল গ্রামের শফিরুল ইসলাম ও ফটুক মিয়া, সাজু মিয়াসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষিকাজ করে আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করি। কয়েক দিন পরই ধান কাটা শুরু হবে। এই সড়ক ছাড়া ধান সহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া আসার বিকল্প কোনো পথ নেই। ৬-৭ গ্রামের মানুষ এই পথ দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করে। এই সড়কটি সঠিক সময়ের মধ্যে ঠিক না করলে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। আর এজন্য আমরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাব না। গত মৌসুমেও আমাদের এরকম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে কোন গাড়ি ঢুকতে চাচ্ছে না। পরিবহন খরচ দ্বিগুণ দিতে চাইলেও তারা আসছে না। কারণ গাড়ি ঢুকলে চাকা ডেবে যায়, গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে।
চেচুুড়িয়া গ্রামের ভ্যানচালক শাহজাহান আলী আক্ষেপ করে বলেন, এ আস্তা (রাস্তা) দিয়ে কোন মালামাল নিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না, বালুর মধ্যে চাকা ডাবা (দেবে) যায়। একটু প্রেসার দিলেই মোটর পুড়ে যায়। গত ছয় মাসে হামার ভ্যানের দুইটি মোটর পুড়ে গেছে। হামার এই ক্ষতিপূরণ কে দিবি। হামরা তো গরিব মানুষ, হামাহরে দুঃখ আর কে দেকবি? এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন করেও ঠিকাদার বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দিনাজপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ঠিকাদারকে মৌখিক ভাবে বার বার তাগাদা দেয়া হলেও তিনি কাজ শুরু করেননি, বরংচ কাজ ফেলে রেখে চলে গেছেন। এমতাবস্থায় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ধারা অনুযায়ী কোন কারণ ছাড়া একটানা ২৮ দিন কাজ বন্ধ থাকায় ‘চুক্তির মৌলিক লঙ্ঘন’ হিসেবে বিবেচনা করে বাইকে অবহতির লক্ষে চুক্তি বাতিলের নিমিত্তে চলতি মাসের গত ২২ তারিখে ২৮ দিনের চূড়ান্ত লিখিত নোটিস প্রদান করা হয়েছে।